
‘পিয়াসা’-য় ‘পিয়াসা’র আগে-পরে ‘কবি’কে কেন্দ্র করে যেসব ছবি হয়েছে তাতে কোনওভাবেই ‘কবিত্ব’ বলার মতো বিষয় নয়। যেমন– বিদ্যাপতি, জয়দেব বা ভারতীয় ছবি ছানবিন করে খানকয়েক তুলে আনা নাম। পপুলার ছবির মধ্যে নাট্যকার বা কবি যাই হোক না কেন– ‘সিলসিলা’ বা ‘সাজন’-এ কবিত্বের কোনও পায়ের ছাপ ছবির নির্মাণে কোথাও নেই। উত্তমকুমারের ‘শিল্পী’ ছবিটা, লক্ষ করলে দেখা যাবে, ১৯৫৬ সালেই রিলিজ করে। সেখানে খুব মেলোড্রামাটিক ভাবে এক চিত্রকরের যন্ত্রণা আর অনুভব দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।
ঘোড়া দেখলেই সবার পায়ে বেমালুম বাত। কোনও কিছু লিখতে গেলে এই তেজি প্রাণীর চলাফেরা মনে আসে। সোজা গট গট করে কিছু যে বলে যাব, এমন কনফিডেন্স কস্মিনকালেও ছিল না। আড়ে আড়ে কোনাকুনি চলতে গিয়েও লজ্জায় মাথা কাটা যায়। তাই আড়াই চালে ভাবি। বাধা টপকে আদার ব্যাপারীও মোক্ষম ঘরটিতে গিয়ে বসতে পারে চোখের পলকে। কাটাকুটি– সে পরের কথা। তবে নিওলিথ স্তব্ধতায় না হোক মহীনের পোষা জীবটির আপন মনে ঘাস খাওয়ার দৃশ্য নিউটাউনেও দেখা যায়, সূর্যাস্তে, সন্ধ্যায়। স্যুররিয়াল। বিষাদ মন্থর। দিনশেষের লালচে আলোয় পিঠের ভাবনা-ক্ষতগুলো চিক চিক করে। কারও হাসি পায়, কারও চোখে জল আসে।
………………………….
১০.
ইয়ে দুনিয়া অগর মিল ভি যায়ে তো ক্যায়া হ্যায়
মুহম্মদ রফির মতোই, নিঃশব্দে, বসন্ত কুমার শিবশংকর পাডুকোনের শতবর্ষও পার হয়ে গেল এ-বছর জুলাই মাসে। তেমন বলার মতো কোনও লেখা চোখে পড়ল না। ‘উদযাপন’ বলতে যা বোঝায়, তার ছিটেফোঁটাও কোথাও দেখলাম না। বাংলায় তো নয়ই। অথচ মানুষটার কাজকর্ম আর জীবনের সঙ্গেও বাংলার, বস্তুত কলকাতার একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। সেটা ভালোবাসার। ভবানীপুর, ধর্মতলা স্ট্রিট, ইডেন গার্ডেনস– এইরকম কত জায়গায় ঘুরে-বেড়িয়ে দিন কেটেছিল তাঁর। মা, দিদিমা আর ভাইবোনদের নিয়ে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার, লেখাপড়া, গান শোনা, ছবি আঁকা, নাচ, যাত্রা, অভিনয়– সব মিলিয়ে এক নিবিড় ছোটবেলা কলকাতায় কাটিয়েছিলেন তিনি। অত্যন্ত অনুভূতিশীল শিল্পীমন, তার গড়ে ওঠার কথা মনে করেই হয়তো শহরটার প্রতি তীব্র এক টান দেখা দিয়েছিল ওঁর কাজে। অথচ, আমাদের মনে এল না তাঁর কথা, মনে এল না ১৯২৫-এর জুলাই মাসের ৯ তারিখ এক বৃহস্পতিবারের বারবেলায়, গুরুবারে, জন্মেছিলেন গুরু দত্ত পাডুকোন, যাঁকে সবাই একডাকে ‘গুরু দত্ত’ বলেই চিনত। জন্মেছিলেন অবশ্য ব্যাঙ্গালোরে, বছর সাতেক; তারপর বাবার কাজের সূত্রে মায়ের সঙ্গে ভারতের নানা জায়গা ঘুরে ঘুরে, কলকাতা। এখানেই বড় হয়ে ওঠা ভাইবোন নিয়ে। ভাড়া বাড়ি বদলাতে বদলাতে শেষ পর্যন্ত পাডুকোন পরিবার থিতু হল গিয়ে বম্বে। সেখানে, এক চিলতে ঘরেই প্রথম ছবিতে কাজ করার জন্য বলরাজ সাহনির মতো নামজাদা তারকা নেমে এসেছিলেন একদিন। তারপর বাড়ি বদলাতে বদলাতে জুহু। কিন্তু কলকাতার ছোট্ট ঘরটার ছবি গুরু দত্তের মনে লেগেছিল ভালোবাসার সঙ্গে এক হয়ে। গুরু দত্তের বোন– চিত্রশিল্পী ললিতা লাজমির আঁকা ছবিতে যেমন ধরা আছে সেই বাল্য-কৈশোরের ঘরবাড়ি, তেমনই বিখ্যাত ‘পিয়াসা’র ‘আজ সজন মোহে অঙ্গ লাগা লো’ গানের দৃশ্যসজ্জায় জড়িয়ে আছে সেই একই বাড়িঘর, যা গুরু দত্তের শিল্পী-জীবনের সন্ধান হয়েই থেকে গেল, মনের মতো একটা আশ্রয় পাওয়া আর হল না। এই কলকাতা শহরের কোথাও সেই আশ্রয়ের আদল তৈরি হয়েছিল। যাকে বলা যায় ‘শিল্প’ বা ‘আর্ট’।

নিরাশ্রয়ের মনই শিল্পীর মন। কোথাও ঠায় বসে গেলে মন আর খুঁজতে পারে না। খ্যাপার মতো চারদিকে দেখতেও চায় না। কিন্তু তার সন্ধান বা খোঁজটা একরকম হয় না। গুরু দত্তের ছবি নিয়ে সাধারণ দর্শক হিসেবে ভেবে দেখেছি, একটা আশ্চর্য চিত্রভাষা উনি তৈরি করছিলেন– যার কেন্দ্রে ছিল সংবেদনের নতুন কিছু সূত্র। অন্যান্য ছবির থেকেও যে ছবিতে চোখ রাখলে মন একরকমের অস্বস্তিতে পড়ে যায়। সিনেমাপাড়ার গল্প আমাদের ভালো লাগে, কিন্তু সত্যি দেখলে সেখানে প্রতিনিয়ত যে রক্তপাত দেখা যাবে, তেমন আর কোনও শিল্পমাধ্যমের ভাগ্যে ঘটে না। যতখানি সমঝোতা এই মাধ্যমে করতে হয় তার কাছাকাছি একমাত্র থাকতে পারে থিয়েটার। কারণ অন্য মাধ্যমে কাজটা করে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে গেলে টাকা লাগে। কিন্তু এখানে কাজটা করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টাকা লাগে। সেই টাকা বাজার থেকে তুলে দিতে হয়। তারপর লাভের মুখ দেখলে ভালো। নইলে ঝাঁপে লাঠি, হাতে বাটি। গুরু দত্ত, অন্যদের মতো নানা সমঝোতা করেই ছবি বানাতেন। আর চেষ্টা করতেন দর্শকের কাছে তাঁর ছবির ভাষা যেন পৌঁছে যায়। ছবির ভাষা– সত্যি বলতে সবচেয়ে কঠিন। বারবার দেখলে যে কোনও সত্যিকারের সিনেমার ভেতর থেকে নতুন নতুন ইশারা পাওয়া যায়। যে মন দিয়ে সে ছবি বানাচ্ছে, অনেক সময় তার অগোচরেই আরও বাইরে থেকে অন্য কোনও শক্তি হাজির করতে থাকে ধ্বনি-ছবি-মুভমেন্ট– কেন এরকম হচ্ছে– কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলা সম্ভব হয় না। পরে বললে যে কোনও শিল্পীর মতোই তাকেও বানিয়ে বলতে হয়। এ অনেকটা কবির নিজের কবিতা নিয়ে কথা বলার মতো– যেমন পড়ানোর সময় রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। গুরু দত্তের ছবি নিয়ে পড়লে দেখা যায় এরকম অনেক বাইরের খবর দেখাটাকে সমস্যায় ফেলে দিতে পারে। যেমন ‘পিয়াসা’ সিনেমাটার ক্ষেত্রে ঘটেছে।

‘পিয়াসা’ বারবার দেখার মতো ছবি। একে ঠিক ‘রোমান্টিক মেলোড্রামা’ বলে দেগে দিলে অর্ধেক জিনিস হাতছাড়া হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালে ‘কসমাকস’ বলে একটা গল্প ফেঁদে ছিলেন গুরু দত্ত। প্রাথমিকভাবে এক চিত্রশিল্পীর প্রেম-প্রতারণার গল্প। কিন্তু নামটা খেয়াল করার মতো– কসমাকস, কনফ্লিক্ট, সংঘর্ষ। আবরার আলবি-র সহযোগিতায় সেই গল্পই নাম পাল্টে হয়ে দাঁড়ায় ‘পিয়াসা’। (মনে পড়ে গেল সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ইংরাজি গল্প ‘The Artist’-এর কথা। অ্যাবস্ট্রাকশন নিয়ে চালু রসিকতাকেই গল্প করে তুলেছিলেন সত্যজিৎ, চিত্রশিল্পীর হাত-মোছার তোয়ালেটাই পেয়ে গিয়েছে কম্পিটিশনে প্রথম পুরস্কার! এ হয়তো সত্যজিতের শিল্প-ধারণার বাস্তবতার দিকটায় আলো ফেলে।)

সিনেমার কাহিনিতে চিত্রকর হয়ে যায় কবি। সাধারণ বাইরের খবর এটুকুই। কেন? আবরার একরকম সাক্ষ্য দেবেন, যেমন তিনি বলেওছিলেন, পিয়াসায় গুলাবোর কাহিনি তাঁর অভিজ্ঞতা থেকেই এসেছে। কিন্তু এসব ঠিক ছবি দেখার উপাদান নয়। পিয়াসা যতটা প্রেমের গল্প তার চেয়ে ঢের বেশি নতুন এক অনুভব ক্ষমতার গল্প। যেটা পরিবর্তনশীল অনুভব। স্বাধীনতার পর নতুন দেশ, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে আধুনিক পৃথিবীর চালচলনকে ধরতে পারে? কীসে চলছে চারপাশটা, সম্পর্কগুলোর জোর কোথায় পড়ার কথা আর কোথায় গিয়ে পড়ছে? এ-সব প্রশ্ন গুরু দত্ত ধরতে চেয়েছিলেন। অনেকেই সেটা বুঝতে পারেননি। যেমন দিলীপকুমার। পিয়াসা-র নায়ক হওয়ার কথা তাঁর, ছবির শুটিং শুরু হওয়ার আগের দিন তিনি সরে দাঁড়ান। ঠিক তার আগের বছর ১৯৫৫ সালে রিলিজ করে বিমল রায়ের ‘দেবদাস’। দিলীপকুমার ভেবেছিলেন আর একটা ‘দেবদাস’ তিনি করতে চান না। ভুল ভেবেছিলেন নায়ক। একটু মন দিয়ে দেখলে বোঝা যায়, এই ছবিতে শিল্পী-জীবনের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন আর সংঘর্ষ হল বাজার আর টাকার সঙ্গে জড়িয়ে পড়া সব রকমের সম্পর্ক। এখানে জীবনানন্দের এক প্রায় না-পড়া কবিতার প্রসঙ্গ আপসেই চলে আসে।

ভূমেন্দ্র গুহ ও গৌতম মিত্র সম্পাদিত ‘ছায়া আবছায়া’, জীবনানন্দের অগ্রন্থিত কবিতার এই সংকলনে (সম্পাদকদের কথামতো ১৯৩১-’৩৪ এর মধ্যে লিখিত) একটা কবিতা পাচ্ছি এইরকম:
কলকাতার ময়দানে
বৈশাখের রাতে– বিশাল নক্ষত্রের রাতে
বিস্তৃত বাতাসে
দু’জন লোক চার হাজার ছাপ্পান্ন টাকার কথা বলছিল
পরের দল সাড়ে ছ’হাজার সাড়ে ছ’হাজার করছিল
সাড়ে ছ’হাজার (কী?) নক্ষত্র? অরব রাত? চুমো? সমুদ্রের ঢেউ?
সাড়ে ছ’হাজার টাকা
তার পরের লোকটি চার টাকা পাঁচ আনার হিসেব দিয়ে চলেছে
পরের লোকটি রূপয়ার কথা বলছে
আমিও ভাবছিলাম একটা ঘষা সিকি দিয়ে
কে আমাকে ঠকাল
এই সিকিটা দিয়ে কী হবে
বৈশাখের বিশাল নক্ষত্রের রাতে
বিস্তৃত বাতাসে।

এবার ‘পিয়াসা’ ছবির কবি বিজয়ের কথা ভাবা যাক, জীবনের প্রথম রোজগারটা সে করল একটা অচল পয়সা, যাকে বলে ‘খোটা সিক্কা’। এই মিলটা আপতিক। কারণ কলকাতায় বসেও কিশোর গুরু দত্ত কিছুতেই জীবনানন্দের এই অপ্রকাশিত কবিতা পড়তে পারেন না। কিন্তু কবি বা শিল্পীর বাস্তবতার ধারণায় এই উপদ্রবটির উপস্থিতি অনিবার্যভাবেই অনুভব করতে পারেন। ‘পিয়াসা’-য় ‘পিয়াসা’র আগে-পরে ‘কবি’কে কেন্দ্র করে যেসব ছবি হয়েছে তাতে কোনওভাবেই ‘কবিত্ব’ বলার মতো বিষয় নয়। যেমন– বিদ্যাপতি, জয়দেব বা ভারতীয় ছবি ছানবিন করে খানকয়েক তুলে আনা নাম। পপুলার ছবির মধ্যে নাট্যকার বা কবি যাই হোক না কেন– ‘সিলসিলা’ বা ‘সাজন’-এ কবিত্বের কোনও পায়ের ছাপ ছবির নির্মাণে কোথাও নেই। উত্তমকুমারের ‘শিল্পী’ ছবিটা, লক্ষ করলে দেখা যাবে, ১৯৫৬ সালেই রিলিজ করে। সেখানে খুব মেলোড্রামাটিক ভাবে এক চিত্রকরের যন্ত্রণা আর অনুভব দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এর অর্থ খুব সোজা– ১৯৫০ থেকে যে ছবিগুলো সর্বভারতীয় স্তরে বানানো হচ্ছে সেখানে বারবার, এমনকী, মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবিতেও কীভাবে কোন দৃষ্টিতে আমরা জগৎটাকে দেখব, সে প্রশ্ন কেউ কেউ তুলছিলেন শিল্পী বা কবি অথবা অভিনেতাকে গল্পের কেন্দ্রে রেখে। ১৯৪৮ সালে উদয়শংকর ‘কল্পনা’ তৈরি করেন। যেখানে নাচ পারফরম্যান্স আর সমাজ-বদল একসঙ্গে মিশেছিল। ১৯৬১-তে ‘কোমল গান্ধার’-এর কেন্দ্রে আছে অভিনয় থিয়েটার নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষদের দিন-রাত। অনুভবের বদল।

‘পিয়াসা’ ছবিতে টাকা খুব বড় জিনিস। বিজয়ের কলেজ প্রেম ভেঙে যায় টাকার খেলায়। ভাই-বন্ধুদের নাচায় টাকা। টাকার জন্য মরা মানুষ জ্যান্ত হয়, জ্যান্ত ঘোষিত হয় মরা বলে। আর তার মধ্যে দিয়েই বিজয় ভূতের মতো ঘুরে মরে শহরের পথে পথে। আদিমতম পেশা বা ব্যবসা থেকে ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’র স্তরে স্তরে। নেহরুর গর্বিত ভারতে, সোনাগাছির পথে হাঁটতে হাঁটতে বিচ্ছিরি প্রশ্ন তোলে, যারা গর্ব করে এ ভারত নিয়ে, তারা সব কোথায়? বাজারের সর্বময়তা আর সমাজ, মধ্যবিত্তের একমাত্র আশ্রয় ফ্যামিলি আর তার অর্থহীনতায় ছবিটা জুড়ে বিজয় কী একটা যেন ভেবে যায়। তার যে কবিতা-বই হিট করে রাতারাতি তাকে দ্রষ্টা বানিয়ে ছেড়েছে সে বই প্রেমের কবিতার। গত দিনের কবিতার। সারা