পরদিনই জেলে নিয়মমাফিক এক সাক্ষাৎপ্রার্থী দেখা করল। মুখে মুখে যা যা বলার, হয়ে গেল। সাক্ষাৎপ্রার্থী ফিরে গিয়ে তার নির্দিষ্ট কাজগুলি, মূলত খবর দেওয়া, সেরে ফেলল। সেলবাসিন্দা সেই খবর পেলেন।
১৯.
বর্ধমান সেন্ট্রাল জেল।
রাত নেমেছে।
ওয়ার্ডগুলো থেকে হল্লাগুল্লা কথার আওয়াজ।
সেল ওয়ার্ড তুলনায় নিস্তব্ধ। লক আপ হয়ে গিয়েছে। যে যার সেলে।
এক রক্ষী আসতে আসতে একটি সেলের কাছে এসে দাঁড়াল।
–তিন নম্বর ওয়ার্ড থেকে খবর আছে দাদা। বোম জগুর খবর। কানে এল।
–কী খবর?
–রানিগঞ্জ থেকে ওদের টিমটাকে কুসুমডিহা পাঠাচ্ছে সুপারি দিয়ে। শ্যামল ফোন করে জগুকে বলেছে। জগু টাকার ডিল বাড়াতে বলল। ওটা আসলামদা শুনেছে। কুসুমডিহা, মানে আপনাদের সব জঙ্গল এলাকা বলে আপনাকে বলে গেলাম।
–হুমম। সাত নম্বর সেল থেকে ফোনটা একটু দিয়ে যাও। নজর রেখো। অন্য কোনও ওয়ার্ডার বা জমাদারবাবু না আসে এদিকে। ইন্টারভিউয়ের জন্য কালকেই লোক ডাকি। ফোনে তো এখন কথা বলাই মুশকিল। যা কথা, সামনে ডেকে। আড়ি পাতলেও পুরোটা বুঝবে না।
তবে সেলবন্দি বক্তাও জানেন এবার যে সিমটা ঢুকেছে, সেটা সম্ভবত পুলিশের নজরে পড়েনি। ফোন সেটটাও পুরনো। স্মার্টফোন নয়। পুলিশের ধরা কঠিন।
অতঃপর একটি ফোন গেল।
পরদিনই জেলে নিয়মমাফিক এক সাক্ষাৎপ্রার্থী দেখা করল। মুখে মুখে যা যা বলার, হয়ে গেল। সাক্ষাৎপ্রার্থী ফিরে গিয়ে তার নির্দিষ্ট কাজগুলি, মূলত খবর দেওয়া, সেরে ফেলল। সেলবাসিন্দা সেই খবর পেলেন।
পরদিন সেলওয়ার্ডের উঠোনে মাওবাদী তিন-চারজনের জটলায় বিষয়টা এল। আলোচনা। শত্রুপক্ষ হামলা করতে বাইরের গুন্ডা পাঠাচ্ছে। রুখতে হবে। সাবধানতার খবর চলে গিয়েছে। এখন উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা।
টার্গেট ঠিক কী, কবে হবে, বোঝা যাচ্ছে না। তবে রানিগঞ্জের টিম মানে বিদ্যুৎ করাচ্ছে। এটা পুরনো খেলা। আর এই ধরনের অপারেশন রাতেই হয়।
দূত এবং দূতের দূত মারফত খবর গিয়েছে কুসুমডিহায়।
মাধাই শুনেছে। একটু চিন্তা। টার্গেট সে-ও হতেই পারে। চোখের সামনে প্রতিবাদী মুখ আর কেউ নেই। তাকে আর তার টিমকে আক্রমণ করে বদলা নিতে পারে বিদ্যুৎরা। সাবধানে থাকা দরকার। কিন্তু কীভাবে সাবধান? বাড়ি ছেড়ে তো থাকা যাবে না, বুড়ো বাপমা-সহ জ্বালিয়ে দিয়ে যাবে বাড়িটা।
মাধাই নিজের টিমের সঙ্গে খানিকটা আলোচনা করল। সাবধানতা সবার দরকার। রেশমিকেও কথায় কথায় বলল। রেশমি উদ্বিগ্ন। বলল, ‘আগে পুলিশকে বলে রাখা দরকার।’
–কিন্তু পুলিশ যদি জিজ্ঞেস করে কীভাবে শুনলে, তখন? মাধাইয়ের প্রশ্ন।
রেশমি বলল, ‘সেটা বড় কথা, নাকি সিকিউরিটিটা বড় কথা?’
শেষমেষ রেশমির উপসংহার, ‘ছেড়ে দাও, তোমাকে বলতে হবে না। আমিই ওই অফিসার রাহুলবাবুর সঙ্গে কথা বলছি।’
রেশমি সময় নষ্ট করেনি। বিদ্যুৎকে বিশ্বাস নেই। দুই সঙ্গিনী-সহ সোজা থানায়, রাহুলের কাছে। যা শুনেছে, সবটা বলল রেশমি।
নড়ে বসল রাহুল। এখনই গ্রামে যথাযথ টহল, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। বড়বাবুকে ডেকে যা বলার বলল।
তারপর রেশমিকে বলল, ‘একটা প্রশ্ন করব?’
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
মাধাই শুনেছে। একটু চিন্তা। টার্গেট সে-ও হতেই পারে। চোখের সামনে প্রতিবাদী মুখ আর কেউ নেই। তাকে আর তার টিমকে আক্রমণ করে বদলা নিতে পারে বিদ্যুৎরা। সাবধানে থাকা দরকার। কিন্তু কীভাবে সাবধান? বাড়ি ছেড়ে তো থাকা যাবে না, বুড়ো বাপমা-সহ জ্বালিয়ে দিয়ে যাবে বাড়িটা। মাধাই নিজের টিমের সঙ্গে খানিকটা আলোচনা করল। সাবধানতা সবার দরকার। রেশমিকেও কথায় কথায় বলল। রেশমি উদ্বিগ্ন। বলল, ‘আগে পুলিশকে বলে রাখা দরকার।’
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
রেশমি বলল, ‘প্রশ্নটা জানি। কিন্তু এই ইনফর্মেশনের সোর্স জানা নেই ধরে নিন। কে দিল খবর, সেটা বড় কথা? নাকি খবরটা আগাম আপনি পেলেন, সেটা বড় কথা?’
রাহুল হেসে বলল, ‘না না, প্রশ্ন সেটা নয়। খবর তো আপনি মাধাই বা ওদের কাছ থেকেই পাবেন। এ আর অনুমান করা শক্ত কীসের? আমি বলছিলাম, আপনি কি পুরো ওদের দিকেই চলে গেলেন?’
–ওদের দিকে মানে? রেশমির কপালে ভাঁজ।
–মানে এই মাধাই-টাধাই, প্রতিবাদী দলবল, মাওবাদীদের দিকে।
–আপনি এত সরলীকরণ করবেন না, একটু যেন ফোঁস করল রেশমি, ‘গরিব মানুষগুলোর হয়ে যারা কথা বলছে, আমার মতো যে কোনও সাধারণ মানুষ তাদের সমর্থন করবে। যদি খবর পাই বিদ্যুতের মতো লোকেরা ভাড়াটে খুনি পাঠাচ্ছে রাগ মেটাতে, আমরা পুলিশকে জানানো ছাড়া আর কীই বা করতে পারি? পুলিশ তাদের কাজ দীর্ঘদিন করেনি বলেই তো অন্যদের প্রতিরোধ করতে হয়। যাই হোক, আপনি বিষয়টা দেখুন। আর মাধাইদের একটু সিকিউরিটির ব্যবস্থা করুন।’
রাহুল বলল, ‘আমাদের যা যা করার সব করব, আপনি বলুন তো আর কাদের খবর দিলেন?’
–মানে?
–মানে ওই মাওবাদী নেতা ব্রহ্মা-টম্ভা।
–যদি পরিচয় থাকত, হয়তো খবর দিতাম। কিন্তু ইদানীং খুব নাম শুনছি বটে, চিনি না। তা ওই লোকটাকে নিয়ে খুব চিন্তিত নাকি? তিনি তো মন্দের যম, তাঁদের কেন নামতে হয়, ভেবে দেখুন।
রাহুল বলল, ‘নাঃ। ঝগড়াই করবেন দেখছি। একটু সাহায্যও তো করতে পারেন।’
–কী সাহায্য বলুন। যদি আমাকে দিয়ে হয়, চেষ্টা করব।
রাহুল রেশমির চোখে চোখ রেখে বলল, ‘এই যেমন, সেদিন রাতে প্রতিমা বলে মহিলার ঘরে আপনি কী করছিলেন, আপাতত সেটা বলে গেলেই চলবে।’
( চলবে)
………………………………………………………………………………………………………………………পড়ুন কুসুমডিহার কাব্যের অন্যান্য় পর্ব………………………………………………………………………………………………………..
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৮: টিলার ওপরের মহিলাদের নিয়ে পুলিশের কৌতূহল প্রবল
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৭: পল্টু জবার পিছনে খরচ বাড়িয়ে ইদানীং এদিক-ওদিক হাত পেতে ফেলছে
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৬: কমরেড ব্রহ্মা কতদিন পালিয়ে বেড়াবে?
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৫: প্রতিমাকে পাওয়া গেল কুসুমডিহায়, মিথ্যে ধর্ষণের মামলায় ফাঁসি হয়েছে তাঁর বরের
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৪: এখন খবরের শীর্ষে কুসুমডিহায় মাওবাদী হামলা আর কমরেড ব্রহ্মা
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৩: কমরেড ব্রহ্মা তাহলে যেখানেই থাকুন, কুসুমডিহার ওপর নজর রেখেছেন
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১২: থমথমে কুসুমডিহাতে টহল দিচ্ছে পুলিশ
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১১: ছদ্মপরিচয়ে কুসুমডিহাতে প্রবেশ পুলিশ ফোর্সের
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১০: শান্ত কুসুমডিহা এখন হিংস্র হয়ে ফুঁসছে
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৯: কুসুমডিহাতে পুলিশ, নেতা, বুদ্ধিজীবী, মহিলা কমিশন, মিডিয়ার ভিড়
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৮: জঙ্গলমহলের তল্লাট থেকে উত্তাপ ছড়াল কলকাতার মিডিয়াগুলির স্টুডিওতেও
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৭: কুসুমডিহাতেই দেখিয়ে দেব আমরা মরে যাইনি
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৬: পরিচয় যত বাড়ছে, সুমিত অনুভব করছে এলাকা গরম হচ্ছে
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৫: পশ্চিমগড়ের মৃতদেহর খবর এখনও কলকাতা সংস্করণে জায়গা পায়নি
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৪: সভা আর প্রচার মানেই বন্দুক ধরা নয়
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৩: ‘বন্দুক হাতে নেওয়া প্রত্যেকটা মেয়েকে সমর্থন করি’
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ২: সিস্টেমের দোষেই কুসমডিহাতে ফের অমঙ্গলের পদধ্বনি, সুমিতকে বোঝাল রেশমি
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১: জঙ্গলমহলের কুসুমডিহার নতুন পোস্টমাস্টার সুমিত, জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে পারবে!
এই সহস্রাব্দীতে বিশ্বের যে তিনটি বড় সংঘর্ষ, ইরাক, ইউক্রেন এবং ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন, সবক’টাই কূটনৈতিক এবং শান্তিপূর্ণভাবে মিটিয়ে নেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু ‘নিয়ন্ত্রিত’ভাবে যুদ্ধ জিইয়ে রাখা হয়েছে। আর তার জন্য বিশ্বজুড়ে নির্মিত হয়েছে বিপুলায়তন স্যাটেলাইট-টিভি নামক এক অ্যাম্ফিথিয়েটার।