বৃদ্ধা তখন ছেলেটিকে ধন্যবাদ দিলেন কারণ, ভাগ্যিস ছেলেটা লাঠিটা তুলে হেল্প করেনি, তাই তো তাঁকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে হল আর উনি নির্ঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেন। বিজ্ঞাপনের আলটিমেট বক্তব্য হল– এই স্টার চকোলেট যখন খাবে Do Nothing. অর্থাৎ, ইয়ং জেনকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে যে, যখন এই স্টার চকোলেট খাবে তখন বাড়িতে আগুন লাগল বা হঠাৎ বাড়িতে কারওর হার্ট অ্যাটাক করলে চিন্তার কিছু নেই, তোমায় কিচ্ছু করতে হবে না, Do Nothing, শুধু চকোলেট খেয়ে যাও। সব আপনি আপনি ঠিক হয়ে যাবে।
কিছুদিন আগে হঠাৎ আমার এক বন্ধু উত্তেজিতভাবে ফোন করে জিজ্ঞেস করল যে, আমি একটি বিখ্যাত চকোলেট কোম্পানির স্টার চকলেটের একটা চালু বিজ্ঞাপন দেখেছি কি না। আমার এই বন্ধুটি প্রখ্যাত সাংবাদিক, ওর করা বহু সারা জাগানো ডকু ফিল্ম বিশ্বজোড়া খ্যাতি ও পুরস্কৃত। ভাবলাম এমন এক মানুষ যে বিজ্ঞাপন জগৎ সম্পর্কে খুব ই ওয়াকিবহাল, সে এই বিজ্ঞাপনটি নিয়ে এত উত্তেজিত কেন! ইউটিউবে গিয়ে চট করে বিজ্ঞাপনটি আবার দেখলাম। জিজ্ঞেস করলাম কেন সে এত উত্তেজিত। ওর বক্তব্য হল, যারা এই ধরনের বিজ্ঞাপন করে, তারা কি সামাজিক সভ্যতা-ভব্যতা, সুস্থ ভাবনার মাথা খেয়ে যে করেই হোক একটা ‘উইয়ার্ড’ বিজ্ঞাপন করে চকোলেট বিক্রি করবে? আর আমাদের দেশের দিকভ্রান্ত ইয়ং জেনারেশন ওগুলো ফলো করবে? একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি কী করে এই ধরনের বিজ্ঞাপন বাজারে প্রচার করে?
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
ব্র্যান্ড বাজাও। পর্ব ১৬ : বিজ্ঞাপনের গোলকধাঁধায় চিকিৎসাও পণ্য!
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
সত্যি তো, কী অসম্ভব নেগেটিভ ভাবনা! পথের ধারে একটি বাড়ির সামনে চেয়ারে বসে থাকা একজন বৃদ্ধার পথ চলার সম্বল লাঠিটা তাঁর হাত থেকে রাস্তায় পড়ে গ্যাছে। সামনেই একটি তরুণ যুবক দাঁড়িয়ে চকোলেট খাচ্ছিল। বৃদ্ধার শত অনুরোধেও ওই তরুণ লাঠিটা তুলল না। সে আপনমনে তার চকোলেটটি খেয়ে গেল। শেষমেশ বৃদ্ধা যখন নিজে চেয়ার ছেড়ে উঠে লাঠিটা নিতে গেলেন তখন হঠাৎই ওপর থেকে একটা সিমেন্টের চাঙর ভেঙে বৃদ্ধার ওই চেয়ারের ওপর পড়ল। ছেলেটি কিন্তু চকোলেট খেয়েই চলেছে, এতই তার স্বাদ। বৃদ্ধা তখন ছেলেটিকে ধন্যবাদ দিলেন কারণ, ভাগ্যিস ছেলেটা লাঠিটা তুলে হেল্প করেনি, তাই তো তাঁকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে হল আর উনি নির্ঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেন। বিজ্ঞাপনের আলটিমেট বক্তব্য হল– এই স্টার চকোলেট যখন খাবে Do Nothing. অর্থাৎ, ইয়ং জেনকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে যে, যখন এই স্টার চকোলেট খাবে তখন বাড়িতে আগুন লাগল বা হঠাৎ বাড়িতে কারওর হার্ট অ্যাটাক করলে চিন্তার কিছু নেই, তোমায় কিচ্ছু করতে হবে না, Do Nothing, শুধু চকোলেট খেয়ে যাও। সব আপনি আপনি ঠিক হয়ে যাবে।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
ব্র্যান্ড বাজাও। পর্ব ১৫: বাঘ-ছাগলকে একঘাটে জল খাওয়াতে পারে যে চা
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
ভাবুন তো একবার। কী সর্বনেশে কথা! আমরা জানি যে, বিজ্ঞাপনের প্রভাব সমাজে খুবই প্রকট। ভালো-খারাপ– দু’দিকের পাল্লাও সমান ভারী। এই বিজ্ঞাপনটি যুবসমাজকে কোনদিকে ঠেলতে চায় একবার ভাবুন। এবার বুঝলেন আমার বন্ধুটি কেন এত উত্তেজিত হয় ফোন করেছিলেন। আমার বিজ্ঞাপন জগতের মানস গুরু বিল বার্নব্যাচ শিখিয়েছিলেন ‘Advertising must be honest’. আমি বন্ধুকে বোঝালাম যে, এই বিজ্ঞাপনটা ভাবার নেপথ্যে একটা স্ট্রাটেজি কাজ করছে। স্টার চকোলেটের টার্গেট অডিয়েন্স হচ্ছে বিজ্ঞাপনে দেখানো ওই বয়সের ছেলেরা, যারা পথে-ঘাটে, নানা পরিবারে লক্ষ করলে দেখা যাবে বেশ আত্মকেন্দ্রিক টাইপের। ছোট ছোট পরিবার, ছোট ছোট ফ্ল্যাট,ছোট ছোট মন। নিজেরটি ছাড়া অন্য কারও ব্যাপারে সাড়া দেওয়ার দরকার খুব একটা মনে করে না। সেই চরিত্রটাই খুব স্ট্রাটেজিক্যালি এখানে প্রজেক্ট করা হয়ছে। যদি বিজ্ঞাপনে উল্টোটা দেখানো হত, যেমন, ছেলেটা তাড়াতাড়ি চকোলেট খাওয়া থামিয়ে ওই বৃদ্ধার লাঠিটা তুলে দিত এবং হাত ধরে একটু এগিয়ে দিত এবং বৃদ্ধা খুশি হয়ে তার ঝোলা থেকে একটা স্টার চকোলেট বের করে ওই ছেলেটিকে দিয়ে বলতেন যে, আমার নতির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু তুমিই এটার যোগ্য। আর যদি লাস্ট স্লোগানটা হত– Do the Right thing to Win a Star, তা হলে ওই টার্গেট অডিয়েন্স হয় তো বলত ‘বোরিং’…
আপনারা যাঁরা এই লেখাটি পড়ছেন, তাঁদের বলব, চোখ-কান খুলে একটু লক্ষ রাখুন যে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের বিহেভিয়ারাল প্যাটার্ন কী অদ্ভুত! আর তাদের প্রলুব্ধ করতে এই ধরনের স্ট্রাটেজিকাল নেগেটিভ বিজ্ঞাপন, অবাক বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কী?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved