মাঝে মাঝে কখনও হাওয়াবাতাস পাল্টে যায়। মেঘ ছেঁড়া আলো এসে পড়ে জীবনে। এই যেমন হঠাৎ জানতে পেরেছি আমার একগুচ্ছ বই বেরচ্ছে খুবই শিগগির! একগুচ্ছ মানে, পাঁচখানি বই। দু’টি সংকলন বেরচ্ছে ‘পত্রভারতী’ থেকে বইমেলার সময়, ‘নানা রঙের নবনীতা’ ও ‘সারা পৃথিবীর কবিতা’। আর তিনটি বইয়ের বিচরণ কিন্তু ভারতের বাইরে!
শব্দটার মানে এখন রাজনৈতিক। কিন্তু আমরা নানারকম হাওয়ায় ভেসে বেড়াই। হাওয়া কি একটা? সে তো দিবারাত্রি বদলাচ্ছে। এই তো তিনতলায় আমি ক্যানসারের হাওয়ায় ভাসছি আর দোতলায় পিকোলো ডেঙ্গুর আলিঙ্গনে। কিন্তু হাওয়াবাতাস তো এখানেও শেষ নয়। বিরাট বিশ্ব বাহু মেলি লয়। মাঝে মাঝে কখনও হাওয়াবাতাস পাল্টে যায়। মেঘ ছেঁড়া আলো এসে পড়ে জীবনে।
এই যেমন হঠাৎ জানতে পেরেছি আমার একগুচ্ছ বই বেরচ্ছে খুবই শিগগির! আমি তো ভেবেছিলাম আর বই বেরবে না, কিন্তু কীরকম হাওয়াবদল হয়ে গেল! একগুচ্ছ মানে, পাঁচখানি বই। দু’টি সংকলন বেরচ্ছে ‘পত্রভারতী’ থেকে বইমেলার সময়, ‘নানা রঙের নবনীতা’ ও ‘সারা পৃথিবীর কবিতা’। সারা পৃথিবীর কথাই যখন উঠল, তবে বলি যে, আর তিনটি বইয়ের বিচরণ কিন্তু ভারতের বাইরে! নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত পাবলিশিং হাউজ ‘আরকিপেলাগো’ আমার কাছ থেকে একটি কবিতার বই চেয়েছে। আমার ‘তুমি মনস্থির করো’ বইটি আমার ছোট্ট মেয়ে নন্দনা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিল, ‘মেক আপ ইওর মাইন্ড’ নামে। সেই বইটি পড়ে ওরা নন্দনার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার একটি কবিতা সংকলন ছাপানোর জন্য উৎসাহী হয় নন্দনার অনুবাদে। বইটি অবিলম্বে বেরবে, কনট্র্যাক্ট আর কভারও চলে এসেছে। নন্দনা আর আমার যুগলবন্দিতে কাজ করা অবশ্য নতুন নয়– ও যখন হার্ভার্ডে পড়ত, তখন আমরা একসঙ্গে অনেক কবিতা অনুবাদ করেছি, যেগুলো প্রকাশিত হয়েছিল মার্কিনি পত্রপত্রিকাতে। ওর লেখা তৃতীয় ছোটদের বই ‘নট ইয়েট!’ বা ‘এখ্খুনি না!’। টুম্পা নিউ ইয়র্ক থেকে আর আমি কলকাতাতে বসে ‘ফেসটাইম’ আর ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এর কল্যাণে একসঙ্গে বাংলায় অনুবাদ করেছি। আমরা, মায়েতে-মেয়েতে একসঙ্গে কাজ করতে ভালবাসি। আমার অনেক গদ্যলেখা আমার বড় মেয়ে অন্তরাও অনুবাদ করেছে।
আমার অনেকদিন ধরে না বেরনো ‘চন্দ্রাবতী’র অনুবাদ প্রায় ২০ বছর ধরে পড়েছিল, আমার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে। সেই বই এতদিন পর বেরচ্ছে উর্বশী বুটালিয়ার উৎসাহে ও ভালবাসায়, ওর প্রকাশনা ‘জুবান’ থেকে। চন্দ্রাবতীর অনুবাদ বেরনোটা আমার কাছে খুব জরুরি– তাই খুবই আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু আমি স্বভাবতই অলস, তাই আমার জরুরি লেখাও ছাপাখানা অবধি অনেক সময় পৌঁছায় না। এই পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতিতে আমাকে প্রাণপণ সাহায্য করেছে আমার বিভাগের দুই নাতি ছাত্র– অর্ণব দত্ত, যুধাজিৎ সরকার এবং সঙ্গে আমার উৎসাহী সহকারিণী তিয়াস বসু। বইটার সব কাজই প্রস্তুত ছিল, তা সত্ত্বেও আমি পাঠাইনি কোথাও, আমার আলস্যের কারণে।
পড়ুন নবনীতা দেবসেন-এর আরও একটি লেখা: অল্রাইট কামেন্ ফাইট্! কামেন্ ফাইট্!
একদিন নন্দনা উর্বশীকে ফোন করে বলল, এই অদ্বিতীয় বইটা ওর এখনই পড়া দরকার। ভারতীয় মানবীবিদ্যার অনেক জরুরি বই এই ফেমিনিস্ট প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। চন্দ্রাবতী বিষয়ে আমার উৎসাহ এবং সে বিষয়ে লেখালেখি শুরু বিশ বছর আগে। আশা করি বইটা চোখে দেখে যেতে পারব উর্বশীর কল্যাণে ও টুম্পার তাড়ায়।
স্টকহোম থেকে বেরচ্ছে আমার পাঁচটা উপন্যাস ‘অডিও বুক’ হয়ে– ‘অন্যদ্বীপ’, ‘প্রবাসে দৈবের বশে’, ‘রামধন মিত্তির লেন’, ‘ইহজন্ম’ আর ‘তিতলি’। এর আগে আমার কোনও ‘অডিও বুক’ হয়নি। হঠাৎ একদিন নন্দনা ফোন করে বলল, ‘জানো কি মা, তোমার পাঁচটা বই অডিও বুক হয়ে বেরচ্ছে সুইডেন থেকে?’ ওকে অন্যরা কনট্যাক্ট করেছিলেন অভিনেত্রী হিসেবে, যদিও আমি এ বিষয়ে কিছু জানতাম না! ইতিমধ্যে একদিন নন্দনা গিয়ে ‘প্রবাসে দৈবের বশে’—র রেকর্ডিংও করে এসেছে। যে কোনও নতুন জিনিসে আমার উৎসাহ– তাই খুবই মজা পাচ্ছি!
আরও মজার কথা, এই ‘অন্যদ্বীপ’ বইটি অনেক বছর আগেই বাংলার প্রথম ই-বুক হয়ে ফ্লপিতে বেরিয়েছিল– শুভেন্দু বলে দুর্গাপুরের একটি পথিকৃৎ যুবক পরম উৎসাহে প্রকাশ করেছিল প্রায় ১৯-২০ বছর আগে। ‘অন্যদ্বীপ’ প্রত্যেকটি ফ্লপি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। ফ্লপি তো আর আমরা কেউ দেখি না এখন– ‘ফ্লপি ড্রাইভ’ কাকে বলে সে তো আজকালকার ছেলেপুলেরা জানেই না।
হাওয়াবদল তো একেই বলে! তাই না?
২৭.১০.২০১৯
২৫ বৈশাখের সময় যেমন অনেক সময়েই সঞ্চালক হিসেবে থেকেছি স্টুডিও-তে, কখনও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কখনও রবীন্দ্র সদনের অনুষ্ঠান দেখানোর ফাঁকে ফাঁকে বলেছি রবীন্দ্রনাথের কথা, পড়েছি তাঁর রচনা থেকে, ঠিক সেই ‘গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড’ পদ্ধতিতে পুজোর বৈঠক সম্প্রচারিত হত।