পূর্ণেন্দুবাবু, আমার শ্রেষ্ঠ কবিতার জন্যে আপনার আঁকা ছবি দেখলাম প্রচ্ছদটি আমার ‘কাস্তে’ কাব্যগ্রন্থের উপযুক্ত। ওটি পরের সংস্করণ ‘কাস্তে’তে ছাপা হ’লেই ভাল। কিন্তু শ্রেষ্ঠ কবিতার ওটি প্রচ্ছদ হ’তে পারে না। কারণ আমার ৩/৪ অংশ কবিতাই অন্যরকম। তাই একট অন্য ধরণের প্রচ্ছদ হ’লেই ভাল হয়। গতবারের আগের বার শ্রদ্ধেয় যামিনী রায় আমার বইয়ের প্রচ্ছদ করে দিয়েছিলেন একটু decorative ধরণের। আপনার মত শিল্পীর পক্ষে ওই ধরণের সুন্দর একটি কভার আঁকা সহজেই হবে। যামিনীবাবুর আঁকা প্রচ্ছদটি আপনাকে মাত্র দেখানোর জন্যে পাঠালাম। আশা করি ভাল আছেন। পূর্ণেন্দু পত্রীকে চিঠিতে একথা লিখছেন দিনেশ দাস।
১৭.
প্রকাশনায় আসার পর থেকেই ঠিক করেছিলাম সব ধরনের বই করব। কিন্তু ফিকশন, নন-ফিকশন, ছোটদের উপযোগী বই করে ফেললেও প্রথম কবিতার বই প্রকাশ করতে আমার দু’-বছর সময় লেগেছিল। দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত প্রথম কবিতার বই দিনেশ দাসের ‘অসঙ্গতি’। ১৯৭২-এর জুলাই মাসে আমি ‘অসঙ্গতি’ প্রকাশ করি। মজার ব্যাপার হল, আমি প্রথম যে-তিনটি কবিতার বই ছেপেছিলাম তার মধ্যে দু’টিই দিনেশ দাসের। তাঁর দ্বিতীয় এবং আমাদের প্রকাশনার তৃতীয় বইটি ১৯৭৫-এর নভেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। এই ‘কাস্তে’ বইটির নামেই কবি দিনেশ দাসকে বাঙালি কাব্যপিপাসুরা ডেকে থাকেন– ‘কাস্তে’র কবি দিনেশ দাস। দে’জ পাবলিশিংয়ের দ্বিতীয় কবিতার বইটি ছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদে ‘পাবলো নেরুদার প্রেমের কবিতা’– সে-বই প্রকাশিত হয় ‘কাস্তে’র দশ মাস আগে জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে।
আমাদের প্রথম কবিতার বই প্রকাশের নেপথ্যে দিনেশ দাসের পুত্র শান্তনু দাসের বিশেষ অবদান ছিল। শুরুর দিনগুলিতে আমার নিকটজনদের মধ্যে শান্তনুদাও ছিলেন। শান্তনুদা নিজেও কবিতা-গদ্য লিখতেন। তাঁর সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন ছিল ‘গঙ্গোত্রী’। এই একই নামে একটা প্রকাশনাও ছিল। সেই প্রকাশনা থেকেই দিনেশ দাসের ‘কাস্তে’ বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। তারপরে বইটি আমাদের প্রকাশনায় আসে। শান্তনুদার কথা খানিক পরে বলা যাবে, এখন তাঁর বাবা দিনেশ দাসের কথা বলি।
‘অসঙ্গতি’ বইটি নিয়ে দিনেশ দাস একটা সংকটে পড়েছিলেন। বইটার নামকরণ কী করবেন এই নিয়ে তাঁর মনে একটা দ্বন্দ্ব চলছিল। প্রথমে ভেবেছিলেন নাম দেবেন ‘সাদা ঢেউ’। হয়তো গৌতম রায় বা অন্য কোনো শিল্পী এই নামে মলাটও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু একদিন না কি সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়িতে শান্তনুদাকে জানান যে, ওই নাম আর তাঁর পছন্দ হচ্ছে না, নামটা নেহাত ম্যাড়মেড়ে লাগছে। তখন ঠিক করেন বইয়ের নাম দেবেন ‘হারমোনিয়াম’। কিন্তু তার পর তিনি ভুবনেশ্বরে একটি সর্বভারতীয় কবি সম্মেলনে যান। সেখানে তাঁর পাঠ করা ‘অসঙ্গতি’ কবিতাটি নিয়ে কবিমহলে সাড়া পড়ে যায়। তখন তিনি সিদ্ধান্ত করেন বইয়ের নাম হবে ‘অসঙ্গতি’– আমাদের ছাপা প্রথম কবিতার বই। বইটির ভূমিকায় দিনেশ দাস লিখেছিলেন, ‘আমরা এক ত্রুটিপূর্ণ যুগের বাসিন্দা। একদা সমাজে কবির যে উচ্চাসন ছিল এখন আর তা নেই। তাই কথাসাহিত্যের গাড়ি যখন হেডলাইট জ্বেলে, ভেঁপু বাজিয়ে, ধুলো উড়িয়ে, কাদা ছিটিয়ে তীরবেগে ছোটে তখন কবিদের সন্তর্পণে পথের একধার দিয়ে অগ্রসর হতে হয়। এই পদযাত্রা যেন কতকটা মহাত্মাজীর সবরমতী থেকে ডান্ডি অভিযানের অনুরূপ অথবা গ্যয়টের ভাইমার থেকে রোম যাত্রার মতো’।
দিনেশ দাস আমার বাবার থেকে এক বছরের বড় ছিলেন, কবির জন্ম ১৯১৩ সালে। কিন্তু আজীবন তিনি আমাকে ‘আপনি’ বলেছেন। আমরা তাঁর চারটে কবিতার বই ছেপেছি। তিনি থাকতেন দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরে। গোপালনগরের মোড়ে সার্ভে বিল্ডিংয়ের পাশের রাস্তা দিয়ে চেতলার দিকে গেলে আফতাব মসজিদ লেনে ছিল তাঁর বাড়ি। আমি বেশ কয়েকবার তাঁদের চেতলার বাড়িতে গেছি। দিনেশ দাস আবার চেতলা হাইস্কুলের শিক্ষকও ছিলেন।
কবি হিসেবে তিনি খুব অল্পবয়সেই পাঠকের নজর কাড়েন। সুভাষচন্দ্র বসু প্রথমবার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার পর ১৩৪৬ সালের জন্মাষ্টমীর দিন চেতলা পার্কে তাঁকে সম্বর্ধনা জানাতে যে বিশাল জনসভা হয় সেখানে দিনেশ দাস একটি ১৪ লাইনের কবিতা (সনেট) পাঠ করেন যেটি মানপত্র হিসেবে সুভাষচন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তখন কংগ্রেসের সভাপতিকে সম্ভবত রাষ্ট্রপতি বলার চল ছিল। দিনেশ দাসের শ্রেষ্ঠ কবিতার ‘পুরাতনী’ অংশের দ্বিতীয় কবিতাটিই হল সেই মানপত্রের কবিতা। সুভাষচন্দ্র তখনও বাঙালির আইকন ‘নেতাজি’ হয়ে ওঠেননি, কিন্তু আজ কবিতাটি পড়লে মনে হয় সেইসময়েই দিনেশবাবু তাঁর কবিতার শেষ লাইনে বলে রেখেছিলেন নেতাজিকে নিয়ে বাঙালির আবেগ কোন স্তরে পৌঁছবে। সে-কবিতার শেষ লাইনে তিনি লিখেছিলেন, ‘দিগন্তে ঝলসি ওঠে তোমার জ্বলন্ত তরবারি’। সেদিন নেতাজি তাঁর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে বলেছিলেন, এই ছেলে একদিন নজরুলের মতো কবি হবে। তখনকার দিনে কোনও কবিকে কাজী নজরুলের সঙ্গে তুলনা করাটা বিরাট গর্বের বিষয় ছিল, দিনেশবাবু সেই অল্প বয়সে সুভাষচন্দ্রের এই ভবিষ্যৎবাণী শুনে খুবই আপ্লুত হয়েছিলেন।
তাঁর জীবনও ছিল বর্ণময়। আমি তাঁকে যখন থেকে দেখেছি তখনও সম্ভবত তিনি চেতলা বয়েজ স্কুল থেকে অবসর নেননি। কিন্তু এই চেতলা বয়েজ স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করার আগেও তিনি বহু রকম কাজ করেছেন। ১৯৩০ সালে গোটা ভারতের মতো আমাদের প্রদেশেও গান্ধীজির আইন অমান্য আন্দোলনের ঢেউ ওঠে। তখন দিনেশবাবু সম্ভবত কলেজের ছাত্র। সেইসঙ্গে চলেছে কবিতা লেখা। তাঁর সহপাঠীরাও ছিলেন সব বিখ্যাত মানুষ– সুভো ঠাকুর, আশু চট্টোপাধ্যায়, হীরালাল দাশগুপ্ত, মণি বাগচি, বিরাম মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। সকলেই বাঙালি সারস্বত সমাজে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। এঁদের মধ্যে বিরামবাবু তো বইপাড়ার অন্দরমহলের মানুষ ছিলেন। তাঁর হাতে তৈরি নাভানা প্রকাশনীর বইয়ের বাহুল্য বর্জিত অসামান্য গঠনসৌষ্ঠব বাংলা প্রকাশনার গর্ব। কিন্তু এই বন্ধুদলের কেউই লেখাপড়া করে বড় সরকারি চাকুরে হননি। দিনেশবাবুর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে এমএ পাশ করে বড়ো পদে সরকারি চাকরি করুক। কিন্তু বাবার তাড়নায় বিএ অব্দি পড়লেও তারপর আর প্রথাগত পড়াশোনা করতে চাননি। বিএ পরীক্ষাটাও দিয়েছিলেন বছর চারেক পরে। নানারকম চিন্তাভাবনা করে শেষমেশ একটা কাজ জোগাড় করে চলে যান কার্শিয়াংয়ের কাছে গয়াবাড়ি টি এস্টেটে। অনেক পরে এই গয়াবাড়িতেই দিলীপকুমার অভিনীত তপন সিংহের ছবি সাগিনা মাহাতোর শুটিং হয়েছিল। দিনেশবাবু অবশ্য সে-সিনেমার অন্তত ৩৫ বছর আগে সেখানে যান। বাড়িতে অশান্তি করেই চাকরিটা নেওয়া। সেখানে চা বাগানের ম্যানেজারের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট টিউশন দিতেন। একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন এই চা বাগানের কুলিদের কাছেই না কি তাঁর সাম্যবাদে দীক্ষা। বছরখানেক চা বাগানে কাটিয়ে তিনি মায়ের অসুস্থতার সংবাদে বাড়ি ফেরেন। এদিকে কলকাতায় তখন কমিউনিজমের চর্চা চলছে জোর কদমে। তিনি পাহাড় ও অরণ্যের নিঃসঙ্গ সৌন্দর্য থেকে ফের নাগরিক চেতনায় ফিরে এলেন।
প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা রণেন সেনের সান্নিধ্যে এসে দিনেশ দাসের পরিচয় হয় মার্কস-এঙ্গেলসের রচনাবলির সঙ্গে। রণেন সেন সেসময় ছিলেন কলকাতার ডক শ্রমিক সংগঠনের নেতা। তখন জাহাজ-ভরতি মার্কসবাদী বই ও পত্রপত্রিকা আমদানি হত খিদিরপুর ডকে। এটা সেই সময় যখন ‘আলিপুর রেড-গার্ড’ আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে। তাই আরও বেশি করে দিনেশবাবু জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনে। তখনই সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহিত্য সম্পর্কেও তাঁর পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয়ে যায়। ১৯৩৭ সালে তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘কাস্তে’। তখন ব্রিটিশ আমল, কমিউনিস্টদের সঙ্গে ব্রিটিশদের সম্পর্কও তলানিতে। তাই সে-কবিতা তখন ছাপতে রাজি হয়নি কেউ। যদিও দিনেশ দাস ততদিনে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নাম। ১৯৩৬ থেকে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক বাংলা কবিতার একটি সংকলন তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন যেটি ১৯৩৮-এ প্রকাশিত হয়– সেই ‘বাংলা কাব্য পরিচয়’-এর শেষ কবি মহীউদ্দীন। কিন্তু মহীউদ্দীনের আগের কবির নাম দিনেশ দাস। দিনেশ দাসের ‘মৌমাছি’ কবিতাটি এই কাব্যে স্থান পেয়েছিল। যদিও বইটি নিয়ে এমন বিতর্কের ঢেউ ওঠে সেসময়, যে রবীন্দ্রনাথ সংকলনটি বাজার থেকে তুলে নিয়েছিলেন। সেই বইয়ে ‘শীতের রাতে’ নামে দিনেশবাবুর আরও একটা কবিতা থাকার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর কপি করার ভুলে সে-কবিতা ছাপা হয়নি। রবীন্দ্রনাথের তখন শরীর বেশ খারাপ, তাঁর সহযোগীরা তাঁকে সংকলনের জন্য আসা কবিতা পড়ে শোনাতেন। দিনেশ দাসের ‘শীতের রাতে’ শুনতে-শুনতে তিনি না কি চমকে উঠেছিলেন। শেষে মন্তব্য করেন, ‘কলকাতায় এতকাল কাটালুম, কিন্তু তুষারপাত হতে তো কখনো দেখিনি’। আসলে দিনেশবাবুর পাহাড় কাটানো দিনগুলির অভিজ্ঞতার বিবরণ ছিল ওই কবিতায়। কিন্তু কপি করার সময় অমনোযোগে এক কবিতা অন্যটার ঘাড়ে চেপে বসে বিপত্তি ঘটায়।
শুধু রবীন্দ্রনাথের কাব্য সংকলনেই নয়, ‘মৌমাছি’ কবিতাটি ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে ‘দ্য স্টেটসম্যান’ কাগজেও প্রকাশিত হয়েছিল। যাইহোক, পরিচিত কবি হওয়া সত্ত্বেও এক বছর দিনেশ দাসের ‘কাস্তে’ কবিতাটি অপ্রকাশিত থাকে। ১৯৩৮-এর শারদীয় ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় তৎকালীন সহ-সম্পাদক আরেক কবি অরুণ মিত্র-র সৌজন্যে কবিতাটি প্রথমবার প্রকাশিত হয়।
‘কাস্তে’ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই কবিতাটি তুমুল জনপ্রিয় হয়। পরের বছর বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকার শারদ সংখ্যায় ‘এ যুগের চাঁদ হল কাস্তে’ শিরোনামে দুটো কবিতা লেখেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আর বিষ্ণু দে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ‘অলকা’ মাসিক পত্রে ওই শিরোনামেই একটি গল্প লিখলেন। এতে অবশ্য দিনেশ দাসের বিড়ম্বনা বাড়ে। ‘কাস্তে’ ও তার সমধর্মী অন্যান্য কবিতা এবং সাম্যবাদী বইয়ের খোঁজে তাঁর বাড়িতে পুলিশ যায় এবং তাঁকে আটকে রাখে স্পেশাল ব্রাঞ্চের দফতরে, এখনকার লর্ড সিনহা রোড, মানে তখনকার ইলিসিয়াম রো-ই ছিল গোয়েন্দা বিভাগের দফতর। বুদ্ধদেব বসু-র ‘কবিতা’য় তাঁর কবিতার লাইন শিরোনামে রেখে দুই লব্ধপ্রতিষ্ঠ কবি কবিতা লিখলেও দিনেশ দাস কিন্তু কখনো ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখেননি। তিনি মূলত লিখতেন ‘পূর্ব্বাশা’ আর ‘নিরুক্ত’ পত্রিকায়। বিরাম মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে বুদ্ধদেব বসু বেশ কয়েকবার তাঁর লেখা ছাপার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, এমনকী ‘এক পয়সায় একটি’ সিরিজে কবিতার বইও বের করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দিনেশ দাসের সেই সিরিজের নামেই আপত্তি ছিল। যদিও বুদ্ধদেব সম্পাদিত ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’য় দিনেশ দাসের ‘মৌমাছি’ আর ‘কাস্তে’ কবিতাটা গৃহীত হয়েছিল।
দে’জ পাবলিশিং থেকে ‘কাস্তে’র পর ১৯৮২ সালে ছাপা হয় দিনেশ দাসের ‘রাম গেছে বনবাসে’– বইটি পরের বছর রবীন্দ্র পুরস্কার পায়। আমি পুরোনো চিঠির মধ্যে দিনেশবাবুর যে চিঠিগুলো পেলাম তার মধ্যে সবচেয়ে পুরনোটি ১৯৮৩ সালের ১২ মে তারিখে লেখা। তিনি চিঠিতে লিখেছেন:
প্রীতিভাজনেষু,
টি. ভি. থেকে লোক এসেছেন। আমার বইয়ের মলাটগুলো (বা বইগুলো) টি. ভি.তে দেখাবেন। সোমবার থেকে বোধ’য় রঙিন টিভি চালু হচ্ছে। যা হ’ক, পত্রবাহকের হাতে আপনি আমাকে ১। রাম গেছে বনবাসে ২। কাস্তে ৩। অসঙ্গতি কবিতার বইয়ের দু’কপি ক’রে নতুন মলাট দেওয়া বই পাঠাবেন। ওঁরা আজ রাত্রে বা কাল সকালে নিয়ে যাবেন। ‘রাম গেছে বনবাসে’ যদি দ্বিতীয় সংস্করণ করেন তা হ’লে একটা বইয়ের মধ্যের ভুলগুলো কেটে ঠিক ক’রে পাঠাবেন। সত্যনারায়ণ প্রেসের ১ নম্বর নতুন টাইপে ছাপবেন। ফর্মা প্রতি হয়তো ১৫ বেশি পড়বে। আমার শ্রেষ্ঠ কবিতায় ১০ পয়েন্টে ছাপলে ওই প্রথম শ্রেণির টাইপে ছাপবেন। ১২ পয়েন্টে (১৬০ টাকার ফর্মা) ইচ্ছে করলে ছাপতে পারেন– তবে সেক্ষেত্রে আবার কাগজ বেশী লাগতে পারে।…’
কলকাতা টিভিতে অবশ্য রঙিন সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৮৩-র ৬ জুন। কিন্তু চিঠিতে নিজের বই সম্পর্কে তিনি কতটা সচেতন ছিলেন তার পরিষ্কার ছবি পাওয়া যায়। শুধু টাইপ, ছাপা, কাগজ, প্রুফ নিয়েই তিনি চিন্তিত ছিলেন এমন নয়, বইয়ের মলাট নিয়েও তাঁর নির্দিষ্ট বক্তব্য থাকত।
১৯৮৩-র অগাস্টে দিনেশ দাসের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ দে’জ থেকে প্রকাশিত হয়। তাঁর ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল কলিকাতা লেখক সমবায় সমিতি থেকে ১৯৫৯ সালে। লেখক সমবায় থেকে একসময় ক্ষিতিমোহন সেনের ‘ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা’, নীহাররঞ্জন রায়ের ‘বাঙালীর ইতিহাস আদি পর্ব’, চিন্তাহরণ চক্রবর্তীর ‘হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান’, চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘দান্তে আলিগিএরি’ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশিত হয়েছিল। লেখক সমবায় সংস্করণের পর তাঁর ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ১৯৭২ সালে ছাপে ভারবি। তাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা সিরিজ তখন দারুণ জনপ্রিয়। দে’জ পাবলিশিং থেকে ১৯৮৩ সালে বইটি প্রকাশ করার সময় পূর্ণেন্দু পত্রী একটি প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলেন। পূর্ণেন্দুদার সেই মলাট আজও আমার ফাইলে রাখা আছে কিন্তু প্রথমে কবির সেই মলাট পছন্দ হয়নি। একদিন আমাদের দপ্তরে এসে তিনি পূর্ণেন্দুদার উদ্দেশে চিঠির আকারে দে’জের প্যাডে একটি নোট লিখে আমাকে দেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন,
‘প্রীতিভাজনেষু–
পূর্ণেন্দুবাবু, আমার শ্রেষ্ঠ কবিতার জন্যে আপনার আঁকা ছবি দেখলাম প্রচ্ছদটি আমার ‘কাস্তে’ কাব্যগ্রন্থের উপযুক্ত। ওটি পরের সংস্করণ ‘কাস্তে’তে ছাপা হ’লেই ভাল। কিন্তু শ্রেষ্ঠ কবিতার ওটি প্রচ্ছদ হ’তে পারে না। কারণ আমার ৩/৪ অংশ কবিতাই অন্যরকম। তাই একট অন্য ধরণের প্রচ্ছদ হ’লেই ভাল হয়। গতবারের আগের বার শ্রদ্ধেয় যামিনী রায় আমার বইয়ের প্রচ্ছদ করে দিয়েছিলেন একটু decorative ধরণের। আপনার মত শিল্পীর পক্ষে ওই ধরণের সুন্দর একটি কভার আঁকা সহজেই হবে। যামিনীবাবুর আঁকা প্রচ্ছদটি আপনাকে মাত্র দেখানোর জন্যে পাঠালাম। আশা করি ভাল আছেন। প্রীতি ও শুভেচ্ছা
আপনাদের
দিনেশ দাস’
চিঠিটি লেখা সেবছরের ১৬ জুলাই। এই চিঠি পড়ে পূর্ণেন্দুদার কী প্রতিক্রিয়া ছিল তা আজ আর মনে নেই, তবে দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত দিনেশ দাসের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র মলাট করেছিলেন শেখর চক্রবর্তী। বইটি ছাপা হয়েছিল দিনেশবাবুর আগের চিঠিতে উল্লিখিত রমাপ্রসাদ রায় লেনে হরিপদ পাত্র-র সত্যনারায়ণ প্রেসে।
পূর্ণেন্দুদার উদ্দেশে লেখা চিঠির তারিখেই তিনি আমাকেও নিজের প্যাডে একটি চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, ‘… আপনাদের কাছে করজোড়ে এই ছবি কিছুতেই “শ্রেষ্ঠ কবিতার” ব্লক করবেন না…’।
শেখর চক্রবর্তীর আঁকা নতুন মলাট পেয়ে তিনি আমাদের দপ্তরের হরিপদ ঘোষকে একটি চিঠি লেখেন। আগেও বলেছি হরিবাবু সেসময় আমার হয়ে বিভিন্ন লেখকের বাড়ি যাওয়া আসা করতেন, প্রুফ দেওয়া-নেওয়ার কাজ করতেন। পয়লা অগাস্ট ১৯৮৩ সালে লেখা সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন:
‘প্রিয়বরেষু
হরিপদবাবু-ভাই, শ্রেষ্ঠ কবিতার ছবি দেখলাম। মোটামুটি ভালই। ওটি ব্লক করে ছেপে দেবেন। সূচীপত্র আমার কাছেই আছে। এখন ফাইলের সঙ্গে মেলাতে হবে। মেলানো বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে হয়ে যাবে। আপনি তো শুক্রবার সকালের দিকে (৮/১০ টার মধ্যে) আসছেন তখন সূচীপত্র দিয়ে দেব। সেই সঙ্গে ভূমিকার প্রুফ পেলে ভাল হয়।…’
এমনই ছিল নিজের বই ছাপা সম্পর্কে দিনেশ দাসের স্পর্শকাতরতা। প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে তিনি নজর রাখতেন। যদিও পূর্ণেন্দুদার মলাটটা সম্পর্কে তাঁর মতামত কিছুদিন পরে সম্পূর্ণ বদলে যায়। ২৭ অগাস্ট তারিখে ডায়েরির পাতায় তিনি আমাকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন:
‘প্রীতিভাজনেষু,
সুধাংশুবাবু, আমার তৃতীয় বা চতুর্থ হার্ট এ্যাটাকের ঠিক আগের দিন শিবুর মারফৎ আমার ‘শ্রেষ্ঠ কবিতার’ একটি বিকল্প ছবি পাঠিয়েছিলেন। যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় Approved লিখে তাকে বিদায় করেছিলাম মাত্র। এখন হাসপাতালে কতকটা সুস্থ হ’য়ে মনে হচ্ছে:
শ্রী পূর্ণেন্দু পত্রীর প্রচ্ছদটি শুধু প্রচ্ছদটি শুধু সুন্দর নয়, অসাধারণ। সুতরাং ওই দ্বিতীয় এবড়ো খেবড়ো পটটি বাদ দিয়ে পূর্ণেন্দুবাবুর ব্লকটি যদি ছাপা হয় তা হলে শুধু মলাট নয়, লেখকের মর্যাদাও বাড়বে। আর প্রকাশকদের সব সময়, শ্রদ্ধেয় প্রমথ চৌধুরীর কথা মনে রাখা উচিত “বইয়ের ললাট হ’ল, বইয়ের মলাট।।”– দিনেশ দাস’
আবার পাতার উপরে লিখে দিয়েছিলেন: ‘চোখে ছানি পড়ার জন্যে সবই Blind fold-এ লিখছি’। কিন্তু মুশকিল হল লেখকের মতামত এভাবে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলে প্রকাশক বেজায় বিপাকে পড়ে। ততদিনে আমাদের বইয়ের কাজ শেষ। তাই শেখর চক্রবর্তীর আঁকা মলাটেই সেই বই প্রকাশিত হয়। এই বই প্রকাশের বছর দুয়েকের মধ্যেই দিনেশ দাস প্রয়াত হন। সুভদ্র ও ঋজু ব্যক্তিত্বের মানুষটির প্রয়াণের পর ‘অসঙ্গতি’ বইটির নতুন সংস্করণের সময় কবিপুত্র শান্তনু দাস প্রস্তাব করেন মলাট পালটানোর সঙ্গে-সঙ্গে সেই বইতে কয়েকটি নতুন কবিতাও দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষত্রে অন্য নামে বইটি ছাপা যেতে পারে, অনেকটা সম্পাদিত বইয়ের আকারে। শান্তনুদার ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে নতুন বইটির নাম হল ‘সঙ্গতি অসঙ্গতি’। এবার বইয়ের মলাট করলেন গৌতম রায়। ছাপা হল সেই সত্যনারায়ণ প্রেসেই।
……………………………………………………………………..
‘কালের কবিতা’ আমাদের সেই ভাবনার বহু সাধের ফসল। বহুকাল ধরে সারা ভারতবর্ষের বাঙলা কবিতার পাঠকের একটা চাহিদা আমরা অনুভব করেছিলাম। বিভিন্ন প্রান্তের ষ্টল, এজেন্টদের এক্ষেত্রে একটা স্থায়ী চাহিদা ছিল। সম্পাদকের আন্তরিকতা, বলিষ্ঠ পদক্ষেপ, চিন্তায় সমৃদ্ধ এই সংকলনের পৃষ্ঠা সংখ্যা ও ব্যয়ভার বাড়তে বাড়তে এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে যেখানে আমরা কোন লাভের কথা চিন্তা করছি না।
……………………………………………………………………..
শান্তনুদার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা আগেই লিখেছি। প্রকাশনার শুরুর বছরগুলোতে আমাদের দপ্তরে তাঁর নিত্য যাওয়া আসা ছিল। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও পেয়েছি তাঁর কাছে। ১৯৭৬ সালে শান্তনুদার সম্পাদনায় আমি প্রকাশ করি ‘কালের কবিতা’ নামে দু-পার বাংলার কবিদের কবিতার সংকলন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে দাউদ হায়দার পর্যন্ত বহু কবির অসামান্য সব কবিতা সংকলন করেছিলেন শান্তনুদা। ১৯৯৯ সালে সে-বইয়ের আরেকটি সংস্করণ হয়। সেখানে এপার বাংলার ১৫১ জন কবি আর ওপার বাংলার ২১ জন কবির কবিতা সংকলিত হয়েছিল। ‘কালের কবিতা’র প্রথম সংস্করণে ‘প্রকাশকের কথা’য় আমি লিখেছিলাম– ‘বর্তমান বাংলা কবিতার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় আমরা কবিতা গ্রন্থের প্রকাশ সম্বন্ধে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছি। আমরা আগামী কালে কবিতার গ্রন্থ সম্পর্কে কিছু নতুন পরিকল্পনার কথা চিন্তা করে রেখেছি। ইতিমধ্যেই আমরা এর রূপদানে খানিকটা অগ্রসর হয়েছি, আশাকরি আগামী বছরে আমাদের প্রকাশনী বাংলা কবিতার ব্যাপারে একটা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে।
‘কালের কবিতা’ আমাদের সেই ভাবনার বহু সাধের ফসল। বহুকাল ধরে সারা ভারতবর্ষের বাঙলা কবিতার পাঠকের একটা চাহিদা আমরা অনুভব করেছিলাম। বিভিন্ন প্রান্তের ষ্টল, এজেন্টদের এক্ষেত্রে একটা স্থায়ী চাহিদা ছিল। সম্পাদকের আন্তরিকতা, বলিষ্ঠ পদক্ষেপ, চিন্তায় সমৃদ্ধ এই সংকলনের পৃষ্ঠা সংখ্যা ও ব্যয়ভার বাড়তে বাড়তে এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে যেখানে আমরা কোন লাভের কথা চিন্তা করছি না। এ গ্রন্থের আঙ্গিক শোভন করার জন্যে আমরা যা আন্তরিক ছিলাম আমাদের প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত অজস্র বইয়ের ক্ষেত্রেও আমরা এতটা আন্তরিক হইনি। তাই ঠিক ব্যবসায়িক মানদণ্ড থেকে নয়, বাংলা কবিতা প্রসারের জন্যেই আমাদের এই মহান উদ্যোগ। প্রচুর অসুবিধার মধ্যে থেকে সম্পাদক এ গ্রন্থ সম্পাদনা করলেন। তার সঙ্গে ছিল কলেজ স্ট্রীট পাড়ার লোডশেডিং, যান্ত্রিক গোলযোগ, তার সঙ্গে আরো তরুণ কবি নির্বাচন। সুতরাং নানা অসুবিধার মধ্যে এ সংকলন প্রকাশে একটু দেরী হওয়ার জন্যে আশাকরি পাঠকেরা আমাদের মার্জনা করবেন।
দীর্ঘকাল প্রকাশনা জগতের সঙ্গে যুক্ত থেকে, পাঠকের চাহিদার কথা স্মরণ করে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও আমরা যে ব্যয়বহুল সংকলনটি প্রকাশ করলাম, অগণিত পাঠক পাঠিকা তৃপ্ত হলেই আমরা আমাদের ব্যয়, পরিশ্রম আন্তরিক প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।’
আসলে বাংলা কবিতার বই নিয়ে আমরা বড় আকারে একটা কিছু করতে চাইছিলাম, তারই প্রথম প্রয়াস ছিল এই বই। এটি ছাড়াও ১৯৭৮ সালে শান্তনুদার কবিতার বই ‘কাফের’ এবং ১৯৮৬ সালে ‘আর এক ঈশ্বর’ নামে একটি গল্পের বইও প্রকাশ করেছিলাম।
১৩ মার্চ ১৯৮৫ সালে দিনেশ দাসের মৃত্যুর পর আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দে’জ পাবলিশিংয়ের পক্ষ থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। সেই বিজ্ঞাপন দেখে শান্তনুদা আমায় একটি চিঠি লিখেছিলেন যা পড়ে আজ তাঁদের পরিবারের সঙ্গে আমার নিবিড় বন্ধনের কথা আরও একবার মনে পড়ে গেল। শান্তনুদা লিখেছিলেন–
‘প্রিয় সুধাংশু/
বিজ্ঞাপন দেখলাম। শ্রদ্ধার্ঘ বিজ্ঞাপন। আমরা একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না, কারণ বাবা শেষ দিন পর্যন্ত শুধু ভালো ছিলেন না। কর্মক্ষমও ছিলেন। ১৮ই মার্চ বাগনানে সম্বর্ধনা সভায় যাবার কথা ছিলো যেখানে যাচ্ছিলেন, শক্তি, কৃষ্ণ ধর, প্রদীপ ঘোষ প্রমুখ। তাই আমরা হতবাক, শোকস্তব্ধ। …’
শান্তনুদা বারবার বলতেন ‘কাস্তে’ কালের বিচারে বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রগতিশীল বই। সেকথাটা যে ভুল নয়, সময় সত্যিই তা প্রমাণ করে দিয়েছে। এখনও বাংলা কবিতার পাঠক দিনেশ দাসের ‘কাস্তে’ আর ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ নিজেদের সংগ্রহে রাখেন।
লিখন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়
……………………ইতি কলেজ স্ট্রিট-এর অন্যান্য পর্ব……………………
পর্ব ১৬: সব প্রকাশনার যাবতীয় বইয়ের হদিশ পাওয়া যেত ‘সম্মিলিত গ্রন্থপঞ্জী’তে
পর্ব ১৫: নিছকই একটা পত্রিকা নয়, ‘কলেজ স্ট্রীট’ আমাদের আবেগ
পর্ব ১৪: খুদে পাঠকদের জন্য মিনিবই তৈরির কথা প্রথম ভেবেছিলেন অভয়দা
পর্ব ১৩: কয়েকটি প্রেসের গল্প
পর্ব ১২: দীর্ঘায়ু বই ও আইয়ুব পরিবার
পর্ব ১১: প্রেমের নয়, অপ্রেমের গল্প সংকলনের সম্পাদনা করেছিলেন সুনীল জানা
পর্ব ১০: ছোট্ট অপুকে দেখেই রঙিন ছবিতে ভরা টানটান গল্পের বই করার ইচ্ছে জেগেছিল
পর্ব ৯: চানঘরে গান-এ সত্যজিৎ রায়ের চিঠি থাকায় ব্যাপারটা গড়িয়েছিল কোর্ট কেস পর্যন্ত
পর্ব ৮: প্রকাশক-লেখকের কেজো সম্পর্কে বুদ্ধদেব গুহর বিশ্বাস ছিল না
পর্ব ৭: পুজো সংখ্যায় না-বেরনো উপন্যাস বই আকারে সুপারহিট
পর্ব ৬: মানবদার বিপুল অনুবাদের কাজ দেখেই শিশির দাশ তাঁর নাম দিয়েছিলেন– ‘অনুবাদেন্দ্র’
পর্ব ৫: সাতবার প্রুফ দেখার পর বুদ্ধদেব বসু রাজি হয়েছিলেন বই ছাপানোয়!
পর্ব ৪: লেখকদের বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই লিখতে হয়, প্রফুল্ল রায়কে বলেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র
পর্ব ৩: পয়লা বৈশাখের খাতায় শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় মজাচ্ছলে লিখেছিলেন, ‘সুধাংশুরা রাজা হোক’
পর্ব ২: বাংলা মাসের সাত তারিখকে বলা হত ‘গ্রন্থতিথি’, বিজ্ঞাপনেও বিখ্যাত ছিল ‘৭-ই’
পর্ব ১: সত্তরের উথাল-পাথাল রাজনৈতিক আবহাওয়ায় আমি প্রকাশনার স্বপ্ন দেখছিলাম