টেনশন বলতে টেনশন– ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট দ্বৈরথের অন্যতম রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ সেটা!
২০০৩ সালের সেই ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাউথ আফ্রিকায়। ভারত-পাকিস্তান জমাটি টক্কর সেঞ্চুরিয়ানের মাঠে। সময়টা খেয়াল করবেন; কারগিল যুদ্ধের স্মৃতি গদগদে ক্ষত হয়ে আছে তখনও। এই ক্রিকেট ম্যাচে তা নিশ্চিতভাবেই বাড়তি মাত্রা তৈরি করল।
এমতাবস্থায় পাকিস্তান টসে জেতে। প্রথমে ব্যাট করে জম্পেশ একখানা স্কোরও খাড়া করে তারা। সৌজন্যে সইদ আনোয়ার– যিনি নিরবধি নিজেকে ধরে রেখেছিলেন তাঁর ব্যাটিং দক্ষতায়। এই টানটান উত্তেজক পরিস্থিতিতে চমৎকার এক সেঞ্চুরি করলেন। দলের স্কোর গিয়ে দাঁড়াল ২৭৩-এ। পরে ব্যাট করে ভারত যে-রান তাড়া করতে চাইত, তার চেয়ে কমপক্ষে ২০ রান বেশিই করেছিল পাকিস্তান।
‘মাঠ ছেড়ে যখন ড্রেসিংরুমের দিকে যাচ্ছি, সৌরভ আমাকে বলল, আমি দলীয় মিটিংয়ে ছোট্ট কোনও বক্তব্য রাখব কি না। আমি বললাম, তার কোনও দরকার আছে বলে মনে হয় না। প্রত্যেকেই জানে যে, কী করতে হবে আমাদের। এখন সময় এসেছে মাঠে যাওয়ার এবং তা শেষমেশ করে দেখানোর।’
এই ব্যাপারটা ঘটছে রাত্রিকালীন খাদ্যবিরতিতে।
“এই বিরতিতে আমি হয়তো এক-দু’জনের সঙ্গে যৎসামান্য কথা বলেছিলাম। খুব একটা কিছু খাইওনি। বেশিরভাগ সময়ই হেডফোন ছিল কানে। অনবরত গান শুনছিলাম। যা আমাকে এই পরিস্থিতিকে সাহায্য করছিল শান্ত হতে, থিতু হতে। একটা বড়সড় বাটিতে অনেকটা আইসক্রিম আর কলা খেয়েছিলাম এনার্জি পাব বলে। কোনও এক সহ-খেলোয়াড়কে জানিয়েছিলাম, যে-মুহূর্তে আম্পায়াররা মাঠের দিকে হাঁটা লাগাবেন, তখনই যেন জানানো হয় আমাকে।
একটা কথা আজ খুব অনেস্টলি স্বীকার করছি, সে সময় যদি কেউ– যে-কেউ, এমনকী, কোচ পর্যন্ত এসে আমাকে বলতেন ‘অল দ্য বেস্ট’ বা এইরকম কিছু– আমি মোটেই ব্যাপারটা পছন্দ করতাম না। আমি এরকমটাই ছিলাম। তখন আমি একমাত্র যা করতে চাইছিলাম, তা হল গান শোনা এবং এই ম্যাচে মনোসংযোগ করা। তারপর যখন আম্পায়াররা নিজেদের জায়গায় দাঁড়ালেন, আমিও ব্যাট হাতে নিয়ে চললাম সেই রান তাড়া করতে।” লিখছেন শচীন।
শচীন লিখছেন, তিনি বিন্দুমাত্র জানতেন না যে, হরভজন সিং এবং মহম্মদ ইউসুফের মধ্যে এই বিরতি পর্বে গোলমাল ঘটে গিয়েছে– এইসবে তাঁর কিছুই যায়-আসেনি।
অবশেষে দেখা গেল, ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। ৭৮ বলে ৯৮ রান করলেন শচীন– তাঁর এই অসামান্য ব্যাটিং দৌলতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জয় পেয়েছিল ভারত।
পাকিস্তানী বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের কথা বলতে বলতে তাঁর অশ্রুসজল চোখ দেখে শুধু সেই সময় নির্বাক হয়েছিলাম তা’ নয়, আজও তাঁর সেই চোখ দেখতে পাই, শুনতে পাই মানুষের প্রতি মানুষের বর্বরোচিত অত্যাচারের সেই গল্প বলতে বলতে তাঁর রুদ্ধ কণ্ঠস্বর।