বেঙ্গালুরুর এক কোম্পানি অলরেডি তার কোম্পানির নামে ৩০০ মিলিলিটার বুকের দুধ ৪৫০০ টাকায় বিক্রি করছে। আশ্চর্যভাবে, সরকার বা সরকারি নীতি এর বিরুদ্ধে গেলেও প্রত্যেকেই কিন্তু চুপ। এই পোড়া দেশে হাজারে হাজারে ‘এনজিও’ কাজ করছে সমাজের ভালোর জন্য, কিন্তু ক’টা এনজিও সত্যি সত্যি সমাজের উপকার করছে, তার খোঁজও আমরা রাখি না। বেঙ্গাুলুরুর এই বুকের দুধ বিক্রি করা কোম্পানি কীভাবে এই দুধ সংগ্রহ করে জানেন?
১৩.
‘ভাই… ভালো ব্র্যান্ডের ৩০০ এমএল বুকের দুধের প্যাকেট পাওয়া যাবে?’
কী? অবাক হচ্ছেন? ভাববেন না, দিন আসছে যখন দোকানে দোকানে এই প্রশ্নটা শুনবেন এবং জানবেন নানারকম ব্র্যান্ডের মাতৃদুগ্ধ প্যাকেটে করে পাওয়া যাচ্ছে। এখনও পাওয়া যায়, তবে খোলা বাজারে নয়।
আমরা ছোটবেলায় পড়েছি– বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ। জানি না আশীর্বাদ কতটা, আর অভিশাপ কতটা! কিন্তু প্রযুক্তির এই প্রগতি মনুষ্য সমাজকে নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রচুর মহিলা, তাঁরা মা না হলেও তাঁদের বুকে অতিরিক্ত দুধ আসে। সেই অতিরিক্ত দুধকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংগৃহীত করে সেই দুধ যে-শিশুরা মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত, তাদেরকে দেওয়া যায়। তাতে দুধের স্বাদ বা উপকারিতা কিছুটা হলেও সেই শিশুটি পেতে পারে। উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে যদি মাতৃদুগ্ধ-বঞ্চিত শিশুদের দেওয়া হয় তাহলে ক্ষতি কী? কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই দুধ বাজারজাত করে বিক্রি করা কতটা যুক্তিযুক্ত?
আরও পড়ুন: ধর্মতলার সেই ভিক্ষুক যে বিজ্ঞাপনের কড়া স্ট্রাটেজিস্ট
সমাজ সেবকরা বলছেন– এই মাতৃধন বা প্রকৃতি-জাত খাদ্য মানুষের শরীরের মধ্য দিয়ে আসে, সেটা কখনওই বিক্রি করা যায় না। তা দিয়ে ব্যবসা করাও যায় না। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই মাতৃদুগ্ধ-বঞ্চিত শিশুদের দান করা যায়, এটা একটা সুস্থ সমাজসেবার লক্ষণ। কিন্তু আজকালকার বাজারী যুগে, যেখানে সব কিছুই ‘কনজিউমার আইটেম’– সেখানে এই নৈতিকতার কোন জায়গা আছে কি? আমাদের হতভাগ্য দেশে যারা শুধু টাকার কুমির, অসৎ ব্যবসার মধ্য দিয়ে মানুষের স্নেহ-ভালোবাসা-নৈতিকতা-দায়বদ্ধতা– সব কিছু টাকার বিনিময়ে লুটে নেয় তারা। বেঙ্গালুরুর এক কোম্পানি অলরেডি তার কোম্পানির নামে ৩০০ মিলিলিটার বুকের দুধ ৪৫০০ টাকায় বিক্রি করছে। আশ্চর্যভাবে, সরকার বা সরকারি নীতি এর বিরুদ্ধে গেলেও প্রত্যেকেই কিন্তু চুপ। এই পোড়া দেশে হাজারে হাজারে ‘এনজিও’ কাজ করছে সমাজের ভালোর জন্য, কিন্তু ক’টা এনজিও সত্যি সত্যি সমাজের উপকার করছে, তার খোঁজও আমরা রাখি না। বেঙ্গাুলুরুর এই বুকের দুধ বিক্রি করা কোম্পানি কীভাবে এই দুধ সংগ্রহ করে জানেন?
গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন এনজিও-রা দরিদ্র পরিবারের যে সমস্ত অবিবাহিত অল্পবয়স্ক মহিলারা বুকের দুধ দিতে সক্ষম, তাদের হয় পয়সা দিয়ে, না হয় খাবারের প্যাকেট দিয়ে অবৈধভাবে সেই দুধ জোগাড় করে ওই কোম্পানির ল্যাবরেটরিতে চালান দেয়। এই বিষয় নিয়ে অনেক পত্রপত্রিকাতে আলোচনা চলছে এবং চলবেও। পৃথিবী জুড়ে বিশিষ্ট সমাজসচেতন চিকিৎসক এবং বহু বিজ্ঞানীদের সুচিন্তিত মতামত যে, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন, মাতৃস্তন থেকে যে দুধ শিশুরা পান করে, তার যোগ্য এই কালেক্টেড দুধ একেবারেই নয়। পুষ্টির দিক থেকে হয়তো কিছুটা, কিন্তু ওই মাতৃস্তনের দুগ্ধ থেকে শিশুদের শরীরে মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা, আদরের অনুভূতি যেভাবে পৌঁছয়, তার কি কোনও বিকল্প আছে? না, হতে পারে?
আরও পড়ুন: গেরুয়া লুঙ্গির কাছে গোহারান হেরেছে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি
কিন্তু মানুষের মন বোঝা মুশকিল! মনে রাখবেন ব্যবসার বাজারে যদি কনজিউমার না থাকে, তাহলে প্রোডাক্ট চলে না। তার মানে এই ৩০০ এমএল বুকের দুধ ৪৫০০ টাকায় কেনার ক্রেতা হয়তো নিশ্চয়ই আছে! যাঁদের শারীরিক কারণে এছাড়া উপায় নেই। আবার আর এক শ্রেণির ক্রেতাও আছেন এবং তাঁরা কারা– শুনলে খানিক অবাক হবেন। তাঁরা হয়তো সেই মায়েরা যাঁরা নিজেদের স্তনের শেপ ঠিক রাখতে তাঁদের গর্ভজাত শিশুকে নিজের বুকের দুধ খাওয়াতে চান না। তাঁরাই হচ্ছে এইসব বিকৃত প্রোডাক্টের আসল খরিদ্দার। তাঁরা শিক্ষিত, অর্থবান, তাঁদের ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে, অথচ এই পথে প্রলুব্ধ হচ্ছেন।
কী বলবেন বলুন। কাকে দোষ দেবেন– ক্রেতা কে না বিক্রেতাকে?
একটু ভাবুন।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved