Robbar

সেই সবকিছু, যা আমরা আলো ভাবি…

Published by: Robbar Digital
  • Posted:November 26, 2024 5:43 pm
  • Updated:November 26, 2024 8:57 pm  

‘All we imagine as light’ একটি ফ্রেম টু ফ্রেম আর্ট হাউস ফিল্ম। ছবির বিষয় আর বুনোট চেনা– যাঁরা ওয়ার্ল্ড সিনেমা দেখেন তাঁরা জানেন এমন ছবি অনেক দেখেছি আমরা, সাধারণ, দিন আনি-দিন খাই কয়েকটি মানুষের এক হুড়মুড় করে চলতে থাকা মেগাসিটিতে বেঁচে থাকার গল্পহীন গল্প। স্লাইস অফ লাইফ– প্রায় তথ্যচিত্রের ভাষায় শুরু হয় ছবিটি। বোম্বাই শহর, প্রতিদিন কুড়ি-পঁচিশ হাজার নতুন মানুষ এসে জোটে এই  বিস্ময় নগরীতে, প্রতি মুহূর্ত দৌড় দৌড় দৌড়, কাজ, লড়াই। একটুখানি খরচ করে বাকি টাকা বাড়িতে পাঠানো, হয়তো বা সামান্য একটু জমানো। এই শহরের একটাই নিয়ম, তোমাকে শহরের আগে ছুটতে হবে নইলে ওইসব– যা আমরা আলো ভাবি, তার ঠিক পাশের অতল অন্ধকারে তলিয়ে যেতে বেশি সময় লাগে না এখানে।

সোহিনী দাশগুপ্ত

পায়েল কাপাডিয়া-র এই ছবিটি কয়েক মাস আগে ঝড় তুলেছিল মিডিয়ায়– কান চলচ্চিত্র উৎসবে গ্রা-পি পেয়েছে এক ভারতীয় ছবি, এইটুকু ঝড়-ঝঞ্ঝা তো ওঠারই কথা! না না, এমন প্রশ্ন করা উচিত না যে, ‘গ্রাঁ-পিঁ’ বস্তুটি খায়, না মাথায় দেয়? এমন প্রশ্ন তো একেবারেই করা উচিত না যে, এই ছবিটি, পায়েল কাপাডিয়ার এই ছবিটিই যদি ‘grand prix’ না পেত, কিন্তু রিলিজ করত– তাহলে হলে মাছি তাড়ানোর চারটি মানুষ ছাড়া আর ক’জন দর্শক থাকত? আর এমন প্রশ্ন তো খবরদার করা উচিত না যে, রোজকার চর্বিতচর্বন, ‘মেয়েদের প্রতি কয়-প্রকার অত্যাচার হয়’ গোছের সিনেমা সিরিজে মজে থাকা প্রযোজককূল এই গল্পের ‘গ’ ‘ল’ ‘প’ ছাড়া অদ্ভুত সব শটের সিনেমায় একটি ছেঁড়া দশ টাকাও কি দিত?
All We Imagine as Light (2024) - IMDb
এত বছর ধরে ওয়ার্ল্ড সিনেমার বা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের নির্মাণ এবং প্রযোজনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থেকে এইটুকু বলতে বাধা নেই যে, ‘গ্র্যান্ড প্রিক্স’ না পেলেও পায়েলের ছবিটি একটি অনবদ্য সিনেমা হিসেবেই থেকে যেত কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ বলত না সেই ছবির কথা। সবার অলক্ষে অথবা উপেক্ষায়, অনেকটা সেই ‘কত কবি মরে গেল চুপি চুপি একা একা’র মতো ছবিটি হারিয়ে যেত। কানের গ্র্যান্ড পিক্সের বোঝা আপাতত সরিয়ে রেখে বলছি, এই ধরনের সিনেমার জার্নি সহজ না। কোথায় সেই মননওয়ালা প্রোডিউসার, যে বিশ্বাস করে এমন চলচ্চিত্র ভাষায়, আর কোথায়ই বা সেই দর্শক যা এমন একটি ছবিকে তীরে পৌঁছে দিতে পারেন, যাতে ফিল্মমেকার তাঁর পরের ছবিটি নিয়ে আরও মৌলিক, সৃষ্টিশীল আর সাহসী হয়ে উঠতে পারেন এবং সবচেয়ে বড় কথা আস্তে আস্তে অল্টারনেটিভ সিনেমারও, বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশিই, একটা সুন্দর বাজার তৈরি হতে পারে, যা এক সময় সত্যিই ছিল। ‘All we imagine as light’ নিয়ে আমার এই লেখাটি শুধুই সিনেমার গুণগত মান বিষয়ক নয়, তা নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক লেখা হয়েছে, হচ্ছে এবং আরও হবে। আমি  লিখছি একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে আরেকটি স্বাধীন চলচ্চিত্র কর্মকে এই স্থান ও সময়ের নিরিখে একটু নতুন করে দেখতে।
The Gorgeous Mumbai Rhapsody of “All We Imagine as Light” | The New Yorker
সিনেমাটির একটা দৃশ্য
পায়েল কাপাডিয়ার ছবিটি প্রায় নয়-দশটি গ্রান্ট পেয়েছে। আর্তে, হুবার্ট বলস, সিনে ওয়ার্ল্ড, ভিশন সুদ-এর মতো অনেক বছরের পুরনো, অত্যন্ত সম্মানজনক গ্রান্টও রয়েছে এর মধ্যে। এই গ্রান্ট জোগাড় করা এবং তা থেকে সিনেমা বানানো যে কী ভয়ানক অসাধ্যসাধন, তা বলে বোঝানো মুশকিল। আর এতগুলি আন্তর্জাতিক গ্রান্ট যে ছবির ঝুলিতে রয়েছে, সে ছবির এলেম সন্দেহাতীত! অন্তত বছর তিন-চারেকের একটি প্রয়াস, ছবির শুট শুরু করা অবধি। সারা পৃথিবীর অসংখ্য অসামান্য সব চিত্রভাবনার সঙ্গে এই লড়াই, শেষ হয়তো খুব বেশি হলে তিনটি প্রোজেক্ট গ্রান্ট পায়। খুব স্বাভাবিকভাবে এই লড়াইয়ে নামার আগেই হেরে যান অনেক ফিল্মমেকার। অথচ, তাঁদের চিত্রভাবনা হয়তো যথেষ্ট শক্তিশালী, হয়তো পরিচালক হিসেবে তাঁরা সত্যিই দারুণ, ভবিষ্যৎ মাস্টারস। ১৯৭৫-এ এমন সব ফিল্মমেকার আর এমন সব ফিল্ম সাপোর্ট করতেই তৈরি হয়েছিল ‘NFDC’, ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া।
Payal Kapadia Film To Represent France At Oscars 2025 | Times Now
কান ফিল্ম ফেস্টিভালে ছবিটির প্রিমিয়ার
যাতে শৈল্পিক সিনেমা বা ‘আর্ট ফিল্ম’-এর ও একটি পাকাপোক্ত জায়গা তৈরি হয়। সত্যি বলতে কী, সম্মান ঘরে আনার জন্য, বিশ্বের দরবারে মাথাটি উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য তখনও এবং এখনও বিকল্প শিল্পই ভরসা, তা সে চলচ্চিত্রই হোক বা গল্প, উপন্যাস, কবিতা অথবা ছবি আঁকা বা অন্য কিছু, পায়েল কাপাডিয়ার ছবিই তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ এই মুহূর্তে। কিন্তু, দু’টি দশককেরও বেশি সময় ধরে অসামান্য সব সিনেমা বানিয়ে, ইন্ডিয়ান নিউ ওয়েভ-এর বেশ কিছু তাবড় মাস্টার তৈরি করার পর NFDC-র পাখাটি আপাতত ‘merger’ দ্বারা বাঁধা, ফিল্মস ডিভিশন অফ ইন্ডিয়ার মতোই। অতএব যাঁরা সিনেমার গল্প বলা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চান, তাঁদের সেই স্বপ্ন এবং প্রতিভা বেশিরভাগ সময়েই একটি বাজার-বিপণি-কাঁচামাল-মনোরঞ্জন এবং আরও অনেক কিছুর বৃহৎ জুয়ার বোর্ডে খাবি খেতে খেতে অক্কা পায়। সেই একই পরিচালক এক সময়ে ‘হয়ে যাবে’র বকলসে বন্দি হয়ে যায়। ব্যাপারটা এইরকম যে, উল্টোদিকের পয়সাওয়ালা লোকটি বলল, ‘আপনি গাড়িটা ছাদ থেকে ঘোরাতে ঘোরাতে রাস্তায় নামান’, বিগলিত মুখে বসে থাকা পরিচালক বললেন, ‘ওহ, আচ্ছা, হয়ে যাবে।’ উল্টোদিকের বকলসের চেন ধরে রাখা মানুষটি বলল, ‘এক কাজ করুন, একটি শ্বশুর, শাশুড়ি, মামাতো দিদি, দেওরের পুরনো গার্লফ্রেন্ড আর নতুন বউ, ননদের খুড়তুতো বোনপো স্ক্রিপ্টে অ্যাড করুন।’ পরিচালক ঢোঁক গিলতে গিলতে, ‘সে কী, মানে আচ্ছা ঠিক আছে হয়ে যাবে!’
Crítica: "All We Imagine As Light", una preciosa meditación sobre libertad (Cannes 2024) - La Estatuilla
এই কথাগুলি লেখার একটিই কারণ, পায়েল কাপাডিয়ার ‘All we imagine as light’ নিয়ে আজ আমরা উত্তেজিত, ছবিটি কান চলচ্চিত্রের উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবির জুরি প্রাইজ পেয়েছে বলে আমরা গর্বিত। অথচ এই ছবিতে বা এমন ছবিতে সমাজ, দর্শক, বাজার, মিডিয়া হিসেবে আমাদের কন্ট্রিবিউশন কী? কতটুকু? কতটা স্পেস আমরা ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমাকে দিয়ে থাকি আমাদের জীবনে, কাজের শেষে সিনেমা দেখতে বসায়? আমাদের খবর, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বা সোশ্যাল মিডিয়ায়? এই ছবি নিয়ে এত গর্ব কি সত্যিই আমাদের সাজে? আমাদের ফিল্ম কালচার তো আজ একটি সম্পূর্ণ অন্য এনডর্সমেন্টে বিশ্বাস করে।
All We Imagine As Light - The Film Verdict
‘All we imagine as light’ একটি ফ্রেম টু ফ্রেম আর্ট হাউস ফিল্ম। ছবির বিষয় আর বুনোট চেনা– যাঁরা ওয়ার্ল্ড সিনেমা দেখেন, তাঁরা জানেন এমন ছবি অনেক দেখেছি আমরা, সাধারণ, দিন আনি-দিন খাই কয়েকটি মানুষের এক হুড়মুড় করে চলতে থাকা মেগাসিটিতে বেঁচে থাকার গল্পহীন গল্প। স্লাইস অফ লাইফ– প্রায় তথ্যচিত্রের ভাষায় শুরু হয় ছবিটি। বোম্বাই শহর, প্রতিদিন কুড়ি-পঁচিশ হাজার নতুন মানুষ এসে জোটে এই  বিস্ময় নগরীতে, প্রতি মুহূর্ত দৌড় দৌড় দৌড়, কাজ, লড়াই। একটুখানি খরচ করে বাকি টাকা বাড়িতে পাঠানো, হয়তো বা সামান্য একটু জমানো। এই শহরের একটাই নিয়ম, তোমাকে শহরের আগে ছুটতে হবে নইলে ওইসব– যা আমরা আলো ভাবি, তার ঠিক পাশের অতল অন্ধকারে তলিয়ে যেতে বেশি সময় লাগে না এখানে। বিশাল বড়, অশেষ প্রাচুর্যের এক শহরে ছোট ছোট খুপরিতে মাথা গুঁজে জীবন কাটিয়ে দেওয়া, একা একা ছুটতে থাকা তিনটি মানুষির কথা বলেছেন পায়েল তাঁর ছবিতে– তিন বয়সি তিন নারী, তাদের কাজ, তাদের অকাজ, প্রেম বা প্রায় প্রেম, তাদের বেড়াল, তাদের কাপড় কাচা, চায়ে বিস্কুট চুবিয়ে খেতে গিয়ে বিস্কুট গলে গায়ে পড়া, অপ্রস্তুত হয়ে হেসে ফেলা। এই সিনেমার গল্প বলা মুশকিলের কাজ, কারণ এখানে অমন গোল গোল গল্প নেই, আড়াই মিনিট বাদে বাদে কোনও চমকও নেই, এমনকী, একটা ক্লাইম্যাক্সও নেই। যা আছে, তা হল একটি দক্ষ চলচ্চিত্র ভাষা, এমন একটি ট্রিটমেন্ট যা ‘সাধারণ’-কে ম্যাজিকাল করে তোলে, যা বহু চেনা বিষয় আর বুনোট একদম আলাদা, আশ্চর্যভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলে। গল্প ছাড়া সিনেমার, ফ্রেম ফ্রেমে যে কত গল্প শুয়ে-বসে থাকে, তার জানান দেয়, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দর্শক বুঁদ হয়ে যায় এই চেনা অথচ একেবারে অচেনা দৃশ্যকল্পে, শব্দমায়ায়!
…………………….
পড়ুন অন্য লেখা: সেন্সরের যে চশমায় ভেসে ওঠে নীতিপুলিশির নীরব, আগ্রাসী মুখ
…………………….
একজন ভালো স্টোরিটেলার, তাঁর দর্শককে এমনভাবে জড়িয়ে নেন তাঁর সিনেমার পথচলায় যে, দর্শক বুঝতেও পারে না কখন সে একটি জার্নিতে শামিল হয়ে গেছে। কখন প্রভা, অনু, বা পার্বতীর জীবন– প্রভার জার্মানিতে থাকা বরের অপেক্ষা, পার্বতীর বিল্ডারের বিলবোর্ডে পাথর মারা, অনুর তীব্র প্রেম, আর জলে জলাকার, লম্বা লম্বা বাড়ি ঘেরা এক শহরের অতি সাধারণ কিন্তু আশ্চর্য সব ছবি দর্শকের হয়ে গেছে।
All We Imagine As Light' Is a Sentient Ode to – and a Lament for – the Spirit of Mumbai
ছবিটির সবচেয়ে বড় মুনশিয়ানা ঘোর রিয়েলিস্টিক শট টেকিংয়ের মধ্য দিয়ে একটি পরাবাস্তবতার জগৎ তৈরি করা। রিয়ালিটি নিয়ে খেলা আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্যানভাস, এক্সটেন্ডেড রিয়ালিটি আর ফ্যান্টাসি দুটো সম্পূর্ণ অন্য জনরা। তবু অনেক সময়েই সারিয়েল করতে গিয়ে প্রায় ফ্যান্টাসি বা বলা ভালো ‘আনরিয়াল’ হয়ে যায় অনেক ছবি। রিয়ালিটির মোড়কে সূক্ষ্ম ম্যাজিক রিয়ালিজম তৈরি করেছেন পায়েল তাঁর ছবি ঘিরে, ছবি যত এগিয়েছে তত বেড়েছে এই ট্রিটমেন্ট। পাল্টে গিয়েছে ছবির প্রেক্ষাপট, ছবির আকাশ, পাল্টে গিয়েছে ছবির মানুষগুলোর রোজকার জীবনচরিত! সাধারণ দুঃখসুখের গতানুগতিক বেঁচে থাকা আস্তে আস্তে হয়ে উঠছে রহস্যময়, অপার্থিব। পায়েল কাপাডিয়ার লেখা এবং পরিচালনায় এই ছবির সবচেয়ে বড় স্ট্রেংথ এখানেই– এখানেই তাঁর এতগুলি গ্রান্ট পাওয়া এবং গ্র্যান্ড পিক্স পাওয়ার মূল কারণ, এই ছবির ইউনিকনেস সাধারণ তিনটি মেয়ের অতীব গড়পড়তা জীবনযাপনের ভিতর রূপকথা বুনে তোলা।
আমার ভারি পছন্দ হয়েছে পায়েলের এই ‘ফিল্ম গ্রেইন’-এর কাছে ফিরে যাওয়া। Arri Alexa Mini camera-য় মূলত শুট হয়েছে ছবিতে, কিছু additional shots canon camera-য়। কিন্তু এত লো লাইট শটস যে মাঝেমধ্যে ছবি ফেটে গেছে, যত বাস্তবতার চেনা চৌহদ্দির বাইরে বেরিয়েছে সিনেমাটি, তত গ্রেইনি হয়ে উঠেছে ছবি। রীতিমতো সফট ফোকাস, মাঝে মাঝে বার্ন করে হওয়া শটস আবার একই সঙ্গে একদম হালকা ন্যাচারাল আলোয় নেওয়া শটস, মনে হয় না প্র্যাকটিকালস ছাড়া আলোর খুব একটা ব্যবহার এই ছবিতে আছে বলে। এই যে আলোর অভাব, এইটে তো অবশ্যই পরিচালকের ভাবনা আর তাই কি ছবির নামে আলোর জন্য অপেক্ষা বা কাতরতার ছোঁয়া?
All We Can Imagine as Light' review: A powerful film about friendship and home : NPR
এই ছবির সাউন্ড টিম বিদেশি, ফরাসি মূলত, বাকি সব কাস্ট অ্যান্ড ক্রিউ ভারতীয় (এবং অনেকেই বাঙালি)! শব্দ ব্যাপারটা এত ‘অর্গানিক’ যে ভারতীয় বা সাউথ ইস্ট এশিয়ান কোনও সাউন্ড ডিজাইনারের পক্ষে সেই অর্গানিক, কালচারাল এবং ডায়েজেটিক সাউন্ড উপেক্ষা করে একটা একদম অন্যরকম সাউন্ড স্কেপ তৈরি করা খুবই কঠিন কাজ যেটা হয়েছে এই ছবির ক্ষেত্রে। এই শব্দবিন্যাস একদম অন্যরকম এই ছবির ক্ষেত্রে কিন্তু ছবিটিকে তা একটি গ্লোবাল বা ইউনিভার্সাল মাত্রা দিচ্ছে, আর পরাবাস্তবতার ইন্ধানটুকুও উসকে দিচ্ছে।
ভালো অভিনয় দু’রকমের হয়, একটি দারুণ অভিনয় করা, চুটিয়ে-ফাটিয়ে। আরেকটি অভিনয় না করা, চরিত্রটিকে বাঁচা– living the character! এক্ষেত্রে সবাই লিভড দ্য ক্যারেকটার। আমার দেশের মানুষের মুখ দেখে মনে মনে একটা অদ্ভুত শান্তি পেলাম, পর্দায় স্টারেদের ঝকঝকে চকচকে অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধতা হলেও, শান্তি আসে না, আরাম হয় না এমন।
শেষে বলতেই হয়, পায়েল কাপাডিয়া একজন অসামান্য ফিল্মমেকার। এই ছবির ভাবনা, তার স্ক্রিপ্ট, তার ডিরেকশন চরম ভালো। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল অনু ও তার প্রেমিকের মিলন দৃশ্যটি দেখতে দেখতে, হঠাৎ মনে হল এই প্রথম সিনেমার পর্দায় এমন এক নারী পুরুষের মিলন দেখলাম, যার চোখ বা পয়েন্ট অফ ভিউ মিলনরত মেয়েটির। তোমাকে কুর্নিশ পায়েল। তোমার গ্র্যান্ড প্রিক্স শুধু তো তোমার না, আরও অনেক ফিল্মমেকারের ও আর্টিস্টের, যারা বিশ্বাস করে মৌলিক সিনেমায়।