
১৯২৭-এর জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয় ২৯ বছর বয়সি কবি ব্রেখ্টের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কবিতাবই ‘হাউসপস্টিল্লে’, যার মানে দাঁড়ায় গৃহভক্তিপদাবলি বা ঘরের পাঁচালি। ১৯২৬ সালের শেষদিকে এই বইয়ের একটা সংগ্রাহক সংকলন আগেই বেরিয়েছিল। ২৫ কপি ছাপা হয়। সেই সংকলন, দেখতে করা হয়েছিল চার্চে হাতে হাতে ব্যবহৃত প্রার্থনা-গ্রন্থের মতো। কবিতাগুলোতে বে.বে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন সমাজের সমকালীন বাস্তবতা আর তার ফোঁপড়া অন্তঃস্থল নিয়ে। লুথারিয় আর ক্যাথলিক ভক্তিগ্রন্থগুলো থেকে ছাঁচ তুলে নিয়ে ব্রেখ্ট তীব্র এক অন্তর্ঘাত ঘটাতে চান ধার্মিকতার ভানসর্বস্ব জীবনযাপনে।
প্রচ্ছদের ছবি: ইজরায়েলি শিল্পী ইজায়েল তুমারকিন
ঘোড়া দেখলেই সবার পায়ে বেমালুম বাত। কোনও কিছু লিখতে গেলে এই তেজি প্রাণীর চলাফেরা মনে আসে। সোজা গট গট করে কিছু যে বলে যাব, এমন কনফিডেন্স কস্মিনকালেও ছিল না। আড়ে আড়ে কোনাকুনি চলতে গিয়েও লজ্জায় মাথা কাটা যায়। তাই আড়াই চালে ভাবি। বাধা টপকে আদার ব্যাপারীও মোক্ষম ঘরটিতে গিয়ে বসতে পারে চোখের পলকে। কাটাকুটি– সে পরের কথা। তবে নিওলিথ স্তব্ধতায় না হোক মহীনের পোষা জীবটির আপন মনে ঘাস খাওয়ার দৃশ্য নিউটাউনেও দেখা যায়, সূর্যাস্তে, সন্ধ্যায়। স্যুররিয়াল। বিষাদ মন্থর। দিনশেষের লালচে আলোয় পিঠের ভাবনা-ক্ষতগুলো চিক চিক করে। কারও হাসি পায়, কারও চোখে জল আসে।
…………………………………………..
১৩.
মারি ফারার-এর শিশু হনন বিষয়ে একটি-দু’টি কথা
মারি ফারার এপ্রিল মাসে জন্মেছিল। অনেক দূরের দেশে। জার্মানিতে। দেশই তো শুধু নয়। তার কুকীর্তির কথা আর বাস্তব পরিস্থিতি আমরা প্রথম জানতে পেরেছিলুম তাও প্রায় ১০০ বছর আগে। কিন্তু গত হপ্তায় পথ-নাটকের কম্পিটিশনে দেখলুম, কলেজের ছেলেমেয়েদের হাত ধরে সে বেটি আবার ফিরে এসেছে। এই ফিরে আসার বোধহয় একটু পূর্বসূত্র আছে। ২০২৩-এ ছিল মারি ফারার-এর কাণ্ডের প্রধান খবরদাতা– কবি ও নাট্যকার বের্টোল্ড ব্রেখ্টের ১২৫-তম জন্মবার্ষিকী। ব্যাপারটা স্মরণীয় করে রাখতে বিখ্যাত নট ও নাট্য-পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় ব্রেখ্টের নাটক, কবিতা, গান আর জীবন নিয়ে কলকাতার মঞ্চে একখানা চমৎকার কোলাজ বানান। সেখানেই কমবয়েসি অভিনেতারা মারি ফারার-এর শিশু হননের প্রকৃত