ইংল্যান্ড দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি তার স্বপ্নের রাজকুমারী, ডায়নার পুত্রবধূ, যাঁর আনকোরা আধুনিক আবেদন, যাঁর সাবলীল ছটফটে প্রাণবন্ত ছিপছিপেমি ছিপ ফেলেছিল ইংরেজদের মানস সরোবরে, সেই কেট কর্কট রোগে আক্রান্ত হবেন! আর সে নিজের মুখে, স্পষ্টতার অসীম সাহসে, সমস্ত আড়াল সরিয়ে, কী অভিজাত সংক্ষেপে সারা বিশ্বকে জানাবেন, ম্লান হেসে, তাঁর ক্যানসার।
নীরার অসুখ করলে সমস্ত কলকাতা অসুস্থ হয়ে যায়। নীরার জ্বর মানে কলকাতার জ্বর। আর কেটের ক্যানসার হলে? সমস্ত ইংল্যান্ডের মনে ঘনিয়ে আসে আসন্ন মৃত্যুর মেঘ।
ইংল্যান্ড দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি তার স্বপ্নের রাজকুমারী, ডায়নার পুত্রবধূ, যাঁর আনকোরা আধুনিক আবেদন, যাঁর সাবলীল ছটফটে প্রাণবন্ত ছিপছিপেমি ছিপ ফেলেছিল ইংরেজদের মানস সরোবরে, সেই কেট কর্কট রোগে আক্রান্ত হবেন! আর সে নিজের মুখে, স্পষ্টতার অসীম সাহসে, সমস্ত আড়াল সরিয়ে, কী অভিজাত সংক্ষেপে সারা বিশ্বকে জানাবেন, ম্লান হেসে, তাঁর ক্যানসার। কেট অবলীলায় বলে গেলেন, ‘আমার ডাক্তারও ভাবতে পারেনি আমার শরীরে পাওয়া যাবে এই মারণ অসুখের কোনও চিহ্ন।’ তারপর? কেট একটু হেসে, ক্রমক্ষীয়মান হাসিকে ঠোঁটে ধরে রেখে বলেন, ‘ক্যানসারের সেল কিন্তু পাওয়া গেছে আমাদের শরীরেই।’
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
বৃদ্ধ কিং চার্লস বুঝলেন কি বুঝলেন না, তাঁর পুত্রবধূর বাঁচার জেদ, কী এসে যায় তাতে! তিনি তো স্ত্রী ডায়নার প্রাণশক্তির প্রাবল্যও বোঝেননি। যদিও খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিলেন সেই বিপুল বহতায়। বেশির ভাগ ইংরেজকে পাগল করে দিয়েছে ক্ষীণ, দুর্বল কেটের জীবনে ফিরে আসায় সেই প্রতিশ্রুত হাসি। কেট সেরে উঠবেই। এবং তিনিই তাদের ভবিষ্যৎ রানি, এই প্রত্যয় শেকড়েবাকড়ে গেঁথে আছে ইংরেজদের অন্তরে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন কেট। কিং চার্লস জড়িয়ে ধরলেন কেটকে। এই মুহূর্তে চার্লসের থেকেও কেট কিন্তু বেশি বিপন্ন। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের পুত্রবধূর একমাত্র অস্ত্র– তাঁর তারুণ্য ও বাঁচার বাসনা। রাজা ঘোষণা করে দিয়েছেন, তিনি তাঁর পুত্রবধূর এই সাহসে নাকি গর্বিত। বৃদ্ধ কিং চার্লস বুঝলেন কি বুঝলেন না, তাঁর পুত্রবধূর বাঁচার জেদ, কী এসে যায় তাতে! তিনি তো স্ত্রী ডায়নার প্রাণশক্তির প্রাবল্যও বোঝেননি। যদিও খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিলেন সেই বিপুল বহতায়। বেশিরভাগ ইংরেজকে পাগল করে দিয়েছে ক্ষীণ, দুর্বল কেটের জীবনে ফিরে আসায় সেই প্রতিশ্রুত হাসি। কেট সেরে উঠবেই। এবং তিনিই তাদের ভবিষ্যৎ রানি, এই প্রত্যয় শেকড়েবাকড়ে গেঁথে আছে ইংরেজদের অন্তরে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন: বন্দুকের ভাষায় নয়, শান্তির পথেই লাদাখের অধিকার আদায় করব
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ব্রিটিশরা তাকিয়ে ছিল সেই দিনটির দিকে, যেদিন রাজা চার্লসের পাশে তারা পাবে ডায়নাকে, তাদের রানির পরমাসনে। কিন্তু নিয়তি এ কী খেলা খেলল? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নির্বাসিত হলেন রাজপ্রাসাদ থেকে! এবং চূর্ণ হল, লন্ডনে নয় পাপারাৎজিদের তাড়ায়, প্যারিসের সঙ্গিন সুড়ঙ্গে। তারপর সারা বিশ্ব জুড়ে উঠল ডায়না ঝড়। লন্ডনে ফিরল কফিনাশ্রিত ডায়নার বিক্ষত শরীর। ডায়নার প্রতি ভালোবাসার পুষ্পার্ঘ্যে আচ্ছাদিত হল বাকিংহাম প্যালেস। এত ফুল কোনও মৃত্যু কখনও দেখেনি, কখনও পায়নি। কোনও অবসানের জন্য ঝরেনি এত অশ্রু। কোনও বিদায় উথলে দেয়নি এত ভালোবাসা।
কেট, ডায়নার ছেলের স্ত্রী হয়ে রাজপরিবারে ঢুকতে না ঢুকতেই অনেকে মনে করল, ডায়নাই যেন ফিনিক্সের মতো ফিরে এসেছেন ব্রিটেনের স্বপ্নপূরণ করতে। রাজা চার্লসের পর রাজা হবে ডায়নার বড় ছেলে, ‘নেক্সড ইন লাইন’– রাজকুমার উইলিয়াম। তাহলে তো তাঁর স্ত্রী কেটই রানি। মানে, ডায়নাই যেন ফিরে এল। কিন্তু ডায়না তো রানি হতে পারেননি। ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর বিড়ম্বনা! এবারও কি রানি হতে পারবেন না কেট? নীল রক্তে কি তবে কোনও অভিশম্পাত আছে?
না, কেট। সমস্ত ইংল্যান্ডের শুভেচ্ছা আছে, প্রার্থনা আছে তোমার সঙ্গে। নিয়তি তোমাকে কেড়ে নিতে পারবে না। তুমি ক্যানসারকে হারাবেই। তুমি ইংল্যান্ডের হৃদয়েশ্বরী। তোমার দুর্বলতাও কী সুন্দর কেট। তোমার ম্লান হাসির আবেদন আচ্ছন্ন করেছে ইংরেজের মন। তোমার অসুখ বিশ্বময় জাগিয়ে দিয়েছে মমতা, মর্মস্পর্শিতা। কেট, তুমি নিয়তিকে নির্জিত করে, ক্যানসারকে পরাজিত করে, রানি হবেই। ইংরেজের স্বপ্নের রানি। স্পেন্সারদের ‘ফেয়ারি কুইন’ তুমিই। তোমার ম্লান ঠোঁটে আশ্রয় নিয়েছে সুপ্তিহীন চিরদিন।
তোমার অমন নরম ঠোঁটেই তো মহাকাল এসে ঘনায়, কেট।