Robbar

‘মাদার মেরি কামস টু মি’-র বাংলা অনুবাদেও প্রচ্ছদ একই থাকবে

Published by: Robbar Digital
  • Posted:December 9, 2025 8:56 pm
  • Updated:December 9, 2025 9:19 pm  

বইমেলার মরশুম আসছে। বহু বই প্রকাশিত হবে। প্রতি বছর পুরনো কলকাতা, বাবু সংস্কৃতি নিয়েও বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়। সেখানে তো প্রায়শই হুঁকো, গড়গড়া, মদ, বেশ্যাবাড়ি– সবই থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের কি আপত্তি হয়? ফোটোগ্রাফের জন্য? না কি অরুন্ধতী রায় একজন মহিলা, তিনি ধূমপান করছেন, তাতে আপত্তি?

শুভঙ্কর দে

অরুন্ধতী রায়ের ‘মাদার মেরি কামস টু মি’ বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে সম্প্রতি কেস-কাছারি হল। ‘ভাবাবেগ’ ব্যাপারটা এই ভারতে বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। প্রচ্ছদে অরুন্ধতী রায়কে ধূমপান করতে দেখে, আপত্তি শুধু নয়, এক্কেবারে আইন-আদালত করতেও কেউ কেউ পিছপা হননি। যদিও বিচারে এই আপত্তি ধোপে টেকেনি। বিচারক বলেছেন, বইয়ের ভেতরে প্রকাশকের তরফে উল্লেখ রয়েছে যে, কোনওভাবেই এই ছবি ধূমপান করতে বাকিদের উৎসাহিত করছে না। তবে, ব্যাপারটা মজার যে, একটা বইয়ের প্রচ্ছদকে কেন্দ্র করে এতসব কাণ্ড ঘটে গেল!

এ তো গেল সাম্প্রতিক এক ইংরেজি বইয়ের কথা। কিন্তু ২০১১ সালে, দে’জ পাবলিশিং থেকেই একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল– নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আপনি তুমি রইলে দূরে: সঙ্গ নিঃসঙ্গতা ও রথীন্দ্রনাথ’। রবীন্দ্রনাথের যে মতাদর্শ ও জীবনপদ্ধতি, তাতে রথীঠাকুর খুব একটা ‘ফিট’ করেন না বলেই হয়তো শান্তিনিকেতনে রথীঠাকুর নিয়ে একটা অ্যালার্জি আছে। আমাকে প্রথম ওঁকে নিয়ে এই বই করার কথা বলেছিল নীলাঞ্জনই। আমাকে নিয়ে গিয়েছিল মীরা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি, জয়ব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। জানতে চায়, যে এ কাজ আমি করব কি না। আমি তো একপায়ে রাজি! কাজটা হয়। শান্তিনিকেতনে এই বইয়ের পুরো পাণ্ডুলিপি দেখতে গিয়েছিলাম। নীলাঞ্জন পুরোটাই তৈরি করে রেখেছিল, এমনকী, প্রচ্ছদটাও। যে প্রচ্ছদটা এই বইয়ে ছাপা হয়েছে শেষমেশ, সেটা নয়। ছিল অন্য একটি ছবি, সম্ভবত গাড়িতে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা রথীঠাকুরের একটি ছবি। সে সময় রথীঠাকুরের অ্যালবামও দেখিয়েছিল আমায়। আমি অ্যালবামে রথীঠাকুরের সিগারেট ঝোলানো ছবিটা দেখতে পাই এবং তৎক্ষণাৎ নীলাঞ্জনকে বলি, ‘এই ছবিটা নিয়ে প্রচ্ছদ করো, আমার মনে হয় ভালো হবে।’ নীলাঞ্জন এই ছবি নিয়েই প্রচ্ছদটা করেছিল।

বইপ্রকাশের পর পর অনেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। প্রথম আপত্তি, কেন এই বই প্রকাশিত হল। দ্বিতীয় আপত্তি, সিগারেট ঠোঁটে রথীন্দ্রনাথের ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ কেন করা হয়েছে! প্রচ্ছদ বিষয়ে আমাকে প্রথম যিনি আক্রমণ করেছিলেন, তিনি আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়, সুবিমল লাহিড়ী। আমি উত্তরে বলেছিলাম, ‘ভেতরে যদি লিখে দিতাম, সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর– তাহলে কি ঠিক হত?’ সুবিমলদা বললেন, ‘অপু, তুমি মজা করছ?’ ‘একজন মানুষ, যিনি সচেতনভাবে নিজের ছবি তুলিয়েছেন, ঠোঁটে সিগারেট নিয়ে, সেখানে আমার কীসের আপত্তি! এ ছবি তো কেউ গোপনে তোলেনি। বুঝেই নিতে হবে তাঁর সম্মতি আছে।’ বলেছিলাম আমি।

বইমেলার মরশুম আসছে। বহু বই প্রকাশিত হবে। প্রতি বছর পুরনো কলকাতা, বাবু সংস্কৃতি নিয়েও বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়। সেখানে তো প্রায়শই হুঁকো, গড়গড়া, মদ, বেশ্যাবাড়ি– সবই থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের কি আপত্তি হয়? ফোটোগ্রাফের জন্য? না কি অরুন্ধতী রায় একজন মহিলা, তিনি ধূমপান করছেন, তাতে আপত্তি?

ঠাকুরবাড়ির নিয়ম-নিষেধাজ্ঞা, গোপনীয়তাকে ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছিল রথীঠাকুরের এই ছবিটি। রথীন্দ্রনাথের যাপনের সঙ্গে সমার্থক হয়ে যাওয়া ওই ছবিটিই তাই প্রচ্ছদ হিসেবে আমার এত আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। অরুন্ধতী রায়ের এই বইটির ক্ষেত্রেও চোখ টানে প্রচ্ছদ।

‘মাদার মেরি কামস টু মি’– বইটির বাংলা স্বত্ব কিনেছি আমরাই। বাংলায় অনূদিত হবে এই বই। সম্প্রতি অরুন্ধতী রায়ের এজেন্টের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। ওঁকে বারবার করে একটা কথা বলেছি– ‘প্রচ্ছদটা কিন্তু আমরা একই রাখব।’

উনিও, বলা বাহুল্য, আপত্তি করেননি।

…………………….

রোববার.ইন-এ পড়ুন শুভঙ্কর দে-র অন্যান্য লেখা

…………………….