Robbar

কলকাতায় যখন বোমা পড়েছিল পরিবার-সহ ‘দ্যাশের বাড়ি’তে আশ্রয় নিয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

Published by: Robbar Digital
  • Posted:November 16, 2025 1:37 pm
  • Updated:November 16, 2025 1:37 pm  

সুনীলের ছেলেবেলায় স্ব-পরিবারে প্রত্যেক বছর দু’বার দ্যাশের বাড়িতে আসা হত। থাকা হত প্রায় দু’ মাসের মতো। গ্রীষ্মের ছুটিতে মাইজপাড়া। পুজোর ছুটিতে মামাবাড়ি। সেই যাত্রা ছিল খুব রোমাঞ্চকর। শিয়ালদা স্টেশন থেকে ট্রেনে করে খুলনা। ইস্টিমারে খুলনা থেকে ফরিদপুরের চরমুগুরিয়া বা ফতেপুর ঘাটে নেমে এরপর নৌকায় পূর্ব মাইজপাড়া। 

কামরুল হাসান মিথুন

২১.

সুনীলের পরিবারে কেউ লেখক ছিলেন না। তিনি কখনও লেখক হবেন ভাবেননি। সুনীলের বাবা ছিলেন স্কুল-শিক্ষক। পিতামহ অবিনাশচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন টোলের পণ্ডিত। ছেলেবেলায় সুনীলের দিদিমা বলতেন– এই ছেলেটার একেবারে পায়ের তলায় সরষে, একদণ্ড ঘরে মন টেকে না। 

পদ্মানদী ভ্রমণে কবি বেলাল চৌধুরী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ইকবাল আনোয়ার ফারুক এবং মুহম্মদ খসরু। (ছবির বাঁদিক থেকে)

স্বপ্ন ছিল জাহাজের নাবিক হওয়ার। হয়ে গেলেন কবি। প্রথম প্রেম। প্রথম প্রেমিকার উদ্দেশে লিখে ফেললেন জীবনের প্রথম কবিতা। তখন সুনীলের বয়স ১৫ বছর ৮ মাস। কবিতাটি রচনা করেছিলেন একটি কিশোরীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। সেটি ছিল প্রেমপত্রের আদলে রচিত কবিতা। কবিতাটির নাম ‘একটি চিঠি’। ছাপা হয় তৎকালীন জনপ্রিয় এক সাহিত্য পত্রিকায়। সেই সাহিত্য পত্রিকা মেয়েটির বাড়িতে রাখা হয়। মেয়েটি পত্রিকা হাতে পেয়েও বিশ্বাস করতে পারেননি দাদার বন্ধু একজন কবি, আর এই কবিতাটি তাঁরই জন্য রচিত। প্রথম প্রেমের নিবেদন ব্যর্থ হয়, কিন্তু বাংলা সাহিত্যে সুনীল কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। 

২০০৪ সালে ঢাকায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধ-নির্ভর উপন্যাস ‘জোছনা ও জননীর গল্প’-এর প্রকাশনা উৎসবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শামসুর রাহমান, হুমায়ূন আহমেদ, আনিসুজ্জামান এবং সৈয়দ শামসুল হক। (ছবির বাঁদিক থেকে)

সুনীল মামাবাড়িতে জীবনের প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন, বালক কৃষ্ণের চরিত্রে। সুনীলের মায়ের নাম মীরা, ডাকনাম যতন। যতনের মায়ের নাম মণি। মণির আদরের নাতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সুনীলের জন্মগ্রাম মামাবাড়ি আমগ্রাম, মাদারীপুর। পৈতৃক বাড়ি পূর্ব মাইজপাড়া অর্থাৎ মাঝের পাড়া। আদি বাড়ি বিক্রমপুর। 

সুনীলের জন্মভিটে আমগ্রাম। বাড়ির সামনে বিশাল দিঘি। এই দিঘির পাড়ে ছিল সুনীলের মামাবাড়ির সাতটি একতলা দোতলা ভবন। মামাবাড়ির এই উঠোনে বানানো হয়েছিল আঁতুরঘর। জন্মের কয়েকদিন পর এই বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে সুনীল ও তাঁর জননী ২১দিন বাস করেন। মামাবাড়ির বাকি ৬টি ভবন ভেঙে নতুন ঘর উঠেছে। এই একটি বাড়ি টিকে আছে। বর্তমানে এই বাড়ির মালিক স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান টিপু। তাঁরা সুনীলের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি হিসেবে এখনও এই একতলা ভবনটিকে টিকিয়ে রেখেছেন।

সুনীলের পূর্বপুরুষরা বিক্রমপুর থেকে মাদারীপুরে বসতি স্থাপন করেছিলেন। সুনীলের ছেলেবেলার স্মৃতিবিজড়িত মাদারীপুর একসময় একটি গ্রাম ও পরগনার নাম ছিল। মাদারীপুর এক সময় বরিশাল জেলার মহকুমা, পরে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মহকুমা ছিল। ব্রিটিশ সরকারের খাতায় ফরিদপুর জেলার ১০ নং পরগনা হিসেবে মাদারীপুরের নাম ছিল। বর্তমানে মাদারীপুর বাংলাদেশের একটি জেলা শহর। মাদারীপুর জেলার উত্তরে ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলা; দক্ষিণে বরিশাল জেলা; পূর্বে শরীয়তপুর জেলা এবং পশ্চিমে গোপালগঞ্জ জেলা অবস্থিত। 

 

সুনীলের মামাবাড়ি আমগ্রামের পথ, খাল ও বাড়ির সামনে চার্চ।

পদ্মা নদীবিধৌত সমভূমি মাদারীপুরের প্রধান নদ আড়িয়াল খাঁ, কুমার ও পালরদী নদী। মাদারীপুরে তিনটি প্রধান নদ-নদী বাদে রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল। বাইক্কার বিল, পাবনগাঁ বিল, পীতাম্বর বিল, মরা পদ্মার বিল, হাউসদি বিল, ময়নাকাটা বিল, লাউসার বিল, লখণ্ডার বিল, পাতার বিল, শশিকর বিল, মাটিভাঙা বিল, গৈদি বিল এবং সুনীলের তিনপ্রহরের বিল। 

সুনীলের ‘একা এবং কয়েকজন’ উপন্যাস এবং সুনীলের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলি ও তিনপ্রহরের বিলের কথা রয়েছে। বরিশালের কোথাও যেমন ‘ধানসিড়ি নদী’ নেই, কিন্তু জীবনানন্দ দাশের কবিতায় আছে। তেমনি মাদারীপুরের কোথাও ‘তিনপ্রহরের বিল’ নেই কিন্তু সুনীলের গদ্য-পদ্যে পাওয়া যায়। বাংলার কবিরা এমনই। তাঁরা আমাদের একটি নতুন নদী দান করেন। একটি নতুন বিল দান করেন। 

পূর্ব মাইজপাড়ায় সুনীলের গ্রাম-সহোদর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক হাওলাদারের বাড়িতে সুনীল ও স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। সুনীলের বাড়ির পাশের বাড়িটিই রাজ্জাক হাওলাদারের বাড়ি।

বাঙালি ঘরের রীতি অনুযায়ী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম আমগ্রামের মামাবাড়িতে ২১ ভাদ্র ১৩৪১ বঙ্গাব্দ (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪)। আমগ্রামের এই বাড়ি সুনীলের মায়েরও মামাবাড়ি। বাড়ির বাইরের দিকে বিশাল দিঘি রয়েছে। দিঘির একপাশে রয়েছে ২০০ বছরের পুরাতন ব্যাপ্টিস্ট চার্চ। এখনও এই চার্চে ঘণ্টা বাজে, প্রভাতে প্রার্থনা-সংগীত হয়। 

মামাবাড়ির যে একতলা ভবনের সামনের উঠোনে আঁতুড়ঘর করা হয়েছিল, সেই ভবনটি এখনও টিকে আছে। আঁতুড়ঘরে ধাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন বোঁচার মা। 

জন্মের কিছুদিন পর আঁতুড়ঘর থেকে মীরা দেবী ও সুনীলকে সামনের দালানের চিলেকোঠায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এই চিলেকোঠায় সুনীল ও তাঁর জননী ২১ দিনের মতো বাস করেন। সেই চিলেকোঠাটা এখনও রয়েছে। যেখান থেকে হাত বাড়িয়ে এখনও সুনীল আকাশ ছোঁয়া যায়। 

আমগ্রাম ও মাইজপাড়ায় ব্রাহ্মণপল্লিতে সুনীলের বাল্যকালের অনেকটা সময় কেটেছে। সুনীলের বাবা কালীপদ গঙ্গোপাধ্যায় উত্তর কলকাতা টাউন স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ফলে দেশভাগের আগে থেকেই পরিবারের সবাই কলকাতা শহরে বসবাস করতেন।

বর্তমানে মাইজপাড়ায় সুনীলের বসতভিটায় আদি মাটির ঘরটি নেই। আগের জায়গায় নতুন ঘর উঠেছে, নতুন বাসিন্দারা এসেছেন, কিন্তু আদিকালের এই পূর্ব মাইজপাড়ার ব্রাহ্মণপল্লির তিনটি বড় বড় পুষ্করিণী রয়ে গেছে। এইসব পুষ্করিণীতেই সুনীল সাঁতার শিখেছেন। মাছ ধরা শিখেছেন। সাঁতার শেখার পর নৌকা চালানোর যোগ্যতা হিসেবে হাতে লগি-বৈঠা নেওয়ার অনুমতি পান। এরপর বীরমোহন স্কুলের বন্ধু মকবুল ও আলতাফের সঙ্গে নৌকা ভাসান আড়িয়াল খাঁ নদীতে। 

সুনীলের পৈতৃক বসতভিটায় অতিথি সহ বসে আছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
সুনীলের বাড়ির সামনে বড় পুস্করিণী

কালকিনি ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে সুনীলের পৈতৃক ভিটাবাড়ির অংশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘সুনীল আকাশ: সুনীল সাহিত্যচর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র’। এই বসতভিটায় একটি টিয়াঠুঁটি জাতের আমগাছ ছিল। সেই আমগাছটি আর নেই। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে নতুন নতুন ফলের গাছ। গাছে নতুন পাখির বাসা। আগের মাটির ঘরের চিহ্ন নেই। কিন্তু বাড়ির চারপাশের পুকুর, মাটির পথ, রোদ, চাষের জমি আগের মতোই রয়েছে। বর্ষায় চারপাশে জল জমে। বৃষ্টি হয়। বাড়ি থেকে বড় রাস্তার দিকে যেতে ছোট্ট খাল পড়ে। খালের ওপরে ছোট একটা ব্রিজ হয়েছে। সুনীল একসময় এই খাল পাড়ি দিয়ে নৌকায় করে স্কুলে যেতেন। 

 

দেশভাগ নিয়ে সুনীলের বাবার একটি উক্তি সুনীলের সব সময় মনে পড়ত। সাতচল্লিশের ১৫ আগস্ট সকালে বাবা ভাঙা ভাঙা গলায় বলেছিলেন, ভারত স্বাধীন হল, আর আমরা আমাদের দেশ হারালাম! সেই হারানোর বেদনা বহু বছর পরেও বুকের মধ্যে টনটন করত। অথচ সুনীল এই ব্যথার ঠিক যুক্তি খুঁজে পাননি!

সুনীলের গ্রামের স্কুলে যাওয়ার পথ। এই স্কুলে এক বছর পড়াশোনা করেছেন। বীরমোহন উচ্চ বিদ্যালয়।

সুনীল দেশভাগ দেখেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় কলকাতার রাস্তায় হেঁটেছেন। মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের সঙ্গে যশোর রোড ধরে হেঁটে হেঁটে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে দেশহারা, ঘরবাড়িহারা অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল শরণার্থী ক্যাম্পগুলো ঘুরেছেন। এই সময়ের দেখা নিয়ে গিন্সবার্গ রচনা করেন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতাটি। 

সুনীল দেশভাগের পটভূমিতে রচনা করলেন ‘পূর্ব-পশ্চিম’ উপন্যাস। সুনীলের প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’। উত্তমপুরুষে লেখা, প্রধান চরিত্রের নাম সুনীল। এখানেও দেশভাগ। এরপর ’৭০ সালের দিকে লিখলেন ‘অর্জুন’ উপন্যাসটি। যার পটভূমি দেশভাগ ও উদ্বাস্তু পরিবারের সংগ্রাম। সুনীল তার ‘অর্জুন’ উপন্যাসটি উৎসর্গ করেন– ‘বাংলাদেশের মুক্তিসৈনিকদের উদ্দেশে’। সুনীলের এ-সকল লেখায় রয়েছে মাদারীপুরের জীবনের উপাদান। বিভিন্ন চরিত্রের ভেতরে রয়েছে সুনীলের আদল। 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়ির পথ। বড় রাস্তা থেকে নেমে এই পথের শেষ বাড়িটা সুনীলের। সুনীলের বাড়ির জন্য গ্রামের এই পথটি পাকা হয়।

অবিভক্ত বাংলায় খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল এইসব জেলার মানুষদের সঙ্গে ঢাকার চেয়ে কলকাতা শহরের যোগাযোগই বেশি ছিল। কারণ এদিকে রেল যোগাযোগ ছিল। বাল্যকালে সুনীল মাদারীপুর থেকে অনেকবার কলকাতা গিয়েছেন কিন্তু কখনও ঢাকায় যাননি। পদ্মানদী পার হয়ে ঢাকা শহরে যাওয়ার চেয়ে রেলযোগে কলকাতা শহর কাছে ছিল। সুনীলের প্রথম ঢাকা-দর্শন পাকিস্তান আমল শেষ হওয়ার পর, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম মাসে। এরপর বহুবার ঢাকায় এসেছেন। এর আগে ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাকে সহায়তার জন্য কয়েকবার সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বাংলাদেশে। 

সুনীলের স্কুল বীরমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষী স্বরণিকার পাতায় সুনীল স্মরণ। যেবার সুনীল মাদারীপুর এলেন সেইবারের ছবিগুলো এই স্বরণিকায় ছাপা হয়েছে

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ১৯৪৩ সালের দিকে কলকাতা শহরে বোমা পড়েছিল। তখন বহু লোক ভয়ে শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এদিক-ওদিক পালিয়ে যায়। সুনীলের পরিবার চলে আসেন দ্যাশের বাড়ি মাদারীপুর। বাড়ির কাছে পূর্ব মাইজপাড়ার বীরমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন বালক সুনীল। এই সময়ে মা, ভাইবোন-সহ সুনীলের টানা এক বছর গ্রামের বাড়িতে থাকা হয়। 

সদ্য দেশভাগের পরপর তখনও পাসপোর্ট-ভিসা চালু হয়নি। ১৯৪৮-এর শুরুর দিকে কলকাতা থেকে মাতুলালয়ে আসেন মামার বিয়ে খেতে। তখন সুনীল ১৪ বছর বয়সের কিশোর। মামার নাম গোবিন্দ গাঙ্গুলি। তিনি আমগ্রামের ছোটখাটো জমিদার বংশের শেষ প্রতিভূ। 

মাটি নয়, মানুষের টানে সর্বশেষ ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে শেষবারের মতো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ঘুরে যান পৈতৃক বাড়ি মাইজপাড়া এবং মামাবাড়ি আমগ্রাম। সুনীলের সঙ্গে আসেন স্ত্রী স্বাতী, ছোটভাই অশোক ও বোন কণা।

সুনীলের আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর সুনীলের জন্মদিনে মাইজপাড়ায় ‘সুনীল মেলা’ বসে। এই মেলার প্রধান আয়োজক এবং মাইজপাড়ায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আগমনের প্রধান সহায়ক সুনীলের গ্রাম-সহোদর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক হাওলাদার। 

সুনীলের ছেলেবেলায় স্ব-পরিবারে প্রত্যেক বছর দু’বার দ্যাশের বাড়িতে আসা হত। থাকা হত প্রায় দু’ মাসের মতো। গ্রীষ্মের ছুটিতে মাইজপাড়া। পুজোর ছুটিতে মামাবাড়ি। সেই যাত্রা ছিল খুব রোমাঞ্চকর। শিয়ালদা স্টেশন থেকে ট্রেনে করে খুলনা। স্টিমারে খুলনা থেকে ফরিদপুরের চরমুগুরিয়া বা ফতেপুর ঘাটে নেমে এরপর নৌকায় পূর্ব মাইজপাড়া। 

মাদারীপুরে নাগরিক সম্বর্ধনায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: মন্টু সরকার

বাংলাদেশের প্রতি ছিল সুনীলের এক অপত্য টান। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আমার স্বপ্ন’ কাব্যগ্রন্থে ‘যদি নির্বাসন দাও’ কবিতায় পাই সুনীলের বাংলাদেশকে–

বিষণ্ণ আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ–
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াব
আমি বিষপান করে মরে যাবো।

ছবি: কামরুল হাসান মিথুন

দ্যাশের বাড়ি-র অন্যান্য পর্ব …

পর্ব ২০: বাঙাল ভাষা রপ্ত না হলেও ‘দ্যাশের বাড়ি’র প্রতি জ্যোতি বসুর টান ছিল অতুলনীয়

পর্ব ১৯: সমরেশ বসুর ‘দ্যাশের বাড়ি’ বেঁচে রয়েছে তাঁর সৃষ্টিতে, তাঁর গল্পে, উপন্যাসে

পর্ব ১৮: পাসপোর্ট-ভিসা করে জন্মভূমিতে ফিরতে হবে, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তা ছিল অপমানের

পর্ব ১৭: ফরিদপুর শহরে জগদীশের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন এক জেলখাটা দুর্ধর্ষ ডাকাত

পর্ব ১৬: দেশভাগের পরও কলকাতা থেকে পুজোর ছুটিতে বানারীপাড়া এসেছিলেন শঙ্খ ঘোষ

পর্ব ১৫: আমৃত্যু ময়মনসিংহের গ্রাম্য ভাষায় কথা বলেছেন উপেন্দ্রকিশোর

পর্ব ১৪পাবনার হলে জীবনের প্রথম সিনেমা দেখেছিলেন সুচিত্রা সেন

পর্ব ১৩নদীমাতৃক দেশকে শরীরে বহন করেছিলেন বলেই নীরদচন্দ্র চৌধুরী আমৃত্যু সজীব ছিলেন

পর্ব ১২: শচীন দেববর্মনের সংগীত শিক্ষার শুরু হয়েছিল কুমিল্লার বাড়ি থেকেই

পর্ব ১১বাহান্ন বছর পর ফিরে তপন রায়চৌধুরী খুঁজেছিলেন শৈশবের কীর্তনখোলাকে

পর্ব ১০: মৃণাল সেনের ফরিদপুরের বাড়িতে নেতাজির নিয়মিত যাতায়াত থেকেই তাঁর রাজনৈতিক চিন্তার জীবন শুরু

পর্ব ৯: শেষবার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে জানলায় নিজের আঁকা দুটো ছবি সেঁটে দিয়েছিলেন গণেশ হালুই

পর্ব ৮: শীর্ষেন্দুর শৈশবের ভিটেবাড়ি ‘দূরবীন’ ছাড়াও দেখা যায়

পর্ব ৭: হাতে লেখা বা ছাপা ‘প্রগতি’র ঠিকানাই ছিল বুদ্ধদেব বসুর পুরানা পল্টনের বাড়ি

পর্ব ৬ : জীবনের কালি-কলম-তুলিতে জিন্দাবাহারের পোর্ট্রেট এঁকেছিলেন পরিতোষ সেন

পর্ব ৫ : কলাতিয়ার প্রবীণরা এখনও নবেন্দু ঘোষকে ‘উকিল বাড়ির মুকুল’ হিসেবেই চেনেন

পর্ব ৪ : পুকুর আর বাঁধানো ঘাটই প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের দেশের বাড়ির একমাত্র অবশিষ্ট স্মৃতিচিহ্ন

পর্ব ৩ : ‘আরতি দাস’কে দেশভাগ নাম দিয়েছিল ‘মিস শেফালি’

পর্ব ২: সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় শৈশবের স্মৃতির নন্দা দিঘি চিরতরে হারিয়ে গেছে হাজীগঞ্জ থেকে

পর্ব ১: যোগেন চৌধুরীর প্রথম দিকের ছবিতে যে মাছ-গাছ-মুখ– তা বাংলাদেশের ভিটেমাটির