ছবির শুরুর ক্রেডিটসে ফুটে ওঠে ‘গুজরাতের ৫০০০০০ কৃষকের উপস্থাপনায় মন্থন’। মিথের স্ট্যাটাস ধারণ করলেও এটা শুদ্ধ সত্য যে, আনন্দ গ্রামের গুজরাত কোপারেটিভর প্রতিটি কৃষক এই ছবি তৈরির জন্য ২ টাকা করে অনুদান দেন, যা তাদের সমবায় মালিকানা এবং চলচ্চিত্রের বার্তায় তাদের বিশ্বাসের প্রতীক। এইভাবে মন্থন হয়ে ওঠে ভারতের প্রথম ক্রাউড ফান্ডেড ছবি। সিনেমার বাজারিকরণ ও বাজার মুখরিত সিনেমার বাইরে আজও বহু চলচ্চিত্র নির্মাতাই এমন সব ছবি গঠনের চেষ্টা করছেন, যা ‘মন্থন’ সিনেমার দেওয়া সমষ্টিগত স্পৃহা– অতি প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়েও বহন করে চলেছে। ১৪ ডিসেম্বর, শ্যাম বেনেগালের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ প্রবন্ধ।
৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সিনেমার তালিকা ঘাঁটতে গিয়ে চোখে পড়ল তৃতীয় দিনের প্রদর্শনীর প্রথম ছবি, শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’। দেখানো হচ্ছে ‘পুনরুদ্ধারকৃত ভারতীয় ক্লাসিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত’ হিসেবে। শ্যাম বেনেগাল ভারতের ‘প্যারালাল সিনেমা’র কারিগরদের মধ্যে অন্যতম। ‘অঙ্কুর’ ও ‘নিশান্ত’-এর পর ‘মন্থন’ তাঁর তৃতীয় ছবি। আমি সিনেমা জগতের বিশেষজ্ঞ নই, এবং ‘মন্থন’ চলচ্চিত্রটিকে শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ ভাষায় প্রকাশ করার মতো উপযুক্ত বলে মনে করি না। সিনেমার ভাষা, জঁরের প্রচলিত ধারণা, একদিকে প্রোপাগান্ডা সিনেমা ও ডকুমেন্টারি এবং অন্যদিকে আর্ট সিনেমার প্রচলিত বিভাজন– সমস্তটা ভেদ করে মনে এক অন্য মাত্রার উপলব্ধি খুঁড়ে দিয়ে যাওয়ার মতো সিনেমা ‘মন্থন’। শরীরে, মনে, মননে দাগ কেটে যাওয়ার মতো ছবি। এমন সিনেমা যা একইসঙ্গে অসম্ভব এক উদ্দীপনা জোগায় এবং অন্যদিকে জন্ম দেয় অসন্তোষের। যা একইসঙ্গে গুজরাতের এক দুর্গম গ্রামের দুগ্ধ চাষিদের লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে এক কোঅপারেটিভ সূচনার গল্প বলে, আবার এমন কিছু সামাজিক অক্ষমতার কথাও ছুঁয়ে যায়, যা আজকের চূড়ান্ত র্যাডিক্যাল সিনেমার মাধ্যমেও এমন মৃদু কায়দায় দেখানো কঠিন, যেমন এক শহুরে বিবাহিত উচ্চবর্ণ পুরুষ ও একজন দলিত গ্রামীণ মেয়ের মধ্যেকার অনুচ্চারিত অনুভূতি। যা একই সঙ্গে সিনেমাটির মাধ্যমেই সিনেমা-মাধ্যমকে এক উচ্চতায় তুলে ধরে, আবার সিনেমার সহজ-সরল-স্বচ্ছ ইতিবাচক সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে উন্মোচন করে জনসমক্ষে। অতএব, এইসব ইত্যাদি প্রবৃত্তি ভাবতে ভাবতে বড় পর্দায় এ সিনেমা দেখার লোভ না সামলাতে পেরে চলে এলাম শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, নন্দন ২-এর ছোট হলে, মন্থন ছবির পুনর্নির্মাণ প্রত্যক্ষ করতে।
পুনর্নির্মাণ তো বটেই। পুনরুদ্ধারকৃত অর্থাৎ পুনর্নির্মিত। জাতীয় চলচ্চিত্র আর্কাইভে (NFA) অবস্থিত মূল ৩৫ মিমি রিল থেকে পুনরুদ্ধার করা সংস্করণটি প্রদর্শিত হচ্ছে। শিবেন্দ্র সিংহ দুঙ্গারপুরের ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন দ্বারা রেস্টরড এই সিনেমা। দুঙ্গরপুরের স্মৃতিতে উঠে আসে মূল ৩৫ মিমি নেগেটিভে পড়া সবুজ ছাঁচ, ফাঙ্গাস এবং ফ্লিকারের সমস্যার কথা। জাতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতার রিলের ফিকে হয়ে যাওয়া রংগুলো নিয়েই সাউন্ড নেগেটিভের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও পুনর্নির্মাণ হয় এই ছবি। অন্যান্য বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে কাটা ছেড়ে যোগ-বিয়োগ করে পুনরায় সম্পূর্ণ করা হয় এ ছবি ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। সেদিন নন্দনে উপস্থিত ছিলেন দুঙ্গারপুর। সিনেমাটির ভূমিকা ও পুনরুদ্ধারের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সময় জানান কীভাবে সাধারণত দর্শকের চেতনায় মুখ্য অবস্থান গ্রহণ করেন ছবির নায়ক-নায়িকারা অথবা খুব জোর হলে চলচ্চিত্র পরিচালক। একটি সিনেমা গঠনের ক্ষেত্রে, সিনেমার ইতিহাস রচনার অধ্যায়ে বাকি বহু বহু জীর্ণ হাতে ছাঁচ, ফাঙ্গাস পরে পুরনো নেগেটিভের মতোই। অতএব এইসব গুরুত্বপূর্ণ ছবির পুনরুদ্ধার, যা আসন্ন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে এক বিকল্প চিত্র রচনার ইতিহাস, আসলেই মূলস্রোতের উলটো দিকে অবস্থিত একটি ইতিহাস। সলিতারি একক প্রয়াসের উলটোদিকে দাড়িয়ে সমষ্টিগত চলচ্চিত্র নির্মাণের ইতিহাস। সিনেমার এই সংস্করণটি এবারের কানে প্রদর্শিত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বড় পর্দার মাধ্যমে সূচনা হয় এই ছবির দ্বিতীয় আগমনের।
১৯৭৬ সালে দাঁড়িয়ে যখন শ্যাম বেনেগাল এই ছবিটি শুট করেছিলেন, তখন প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিভিন্ন মিশ্রিত স্টকে শুট করা হয় এই ছবি– জিভাকালার, ইস্টম্যান, কোডাক। সেই সময়ে স্টক সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা ছিল এবং প্রিন্টিং ওআরডব্লিউও-তে (ORWO) (যা সাধারণত সাদা-কালো ফিল্ম পণ্যের জন্য পরিচিত) করা হয়েছিল, যা ছিল খুব নিম্নমানের স্টক। ফলত অনেক ক্ষেত্রেই কোনো একটা দৃশ্য যেমন প্রত্যশা করা হয়েছিল, সেই মাপকাঠি থেকে যথেষ্ট বিচ্যুত হয়। যেমন গোবিন্দ নিহালিনি শুট করেছিল গুজরাতের গ্রামের তীব্র রোডে সেই কাঁচা অনুভূতিটা ধরার প্রচেষ্টায়। কিন্তু সেটা ঘটেনি। এখন তিনি মনে করেন যে, পুনরুদ্ধারকৃত প্রিন্টটি তাঁদের তখনকার কল্পনার খুব কাছাকাছি। কিন্তু একই সঙ্গে গ্রেনি টেক্সচার যা মূল প্রিন্ট ফ্যাকাসে হওয়ার কারণে অবশ্যম্ভাবী, তাও পুনরুদ্ধারকরীরা অব্যাহত রাখে।
অতএব সিনেমা আরম্ভ হল। শহর থেকে আসা একজন সুপুরুষ পশু চিকিৎসক প্রবেশ করেন গুজরাতের এক প্রত্যন্ত গ্রামে, সুদর্শন চরিত্রে গিরিশ কারনাড। তার উদ্দেশ্য সেখানকার চাষিদের নিজস্ব উদ্যোগে যৌথ মালিকানায় আরম্ভ হবে দুগ্ধ সমবায়। ছবিতে আমরা দেখতে পাই যে, চরম দুর্ভিক্ষ ও শোষণের স্বীকার গ্রামের দুগ্ধ চাষিরা। আঞ্চলিক খামারের মালিকের কাছে দুধ বিক্রয়ের বিনিময় তারা পায় স্বল্প মজুরি। উপরন্তু জাত ভেদাভেদের সমস্যা দলিত দুগ্ধ চাষিদের আরও বিপর্যস্ত করে। ফলত কোঅপারেটিভ গঠনের যাত্রায় এইসব বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় ডাক্তার রাওকে। তবুও যথেষ্ট ধৈর্য্য ধরে গ্রামবাসীদের মাঝে তিনি দুগ্ধ সমবায়ের ধারণা ব্যাখ্যা করেন। চাষিরাও আগ্রহ দেখান। তার এই মানানোর প্রয়াসের সময় জুড়ে গ্রামবাসীদের প্রত্যুত্তরের মধ্যে দিয়ে উঠে আসে ছোটবড় অসংখ্য সামাজিক ক্রিটিক। এর’ম কোনও ব্যবস্থার সম্ভাবনা যার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের দুধের ন্যায্য মূল্য পেতে পারেন, তা কল্পনার অতীত। একজন চাষি বলেন, ‘আমি আপনার পার্টিকেই ভোট দেব স্যর।’ ফলত ডাক্তার রাও ও তাঁর টিম বারবার অসংখ্য সমস্যার মুখোমুখি হন। শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিক রাজনৈতিক জটিলতার মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ পেয়ে ডাক্তার রাও শহরে ফেরত যেতে বাধ্য হোন, এক প্রকার কোঅপারেটিভ গঠনের স্বপ্ন পরিত্যাগ করেই। কিন্তু এটাই এই সিনেমার সর্ব শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ, সিনেমার চূড়ান্ত দৃশ্য।
অর্থাৎ শহর থেকে আসা সুবিধাপ্রাপ্ত একক একজন ব্যক্তির উদ্যোগ, শ্রম, ও প্রচেষ্টায় সমবায় তৈরি হচ্ছে ও চলছে, এরকমটা বোঝানোর উদ্দেশ্য বোধহয় বেনেগালের ছিল না। তাই সিনেমার শেষ দিকে দুঃখে দর্শকের বুক ফেটে গেলেও, বেনেগাল গিরিশ কারনাডের চরিত্রকে শহরে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হোন, দর্শকের ক্লোজারের প্রয়োজনকে উপেক্ষা করেই এই স্পর্ধা দেখান। গ্রামবাসীদের মধ্যে কেউ তাঁর পথ আটকাতে আসে না, একমাত্র নাসিরুদ্দিন শাহের চরিত্রে হরিজন রাগচটা যুবক ভোলা বাদে। হাত নাড়তে নাড়তে অসম্ভব দ্রুত গতিতে ছুটে এলে স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যায় ট্রেন। কিন্তু সেখানেই সিনেমা শেষ হয় না, সেই মুহূর্ত থেকে আরম্ভ হয় গল্পের পরের অধ্যায়, যার কিঞ্চিৎ ঝলক আমরা দেখতে পাই সিনেমার অন্তিম দৃশ্যে। ভোলার নেতৃত্বে কঅপারেটিভ চালানোর কাজে নিযুক্ত হন গ্রামবাসীরা, যেই যাত্রা অবশেষে গিয়ে তৈরি করে গুজরাত কোপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন, এবং পরবর্তীতে পৃথিবীর একমাত্র কঅপারেটিভ ডেয়ারি ‘আমূল’।
অর্থাৎ গল্প আছে। সত্য ঘটনাও আছে। সত্য ঘটনা অনুপ্রাণিত গল্পও আছে। আবার গল্প অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে নতুন সত্য ঘটনাকে। আবার দুইয়ের ভেদাভেদের সরলীকরণ ছাপিয়ে কিছু কথাও আছে, যা না বললেই নয়। তা হচ্ছে, এই সত্য ঘটনার আড়ালের অসম্ভব ক্ষুরধার দৃষ্টিসম্পন্ন গল্প বলার কৌশল ও সিনেম্যাটিক উপস্থাপনা, যা আমাদের আঁকড়ে বসে থাকা বেশ কিছু ভিত্তিহীন ধারণার উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। শহর থেকে আসা একজন মানুষকে ঠিক যেমন গ্রামবাসীদের ‘সেভিয়ার’ হিসেবে প্রতিস্থাপন করা হয়নি, ঠিক তেমনই ভিন্ন সামাজিক অবস্থানের দুই মানুষের মধ্যেকার সংহতির যাত্রার এক আশ্চর্য নিদর্শন দেখিয়েছে। ডাক্তার রাও যেমন গ্রামবাসীদের জন্য নিয়ে আসছে সমবায়ের ধারণা ও গরু লালন পালন, দুধের শুদ্ধতা মাপা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক অবদান, একইসঙ্গে উল্টোদিকে তিনিও অর্জন করছেন শিক্ষা, গ্রামবাসীদের জীবন যাত্রা থেকে। সিনেমা জুড়ে বিন্দু (স্মিতা পাতিল), ভোলা (নাসিরউদ্দিন শাহ), এমনকী, মতী (রাজেন্দ্র জস্পাল) ও বাকি বহু গ্রামবাসীর অসংখ্য ক্লোজ আপ ছড়িয়ে আছে যা এই শহুরে দৃষ্টি কিংবা গেজকে পাল্টা ফিরিয়ে দেয়। ফলত প্রথমে ভোলাকে তিরষ্কার করলেও, পরবর্তীতে ডাক্তার রাও মানতে বাধ্য হয় যে, গ্রামটি কেবল দুই সমান পক্ষের মধ্যে বিভাজিত নয়, বরং উঁচু জাতির কর্ণধাররা ক্ষমতা প্রদর্শনের জায়গা থেকে নিয়মিত হরিজনদের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলে ইচ্ছাকৃতভাবে। এবং গ্রামের অর্থবান ব্যক্তিবর্গরা তাঁদের ক্ষমতার জায়গা টিকিয়ে রাখার জন্য যতদূর প্রয়োজন ততদূর যাবে। এর’ম সব গভীর রাজনৈতিক অবজারভেশনের পাশাপাশি আছে আরও কিছু নিখুঁত প্রতিস্থাপন। যেমন স্মিতা পাটিল ও গিরিশ কারনাডের সম্পর্কের বিবরণ। স্মিতার কারনাডের দিকে প্রথমের কঠোর তীক্ষ্ণ চাহুনি ক্রমশ রূপান্তরিত হয় এক অদ্ভুত আকুতিময় তাকানোয়। যখন ক্রমশ সে তাকে তার জীবন সংগ্রামের সহযোদ্ধা হিসেবে দেখতে আরম্ভ করে। অর্থাৎ প্রচলিত সামাজিক বাঁধা ও বিভেদের ঊর্ধ্বে এক বিনম্র সম্পর্কের সম্ভাবনার আভাস তুলে ধরেন বেনেগাল আমাদের সম্মুখে, যা আসলে অধরাই থেকে যায়। কিন্তু আবারও, এরম একটা তথাকথিত ‘অবৈধ’ সম্পর্কের এমন সূক্ষ্ম প্রতিস্থাপন এই সিনেমাকে সত্যিই এক অন্য উচ্চতর মাত্রায় অবস্থিত করে।
সব শেষে, সিনেমার সমষ্টি ও সমষ্টিগত সিনেমা নিয়ে কিছু কথা। রাজঘাট জেলার সঙ্গনভা গ্রামে এই সিনেমাটি অবস্থিত। তুলে ধরার চেষ্টা করে ওয়াইট রেভোলিউসানের বাস্তব জীবনের প্রচেষ্টার প্রতিচ্ছবি। তুলে ধরে কৃষকদের সংগ্রাম ও বিজয়ের চিত্র, যারা মধ্যস্থতাভোগীদের শোষণ অতিক্রম করেন ও দুগ্ধ অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে একত্রিত হয়। ড. কুরিয়ান, সাদা বিপ্লবের স্থপতি, চলচ্চিত্রটির উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ও চলচ্চিত্রটির ধারণা প্রস্তাব করেন বেনেগালের কাছে। এই সিনেমাটি সমবায় এবং দুগ্ধ আন্দোলনের রূপান্তরকারী শক্তিকে জনগণের সামনে তুলে ধরার ও প্রচার করার এক বিরাট সম্ভাবনা খুলে দিয়েছিল। ‘মন্থন’ সিনেমায় একটি দৃশ্যে দেখা যায় গ্রামবাসীদের মধ্যে সমবায়ের প্রচার করার অভিপ্রায়ে পাড়ার মোড়ে সন্ধ্যায় বড়পর্দায় দেখানো হচ্ছে দুধ উৎপাদন বিষয়ক তথ্যচিত্র। সিনেমার গল্পের এই উদ্ধৃতি পরবর্তীতে রূপান্তরিত হচ্ছে বাস্তব জীবনে যখন গ্রামে গ্রামে মন্থন সিনেমাটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে দুগ্ধ চাষিদের সমবায় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে। ছবির শুরুর ক্রেডিটসে ফুটে ওঠে ‘গুজরাতের ৫০০০০০ কৃষকের উপস্থাপনায় মন্থন’। মিথের স্ট্যাটাস ধারণ করলেও এটা শুদ্ধ সত্য যে, আনন্দ গ্রামের গুজরাত কঅপারেটিভর প্রতিটি কৃষক এই ছবি তৈরির জন্য ২ টাকা করে অনুদান দেন, যা তাদের সমবায় মালিকানা এবং চলচ্চিত্রের বার্তায় তাদের বিশ্বাসের প্রতীক। এইভাবে মন্থন হয়ে ওঠে ভারতের প্রথম ক্রাউড ফান্ডেড ছবি। সিনেমার বাজারিকরণ ও বাজার মুখরিত সিনেমার বাইরে আজও বহু চলচ্চিত্র নির্মাতাই এমন সব ছবি গঠনের চেষ্টা করছেন, যা ‘মন্থন’ সিনেমার দেওয়া সমষ্টিগত স্পৃহা– অতি প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়েও বহন করে চলেছে। গরিব দেশে জাতীয় সিনেমার রিলও ফিকে হয়ে যায়, তাতে ফাঙ্গাস জন্মায় ও তাকে সংস্করণের জন্য রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর চূড়ান্ত দুর্দশা ধরা দেয়। বিদেশি এনজিওদের সাহয্যে পুনর্নির্মাণ অবশেষে সম্ভব হয়। কিন্তু এ-যাবত অক্ষমতার পরেও যখন স্ট্রাগলের ইতিহাসকে মনে রেখে আর্থিক দুর্দশা সত্ত্বেও রাজনৈতিক সিনেমা বানায় তখন মন্থনের মতো জ্বলন্ত সিনেমার রাজনৈতিক-সামাজিক অভিমুখ ইতিহাসের অবদান স্বীকার না করে এগোনোর গতি থাকে না।
…………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………………