
পূর্ব-পশ্চিম নাট্যদলের প্রযোজনায় ‘আ-শক্তি’র প্রথম শো হয়ে গেল অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ। এই ধরনের নাটক দেখতে গিয়ে একটা আশঙ্কা মনে কাজ করে। প্রথমত, আমরা যারা শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে আমাদের শহরের এখানে-ওখানে দাপটে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি, যারা শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মুগ্ধ ভক্ত হিসেবে প্রতিটি লাইন পড়েছি তাঁর রচনার, যারা ক্যাসেটে তাঁর স্বকণ্ঠে কবিতাপাঠ শুনেছি বারবার, তাদের সেই রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা কোথাও ধাক্কা খাবে না তো?
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে অ্যাকাডেমিতে ঢুকে দেখলাম একেবারে ফুল-হাউস! বুঝলাম, ‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়’ নামক মিথটি এখনও মানুষের মধ্যে সমান কার্যকর। লেখা বাহুল্য, নাটকের নাম, ‘আ-শক্তি’। পূর্ব-পশ্চিম প্রযোজিত এই নাটকের নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এবং নির্দেশক দেবাশিস, আর কেন্দ্রীয় চরিত্র শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় দেবশঙ্কর হালদার।

এই ধরনের নাটক দেখতে গিয়ে একটা আশঙ্কা মনে কাজ করে। প্রথমত, আমরা যারা শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে আমাদের শহরের এখানে-ওখানে দাপটে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি, যারা শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মুগ্ধ ভক্ত হিসেবে প্রতিটি লাইন পড়েছি তাঁর রচনার, যারা ক্যাসেটে তাঁর স্বকণ্ঠে কবিতাপাঠ শুনেছি বারবার, তাদের সেই রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা কোথাও ধাক্কা খাবে না তো? ঢুকে দেখা হল মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায় আর কবিকন্যা তিতির সঙ্গে। অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে গেল। যে বাস্তবে একেবারে ওতপ্রোত ছিলাম, যে সময়কালে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাগুলি বাঁধা, সেই সময়কালের শিল্পিত চেহারার দিকে এগোলাম। মঞ্চ খোলা। একটি ঘর, রান্নাঘর, বিছানা আর কাঠের ফ্রেমে লেগে থাকা দলামোচা টুকরো-ছেঁড়া কাগজ। ঔজ্জ্বল্যহীন, সাদামাটা এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিসর। দেখতে দেখতেই থার্ড বেল। শুরু হল নাট্যাভিনয়।

নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সমস্যা ছিল একটাই। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের গোটা জীবনের নাট্যভাষ তাঁকে তৈরি করতে হয়েছে। অর্থাৎ, মোটামুটি বহড়ু, কলকাতা, শান্তিনিকেতনের বৃত্তে, ১৯৩৩ থেকে ১৯৯৫ সাল ব্যেপে। এসেছে পরিবারবৃত্ত, বন্ধুবৃত্ত এবং শহর কলকাতার পরিবর্তমান দিনকাল। ফলে, একটু কোলাজধর্মী হওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা সেখানে অবশ্যম্ভাবী ছিল। সেই অভিমুখ তিনি বেশ মুনশিয়ানার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। কলকাতা এবং বহড়ুকে ব্যক্তি কুশীলব হিসেবে মঞ্চে হাজির করার পরিকল্পনাটি চমৎকার। অন্যদিকে, ছেঁড়া কাগজের টুকরো দিয়ে অবিন্যস্ত নড়বড়ে কাঠামোসজ্জা একই সঙ্গে যেন ছেঁড়াখোঁড়া জীবন আর ছন্দ-তন্তুজাল ছিঁড়ে ফেলার স্বপ্ন-দেখা কবির প্রবল দাপুটে কাব্যনির্মাণ প্রক্রিয়াকে ধরে রাখে। সংসারে সন্ন্যাসী লোকটা যেন এক রহস্যময়, দূরবর্তী, অমর্ত্যবিভার হাতছানিতে নিজেকে নিয়ে ছুটে গেল, পুড়ে গেল অনিঃশেষ। একদিকে সংসার, আপিস, সমাজ, সঞ্চয় আর অন্যদিকে শিল্পের অবিরাম উদ্দাম বিমূর্ত ঘোর– এই দুই প্রান্তকে মেলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে গেলেন আমাদের ভাষার অগ্রগণ্য এই বিস্ময়কর কবি! দু’-ঘণ্টা দশ মিনিটে তার একটা আভাস ধরা নাট্যকারের পক্ষে বেশ কঠিন কাজ। উজ্জ্বল, তাঁর নিজস্ব ধরনে তাকে ধরেছেন যথেষ্ট দক্ষতায়। মঞ্চকে সেইসূত্রে অভিনবভাবে ব্যবহার করেছেন পরিচালক। বহড়ু আর ‘কুয়োতলা’ মিলেমিশে, পার্থিব-অপার্থিব টানে, চাঁদ আর প্রান্তরের কথকতায়, বুকের মধ্যে ব্যাপক বৃষ্টির ইশারা জাগিয়ে তোলে। তারপর কলকাতা, কৃত্তিবাস আর কাব্যতুফান! সেই সূত্রেই ঢুকে পড়ে প্রধানত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতি, বান্ধবসান্নিধ্য, সিধুপান, উড়নচণ্ডী কীর্তিকলাপ এবং অগ্নিক্ষরা পদ্য-পাগলামি। অভিনয় এবং পরিচালনার জোরে কখন যেন সময় কেটে যায়। বাঙালি কবি, তাঁর যাপন, তাঁর সন্ধান, তাঁর আত্মখনন, তাঁর সময় এবং অক্ষর নিয়ে এমন নাটক সত্যিই ব্যতিক্রমী।

আলাদা করে বলতেই হবে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় দেবশঙ্কর হালদারের কথা। পরিচালক খুব সুনিপুণ কৌশলে নাটকজুড়ে আলোর স্বল্পতাকে বজায় রেখেছেন। সেই আলোছায়ায় দেবশঙ্করের মুখ এবং অভিব্যক্তি অনেক সময় বুক-ছ্যাঁত করে তোলে, স্মৃতিতে। পরিণত বয়সের শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একটা মেক-আপ দিয়েই তিনি বাল্য থেকে প্রৌঢ়তা ধরেছেন। দর্শকের চিত্তপটে সেই অবয়ব মসৃণভাবেই ছাপ ফেলেছে। ‘কলকাতা’ চরিত্রে পার্থ ভৌমিকের কথা আলাদাভাবে বলতেই হবে। তিনি খুব ‘লো-কী’-তে নিচু মাত্রায়, একেবারে সাদামাটা, অতি-সাধারণ, একটু আনমনা চরিত্রটি চমৎকার ধরেছেন। হাতলে জালিব্যাগ লাগানো সাইকেল নিয়ে ঢুকে তিনি সংযত অভিনয় শেষ পর্যন্ত চালিয়ে গেলেন– বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বাভাবিক। তিনি একইসঙ্গে এই নাট্যের কথক এবং ভাষ্যকার। তাঁর এই নিচুপর্দার অভিনয়ের প্রেক্ষাপটেই দেবশঙ্কর বহু মুহূর্তে সামান্য চড়া পর্দা ছুঁতেই, শক্তির দামালপনা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কোনও অতিরেক বা অতি-অভিনয়ের দিকে যেতে হয়নি। প্রশংসাযোগ্য অভিনয় করেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় চরিত্রে কৌশিক প্রধান। তাঁর ক্ষেত্রেও মুখাবয়বের সাদৃশ্য বেশ চমকে দিয়েছে। তিনি বেশ সুন্দরভাবে বন্ধু-অভিভাবক-সহচর চরিত্রটি ধরেছেন। মীনাক্ষী চরিত্রে অনন্যা মৌ তারিফযোগ্য অভিনয় করে গেলেন। তাঁর গানের গলাটিও বেশ লাবণ্যময়। সাদৃশ্যের মাত্রা স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকায় ঈপ্সিতা গাঙ্গুলীর ক্ষেত্রে চমকে দেওয়ার মতো। আমার ব্যক্তিগতভাবে খুবই ভালো লেগেছে দাদুর চরিত্রে দীপেন ভট্টাচার্য এবং রামকিঙ্করের ভূমিকায় চন্দন বিকাশ নিয়োগীকে। আমরা, যারা এইসব নানা রঙের ব্যক্তিবর্গকে চর্মচক্ষে দেখেছি কিংবা দেখছি– তাদের অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়, বাস্তব আর শিল্পিত বাস্তবের সংঘর্ষে। ধরা যাক, তারাপদ রায়, সমীর সেনগুপ্ত, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এবং এমনকী, সৌমিত্র মিত্রের চরিত্রচিত্রণ দেখলে বেশ একটা মজা পাওয়া যায়। তুল্যমূল্য বিচারে লাভ নেই জেনেও স্মৃতি হাতড়াই। বলতে ভুলেছি, সৌমিত্র মিত্র এই নাটকে নিচু পর্দায় সন্তোষকুমার ঘোষকে ধরেছেন ভালো। আর আলাদা করে প্রশংসা করব মালবিকা মিত্রের পোশাক পরিকল্পনাকে। ২০২৫ সাল থেকে তিনি যেন স্মৃতিরোমন্থনে ফিরে গিয়েছেন সাত বা আট দশকে। সেই কালখণ্ডের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই পোশাক পরিকল্পিত হয়েছে।

নাট্যমঞ্চের বিভিন্ন কোণ এবং কিনারকে বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার করেছেন পরিচালক। একদিকে কুয়ো আর অন্যদিকে শয়নকক্ষের বিছানা– এই দুই ভারসাম্য রক্ষাও বেশ উল্লেখযোগ্য। লোকাল ট্রেনের দৃশ্যনির্মাণ এবং প্রয়াণকালে একজন শক্তি থেকে দুই শক্তির আবির্ভাব প্রশংসার আলাদা দাবি রাখে। পরিচালক জানতেন যে, তাঁর পরিকল্পনার আকার সীমিত, খুব বড় মাপের দৃশ্যরূপ থেকে হয়তো সচেতনভাবেই তিনি দূরত্ব তৈরি করেছেন। কয়েকটি ছোটখাটো সমস্যাও তৈরি হয়েছে তার ফলে। যেমন ধরা যাক, মঞ্চের পিছনের অংশটি তিনি প্রায় স্পর্শই করেননি, ফলে আয়তনের খানিকটা পরিসর জুতসইভাবে ব্যবহৃতই হয়নি। অথচ, যদি উচ্চতার খানিকটা, বিশেষত ভিন্ন তলে তুলে নিয়ে যাওয়া যেত, হয়তো কয়েকটি জীবনতথ্য এবং অভিজ্ঞতার বহুস্তরকে ছোঁয়া যেত। অন্যদিকে, বিরতির পর, তাঁর সুযোগ ছিল মঞ্চের মজ্জাটিকে আমূল অথবা আংশিক পরিবর্তন করার। তাতে বিস্তারের একটা আভাসও তৈরি হত।
…………………………………………..
পড়ুন। প্রয়াত স্বপ্না দেবের স্মরণলেখ: এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর
…………………………………………..
আসলে মুখে যতই বলুন, নিজেকে আলসে প্রকৃতির, ঘরমুখী একজন মানুষ, আমরা জানি আসলে নানা দিকে-দিগন্তরে বনে-জঙ্গলে-পাহাড়ে-সমুদ্রে ছুটে বেড়িয়েছেন এই কবি। এই নাটকে সেই বিশ্ববীক্ষণ আর পর্যটনলুব্ধতার একটু উল্লেখ থাকলে ভালো হত। দু’-খণ্ড ‘চলো বেড়িয়ে আসি’, ‘জঙ্গলে পাহাড়ে’, রূপচাঁদ পক্ষী ছদ্মনামে ‘উইক এন্ড ট্যুরিস্ট গাইড’ জুড়ে কত ভ্রমণ মুহূর্তের স্বপ্নিল মুহূর্ত আমাদের উপহার দিয়েছেন শক্তি। কাব্যনামেও সেই ইশারা অটুট আছে– ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’, ‘কক্সবাজারে সন্ধ্যা’, ‘জঙ্গল বিষাদে আছে’ প্রভৃতি।

উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় আসলে নানা তরঙ্গের এক বিপুল এবং খরস্রোতা নদীকে ধরতে চেয়েছেন একমুঠোয়, ফলে, সংক্ষিপ্তি তার নিয়তি ছিল। তাঁর নৈপুণ্যের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেই গোটা কয়েক প্রস্তাব করি, আশা করি, তিনি নিজগুণে এই ধৃষ্টতা মাপ করবেন–

(ক) তথ্য হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারত, তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের কথা। যাদবপুরে পড়তে গিয়ে শক্তি সান্নিধ্য পেয়েছিলেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় এবং মাস্টারমশাই বুদ্ধদেব বসুর। বুদ্ধদেব বসুর প্রশ্রয়েই ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রথম কবিতা (চতুর্দশপদী) ‘যম’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে।
(খ) শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের নিজস্ব পদ্ধতিতে তরজমার কথা বলা হয়তো তাঁর প্রণোদনার বহুমুখকে উন্মোচন করত। ওমর খৈয়াম, গালিব, কালিদাস থেকে লোরকা, কহ্লিল জিব্রান, রিল্কে, মায়াকভস্কি, হাইনে– বহু উচ্চারণকেই বাংলা অনুবাদে পরিবেশন করেছিলেন শক্তি।


(গ) শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘সাহিত্য অকাদেমি’, ‘আনন্দ পুরস্কার’ তো বটেই এমনকী, সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গঙ্গাধর মেহের পুরস্কার’-এও ভূষিত হন। তার একটু আলতো উল্লেখ প্রয়োজন ছিল বলেই মনে হয়।
(ঘ) শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর জলদমন্দ্র কণ্ঠে দরাজ গান গাইতেন আনন্দে-পরবে। তার কিছু কিছু আমরা সে সময়ে শুনেছি, কিছু কিছু দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যমেও ধরা আছে। এ নাটকে সেইমতো একটি গান কি গেয়ে উঠতে পারতেন না দেবশঙ্কর হালদার? তিনিও বেশ কারুকাজওলা কণ্ঠে গান করার ক্ষমতা রাখেন। রুচিরা শ্যাম তাঁর একটি স্মৃতিগদ্যে লিখেছেন বন্ধুজনের আগ্রহে এবং আদেশে শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর বাসররাত্রে গেয়েছিলেন– ‘ওগো কাঙাল আমারে কাঙাল করেছো আরও কী তোমার চাই।’ সেই গান কি বিবাহদৃশ্যে যোগ করা যায় না?
(ঙ) ঋত্বিক ঘটক প্রসঙ্গ এ নাটকে এসেছে। সেইসূত্রে কোনওভাবে কি ঋত্বিককে নিয়ে কবি শক্তির অনবদ্য এলেজির অংশ বলা যেত না?
(চ) শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের আগের দিন কিছু ঘটনা ঘটেছিল। সেগুলির উল্লেখ না করাই ভালো হয়েছে। কিন্তু কোথাও একটা বলা দরকার ছিল যে, সুনীল-স্বাতীর বাড়িতে জোর করে ‘রাম’ খেয়েই কবি অসুস্থ হয়ে পড়েননি। আরও কিছু ঘটনাবলি আঁধারে ঘুরছে। আজও।
এতসব কথা লিখতে আমাকে প্রাণিত করছে ওই নাটক, ওই পারফরমেন্স। সমালোচনার জন্য নয়, আমি এই নাটকটির প্রভূত সম্ভাবনাকে কুর্নিশ জানিয়েই এই কথাগুলি লিখলাম। মুগ্ধতা থেকেই এই দাবি। কবিকে নিয়ে আমরা অনেকেই খুব স্পর্শকাতর। নাটক দেখতে দেখতে আমি ভেসে যাচ্ছিলাম স্মৃতিতে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রিয় একটি বাক্যবন্ধ ছিল ‘ইগ্নাইট করা’। এ নাটক দেখেও সেই ‘ইগ্নাইট’ করার শক্তির প্রতি অকুণ্ঠ মুগ্ধতা এবং সমর্থন।
……………………………………………
ছবি ঋণ: পূর্ব পশ্চিম নাট্যদল
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved