শুটিং থাকলেও আমার জন্য ‘রোববার’ সরিয়ে রাখা হয়। শুটিং না থাকলে তো কথাই নেই! তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি মলাট থেকে মলাট। কখনও সরিয়ে রাখি ‘অ-কিঞ্চিৎ’– দুপুরে খেয়ে পড়ব বলে। কখনও অনিতা অগ্নিহোত্রীর নতুন কোনও লেখা। কিন্তু সে তো আজকের কথা, তবে আমার চিরকাল ‘রোববার’ পড়ার আশ্চর্য প্যাটার্ন ছিল। আমার ঠিক করা থাকত ‘নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণা’ কখন পড়ব, ‘‘দু’ছক্কা পাঁচ’’ কখন পড়ব, সুধীর চক্রবর্তী কখন,অমিতাভ মালাকার কখন– প্রায় পূজাবার্ষিকী পড়ার মতো আমার অর্ডার সেট করা থাকত। এবং সেই রুটিন কোনও মাই কা লাল বদলাতে পারবে না! ‘রোববার’ আমাকে গত ১৮ বছরে যত নতুন লেখকের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে তেমন আর কেউ করায়নি।
‘রোববার’ নামটার সঙ্গে যে ছুটিয়াল অলস রোদের সম্পর্ক আছে, তা ‘রবিবার’ শব্দটার থেকে অনেক বেশি আপন। তাই শুরুতেই চোখ আটকে গিয়েছিল। আমি হয়তো দ্বিতীয়-তৃতীয় সংস্করণ থেকেই রোববার-এর নিয়মিত পাঠক। শুটিং থাকলেও আমার জন্য ‘রোববার’ সরিয়ে রাখা হয়। শুটিং না থাকলে তো কথাই নেই! তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি মলাট থেকে মলাট। কখনও সরিয়ে রাখি ‘অ-কিঞ্চিৎ’– দুপুরে খেয়ে পড়ব বলে। কখনও অনিতা অগ্নিহোত্রীর নতুন কোনও লেখা। কিন্তু সে তো আজকের কথা, তবে আমার চিরকাল ‘রোববার’ পড়ার আশ্চর্য প্যাটার্ন ছিল। আমার ঠিক করা থাকত ‘নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণা’ কখন পড়ব, ‘‘দু’ছক্কা পাঁচ’’ কখন পড়ব, সুধীর চক্রবর্তী কখন,অমিতাভ মালাকার কখন– প্রায় পূজাবার্ষিকী পড়ার মতো আমার অর্ডার সেট করা থাকত। এবং সেই রুটিন কোনও মাই কা লাল বদলাতে পারবে না! ‘রোববার’ আমাকে গত ১৮ বছরে যত নতুন লেখকের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে তেমন আর কেউ করায়নি।
এই নতুনদের দলের একজন আমি। হ্যাঁ, ‘রোববার’-এর বয়স ১৮, লেখক হিসেবে আমার বয়স ১৫। আমার ছাপার অক্ষরে প্রথম লেখা ছেপে বের হয় ২০০৯-এ। ‘রোববার’-এ। ‘কলোনি’ সংখ্যায়। ‘ডাইনোসর ও চিত্রহারের গল্প’ শীর্ষক দিয়ে। ছাপার অক্ষরে মানে সত্যিই ছাপার অক্ষরে প্রথম! এর আগে আমার লেখা পাড়ার পুজোর স্যুভেনিরও ছাপেনি।
কী করে? কেন? কোন কথায় অনিন্দ্যদা সাহস দেখিয়েছিল, আজও জানি না। তখন আরেক টেবিল আলো করে বসে আমার আরেক নায়ক– চন্দ্রিলদা। দু’জন মিলে শলা করে জুড়ে দিল এই নতুন পৃথিবীতে। যা আজও আমার মুক্তির জানলা। এই বইমেলায় আমার পঞ্চম বই বের হবে। এর সবটা হয়েছে ‘রোববার’-এর টিমের জন্য। ঋতুদার চলে যাওয়ার পর আমার এক নতুন বন্ধু তৈরি হয়– ভাস্কর। ভাস্কর জানে আমাকে কিছু লিখতে দিলে কোন রাস্তায় হাঁটতে বলবে। তার জন্য যে আমাদের ঘণ্টাখানেক আলোচনা করতে হয়, তাও নয়। ও আমাকে মিনিটখানেকে দুটো-তিনটে কি-ওয়ার্ড বলে ফোন রেখে দেয়। আমি সামনের রাস্তাটার আদল পেয়ে যাই। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি ভাস্কর আমার এই ১৫ বছরের যাত্রার অন্যতম সহযাত্রী। আমি ভেবেচিন্তেই ‘বন্ধু’ শব্দটা ব্যবহার করেছি। কারণ আমরা অনেকটা রাস্তা একসঙ্গে হেঁটেছি। আর্জেন্টিনা জিতলে মাঝরাতে ফোন করে জড়ানো গলায় চেঁচিয়েছি। ঝগড়া করেছি। ডেডলাইন ফেল করে কাঁচুমাচু মুখ করে বকা খেয়েছি। যখন আমার আর প্রিয়াঙ্কার সম্পর্ক নিয়ে মানসিক সমস্যায়, ভাস্করকে ফোন করে বলেছি ,‘আমি বোধহয় আর লিখতে পারব না’। ও বলেছে, ‘তুমিই লিখবে রাহুল, আমি তোমায় ছাড়ব না’… এই বিশ্বাস বন্ধু ছাড়া আর কে দেবে বলুন?
এখন সম্বিত আর প্রিয়ক আমার নতুন দুই বন্ধু– দু’জনকেই আমার খুব পছন্দ। এবং তার থেকেও বেশি পছন্দ ওদের কলম। রিঙ্কার তাগাদা না পেলে লেখা দিতে ইচ্ছে করে না। সব মিলিয়ে আমি হয়তো অফিসে যাই না, কিন্তু আমি নিজেকে ‘রোববার’-এর একজন মনে করি। যখন কোনও লেখা পড়ে অরিঞ্জয় কথা বলে, ওর বিশ্লেষণে একটা আদ্যন্ত বাঙালি লুকিয়ে থাকে, যার একইসঙ্গে আন্তর্জাতিকতা নিয়ে ধারণা আছে। মোটমাট এই ১৮ সবে শুরু, আরও অনেকটা পথ আমরা হাঁটব একসঙ্গে। আসলে নিজের মানুষ তো একটু কাছাখোলা প্রশংসা হয়ে গেল। গুস্তাখি মাফ মহতরমা, কিন্তু কী করব বলুন? রাহুল তো ধার করা নাম, সিনেমায় যেমন হয়, পৈতৃক ‘অরুণোদয়’ যে রাহুলের ধারে ছিন্নভিন্ন না হয়ে টিকে আছে তা তো এই লেখার সূত্রে। এবং ‘রোববার’-ই প্রথম আমায় সাহস দেয় নিজের নামে লেখার। কারণ রাহুলের প্রতিফলিত আলো-অন্ধকার থেকে আমি অরুণোদয়কে মুক্ত রাখতে চেয়েছি। এবং ‘রোববার’ অরুণোদয়-কে বাঁচিয়ে রেখেছে।
ছোটবেলার নাম, মায়া হয় না বলুন?