বাস্তবটি বাংলা ভাষায় অভিনয় করে দেখান। তারপর থেকে নানা জায়গায় মারি ফিরে এসেছে। ইউটিউবে অনেকে আবৃত্তি করে ছেড়ে দিচ্ছেন। পথনাটকে অনেকে কবিতাটি হাতে-পায়ে-শরীরে-বাচিকে করে দেখাচ্ছেন। কলেজের কম্পিটিশনে ফেরার হয়ে যাওয়া মেয়েটা ফিরে এসেছে। ভালো হয়েছে। শিশুহত্যা না করে কত মারি ফারার স্কুল-কলেজে, ধানখেতের ধারে মাথায় হাত দিয়ে বসে ভাবছে– কী করবে, এই বাস্তবটা তো ভারতীয় বিপুল সমাজ-দেহে পুরনো নয়। কিন্তু শীতের শুকনো পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে মারি-কে নিয়ে কয়েকটা কথা মনে এল।

ব্রেখ্টের নাটক আমাদের কাছে আজও কতখানি চেনাজানা সেকথা বলা শক্ত। ‘তৃতীয় রাইখের ভয় ও দুর্দশা’– কয়েকটি দৃশ্য, ব্রেখ্ট লিখেছিলেন সেই কবে। কিন্তু ভারতে শুধু নয়, গোটা পৃথিবীর তীব্রভাবে হেলে পড়া ফ্যাসিস্ট টানে সেই নাটক তো কোথাও খুব হতে দেখি না। সিনেমার জনপ্রিয় প্রতিবাদী অভিনেতা, মঞ্চে অসাধারণ পারফর্মার আমাকে জানালেন– ব্রেখ্ট-এ আজকের অবস্থা ধরা যাবে না। কীসে যাবে? ব্যোমকেশ আর নেতাজী সন্ধানে? বাদল সরকারের বিনোদনের নাটকে? হবেও বা। যাই হোক, কবি ব্রেখ্টের কথা আর বাংলায় মারি ফারার-এর হাজিরা নিয়েই আপাতত বলি।

১৯২৭-এর জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয় ২৯ বছর বয়সি কবি ব্রেখ্টের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কবিতাবই ‘হাউসপস্টিল্লে’, যার মানে দাঁড়ায় গৃহভক্তিপদাবলি বা ঘরের পাঁচালি। ১৯২৬ সালের শেষদিকে এই বইয়ের একটা সংগ্রাহক সংকলন আগেই বেরিয়েছিল। ২৫ কপি ছাপা হয়। সেই সংকলন, দেখতে করা হয়েছিল চার্চে হাতে হাতে ব্যবহৃত প্রার্থনা-গ্রন্থের মতো। কবিতাগুলোতে বে.বে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন সমাজের সমকালীন বাস্তবতা আর তার ফোঁপড়া অন্তঃস্থল নিয়ে। লুথারিয় আর ক্যাথলিক ভক্তিগ্রন্থগুলো থেকে ছাঁচ তুলে নিয়ে ব্রেখ্ট তীব্র এক অন্তর্ঘাত ঘটাতে চান ধার্মিকতার ভানসর্বস্ব জীবনযাপনে। এই বইয়ের কবিতাগুলোতে প্রচণ্ড ব্যঙ্গ, রাগ আর কাঁচা আকরিক উপস্থাপনায় তিনি মানুষ-জীবনটাকে সামনে এনে দেখান, খানিকটা ফ্রাঁসোয়া ভিঁয়ো-র মতন। মদ, খুন, যৌনতা, যুদ্ধ, নির্যাতন, শিশুহত্যা, দারিদ্র্য– কী নেই সেখানে! আর ভয়ানক হতাশা নিয়ে মানুষের অর্থহীন অস্তিত্বের দিকে তাকানো এই কবিতাবই এক অর্থে তাঁর মার্ক্সবাদী-পরবর্তী পর্যায়ের পূর্বাবস্থা। মানুষের হাতে তৈরি একটা জগত যে মানুষের মুখের ওপর ক্রমাগত পতনের ছায়া টেনে নামাচ্ছে ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে– সেই শয়তানিটার ফর্দাফাঁই করে ছাড়েন ব্রেখ্ট। ওয়াইমার রিপাবলিকের নৈরাজ্য আর শূন্যতার বোধ, এই বইয়ের কবিতায় ধর্মীয় ভক্তিকে নিষ্ঠুরতায় উল্টে-পালটে দেয়। এখানেই ছিল বেচারা বে.বে-কে নিয়ে লেখা বিখ্যাত কবিতা অথবা মৃত সৈনিকের গাথা। মারি ফারার এখান থেকেই উঠে এসেছিল।

১৯২২-২৫-এর মধ্যে কোনও সময়ে কবিতাটা লিখেছিলেন ব্রেখ্ট। সেদিক দিয়ে এ কবিতার ১০০ বছর পার হল। পরিস্থিতি খুব যে বদলে গেল, বুক ঠুকে বলা যাবে না। এই কবিতার মধ্যে তীব্র ধর্মীয় অন্তর্ঘাত ছিল। মাতা মেরি বা মারি– আমাদের জিভে যাই উচ্চার্য হোক না কেন, তিনি যে যিশুর মা, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। এই কবিতার খ্রিস্টীয় পরিমণ্ডলে যে অভিঘাত সেটা ধরতে না পারলে, একে বাংলায় টানা মুশকিল। ১৯৬৬ সালে এরিক বেন্টলি ইংরেজিতে ‘হাউসপস্টিল্লে’ দ্বিভাষিক অনুবাদ করেন। বাংলা ভাষায় এর আগে ব্রেখ্টের কবিতা খুব একটা অনুবাদ হয়নি। নাটক নিয়ে এই ছয়ের দশকেই বাংলায় ব্রেখ্ট প্রযোজনায় উৎসাহ দেখা দিয়েছে। ১৯৬২ সালে ‘সপ্তসিন্ধু দশ দিগন্ত’ অনুবাদ সংকলনে ব্রেখ্টের তিনটি কবিতা অনুবাদ করেন শঙ্খ ঘোষ, আলোক সরকার আর অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। পরে ১৯৬৭ সালে ‘অন্য দেশের কবিতা’ অনুবাদ গ্রন্থে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ব্রেখ্টের কবিতা-গল্প-নাটকে যেমন পরবর্তীকালে বিশ্বের নানা গাথা কথা ঢুকে এসেছে, তেমনই প্রথম দিকের কাজে ইউরোপ, জার্মানি আর খ্রিস্টীয় পরিকল্প। মারি ফারার-এর কাহিনি তাই যে কোনও নৈতিকতা দিয়ে সবটা ধরা মুশকিল। তার করুণ দশা, অমানুষিক খাটনি, আর নিজের সদ্যোজাত ছেলেকে খুন করার গল্পটায় পরিবেশনার ভয়ানক উলটপুরাণ বাংলায় আসেনি।

বাংলায় এই কবিতার একটা গদ্য-অনুবাদ আছে। সেইটেই সব জায়গায় করে দেখানো হয়। এই কবিতার বাংলা পরিবেশনার একটু মুখে-শোনা ইতিহাস এখানে লিখে রাখি। পারফরম্যান্সের ইতিহাস অ্যানেকডোটেই তৈরি হয়। বিশেষত নাটকে।
অভিনেত্রী কেয়া চক্রবর্তীর স্মৃতিগ্রন্থ ‘কেয়ার বই’ যখন তৈরি হচ্ছে, বইটির গ্রন্থনায় নাট্যকার চিত্তরঞ্জন ঘোষ আর অভিনেতা সৌমিত্র মিত্র, মারি ফারার-এর শিশুহত্যা কবিতাটির বাংলা অনুবাদ প্রথম গ্রহণ করেন। এই গদ্য-অনুবাদ, সৌমিত্র মিত্রের কথায়– অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় আর কেয়া চক্রবর্তীর যৌথ প্রয়াস। এই অনুবাদটি ওঁরা পাঠ করেন, খানিকটা শ্রুতি অভিনয়ের মতো। ‘নান্দীকার’ নাট্যগোষ্ঠীর জন্মদিনে, বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরিতে। ১৯৭০ বা ’৭১ সালে। নকশাল আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের মুখ, হত্যা-প্রতিহত্যা, বামপন্থার নানাখানা চেহারা আর নকশাল দমনের ভয়াবহতার প্রতিবেশে মারি ফারার কলকাতায় হাজির হয়েছিল। এই তথ্যগুলো আমদের তরুণ ঐতিহাসিকদের জোগাড় করা উচিত। পারফরম্যান্স শুধু নয় কখন-কী-কেন হচ্ছে বা হচ্ছিল, তার সঙ্গে আজকের দিনটাকে জুড়ে-গেঁথে না দেখতে পারলে– সে পারফরম্যান্সই বল, আর জীবনকাহিনি– কিছুই দেখার কোনও মানে থাকে না। কেয়া আর অজিতেশ-এর অনুবাদ খরখরে গদ্যে সেদিন মারি-কে হাজির করেছিল। অথচ জার্মান মূল কবিতাটি ছিল রীতিমতো ছন্দে লেখা, স-মিল এক খ্রিস্টীয় গানের আদলে লেখা কবিতা।

ভয়ানক অসহায় কুমারী মায়ের কাহিনি সেদিন কলেজের ভেতরে মেয়েদের অভিনয় দেখতে দেখতে ফিরে পড়তে ইচ্ছে করল। থাক একটা অনুবাদ এখানেও, সিসিফাসের মিথটা তো আর মিথ্যে নয়…

১.
মারি ফারার জন্মেছে এপ্রিল মাসে
অনাথ এবং রিকেটগ্রস্থ জন্মচিহ্ন নেই। আগে
স্বভাব-চরিত ভালো ছিল তবে স্বীকার করেছে মেরেছে সে
নিজেরই শিশুকে। গোটা ব্যাপারটা রইল এখানে নয় ভাগে
গেছিল সে এক মহিলার কাছে তলকুঠুরিতে ফুটপাথের
তখন দু’মাস চলছিল ওর ঘটনা যা ঘটে তারপরে
সেখানেই দুটো ইনজেকশান মেরেছিল ওরা দুই হাতে
লেগেছিল খুবই অথচ পেটটা খসেনি মারির সেইবারে
আপনারা রাগে ফেটে যাবেন না হাত জোড় করে বলছি ভাই
বেঁচে আছ যারা অপরের প্রতি তাদের একটু করুণা চাই।
২.
তক্ষুনি সব পাওনা-গন্ডা চুকিয়ে দিলেও কথামতো
ওটা রয়ে গেল, তারপর থেকে বুকপেট কষে বাঁধল সে
কাঁচা মদও খেল গোলমরিচের গুঁড়ো ফেলে দিয়ে যথাযথ
হল না কিসুই তেড়ে বমি হল উগরোল সবই পানদোষে
এবার স্পষ্ট ফোলা পেটখানা দেখলে যে বোঝে সে-ই বোঝে
তলপেট খুব ব্যথায় টাটাত বাসন মাজলে পেত সে টের
স্বীকার গেছে ও তখনও অতটা বাড়েনি শরীর মা হবে যে
মাতা মেরিকেই প্রাণ দিয়ে ডাকে আশায় মরেছে চাষাটা ফের,
তবু আপনারা চটে যাবেন না হাত জোড় করে বলছি ভাই
বেঁচে আছ যারা বাদবাকিদের অল্প একটু করুণা চাই।
৩.
