আরও একজন বৃদ্ধ মানুষ ছিলেন, তাঁকে আমরা ‘মেসোমশাই’ বলে ডাকতাম। তিনি বহু দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে আসতেন, দু’-তিনমাস পরপর। আমাদের পঠিত ‘রোববার’, সে অনেক পুরনো হলেও ক্ষতি নেই, পাঁচ-ছয়টি করে নিয়ে যেতেন। পরিবর্তে নিয়ে আসতেন তাঁর গাছের দু’-একটি নারকেল। তখনই তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৮০! তিনি আর নেই। পুরনো ‘রোববার’ পত্রিকা নাড়াচাড়া করার সময় তাঁকে খুব মনে পড়ে। তাঁর মুখখানি ওই পত্রিকাগুলো হাতে নিয়ে ভারি উজ্জ্বল হয়ে উঠত। সেই আলোকিত মুখখানি স্মৃতিতে অম্লান হয়ে রয়েছে। আঠেরো, পাঠেরও-এর প্রথম লেখা আজ। লিখেছেন মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ী
খনাদি বললেন, ওমা, তুমি ‘রোববার’ পড়ো না! আমার কাছে আছে, দেব? খুব ভালো পত্রিকা!
সেটা ১৬-১৭ বছর আগেকার কথা। উনি আমাকে কয়েকটি ‘রোববার’ পড়তে দিলেন। আমি মুগ্ধ! ঋতুপর্ণ ঘোষকে ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগে একজন শিল্পচেতনাসমৃদ্ধ সুদক্ষ চিত্রপরিচালক হিসেবে, তাঁর সিনেমা দেখে বড় মুগ্ধ হই, এত নিখুঁত-নিপুণ শিল্পকর্ম কীভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয় ভেবে বিস্মিত হই, তাঁর সম্পাদিত পত্রিকাও এত সুন্দর! তক্ষুনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, চেয়ে-চিন্তে নয়, একেবারে নিজে কিনে পড়তে হবে এই পত্রিকা। কিনে রাখতে হবে। সেই থেকে আজ অবধি কোনওদিন ‘রোববার’ পড়া বন্ধ হয়নি আমাদের পরিবারে।
‘রোববার’ পড়া চলতে লাগল। প্রতিটি সংখ্যাই স্বতন্ত্র ও অনন্য। ভাইবোনেদের খবর দিলাম। তারাও রে-রে করে পড়তে লাগল। আমাদের বাড়ির ছেলেটি তখন আট-নয় বছরের বালক। সে এই পত্রিকা পড়তে পারে না, কিন্তু অন্যদের পড়ার আগ্রহ দেখে সে খুব উৎসুক হয়ে উঠল পত্রিকায় কী আছে জানতে। তখন আমি মহাভারতের ধারাবাহিক অংশগুলো পড়ে তাকে নিজের ভাষায় বলতাম। সে মন দিয়ে শুনত, বিচার-বিশ্লেষণ করত, প্রশ্ন করত। নিশ্চয়ই সেই মহাগ্রন্থের আলোচনা, তা সে যতটুকুই হোক, তার জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে থাকবে! পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে গেলে তার জন্য প্রতিটি সংখ্যাই গুছিয়ে রাখতে হত সে এসে পড়বে বলে। এখনও সেই নিয়ম অব্যাহত আছে।
আরও একজন বৃদ্ধ মানুষ ছিলেন, তাঁকে আমরা ‘মেসোমশাই’ বলে ডাকতাম। তিনি বহু দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে আসতেন, দু’-তিনমাস পরপর। আমাদের পঠিত ‘রোববার’, সে অনেক পুরনো হলেও ক্ষতি নেই, পাঁচ-ছয়টি করে নিয়ে যেতেন। পরিবর্তে নিয়ে আসতেন তাঁর গাছের দু’-একটি নারকেল। তখনই তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৮০! তিনি আর নেই। পুরনো ‘রোববার’ পত্রিকা নাড়াচাড়া করার সময় তাঁকে খুব মনে পড়ে। তাঁর মুখখানি ওই পত্রিকাগুলো হাতে নিয়ে ভারি উজ্জ্বল হয়ে উঠত। সেই আলোকিত মুখখানি স্মৃতিতে অম্লান হয়ে রয়েছে।
রোজ ঘুমনোর আগে কিছু পড়তে ইচ্ছে করে। তখন হালকা অথচ তথ্যে ভরপুর, জ্ঞানে সমৃদ্ধ আবার সাহিত্যগুণে সরস এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি হয় আমার সঙ্গী। কোনও কোনও সংখ্যায় নিয়মিত লেখাগুলোর মত ঝরঝরে গল্পও থাকে। ভালো লাগে পড়তে। প্রতিদিন একটু একটু করে পড়তে পড়তে যেদিন পত্রিকাটি পড়া শেষ হয়, তৃপ্তির রেশটুকু থাকতে থাকতেই এসে যায় নতুন ‘রোববার’। সুতরাং কখনও সঙ্গীহারা হই না।
যখন ঋতুপর্ণ অসময়ে স্বর্গবাসে চলে গেলেন, তাঁর বিদায়ের গভীর বেদনার মধ্যে পত্রিকাটির কথাও মনে হয়েছিল। থাকবে তো, টিকে থাকবে তো পত্রিকা? তারপর দেখলাম, সকল সংশয় দূর করে ‘টিম রোববার’ সামলে নিয়েছেন গুরুতর ধাক্কাটি। এখন সম্পাদকীয় লেখা হয় অতি চমৎকার, সহযোগী সম্পাদকের লেখাটিও অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে প্রতি রোববার-এই। পত্রিকায় নানা বিষয় নিয়ে লেখা থাকে। সেই বিষয়ের বৈচিত্র ভেবে দেখবার মতো। প্রত্যেকটি লেখা মনে রেখে দেওয়ার মতো। প্রচ্ছদটি হয় অতি মনোগ্রাহী! প্রতি সপ্তাহে এমন মননে দাগ রেখে যাওয়া নিখুঁত পত্রিকা প্রকাশ বুঝি টিম রোববারের পক্ষেই সম্ভব! নেহাত এলেবেলে মানুষ, উপায় থাকলে একখানা পুরস্কার দিতাম।
‘রোববার’ এমনই আদরণীয় হয়ে থাকুক পাঠকের কাছে, চিরকাল। অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা ‘রোববার’কে।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved