ম্যাচ বা প্র্যাকটিস না থাকলে ইগরকে বাড়িতে পাওয়া যেত না। এরকম অনেকদিন হয়েছে, বেশি রাতে ইগর হলুদ ট্যাক্সি চেপে ফিরেছে। ভাড়া নিয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভারের সঙ্গে তুমুল গন্ডগোল। ইগর ইংরেজিতে বলছে, ড্রাইভার বুঝছে না। রেগে গেলে ইগরকে সামলানো যেত না। ঘর থেকেই ইগরের সঙ্গে ড্রাইভারের ঝামেলার আওয়াজ পেতাম।
৫.
ইস্টবেঙ্গল থেকে প্রস্তাব পাওয়ার কথা বলছিলাম। কিন্তু সেই একবারই যে পেয়েছিলাম, এরকমটা নয়। এরপরেও অনেকবার লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চাপানোর প্রস্তাব পেয়েছি ইস্টবেঙ্গলের তরফে। বিশেষ করে আশিয়ান কাপের আগে।
বাইচুং সেবার মোহনবাগান ছেড়ে সই করল ইস্টবেঙ্গলে। তখন আমি ব্রাজিলে। ইস্টবেঙ্গল কোচ সুভাষ ভৌমিক প্রায়ই আমাকে ফোন করত, বোঝাত ইস্টবেঙ্গলে সই করার জন্য। সেই মরশুমে তখনও জুনিয়র সই করেনি ইস্টবেঙ্গলে। সুভাষ আমাকে রাজি করাতে না পেরে শেষে ব্রাজিলে ডগলাসকে আমার ‘মার্কার’ করে দিল। ওর মারফত আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল আমাকে ইস্টবেঙ্গলে খেলার ব্যাপারে রাজি করাতে। কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। সুভাষকে সরাসরি বলে দিয়েছিলাম, মোহনবাগানের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গিয়েছে। কীভাবে ইস্টবেঙ্গলে যাব?
এবার সত্যিটা বলি, সুভাষ যখন ব্রাজিলে ফোন করে আমাকে ইস্টবেঙ্গলে খেলার প্রস্তাব দিল, তখনও মোহনবাগানের চুক্তিপত্রে আমি সই করিনি। কিন্তু মরশুম শেষে কলকাতা ছাড়ার আগে দেবাশিসের সঙ্গে পাকা কথা হয়ে গিয়েছিল। প্রায় প্রতিবছরই এরকম হত। মরশুম শেষ হলে দেবাশিস আর আমি পরের মরশুমের চুক্তি নিয়ে বসতাম। দ্রুত কথা শেষ হয়ে যেত। তারপর ফিরে যেতাম পোর্তো আলেগ্রে। নতুন মরশুম শুরুর সময় কলকাতায় ফিরে এসে সই করতাম মোহনবাগানের চুক্তিপত্রে।
আমার কাছে মুখের কথাটাই ছিল শেষ কথা। একবার কথা হয়ে গেলে আর কখনও অন্যদিকে যাওয়ার কথা ভাবিনি। তাই মোহনবাগানের চুক্তিপত্রে সই না করলেও সুভাষ যখন ফোন করে বারবার বলছিল, আশিয়ান কাপের জন্য ইস্টবেঙ্গলে সই করতে, পরিষ্কার বলে দিয়েছিলাম, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, মোহনবাগানের চুক্তি হয়ে গিয়েছে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
সুভাষ যখন ব্রাজিলে ফোন করে আমাকে ইস্টবেঙ্গলে খেলার প্রস্তাব দিল, তখনও মোহনবাগানের চুক্তিপত্রে আমি সই করিনি। কিন্তু মরশুম শেষে কলকাতা ছাড়ার আগে দেবাশিসের সঙ্গে পাকা কথা হয়ে গিয়েছিল। প্রায় প্রতিবছরই এরকম হত। মরশুম শেষ হলে দেবাশিস আর আমি পরের মরশুমের চুক্তি নিয়ে বসতাম। দ্রুত কথা শেষ হয়ে যেত। তারপর ফিরে যেতাম পোর্তো আলেগ্রে। নতুন মরশুম শুরুর সময় কলকাতায় ফিরে এসে সই করতাম মোহনবাগানের চুক্তিপত্রে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
যাই হোক, ’৯৯-তে মোহনবাগানের সঙ্গে আমার প্রথম চুক্তির সময়ে ফিরে আসি। যদ্দুর মনে পড়ে, ২৪ ডিসেম্বর সবুজ-মেরুনের চুক্তিপত্রে প্রথম সই করেছিলাম আমি। সই করে প্রথম গিয়েছিলাম বেঙ্গালুরুতে জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলতে, আইটিআই-এর বিরুদ্ধে। সেই সময় দলে যোগ দিয়েছে ইগর স্কিরভিন। ও স্ট্রাইকার, আমি উইঙ্গার। সেইসঙ্গে ছিল স্টিফেন এবং দুসিতও। আমি যখন মোহনবাগানে ট্রায়ালে ছিলাম, তখনই স্টিফেন দলে ছিল। আর আমার ট্রায়ালের শেষ সপ্তাহে এসে যোগ দেয় ইগর। পরে অবশ্য ইগর সতীর্থ থেকে কলকাতায় আমার অভিভাবক হয়ে ওঠে।
মাত্র তিন মাসের জন্য মোহনবাগানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। কারণ, জাতীয় লিগের বাকি ম্যাচগুলিতে কেমন খেলব, কোনও ধারণাই ছিল না মোহনবাগান কোচ-কর্মকর্তাদের। স্বাভাবিকভাবেই আমার সঙ্গে দীর্ঘ-চুক্তি হওয়ার কোনও প্রশ্নই ছিল না। কারণ, ওরা দেখে নিতে চাইছিল, এই তিন মাসে সবুজ-মেরুন জার্সিতে আমি কেমন খেলি।
কেষ্টপুর খালের পাশে যেদিক থেকে সল্টলেক শুরু হয়েছে, সেই দিকেই একটি বাড়িতে ইগরের সঙ্গে থাকতাম আমি। আমার সইয়ের পরই ফিরে যায় সিলভেইরো। ফলে আমি তখন কলকাতায় ভীষণভাবে একা হয়ে পড়ি। সামান্যতম ইংরেজি বুঝতাম না। কোনও ভারতীয় ভাষা তো বোঝার প্রশ্নই ছিল না। ফলে কে কী বলত, সবই শরীরীভাষায় বোঝার চেষ্টা করতাম। এই সময় আমার পাশে দাদার মতো এসে দাঁড়িয়েছিল ইগর। শুনেছিলাম, এশিয়াডের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিল। সব মিলিয়ে মাঠে এবং মাঠের বাইরে ইগরের একটা আকর্ষণীয় ব্যাপার ছিল।
এক বাড়িতে আমরা থাকতাম। প্র্যাকটিসের পর এসে আমি চুপচাপ। ইগর যেন সব সময় ফুটছে। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো। ওর ব্যবহারে সব সময় একটা ক্যাপ্টেন-ক্যাপ্টেন মেজাজ ছিল। শুরুতেই ওর ক্যাপ্টেন্সি মেনে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করি। কতদিন এরকম হয়েছে, ম্যাচ নেই। আমি বাড়িতে একা একাই আছি। ইগর কোথায় বেরিয়ে যেত। ম্যাচ নেই বলে অনেক রাতে হয়তো ফিরেছে ট্যাক্সি করে। প্রথম বছর আমাদের কোনও গাড়ি ছিল না। সকালবেলা সল্টলেক থেকে হলুদ ট্যাক্সিতে চেপে আমি আর ইগর মোহনবাগান প্র্যাকটিসে যেতাম। ফলে কলকাতায় ঘুরতে বের হলে আমাদের তখন একমাত্র বাহন, হলুদ ট্যাক্সি।
ম্যাচ বা প্র্যাকটিস না থাকলে ইগরকে বাড়িতে পাওয়া যেত না। এরকম অনেকদিন হয়েছে, বেশি রাতে ইগর হলুদ ট্যাক্সি চেপে ফিরেছে। ভাড়া নিয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভারের সঙ্গে তুমুল গন্ডগোল। ইগর ইংরেজিতে বলছে, ড্রাইভার বুঝছে না। রেগে গেলে ইগরকে সামলানো যেত না। ঘর থেকেই ইগরের সঙ্গে ড্রাইভারের ঝামেলার আওয়াজ পেতাম। অধিকাংশ দিনই বেশি রাতে আমাকে দরজা খুলে ইগরকে শান্ত করে ঘরে নিয়ে যেতে হত। এদিকে, আমি একবর্ণ ইংরেজি বলতেও পারতাম না, বুঝতামও না। কিন্তু এটা বুঝতাম, ইগরের সঙ্গে রোজ ট্যাক্সি ড্রাইভারের ঝামেলা হত ভাড়া নিয়ে। আমার কাজ ছিল, দু’জনের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে ইগরকে ঘরে নিয়ে আসা।
(চলবে)
অনুলিখন: দুলাল দে
…তোতাকাহিনি-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৪। আর একটু হলেই সই করে ফেলছিলাম ইস্টবেঙ্গলে!
পর্ব ৩। মোহনবাগানের ট্রায়ালে সুব্রত আমায় রাখত দ্বিতীয় দলে
পর্ব ২। কলকাতায় গিয়েই খেলব ভেবেছিলাম, মোহনবাগানে ট্রায়াল দিতে হবে ভাবিনি
পর্ব ১। ম্যাচের আগে নাইটপার্টি করায় আমাকে আর ডগলাসকে তাড়িয়ে দিয়েছিল ক্লাব
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর খুব সঠিকভাবেই ভারতের বিদেশনীতির ব্যাখ্যা করে আগাম বলে রেখেছিলেন, ‘হোয়াইট হাউস ডেমোক্র্যাট প্রার্থী না রিপাবলিকান প্রার্থীর দখলে গেল তা নিয়ে নয়াদিল্লি মোটেও চিন্তিত নয়। কারণ, ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের এতে কোনও পরিবর্তন ঘটবে না। গত পাঁচটি প্রেসিডেন্টের আমলেই ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে।’