যাই হোক ওই ডাকাডাকি করে লাভ হল শুধু ঘোড়ার ডিম
চেয়েছিল বড় বেশিই ওদিকে পেট জয়ঢাক। সভাঘরে
প্রার্থনা কালে মাথা ঘুরে যায় ঝাপসা দু’ চোখ হাত-পা হিম
ক্রুশের সামনে নামে কালঘাম হাঁটু গেড়ে বসে ভেঙে পড়ে
তবুও সে তার দশাটা লুকোতে ভান করে চলে প্রাণপণে
যতক্ষণ না জন্ম-প্রহর ঘাড়ের ওপর এসেছে ওর
ঘটনাটা এত সাদামাটা তাই আসবে না কোনওদিন মনে
কোনও ব্যাটাছেলে ফুঁসলেছে ওকে সাড়া দিয়েছে ও অতঃপর
কিন্তু দাদারা রেগে যাবেন না করজোড়ে শুধু মিনতি এই
বেঁচে আছ যারা অপরের প্রতি তাদের একটু করুণা চাই।
৪.
বলছে মেয়েটা ঠিক সেইদিন হয়তো বা ভোর হবে তখন
সিঁড়ি ধুচ্ছিল ঘষে ঘষে খুব অমনি আঁতের অন্দরে
নখ দিয়ে যেন খামচাল কীসে কেঁপে ওঠে সারা গতর মন
যাই হোক সেই বিকট ব্যথাটা সয়ে গেল শুধু চুপ করে
তারপর রোদে কাপড় শুকোল ওদিকে মাথাটা ছিঁড়ে যাবার
জোগাড় এবার, বুঝল তখনই এল বিয়োবার সেই প্রহর
আতঙ্কে যেন একটি পাথর চেপে বসে বুকে ফিরে আবার
অনেক রাত্রে সিঁড়ি বেয়ে উঠে খুঁজে পেল শেষে বিছানা ওর,
তবুও বলব চটে যাবেন না হাত জোড় করে মিনতি ভাই
বেঁচে আছ যারা অপরের প্রতি তাদেরও একটু করুণা চাই।
৫.
কিন্তু যেই না শুয়েছে মেয়েটা ডাকল বাবুরা তখনই প্রায়
টাটকা বরফ পড়ছে তখন অতএব সেটা ঝ্যাঁটাতে যাও
দিনটা কিছুতে শেষ হচ্ছে না। রাত্রি দশটা বাজতে যায়।
যতক্ষণ না ঘুমবে বাড়িটা শান্তি কোথায় বিয়োবে তাও।
ওর কথামতো, এবার জন্ম দিল, ছেলে ছিল বাচ্ছা তার।
ছিল সে তেমনই জগতে যেমন অন্য মায়েরা জন্ম দেয়
অথচ মারি তো সাধারণ কোনও মায়ের মতোন ছিল না আর
সুতরাং তাকে ব্যঙ্গ করার জুতসই কোনও কারণ নেই,
তবু আপনারা ক্ষেপে যাবেন না করজোড় শুধু মিনতি এই
যারা বেঁচে আছ অপরের প্রতি তাদেরও একটু করুণা চাই।
৬.
এবার বরং গোটা কাহিনিটা ওকে শেষতক বলতে দাও
জন্মেছিল যে সেই ছেলেটার কী হল না হল তারপরে
(মেয়েটা বলেছে লুকনোর মতো কথা কিছু তার নেই কোথাও)
যে যেমন লোক তুমি আর আমি ন্যায়বিচার তো তার ওপরে।
বিছানায় যেই শুয়েছে অমনি চেপে ধরে এক গা-বমি ভাব
ওরই কথামতো, কী যে হচ্ছিল, তখন অবধি জানে না ও
লড়ে যায় মারি, নিজেই আনাড়ি, লুকোয় কান্না-গোঙানি সব
কাঁদে আর চাপে ঠেলে দেয় নিচে, থমথমে ঘর, ছিল না কেউ।
আবার বলছি ক্ষেপে যাবেন না করজোড়ে শুধু মিনতি ভাই
যারা বেঁচে আছ অপরের প্রতি তাদেরও একটু করুণা চাই।
৭.
শোওয়ার ঘরটা বরফ-ঠান্ডা, তাই এবার সে জড়ো করে
যতটা শক্তি টিকে ছিল দেহে নিজেকে হিঁচড়ে নিয়ে যাবার,
পায়খানা ঘরে পৌঁছলে একা, ফোটেনি তখনও আলো ভোরের
জন্ম দিল সে উৎসবহীন, সাধারণভাবে (সময় তার
ঠিক ক’টা হবে জানে না যদিও)। তারপরে যায় গুলিয়ে সব
বলেছিল ওর ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিল হাত-পায়ের নখ।
বাচ্ছাটাকে যে ধরবে দু’ হাতে সেটুকুও ছিল অসম্ভব।
কারণ চাকর-চাকরানিদের পায়খানাটায় পড়ে বরফ।
আবার বলছি ক্ষেপে যাবেন না করজোড়ে শুধু মিনতি ভাই
যারা বেঁচে আছ অপরের প্রতি তাদের একটু করুণা চাই।
৮.
কাজের লোকের কলঘর থেকে বিছানা অবধি যাবে যখন
(তার আগে কিছু ঘটেনি কথাটা স্বীকার করেছে নিজ মুখে)
কান্না জুড়ল বাচ্ছাটা এত পাগলের মতো লাগে তখন
এক ঘুষি মারে, বলেছে একথা, অন্ধের মতো মারে ওকে
থামে না কিছুতে মেরে যায় কিল যতক্ষণ না চুপ করে
কবুল করেছে, নিথর দেহটা নিয়ে শুয়েছিল ও বিছানায়
বাকি রাতটুকু তারপর পড়ে থাকে ওটাকেই বুকে ধরে
সকাল হতেই কাপড় কাচার ছাউনিতে গিয়ে মরা লুকায়,
তবুও বলব চটে যাবেন না হাতজোড় করে বলছি ভাই
যারা বেঁচে আছ অপরের প্রতি তাদের একটু করুণা চাই।
৯.
মারি ফারার জন্মেছে এপ্রিল মাসে
মেইসেনের এক কয়েদখানায় মরেছে প্রবল অনুতাপে
অবিবাহিতা মা আইনের চোখে শাস্তি পেয়েছে সেই দোষে
দেখলেন সব বেঁচে আছে যারা, বেঁচে আছে কত হীনভাবে
আপনারা যদি ধোপদুরস্ত কাপড়ে জড়ান ছেলেকে আর
গর্ভধারণ করেই ভাবেন আশীর্বাদ এ ঈশ্বরের
হীন পতিতকে ক্ষীণবল দেখে দরকার নেই শাপ দেবার
পাপ তার ভারি, তবুও সে নারী যন্ত্রণাবিষ সয়েছে ঢের।
তাই আপনারা ক্ষেপে যাবেন না করজোড়ে শুধু মিনতি ভাই
যারা বেঁচে আছ অপরের প্রতি তাদেরও একটু করুণা চাই।
… এক, দুই, আড়াই-এর অন্যান্য পর্ব …
১২. এমনও হাসি আছে বেদনা মনে হয়
১১. গুরুদত্ত চেয়েছিলেন, বিজয়ের চলে যাওয়া দিয়ে শেষ হবে ‘পিয়াসা’
১০. কবির বিশ্রাম
৯. গত ২০ বছরে নস্টালজিয়ার এত বাড়বাড়ন্ত কেন?
৮. কলকাতার মূর্তি-আবর্জনা কি বাড়ছে?
৭. ভাবা প্র্যাকটিস করা, কঠিন এখন
৬. লেখার অত্যাচার, লেখার বাঁচা-মরা
৫. বিশ্বকর্মা পুজোর সন্ধেবেলাটার মতো বিষাদ আর হয় না
৪. কথা শেষ হতে পারে, ‘শেষ কথা’ বলে কিছু হয় না
৩. দেখা হলে বলে দিও, আজও বেঁচে আছি
২. ফুলের রং শেষ পর্যন্ত মিশে যায় নন্দিনীর বুকের রক্তের ইমেজে
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved