Robbar

আমাদের বিস্মৃতিশক্তির কথা বলে গিয়েছেন ভাস্কর চক্রবর্তী

Published by: Robbar Digital
  • Posted:August 23, 2025 3:39 pm
  • Updated:August 23, 2025 5:34 pm  
An article about Forgetting by Sumanta Mukhopadhyay। Robbar

কবিদের নিয়ে কথা উঠলেই মনে হয়, রবীন্দ্রনাথের পরে গত ৭৫ বছরের বাংলা কবিতায়  ভুলে যাওয়া নিয়ে স্মৃতি-বিস্মৃতির কাজ কারবারে ভাস্করের মতো এতটা আলো কেউ ফেলেননি। রবীন্দ্রনাথের গানে কবিতায় ভুলে যাওয়ার যে অপূর্ব আসা-যাওয়া আছে তা নিয়ে আমরা যদি বসি, কত যে বাঁচার পথ পাওয়া যাবে! সে আরেক দিন হবে। আপাতত ভাস্করের কবিতার কথাই বলি। ওঁর প্রথম দিকের কবিতায় আমাদেরই ছোট ছেলেমেয়েদের হয়ে ভাস্কর বলে রেখেছেন ভোলার দু’রকম কথা– দুটো উদাহরণ দেওয়া যাক। ‘আবার তোমার কথা ভুলে যাই/ ব্যর্থ হয় দিন আর ব্যর্থ হয় রাত’। উল্টোদিকে ‘ভুলে যাও, সে কোন সকালবেলা ছুটেছিলে এই রাস্তা ধরে’। যা ভোলার নয় আর যা ভুলতে হবে তার ওপর একটা অধিকার যেন খুঁজে পেতে চাই আমরা। স্মৃতি ক্ষমতার সঙ্গে যেন জুড়ে আছে ভোলারও ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি যেমন সবার লক্ষ্য, ভাস্কর কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে বিস্মৃতিশক্তির কথাও বলে গিয়েছেন।

সুমন্ত মুখোপাধ্যায়

ঘোড়া দেখলেই সবার পায়ে বেমালুম বাত। কোনও কিছু লিখতে গেলে এই তেজি প্রাণীর চলাফেরা মনে আসে। সোজা গট গট করে কিছু যে বলে যাব, এমন কনফিডেন্স কস্মিনকালেও ছিল না। আড়ে আড়ে কোনাকুনি চলতে গিয়েও লজ্জায় মাথা কাটা যায়। তাই আড়াই চালে ভাবি। বাধা টপকে আদার ব্যাপারীও মোক্ষম ঘরটিতে গিয়ে বসতে পারে চোখের পলকে। কাটাকুটি– সে পরের কথা। তবে নিওলিথ স্তব্ধতায় না হোক মহীনের পোষা জীবটির আপন মনে ঘাস খাওয়ার দৃশ্য নিউটাউনেও দেখা যায়, সূর্যাস্তে, সন্ধ্যায়। স্যুররিয়াল। বিষাদ মন্থর। দিনশেষের লালচে আলোয় পিঠের ভাবনা-ক্ষতগুলো চিক চিক করে। কারও হাসি পায়, কারও চোখে জল আসে।

ভুলে যেতে হয় কতকিছু

‘মনে রাখা’ আর ‘ভুলে যাওয়া’র মধ্যে স্মরণের পাল্লা সারাক্ষণ মাটিতে ঠেকেই আছে। বিস্মরণের জন্য সম্মান করা হচ্ছে, এ একমাত্র ভারতে ভোটার লিস্টে নাম থাকলে, সম্ভব। পাবলিক এমনকী, কোভিডের রাজত্বও ভুলে মেরে দিয়ে বসে আছে! হাজার যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে মানুষ ভুলে যাওয়ার মাশুল গোনে। ভুলে যাওয়ার একটা দেশ বানিয়ে তোলে। যেখানে আমাদের দিনরাতের রংচঙে কাচের বোতলগুলো হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা হয়। কখনও একটা-দুটো টুকরো ফেরে, কখনও গুঁড়ো গুঁড়ো ধুলো। তিন কালে– মানে অতীত, ভবিষ্যৎ আর বর্তমানে যেখানেই নিজেকে ভাবি না কেন, ভুলে যাওয়ার দেশ আকাশের মতো ঝুঁকে থাকবে। ‘কাল ইনভিজিলেশন ডিউটি আছে, ভুলে যাস না’– মেসেজ ঢুকল ফোনে। পূর্ব জন্মের প্রথম প্রিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে কী মুশকিল, ‘সে ভাষা ভুলিয়া গেছি’। আর প্রতিদিনের প্রতি মুহূর্তে এই যে কত ঝলমলে মুখ– ‘তোমাদের সঙ্গে কি দেখা হয়েছিল।’ এক মুহূর্ত আগের মুখ যদি পরক্ষণেই অচেনা লাগে– মনটা কেমন অপরাধে তেতো মতো পানসে হয়ে যায়। সত্যি সত্যি সব ঘটছে তো চারপাশে?

মা আঁচলে গিঁট দিয়ে রাখে। একটা, দুটো। সেখানে আছে ভুলে যাওয়ার চাবি। পুরুষ মানুষ পাজামা বা লুঙ্গিতে চেষ্টা করে দেখতেই পারেন। আমাদের কবি ভাস্কর চক্রবর্তী একটা চেতাওনি যদিও দিয়ে গিয়েছেন– ‘আমার জীবন পাজামার গিঁট’। মোক্ষম ভুল। এই ভুলের সঙ্গে ভুলে যাওয়ার একেবারে লুকোনো সম্পর্ক আছে। ও কথায় শেষে আসব। মনের সঙ্গে যেমন মনে রাখা/পড়া/আসা/করা-র সম্বন্ধ।

শিল্পী: সেবাস্টাইন থিবল্ট

মনে পড়া, মনে করা, মনে আসা আর ‘নায়ক’ ছবির সেই ‘মন থেকে লিখবেন নাকি’– প্রশ্নের লা-জবাব উত্তর ‘মনে, রেখে দেব’– সবই কিন্তু আলাদা আলাদা কাজ। মনের কাজ। এসব নিয়ে কত কবিতা-প্রবন্ধ-গান-নাটক মায় খুনোখুনি অবধি হয়ে গিয়েছে। ‘স্মৃতিশক্তি’ ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে ভেবে আমরা এতদূর গিয়েছি, সেদিন আমাদের নিউটাউনে শাক-সবজির ঠেলা থেকে আশানুর ভাই জানতে চায়, ‘ব্রেনোলিয়াই সত্যি কাজ দেই, ছেলিটা কিছু মনি রাখতি পারি না।’ ছেলের বয়েস চার আর ভুল করে সাবান কামড়েছে। বাপের মন ব্রেনোলিয়া চায়, তাকিয়ে দেখি বেচারার গাড়ি ভরা সবজির বোঝা তার ওপর দু’-আঁটি ব্রাহ্মী শাক। সুতরাং, যাদের সব কথা স্মৃতি-তে ঢুকে বসে আছে, তাঁদের শক্তি অনস্বীকার্য। কিন্তু ভুলে যাওয়া নিয়ে তেমন লেখা কোথায়? ইংরেজি প্রাইমারে ‘ফরগেটিং’ নামক একটি কাট পিস পড়েছিলাম। নানা মজার ভুলে যাওয়ার বর্ণনা। ছাতে মাদুর পেতে লোডশেডিংয়ের রাতে একদা আইনস্টাইনের নিজ বাড়ির রাস্তা ভুলে যাওয়া গল্প হিসেবে আমাদের শোনানো হত। তার ফল অতি মারাত্মক হয়। বেড এবং হেড-কাউন্ট কিছুদিন পর থেকে রাতে আর মিলতে চাইত না। রাত দেড়টার সময় অন্য বাড়ির আইনস্টাইনদের দেখা যেত আমাদের চিলেকোঠায় এবং এ-বাড়ির বিজ্ঞান সাধকরা e =mc2 তত্ত্বমতে নীলু, শিবু ইত্যাদির বাড়িই শুধু নয় এমনকী, পূর্বস্থলী অবধি চলে গিয়েছে।

ব্রেনোলিয়ার বিজ্ঞাপন। ১৯৮৪

………………………………………………..

শঙ্খ ঘোষ সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার পান ১৯৭৭ সালে। ওঁর সমবয়সি লেখকদের মধ্যে প্রথম। ‘বাবরের প্রার্থনা’ কবিতাবইয়ের জন্য। সে সময় টুকটাক ভালো কথা কিছু শোনা গেলেও  একেবারে কালো কালিতে লিখিত ভাবে নিন্দা করার বেশ কিছু নমুনা লিটল ম্যাগাজিনের বিচিত্র ভাণ্ডারে তোলা আছে। ১৯৯০-এর শেষ দিকে এবং এই সহস্রাব্দের গোড়ায় এমনি এক কালিমা লেপক প্রায়শ শঙ্খ ঘোষের রবিবারের আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন। বছর ২০ পার হয়ে গিয়েছে তখন। ‘ভুলে গেছেন না, কী লিখেছিলেন ইনি?’ জিগ্যেস করে উত্তর পাওয়া গেল, ‘না, একটি বাক্যও ভুলিনি।’ এই ব্যাপারটা ভুলতে পারলে সাধারণভাবে ভালো হত বলে মনে হয়। সামনে বসে আছে মূর্তিমান অথচ শান্ত হেসে সেই ক্ষণটির ওপর নির্ভর করে কথা বলতে হবে, স্মৃতির রক্তক্ষরণ উপেক্ষা করে।

………………………………………………..

তবে এ ধরনের গল্পগাছা যা আছে, তাকে ভুলে যাওয়া বলে না। একে বলে অন্যমনস্কতা। যেখানে আছি, সেখানে নেই গোছের ব্যাপার। নানা চিন্তায় আলমারির লকারে সুক্তো রাঁধার সজনে ডাঁটা রেখে দেওয়ার কেস আছে নিজেদের বাড়িতেই। তাই ভুলে যাওয়া নিয়ে যত যা কথা শুনি, সবই আসলে বিস্মৃতির গল্প নয়। বিস্মৃতি খানিক অন্ধকারের মতো, আছে কিন্তু ঠাহর করা যায় না। তাহলে ভুলে যাওয়া নিয়ে কথা মানে কী ভুলবে, কেন ভুলবে, আর তার ওপর কার কতটা অধিকার– সেই সব গল্প। সে রকম ঘটনা কিছু মনে থেকে গিয়েছে।

শঙ্খ ঘোষ

শঙ্খ ঘোষ সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার পান ১৯৭৭ সালে। ওঁর সমবয়সি লেখকদের মধ্যে প্রথম। ‘বাবরের প্রার্থনা’ কবিতাবইয়ের জন্য। সে সময় টুকটাক ভালো কথা কিছু শোনা গেলেও একেবারে কালো কালিতে লিখিত ভাবে নিন্দা করার বেশ কিছু নমুনা লিটল ম্যাগাজিনের বিচিত্র ভাণ্ডারে তোলা আছে। ১৯৯০-এর শেষ দিকে এবং এই সহস্রাব্দের গোড়ায় এমনি এক কালিমা লেপক প্রায়শ শঙ্খ ঘোষের রবিবারের আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন। বছর ২০ পার হয়ে গিয়েছে তখন। ‘ভুলে গেছেন না, কী লিখেছিলেন ইনি?’ জিগ্যেস করে উত্তর পাওয়া গেল, ‘না, একটি বাক্যও ভুলিনি।’ এই ব্যাপারটা ভুলতে পারলে সাধারণভাবে ভালো হত বলে মনে হয়। সামনে বসে আছে মূর্তিমান অথচ শান্ত হেসে সেই ক্ষণটির ওপর নির্ভর করে কথা বলতে হবে, স্মৃতির রক্তক্ষরণ উপেক্ষা করে।

‘স্মৃতিপিপীলিকা তাই পুঞ্জিত করে অমার রন্ধ্রে মৃত মাধুরির কণা’ অর্থাৎ মধুর মুহূর্তের গুঁড়ো জমা করে রাখাই পিঁপড়ের মতো স্মৃতিরও কাজ– মানুষ তাই বলতে পারে, ‘সে, ভুলে ভুলুক কোটি মন্বন্তরে আমি ভুলিব না, আমি কভু ভুলিব না’। যুবক সুধীন্দ্রনাথের এই ভাবনার ওপর উত্তীর্ণ পঞ্চাশ কবি কিন্তু ভরসা রাখতে পারেননি। ‘সে এখনও বেঁচে আছে কী না, তা শুদ্ধ জানি না’ বলে ভুলে যাওয়ার সঙ্গে জানা-কেও জুড়ে নিলেন। স্মৃতির কাজ ফুরল। সুতরাং, ‘কেউ স্মৃতি ভিক্ষা করছে/ বিস্মৃতির জন্য খুশি কেউ’, এ-লাইন ভাস্কর চক্রবর্তীর।

ভাস্কর চক্রবর্তী। ছবি: সন্দীপ কুমার

কবিদের নিয়ে কথা উঠলেই মনে হয়, রবীন্দ্রনাথের পরে গত ৭৫ বছরের বাংলা কবিতায়  ভুলে যাওয়া নিয়ে স্মৃতি-বিস্মৃতির কাজ কারবারে ভাস্করের মতো এতটা আলো কেউ ফেলেননি। রবীন্দ্রনাথের গানে কবিতায় ভুলে যাওয়ার যে অপূর্ব আসা-যাওয়া আছে তা নিয়ে আমরা যদি বসি, কত যে বাঁচার পথ পাওয়া যাবে! সে আরেক দিন হবে। আপাতত ভাস্করের কবিতার কথাই বলি। ওঁর প্রথম দিকের কবিতায় আমাদেরই ছোট ছেলেমেয়েদের হয়ে ভাস্কর বলে রেখেছেন ভোলার দু’রকম কথা– দুটো উদাহরণ দেওয়া যাক। ‘আবার তোমার কথা ভুলে যাই/ ব্যর্থ হয় দিন আর ব্যর্থ হয় রাত’। উল্টোদিকে ‘ভুলে যাও, সে কোন সকালবেলা ছুটেছিলে এই রাস্তা ধরে’। যা ভোলার নয় আর যা ভুলতে হবে তার ওপর একটা অধিকার যেন খুঁজে পেতে চাই আমরা। স্মৃতি ক্ষমতার সঙ্গে যেন জুড়ে আছে ভোলারও ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি যেমন সবার লক্ষ্য, ভাস্কর কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে বিস্মৃতিশক্তির কথাও বলে গিয়েছেন।

ভাস্করের গদ্য বা কবিতার সঙ্গে যাঁদের পরিচয় আছে , যাদের নেই সবাই দেখবেন এই এক কবি কী পরিমাণ যত্ন নিয়ে স্মৃতি হারানো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। লিখছেন, ‘আমার স্মৃতি ছিল জটিল’ আর তাই ডাক্তারবাবু তার কিছুটা ছেঁটে দিয়েছিলেন। কী আছে বা ছিল ওই ছাঁটাই অংশে? একজন কবি-কে দেখা যায় যিনি হাতড়ে ফিরছেন স্মৃতি। ‘পঁচিশ বছর আগেকার মুখ’ জাপানি অক্ষরের মতো দুর্বোধ্য ঠেকলেও যেই মুহূর্তে বাজুবন্ধ মৃদু বেজে ওঠে, গান গান গান শুধু গানই মানুষটাকে মনে পড়িয়ে দেয়, প্রেমিক ছিল সে।

শিল্পী: রাচেল আন্ডারউড

 

ভাস্কর ভুলে যাওয়ার সঙ্গে মুছে ফেলার, ছেঁটে ফেলার কথা বলেছেন প্রথম দিকের কবিতায়, একটা আশঙ্কা, কী একটা উদ্বেগ আমাদের প্রত্যেকের হয়ে ভাস্কর বলতে চাইছিলেন। এ একটা সামাজিক ব্যাধি, নইলে এখন চারিদিকে ডিমেনশিয়া, আর আলঝাইমারের কথা রোজ শুনতে হত না। এইসব ভাস্করের এন্টেনায় কবে থেকে ধরা পড়েছিল! চারপাশের ঠিক ভুলের চাপে অঙ্কের খাতাটার মতো মনে এত বার রবার চালাতে হয়, ছেঁড়া-খোঁড়া পাতা হাতে কাঠগড়ায় উঠে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না। সেই দৃষ্টির বিষাদ ভাস্করের কবিতায় আছে। এই ভুলে যাওয়া মনে রাখা রাজনৈতিক কাজ। একটু ‘কাটাকুটি’ কবিতাটা পড়ি–

কালো কালির ওপর

লাল কালির মর্মান্তিক কাটাকুটি।

ব্যাপারটা কিছুই নয়।

ব্যাপারটা সত্যি তেমন কিছুই নয়

যদি-না মনে পড়ে

কালো একটা ছেলে

রক্তাক্ত

ধান ক্ষেতে শেষঘুমে ঘুমিয়ে আছে।

 

এখানে শুধু মনে পড়াটার কথা মনে রাখা যাক।

ভাস্কর কবিতার নাম দিচ্ছেন, ‘যে কবিতাটা আমি গত বছর লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম’। ‘শ্বাসকষ্ট’ কবিতায় একজন মানুষ বাঁচার জন্য কী ভুলবে আর কী ভুলবে  না তার একটা পরম্পরা-ই তৈরি করা আছে, সত্যি-মিথ্যে, ডাক্তার, তুমি-আমি, শ্বাসকষ্ট এরকম কত। যা মোছার নয় রবার চালালে সেসবও মুছে যায় জীবন থেকে। কারমাজভ ভাই-দের কাহিনি শোনাতে গিয়ে দস্তয়েভস্কি আমাদের কানে বলে গিয়েছিলেন ঈশ্বর আর কী, সুখস্মৃতিই ঈশ্বর। সেই ঈশ্বরহীন অন্ধকারে বিস্মৃতি আর কোলাহল, একখাবলা জ্বলন্ত কয়লা হাতে প্রতিদিন বেঁচে থাকার বিপদ ভাস্কর টের পেয়েছিলেন।

Buy Brothers Karamazov, The Book Online at Low Prices in India | Brothers Karamazov, The Reviews & Ratings - Amazon.in

এরকম বিষ দশায় কী করবে তবে মানুষ? ১৬ জুলাই, ২০০৪- ভাস্কর একটা কবিতা লিখেছেন–

সে হয়তো আসতে পারে
সে হয়তো না আসতেও পারে।

কী যে একটা ঘটেছিল !
কিছু একটা ঘটেছিল ঠিকই ।

দুঃখিত করেছিলাম? কথা বলে?
কিংবা কোনো কথা না বলেই?

হতে পারে।
না হতেও পারে।

কী যে একটা ভুল, কী যে ভুল
ভুলে যেতে হয় কতো কিছু!

 

কতগুলো অবস্থান্তর  জৈন দর্শনের স্যাত বাদের মতো করে সাজিয়েছেন ভাস্কর। জেনে গিয়েছেন নানা ব্যবহারের অন্যে কী অর্থ করবে, সে কারও হাতে নেই। তার একদিকে আছে যথার্থ। ঠিক। সত্যি। সেটা সম্পর্ক হতে পারে, ভালোবাসা হতে পারে, জীবন যাপন হতে পারে, যা খুশি হতে পারে। আর অন্যদিকে রইল ভুল। মিথ্যে। যেটা ভুল, সেটা ভুলে যেতে হয়। তাতে ক্ষতি কিছু নেই। এই ভুল থেকে মনে পড়ল ভাস্করেরই আরেকটা লাইন– ‘ভুল ভালোবাসা হতে পারে তবু ভালোবাসা ভুল নয়।’ এ হল জীবন থেকে জেনে নেওয়া। যা জানি, তা ভোলার দেশে যায় না। চারপাশটাকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচলে প্রতি পদক্ষেপে অন্যকে জড়িয়ে নিলে কোনও না কোনও সূত্রে জগৎ ধরা থাকবেই। আর ছিঁড়ে নিয়ে যত ছোট করে আনা যায় নিজের ঘের ততই জেগে উঠবে ভুলে যাওয়ার ভয়। চোখের সামনে রোজ লক্ষ নিধনযজ্ঞে এই মনে রাখা, ভুলে যাওয়া নিয়ে পরিষ্কার থাকা চাই নিজেদের কাছে। ইয়েহুদা আমেখাই-এর কবিতা মনে পড়ল: কাউকে ভুলে যাওয়া অনেকটা ঠিক বাড়ির পেছন দিকে আলো নেভাতে ভুলে যাওয়ার মতো। আলোটা জ্বলবেই, বলবে আমি আছি।