হাতের তালুর মতো চেনা ভাটি অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক নিয়ে নাটক লিখবেন, ভেবেছিলেন মুহাম্মদ কাইয়ুম। কিন্তু ২০১৭ সালে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্তদের যন্ত্রণা দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি তিনি। সিদ্ধান্ত নেন সেখানকার মানুষের গল্প নিয়ে ছবি বানাবেন। প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে সেই স্বপ্নই ডানা মেলেছে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’-তে।
‘তোমার বাড়ি আমার বাড়ি মধ্যে সুর নদী, সেই নদী ক্যামনে হইল, আকুল জলধি রে বন্ধু, আমি তোমার নাম লইয়া কান্দি।’ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের এই গান আমরা হয়তো অনেকেই শুনেছি। আর শুনেছি একটা শব্দ– ভাটিয়ালি গান। ভাটি দেশের গান। কিন্তু এই বাংলায় দাঁড়িয়ে অনেকেই ঠিক জানে না ভাটি অঞ্চল ঠিক কোথায়? কেমন সেই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন ?
উজানে অসম পাহাড়ের নিচে বাংলার যে অঞ্চল, বাংলাদেশের সিলেট জেলার উত্তর অংশ, যেখানে পাহাড়ের বৃষ্টি হলে জল নেমে এসে সাগরের মতো দীঘি তৈরি করে, আবার কয়েক মাসের মধ্যে সেই জল শুকিয়ে সেটা মাঠের মতো হয়ে যায়, সেখানে আবার নতুন আশায় মানুষ ধান বোনে, তারপর হয়তো ধান পাকার সময়ে তাদের ভাগ্য ভালো থাকলে সেই ধান ঘরে তুলতে পারে, না হলে উজান পাহাড়ের বৃষ্টি আকুল জলধি রূপে নেমে আসে সেই পাকা ধানে, আর দেখতে দেখতে ‘ক্যামনে সুর-নদী’ অর্থাৎ কীভাবে সরু নদী সাগরের মতো আকুল জলধি হয়ে ওঠে, তা জানা যায় না। সায়র বা সাগরের উচ্চারণ-ভিন্নতায় এই অঞ্চলকে ‘হাওর’ বলে। একে লোকমুখে ‘ভাটির দেশ’ বলা হচ্ছে কত শত বছর ধরে, তার হিসেব বর্ডার জানে না। তাই আমরা যারা বর্ডারের এপারে জন্মালাম, তারা মঞ্চে ‘ভাটিয়ালি’ শুনলেও ভাটির দেশ চিনলাম না।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
২০১৭ সালে বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলে একটা ভয়াবহ বন্যা হয়, যাতে এই ভাটি অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কষ্টের স্বপ্নের সোনালি ধান জলে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বন্যার পরে কাইয়ুম ভাই আবার সেখানে গেলে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেন না। বাসে ঢাকা ফেরার সময় সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবেই হোক, এই অঞ্চলের মানুষের গল্প নিয়ে সিনেমা তিনি বানাবেনই।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
পাঠক ভাবছেন, সিনেমা নিয়ে লিখতে গিয়ে কেন আমি ভূগোলের কথা বলছি। আসলে কোনও অঞ্চলের সংস্কৃতি, যাপন বুঝতে গেলে তার চারপাশের ভূগোল জানাটা হয়তো জরুরি। তাই শুরু করলাম ভূগোল ও তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সংস্কৃতি নিয়ে। কাঁটাতারে ভাগ হয়ে যাওয়া আমাদের বাংলার ভূগোল আমরা বিগত বছরে কিছুটা ভুলে গিয়েছি বইকি।
সম্প্রতি ‘সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট’-এ একটি সিনেমা দেখলাম। সিনেমাটির কথা আগেই শুনেছিলাম। সিনেমাটি গত বছর বাংলাদেশে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। ছবিটির নাম ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’। সিনেমার বিষয়বস্তু– এই ভাটি অঞ্চলের জীবন নিয়ে। কীভাবে প্রকৃতি ও মানুষের বহুযুগ ধরে চলে আসা সম্পর্ক ও অভিশাপ নিয়ে প্রান্তিক মানুষ বেঁচে থাকে, তাই নিয়েই এই ছবি। এর আগে ভাটি অঞ্চল নিয়ে একটি ছবি হয়েছে, তার নাম ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। যার লেখক ও পরিচালক ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তারপর এই, ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ছবিটি। যে সিনেমায় বাংলার ভাটি অঞ্চল ও তার মানুষের গল্প দেখা গেল। ফিল্ম ইন্সটিটিউটে ছাত্রছাত্রীদের চিত্রনাট্য পড়াই, নিজে সিনেমা বানাই, বানানোর স্বপ্ন দেখি। কিন্তু বুঝতে পারি, শিক্ষার্থীদের মন থেকে ধীরে ধীরে ঋত্বিক সরে গিয়ে সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে নেটফ্লিক্স। কিছু সস্তা অতিনাটুকে জগতে ভরে যাচ্ছে ছাত্রদের দৃশ্যজগৎ। সেখানে চেনা কিছুই নেই, চেনা মানুষ, চেনা ভাতের গন্ধ আর পাওয়া যায় না আজকালের ওটিটি দুনিয়ায়। তাই এই ছবিটা দেখে খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়লাম। বহুদিন বাদে রক্তমাংসের মানুষের ছবি দেখলাম, অতিনাটকীয় দানবের বা হরিণ-শিকারি স্টারের সিনেমা নয়। আমার এই লেখাটি তাই এই সিনেমার রিভিউ নয়, বরং বোঝার চেষ্টা যে, কীভাবে এখনও মানুষের গল্প নিয়ে সিনেমা বেঁচে আছে।
আরও মনে রাখা ভালো, এই নেটফ্লিক্স, আমাজন-এর থ্রিলার, গ্যাংস্টার-এর রক্তের জঙ্গলে, এই ছবিটি একটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি চলচ্চিত্র। আরও সহজ করে বললে, নিজের এবং পরিচিত মানুষের জমানো টাকায় বানানো ছবি। এমন ছবি যা থ্রিলার নয়, কমেডি নয়, স্লো-মোশনে নাচ কিংবা অ্যাকশন দৃশ্য নেই। ছবির পরিচালক মুহাম্মদ কাইয়ুমের বয়স পঞ্চাশের ঘরে। এটি ওঁর প্রথম ছবি।
ছবির গল্প এই অঞ্চল ও তার মানুষদের নিয়ে। ভাটি অঞ্চলে মানুষ ধানের বীজ পোঁতে এই আশা নিয়ে যে, সেই ধান সোনা হয়ে ঘরে উঠবে। কিন্তু উজান-পাহাড়ে বৃষ্টির জল আচমকা নেমে এসে তাদের আশা-ভরসার ওপর দিয়ে বয়ে যায়, আর জলের নিচে পড়ে থাকে কৃষকের ঘরের লক্ষ্মী পাকা ধান।
মুহাম্মদ কাইয়ুমের সিনেমা নিয়ে ভালোবাসার শুরু অনেক আগেই। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোহিত মুহম্মদ খসরু-র হাত ধরে মুহাম্মদ কাইয়ুমের সিনেমার নেশায় মেতে ওঠা। কিন্তু সিনেমার যাত্রা সহজ নয়, তাই সারাজীবন চাকরির পাশাপাশি সিনেমা দেখা, সিনেমা নিয়ে পড়াশোনো করে গিয়েছেন, কিছু নাটক লিখেছেন, কিন্তু সিনেমা বানানো হয়নি।
এই সিনেমা বানানোর ভাবনা কীভাবে মাথায় এল, সেই প্রশ্নের উত্তরে জানালেন– ২০০৭ সাল থেকে ওঁর এই ভাটি অঞ্চলে যাতায়াত। তখন ভেবেছিলেন যে, একটা হয়তো নাটক লিখবেন এই অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক নিয়ে। সেইমতো প্রতিবার যাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে নোট নিতেন, বোঝার চেষ্টা করতেন সেই অঞ্চলের মানুষদের জীবনযাপন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলে একটা ভয়াবহ বন্যা হয়, যাতে এই ভাটি অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কষ্টের স্বপ্নের সোনালি ধান জলে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বন্যার পরে কাইয়ুম ভাই আবার সেখানে গেলে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেন না। বাসে ঢাকা ফেরার সময় সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবেই হোক, এই অঞ্চলের মানুষের গল্প নিয়ে সিনেমা তিনি বানাবেনই।
ঢাকা ফিরে শুরু করেন চিত্রনাট্য লেখার কাজ। ২০১৮ সালে চিত্রনাট্য লেখা হয়ে গেলে, বিভিন্ন সরকারি ও সিনেমাওয়ালাদের দরজায় গিয়েছেন, কিন্তু খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়েছে তাঁকে। মানুষের কষ্ট নিয়ে ছবি বানানোয় কে-ই বা কবে উৎসাহ দিয়েছে! কিন্তু কাইয়ুম ভাইকে আটকানো যায়নি। নিজের চাকরি-জীবনের জমানো টাকা, বন্ধুদের থেকে ধার করা টাকা নিয়ে শুরু করলেন সিনেমা বানানো ২০১৯ সালে। একবার শুটিং হয়, টাকা শেষ হয়ে যায়, আবার টাকার জোগাড় করে পরের ঋতুতে ভাটি অঞ্চলে শুটিং হয়। তারপর ২০২০-র কোভিডকালে আটকে যায় শুটিং। অবশেষে, ২০২১-এ শেষ হয় ছবির শুটিং, কিন্তু ততদিনে কাইয়ুম ভাই ও তার বন্ধুদের জোগানের টাকা প্রায় শেষ, এদিকে ছবির সম্পাদনা, শব্দ নির্মাণ বাকি!
সেই সময় কোনওভাবে যোগাযোগ হয় এই বাংলার অর্ঘ্যকমল মিত্র ও সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে। তাঁরা ছবির বিষয় দেখে নিজেদের সরিয়ে রাখতে পারেননি। অর্ঘ্যকমল মিত্র এবং সুকান্ত মজুমদার, নিজেদের সবটুকু নিয়ে পাশে এসে দাঁড়ান কাইয়ুম ভাইয়ের। একটা পুরনো সাউন্ড-রেকর্ডারে নেওয়া ডায়ালগ সুকান্তদার ম্যাজিকে হয়ে উঠল সাবলীল। আমরা সিনেমার দর্শক, কর্মীরা শিখলাম কীভাবে ডাবিং ছাড়া পুরনো রেকর্ডারে রেকর্ড করা পাইলট ডায়ালগ এত সাবলীল হয়ে উঠতে পারে। বাংলা ছবিতে প্রথম শুনলাম এমন-কিছু শব্দ যা একমাত্র ঋত্বিক ঘটকের ছবিতেই হয়তো শেষ শুনেছি। ভাত সেদ্ধ হওয়ার শব্দ, অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে মাছ রাখার শব্দ, এমন কিছু শব্দ, যা আমাদের বাঙালিদের খুব চেনা হলেও সিনেমায় শোনা যায় না এখন আর।
এগিয়ে এলেন মৈনাক বিশ্বাস। তার বাবা হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানের ক্যাসেট দিলেন, ছবিতে গান ব্যবহার করার জন্য। সবশেষে সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দোতারা, সারিন্দায় সুর তুললেন ছবিটির জন্য। এইভাবে নির্মিত হল এমন এক সিনেমা, যা আজকাল ‘নেটফ্লিক্স’-এর বাজারে কল্পনা করাও যায় না।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন: এই ছবির মজাই হল এখানে কেউ-ই অভিনয় করছে না
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
কাইয়ুম ভাইকে প্রশ্ন করলাম, এই ওটিটি-যুগে এমন একটা ছবি বানানোর সাহস পেলেন কী করে? বললেন– ছবিটা তাঁকে বানাতেই হত। ছবি বিক্রি, হলে দেখানো বা লাভের আশা তিনি একেবারেই করেননি। শিল্পীরা আসলে জীবনে কোনও কোনও সময় এমন মুহূর্তের সামনে এসে দাঁড়ান। তখন আর লাভক্ষতির হিসেবে তাদের কিছু যায় আসে না। যেমন ঋত্বিক ছিলেন, অথবা কেরলের জন আব্রাহাম। তাই ২০১৭-র বন্যার পর কাইয়ুম ভাইয়ের মাথায় এইসব আসেনি। নিজের সবটুকু নিয়ে ছবিটির নির্মাণে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আজকে যখন ওটিটি-ছবির কন্টেন্ট ঠিক করে দেয়, যে কত শতাংশ যৌনতার সঙ্গে কতটা ভায়লেন্স আর অ্যাকশনের ককটেল বানালেই ছবি করা সম্ভব হবে, সেই বাজারে দাঁড়িয়ে কাইয়ুম ভাইয়ের মতো মানুষ আছেন, চিত্রপরিচালক আছেন, ভেবে ভালো লাগে।
নিজেও ছবি বানাই কিন্তু ওটিটির ককটেলে ছবি ফিট করে না বলে ছবি বিক্রি হয় না, এবং ধীরে ধীরে একটু হতাশ হয়ে পড়া আমাদের মতো স্বাধীনচেতা ফিল্ম-মেকাররা তাহলে কী করবে? প্রশ্ন করলাম, এখন তো আর সিনেমা হল-ও নেই যে, সেখানে মানুষকে দেখানো যাবে ছবি, তাহলে ইন্ডিপেনডেন্ট সিনেমার ভবিষ্যৎ কী? আগে প্রোডিউসার, ডিস্টিবিউট্রর আইটেম ড্যান্স ছাড়া সিনেমা বানাতে দিত না বা দেখাতেও দিত না, আর এখন ওটিটি, ভায়োলেন্সের ককটেল ছাড়া ছবি বানাতে দেয় না। যেখানে কী বিষয়ে সিনেমা বানানো হবে থেকে শুরু করে, ছবির কত মিনিট পরে কী ধরনের সিন থাকবে, তাও নির্ধারণ করে দেয় ডেটা-পূজারি ওটিটির ক্রিয়েটিভ দল, যেখানে সিনেমা তৈরির কথা বললে উল্টোদিক থেকে প্রস্তাব আসে সিরিজ বানানোর, সেখানে কী করব আমরা? আমরা যারা ভেবেছিলাম এই নতুন ডিজিটাল আন্দোলন আমাদের মতো সিনেমাকর্মীর কাছে সিনেমার বাধাগুলো দূর করে দেবে।
কাইয়ুম ভাই শোনালেন এক আশার কথা। বললেন, তিনি প্রযুক্তি-বিরোধী নন, কিন্তু এটাও ঠিক মোবাইল সিনেমার মাধ্যমে সিনেমার শুধু নয় বরং মানুষের সামাজিক মূল্যবোধের এক ক্ষতি অবশ্যই হচ্ছে। বললেন যে, ছাত্রদের তিনি একদা চিনতেন, যারা ঢাকার রাজপথ থেকে অধিকার ছিনিয়ে নিতে রক্ত দিয়েছে বারবার, আজ সেই ছাত্র দলের একমাত্র উদ্দেশ্য সরকারি চাকরি পাওয়া। তারা গভীরভাবে নিমগ্ন তাদের মুঠোফোনে, কিন্তু যদি এখন এমন কিছু তাদের সামনে হাজির করানো যায়, যা তাদের এই মস্তিষ্কের শীতঘুমে ধাক্কা দিতে পারে, তাহলে তারা দেখবে সেই সিনেমা। শিল্পীর কাজই যুগে যুগে তাই ছিল। তা একমাত্র সম্ভব যদি শিল্পী তার নিজের ভিতরের অনবদ্য ইচ্ছা আর চারপাশের প্রতিচ্ছবি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেন।
কাইয়ুম ভাই পেরেছেন। আমরা তাঁর গুণমুগ্ধ দর্শক, আর ইন্ডিপেন্ডেট ফিল্ম-মেকার হিসেবে আমরা কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে, আরও একবার তিনি আমাদের আশার কথা শুনিয়ে গেলেন তাঁর ছবির মাধ্যমে। খেটে খাওয়া মানুষের গল্প সিনেমা থেকে মুছে যাবে না।
অভিনেতা হিসেবে অভিনয়ের যে জায়গাগুলো তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, যা আমি আগেও বলেছি, সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা, ভালো থাকার আকাঙ্ক্ষা, জয়ী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, সাধারণ মানুষ যা প্রকাশ করতে পারে না চট করে। মনোজ মিত্র তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তাকে বড় করে দেখিয়েছেন।