Robbar

আইসবাথ আমাকে তৈরি করেছে বরফঠান্ডা সমুদ্রের জন্য

Published by: Robbar Digital
  • Posted:September 4, 2024 3:52 pm
  • Updated:September 4, 2024 4:50 pm  

বয়স মাত্র ২৬। বাড়ি কালনায়। প্রস্তুতির অন্যতম মঞ্চ গঙ্গাবক্ষ। আর সেখানে সাঁতার কাটতে কাটতেই বিশ্বের পাঁচটা কঠিন সামুদ্রিক চ্যানেল পার করে ফেলেছেন সায়নী দাস। ইংলিশ চ্যানেল, আমেরিকার ক্যাটালিনা চ্যানেল, আমেরিকারই মলোকাই চ্যালেন আর নিউজিল্যান্ডের কুক স্ট্রেইট চ্যানেল পার করেছেন আগেই। সম্প্রতি সাফল্যের মুকুট পড়েছেন স্কটল্যান্ড ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের মাঝে থাকা নর্থ চ্যানেলেও। কীভাবে ঢেউয়ের নাচন সামলানোর জন্য নিজেকে প্রস্তত করেন এই বঙ্গকন্যা? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই বা কী? ‘রোববার.ইন’-এর সব প্রশ্নের উত্তর সায়নী দাস দিলেন নর্দান আয়ারল্যান্ড থেকেই, শুনলেন শিলাজিৎ সরকার। 

শিলাজিৎ সরকার

ইতিমধ্যেই পাঁচ-পাঁচটা চ্যানেল সাঁতরে পার করে ফেলেছেন। এর মধ্যে সাম্প্রতিকতম সাফল্য এল নর্থ চ্যানেলে, যা এতদিন এশিয়ার কোনও মহিলা পার হতে পারেনি। কী মনে হচ্ছে এমন কীর্তির পর?

সত্যি বলতে আমি এই মুহূর্তটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। প্রতিটা চ্যানেল পার হওয়ার পরই এমন একটা অনুভূতি, এমন একটা মানসিক পরিস্থিতি তৈরি হয় যেটা অন্য কাউকে বলে বা অন্য কোনওভাবে বোঝানো সম্ভব নয়। সেটা আমার একান্তই নিজস্ব একটা অনুভূতি। আর নর্থ চ্যানেলের মতো কঠিন পরীক্ষায় উতরে যেতে পারলে তো সেই অনুভূতিটা আরও বেশি করে গ্রাস করে। আমার অবস্থাটা এখন সেরকম। এটুকু বলতে পারি, নর্থ চ্যানেল পার হওয়ার ওই মুহূর্তটা আমার কাছে প্রচণ্ড গর্বের। একইসঙ্গে অমূল্যও। আমার এখনও ঘোর কাটেনি।

সায়নী দাস

আপনি গত এপ্রিলেই কুর্ক স্ট্রেইট চ্যানেল পার করছেন। এবার নর্থ চ্যানেল পার করলেন, যে চ্যানেল পার হওয়াটা অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজ হিসাবে ধরা হয়। কুর্ক পার করার সময় আপনার চোটও লেগেছিল। এত দ্রুত ফের উত্তাল সমুদ্রে পারি দিতে নেমে পড়লেন কেন?

সত্যি বলতে, কুর্ক স্ট্রেইট চ্যানেল পার হওয়ার ধাক্কা আমার শরীর এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি। কারণ ওই চ্যানেলও বেশ কঠিন ছিল পারি দেওয়া। তারপরও আমি নর্থ চ্যানেল পার করার জন্য বেশি দেরি করতে চাইনি। কারণ নর্থ চ্যানেলের জল এমনিই ঠান্ডা থাকে। শীতকাল যত কাছাকাছি হবে, তত জলের তাপমাত্রা কমবে। আর পাল্লা দিয়ে কঠিন হবে কাজটা। এখন না নেমে পড়লে আমাকে হয়তো সামনের বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত। সেটা চাইনি। আর আমি একসঙ্গে দুটো চ্যানেল পার করার জন্যই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কুর্ক স্ট্রেইট চ্যানেল আর নর্থ চ্যানেল। ফলে এপ্রিলে নিউজিল্যান্ড থেকে ফেরার পর পরই ফের নর্থ চ্যানেল নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলাম। মানসিকভাবে তৈরি হতেই নেমে পড়লাম জলে।

শুনলাম আপনি চোট নিয়েই সাগর পারি দিয়েছেন। সেই চোট কেমন আছে এখন?

কুর্ক স্ট্রেইট চ্যানেল পার করার সময় আমার চোট লাগে। তবে তারপর তো আর বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাইনি। এপ্রিল থেকে নর্থ চ্যানেলে নামার জন্য তৈরি হয়েছি। ফলে এখনও পুরোপুরি সারেনি চোট।

নর্থ চ্যানেলের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?

আসলে সবটাই সমুদ্র হলেও প্রতিটা চ্যানেলের চরিত্র আলাদা। ফলে চ্যানেলের চরিত্র বুঝে আমি প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। নর্থ চ্যানেল যেমন খুব ঠান্ডা। এখন এখানে জলের তাপমাত্রা ওই ১০-১৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করে। ফলে আমি ঠান্ডা জলে দীর্ঘক্ষণ কাটানোর উপর জোর দিয়েছি প্রস্তুতিতে। নিয়িমত আইস বাথ নিতাম। বরফঠান্ডা জলে অনেকটা সময় বসে থাকতাম। এভাবেই আমার শরীর ঠান্ডা জলে থাকার বিষয়টি মানিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া বাড়িতে এসি ঘরে থাকতাম, যাতে কম তাপমাত্রায় থাকতে সমস্যা না হয়।

Bengal's Sayani Das swims across Catalina Channel making it three in a row

এমনিতে তো সমুদ্রে তপমাত্রা, হাঙর বা জেলিফিসের মতো চ্যালেঞ্জ সামলাতেই হয় আপনাকে। তবে এই একটার পর একটা চ্যানেল পার করার ক্ষেত্রে আপনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?

সপ্তসিন্ধু অর্থাৎ সাতটা চ্যানেল পার করার ক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল অর্থ। প্রতিটা চ্যানেল পার করতেই বিপুল অর্থ প্রয়োজন হয়। অন্য দেশে যাতায়াত, সেখানে থাকা-খাওয়া, সমুদ্রে নামার নিয়মকানুন রক্ষা করার জন্য অর্থ ব্যয় হয়। সঙ্গে সেই চ্যানেল পার হওয়ার জন্য প্রস্তুতিতেও খরচা আছে। জেলিফিস বা হাঙরের উপস্থিতির থেকেও অর্থের অনুপস্থিতি আমার কাছে অনেক বেশি মাথাব্যথার।

আপনি এখন অর্থ জোগাড় করছেন কীভাবে?

কিছু অর্থ আমরা পরিবারের জমানো। কিছু অর্থ একদল সহৃদয় মানুষের কাছ থেকে পাচ্ছি। আর বাকিটা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ করছি। এভাবেই একটার পর একটা চ্যানেল পার করছি। আসলে সাফল্যের পর মালা পরাতে যতজন আসে, প্রস্তুতির সময় তার অধিকাংশই সাহায্য করে না।

সপ্তসিন্ধু অর্থাৎ সাতটা চ্যানেলের মধ্যে পাঁচটা পার হয়ে গিয়েছেন। এবার লক্ষ্য কী?
আরও দুটো চ্যানেল পার হওয়া বাকি। স্পেন আর মরক্কোর মাঝে জিব্রাল্টার চ্যানেল। এটা আদতে ইউরোপ আর আফ্রিকারে ভাগ করেছে। এবং জাপানের দুই দ্বীপ হোক্কাইডো ও হনসুর মাঝে থাকা সুগারু স্ট্রেইট, যা জাপান সাগরকে যুক্ত করেছে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে। এই দুটো চ্যানেল পার হতে পারলেই আমি সপ্তসিন্ধু জয়ের নজির গড়তে পারব। আর সেটাই আমার লক্ষ্য। সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্যই তো এত আয়োজন।