ছবি জুড়ে বিজয় যা ভাবল, তার নৈঃশব্দ্য দিয়ে, একেবারে শেষকালে সেইটে সে বলে দিয়ে যায়। এই যে এত কিছু, এত এত টাকা খ্যাতি, প্রেম নামক তামাশা, এই উৎকট সমাজটায় যদি গোটা দুনিয়াটাই হাতের মুঠোয় ধরা যায়, তাতে কার কী লাভ! বিজয় পাল্টে গিয়েছে। অনুভবনের আদ্যন্ত বদল ধরা পড়ে বলেই আধুনিকতায় শিল্প-সাহিত্যে কবির গুরুত্ব অপরিসীম।

গুরু দত্ত উদয়শংকরের স্কুলে নাচ শিখেছিলেন। তাঁর প্রিয় বোন ললিতা লাজমি ভারতের ছবি আঁকিয়েদের মধ্যে স্যুররিয়াল ধারায় কাজ করেছেন আমৃত্যু। অনেকে ফ্রিদা কাহলোর ছবির সঙ্গে তাঁর ছবির তুলনা করেন। কিন্তু তাঁর পুরনো ছবিতে মার্ক শাগালের উপস্থিতি আছেই। কেন এইসব প্রসঙ্গ? ‘পিয়াসা’ ছবির সূত্রপাতের দৃশ্যটি যদি আমরা দেখি তবে শাগালের বিখ্যাত ‘কবির বিশ্রাম’ ছবিটির কথা মনে পড়ে যাবে। টাইটেল কার্ড একটা শালুক-পদ্মে ঢাকা পুকুরে পড়লেও, ছবির চলমানতা শুরু হয় অদ্ভুত এক ফ্রেমে। যেখানে বিজয়, আমাদের কবি, শুয়ে আছেন প্রকৃতির নিচে। শাগালের ছবিতেও দেখব দীর্ঘ এক কবি-শরীর গড়ে তুলেছে পেইন্টিংয়ের নতুন ফ্রেম। তার ওপর আকাশ প্রকৃতি। কবি পাশ্চাত্যে আধুনিকতার কেন্দ্রীয় চরিত্র। গুরু দত্ত তাঁর ছবিতে সেই কবিকে সাধারণের কাছে এনে দিতে চাইছিলেন। আর সেই গল্পে তাঁর ধারক ছিল বম্বে দিল্লি বা মাদ্রাজ নয়, কলকাতা। সাহির লুধিয়ানভির লিরিক শোনার সময় মনে রাখা দরকার যে, এঁরা ছিলেন বামপন্থী ভাবনায় সক্রিয় অংশীদার। অনেক কিছু একসঙ্গে মিলে গড়ে ওঠা ছবি যদি ওয়াহিদা রহমানের গল্পে মুখ লুকোয়, তবে গুরু দত্ত-কে বোঝা যাবে না। এঁদের ভাবনার আন্তর্জাতিকতা নিয়ে চারপাশের ঘটনা বিস্তার নিয়ে তাকালে ছবির ভেতরকার কিছু খবর পেলেও পেতে পারি। সিনেমা যদি বিনোদনেই শেষ হয়ে যায় তা হলে হাজার শতবর্ষেও ভারতীয় দর্শককে সিনেমার দর্শক করে তোলা যাবে না।

বসন্তকুমারের কপাল ফেটে গিয়েছিল পাতকুয়োর পাড়ে পড়ে গিয়ে। ফাটা কপাল দেখে মা ওঁর দ্বিতীয় নামে ডাকাটাই চালু করেন। গুরুর দান, বেস্পতিবারের সন্তান, গুরু দত্ত। কিন্তু কপালের ফাটা দাগটা ভারতের পাতকুয়ো পাড়ে রয়েই গেল।
… এক, দুই, আড়াই-এর অন্যান্য পর্ব …
৯. গত ২০ বছরে নস্টালজিয়ার এত বাড়বাড়ন্ত কেন?
৮. কলকাতার মূর্তি-আবর্জনা কি বাড়ছে?
৭. ভাবা প্র্যাকটিস করা, কঠিন এখন
৬. লেখার অত্যাচার, লেখার বাঁচা-মরা
৫. বিশ্বকর্মা পুজোর সন্ধেবেলাটার মতো বিষাদ আর হয় না
৪. কথা শেষ হতে পারে, ‘শেষ কথা’ বলে কিছু হয় না
৩. দেখা হলে বলে দিও, আজও বেঁচে আছি
২. ফুলের রং শেষ পর্যন্ত মিশে যায় নন্দিনীর বুকের রক্তের ইমেজে
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved