পল্টু রানারের বউ জবাকে পুলিশের জেরাটা একটু তালগোল পাকিয়ে আছে। এক মহিলা পুলিশকে বসিয়ে রেখে রাহুল স্যর জেরা করেছে। জেরা না গল্প? সে কতরকম কথা। বলেছে, কোনও ভয় নেই। স্রেফ এলাকার খবর জানতে জিজ্ঞাসাবাদ। একবার বলেছে, পল্টু কেমন? একবার বলেছে, গোবিন্দ কে? লোকটার কাছে সব খবর আছে। জবার তো মাঝসাগরে পড়ার হাল। খবর পেয়ে পল্টু ছুটে গিয়েছে থানায়। বসে থাকতে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। কী চিন্তা, কী চিন্তা! শেষে জবা বেরতে স্বস্তি। কী যে বলে এসেছে, ভগবান জানেন। তারপর থানা থেকে বেরনোর আগে রাহুল পল্টুকে বলেছে, ‘তোমাকে একদিন আসতে হবে। সব ঠিকঠাক ভেবে রেখো কিন্তু।’
১৮.
এর মধ্যে তিনটে ঘটনা।
এক, রাহুলের সঙ্গে পোস্টমাস্টারের কথা হয়েছে। এখানে সুমিতের অভিজ্ঞতা, বাছাই কিছু লোককে কেমন লাগে, টিলার ওপর সন্দেহজনক কিছু নজরে পড়েছে কি না, এসব প্রশ্ন। সুমিতের উত্তর মেঘের মতো ভাসা ভাসা। রাহুল মনে মনে বিরক্ত হয়েছে, লোকটার সমাজসেবার শখ, অথচ কবি কবি মন। ঝামেলার সময় চোখ বুজে থাকব। ঘটনাস্থল থেকে সরে গিয়ে এর-ওর বাড়িতে বসে জীবনচর্চা করব। অপদার্থ!
দুই, মাধাইয়ের সঙ্গে রেশমির ভাব বেড়েছে। মহিলা সংগঠন বাড়ি বাড়ি করতে হবে, মাধাইকে সাহায্য করছে রেশমি। বিদ্যুৎরা আবার ছোবল মারতে পারে। তার সুযোগ দেওয়া যাবে না। এলাকায় চাই দুর্ভেদ্য দুর্গ। রেশমির সন্দেহ ছিল সেদিনের হামলায় মাধাইরা জড়িত ছিল না। এখন কথা বলে নিঃসন্দেহ, মাধাই সংগঠন করে বটে, কিন্তু ওসব অস্ত্রশস্ত্র , হামলায় নেই। সমাজের মধ্যে থেকে লড়াই। রেশমির ভালো লেগেছে। তাছাড়া আরেকজনকে দেখাতে হবে মানুষের জন্য সাহস করে কাজ করা যায়। ওই দাতব্য চিকিৎসাশিবির অবধি যার দৌড়, আসল বিপদে যে সরে পড়ে নিরাপদ দূরত্বে, তাকে দেখানোর একটা তাগিদ রেশমি অনুভব করছে। কঠিন লড়াইয়ের সময়ে সুমিতের উদাসীনতা ভাবলেই পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে। এরকম ভিতুর প্রতি এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল সে, এটা ভাবলে নিজের ওপরেই রাগ আরও বাড়ছে।
তিন, পল্টু রানারের বউ জবাকে পুলিশের জেরাটা একটু তালগোল পাকিয়ে আছে। এক মহিলা পুলিশকে বসিয়ে রেখে রাহুল স্যর জেরা করেছে। জেরা না গল্প? সে কতরকম কথা। বলেছে, কোনও ভয় নেই। স্রেফ এলাকার খবর জানতে জিজ্ঞাসাবাদ। একবার বলেছে, পল্টু কেমন? একবার বলেছে, গোবিন্দ কে? লোকটার কাছে সব খবর আছে। জবার তো মাঝসাগরে পড়ার হাল। খবর পেয়ে পল্টু ছুটে গিয়েছে থানায়। বসে থাকতে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। কী চিন্তা, কী চিন্তা! শেষে জবা বেরতে স্বস্তি। কী যে বলে এসেছে, ভগবান জানেন। তারপর থানা থেকে বেরনোর আগে রাহুল পল্টুকে বলেছে, ‘তোমাকে একদিন আসতে হবে। সব ঠিকঠাক ভেবে রেখো কিন্তু।’ তার মানে জবার কথা থেকে মানুষটা কিছু সন্দেহ করেছে। বাড়ি ফিরে জবাকে হাজার প্রশ্ন করেছে পল্টু। জবা পুরো ঘেঁটে আছে। এটুকু বলতে পারছে, টিলার ওপরের মহিলাদের নিয়ে পুলিশের কৌতূহল প্রবল। এটা নিয়ে পল্টু চিন্তায়। কারণ ওই দু’-একজনকে নিয়ে তার একটু সন্দেহ হলেও টুকটাক উপরি টাকার জন্য চোখ বুজে ছিল। পুলিশকেও বলেনি। জবার কথা থেকে পুলিশ যদি কোনও ইঙ্গিত পায়, তাহলে পরে তাকেও টানাটানি না করে। জবা যে কী বলেছে, আর কী বলেনি, সেটারই তো ঠিক নেই। তবে আপাতত নিচের গোবিন্দপর্ব মাথায় উঠেছে। টিলার ওপর থেকেই নামতে চাইছে না জবা। পুলিশের ভয়টা মাথার মধ্যে ঢুকে গিয়েছে।
অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটল হঠাৎ। রাহুল রাতে তখন শুয়ে পড়েছে। থানার বড়বাবু এসে হাজির। জরুরি। কনস্টেবল জহুরি আর রতন হাঁটতে হাঁটতে ফিরছিল। টহলই বলা যায়। ওধারে প্রতিমার ঘরের সামনে জানলা দিয়ে আসা আলো পড়ছিল বাইরে, হ্যারিকেন বা লম্ফ হবে। সঙ্গে প্রতিমার ছায়া। মহিলা তখনও ঘুমোয়নি। দুই কনেস্টবলের কিছু সন্দেহ হয়নি। কিন্তু আরেকটু এগতেই তারা দেখেছে প্রতিমা গ্রামের দিক থেকে ফিরছে। চমকে গিয়ে ওরা জিজ্ঞেস করেছে, ‘কোথায় গেছিলে? আর তাহলে তোমার ঘরে কে?’ আধপাগলা ভাব করে আগোছালো উত্তর দিয়ে চলে গিয়েছে প্রতিমা। কনেস্টবলরা এসে থানায় জানিয়েছে। বড়বাবু রাহুলকে বললেন।
রাহুল চটে লাল, ‘সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমার ঘরে না গিয়ে এতটা সময় নষ্ট করলেন? এই আপনাদের কাণ্ডজ্ঞান! চলুন এখনই!’
রাহুল ভাবল যদি প্রতিমার সেই বোন বা কেউ এসে থাকে, তাহলে তো ওখানেই থাকবে। কিন্তু যদি কেউ না থাকে? তার মানে ওখানে কেউ এসেছিল।
রাহুলের সন্দেহ সত্যি হল। প্রতিমা ছাড়া ঘরে কেউ নেই। আর প্রতিমা বলে চলেছেন, তিনি একাই থাকেন। কেউ আর আসেনি।
দুই কনস্টেবল বলে চলেছে নিশ্চয়ই কেউ ছিল।
রাহুল তাদের দিকে আগুনচোখে তাকাল। প্রতিমা আবার সব আগোছালো কথা বলছেন। এখন এই অবস্থায় অন্ধকারে লাগোয়া জঙ্গলে তল্লাশি অসম্ভব। ক্রুদ্ধ রাহুল পুলিশের বাকিদের বলল, ‘অনেক কাজ করেছেন আপনারা। চলুন ফেরা যাক।’
( চলবে)