Robbar

নির্বাচনে ব্যস্ত বনকর্মীরা, জঙ্গল পুড়ছে অবলীলায়

Published by: Robbar Digital
  • Posted:May 20, 2024 5:48 pm
  • Updated:May 20, 2024 5:48 pm  

সরকারি সূত্র জানা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক দাবানলে ১১০৭ হেক্টর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একসঙ্গে এত বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় বৃষ্টি নামলেই ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ব্যাপক ধোঁয়ায় বাতাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়। বনজ প্রাণীর ভারসাম্যও নষ্ট হয়, বিপন্ন হয় তাঁরা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী আরও জানা যাচ্ছে, নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ৯১০টি জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগই মনুষ্যসৃষ্ট।

সুপ্রতিম কর্মকার

হিমালয় ঘেরা উত্তরাখণ্ড দাবানলের লেলিহান শিখায় বিপন্ন। আর সে-কথা জেনেও উত্তরাখণ্ড প্রশাসন অত্যন্ত ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ দেখিয়েছে আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে। আর তা দেখেই উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে নানা রকম অজুহাত তিনি কোর্টের সামনে রাখেন। তাতে অত্যন্ত বিরক্ত হয় মহামান্য হাইকোর্ট।

উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করার টেকনোলজি উত্তরাখণ্ডের মানুষদের আওতায় ছিল। যাকে বলা হত ‘ফায়ার অব কন্ট্রোল’। জঙ্গলের ভেতর গাছের পাতা পড়ে থাকে অনেক। সেই পাতাতে আগুন লাগলে চারপাশে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। এইরকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই ইংরেজ আমলে উত্তরাখণ্ডের মানুষরা জঙ্গলের ভেতর ছোট ছোট এলাকায় চারপাশ দিয়ে ‘গর্ত’ বা ‘ট্রেনচ’ তৈরি করত। সেই ট্রেনচগুলোকে পরিষ্কার রাখা হত। যাতে সেখানে কোনও পাতা পড়ে না থাকে। কাজেই যদি কোনও ভাবে জঙ্গলের ভেতর মাটিতে আগুন লেগে যায়, অর্থাৎ যাকে বলা হচ্ছে ‘গ্রাউন্ড ফায়ার’, বেশি দূর ছড়িয়ে পড়তে পারত না। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হত। কাজেই জঙ্গলের পাশে থাকা মানুষদের জীবনহানিও হত না। উত্তরাখণ্ডের এই ট্র্যাডিশনাল মডেল মধ্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার সুফল তারা হাতেনাতে পাচ্ছে। কিন্তু খোদ উত্তরাখণ্ড এই মডেলকে কার্যত নষ্ট করে ফেলেছে।

54,800 hectares of forest cover destroyed by wildfires in Uttarakhand since 2000 - Hindustan Times
উত্তরাখণ্ডে ভয়াবহ দাবানল

২০১৭ সালে উত্তরাখণ্ডে খুব বড় দাবানল লাগে। সেবার উত্তরাখণ্ডের প্রশাসন কাঠগড়ায় তুলেছিল চিরপাইনের জঙ্গলকে। যুক্তি ছিল চিরপাইনের সরু পাতা ও সেই গাছ থেকে পাওয়া রেজিন দাবানলকে আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেই অজুহাতে সেবার চিরপাইনের বহু গাছকে কেটে ফেলা হয়েছিল। সেবার পরিবেশকর্মীরা জঙ্গলের আগুন লাগার ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ‘ফায়ার অব কন্ট্রোল’ সিস্টেমটিকে নষ্ট করে দেওয়ার কারণ হিসেবে ‘টিম্বার মাফিয়া’দের দিকে আঙুল তুলেছিল। যদিও তারপরে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চ-ক্ষমতাশালী কমিটি তৈরি হলেও সেই কমিটির কোনও রিপোর্ট আজ পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেনি। তবে বনজ সম্পদ ও কাঠ নিয়ে উত্তরাখণ্ডে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়, সে-কথা বিভিন্ন সময়ে ক্যাগ রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

উত্তরাখণ্ড রাজ্যের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সামনে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এমন অবস্থাতে পাহাড়ে বৃষ্টি নামলে তবেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের বন দফতরের হাতে আগুন নেভানোর আরও অনেক কায়দা আছে ও অনেক আধুনিক পদ্ধতি আছে। প্রশ্ন হল, সেই সব পদ্ধতি প্রয়োগ হচ্ছে না কেন? স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা আঙুল তুলছেন এক গভীর চক্রান্তের দিকে।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

গ্রাউন্ড ফায়ার ছাড়াও জঙ্গলে লাগে আরেক ধরনের আগুন। তা হল ‘ক্রাউন ফায়ার’। পাহাড়ের লম্বা লম্বা গাছের মাথায় মাথায় ছড়িয়ে পড়ে সেই আগুন। এই আগুনকে নিয়ন্ত্রণে আনা একটু কঠিন। তবে অসাধ্য নয়। আমাদের দেশের বন দফতরের হাতে সেই টেকনোলজি রয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের জঙ্গলের যে কোন জায়গায় আগুন লাগার কয়েক মিনিটের মধ্যে খবর চলে যায় স্থানীয় ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসের কাছে ও আরও কয়েকটি জায়গায়। কতটা অঞ্চল জুড়ে আগুন লেগেছে, আগুনের ইন্টেনসিটি কতটা, বাতাসের বেগ কতটা রয়েছে, আগুন লাগার স্থান থেকে জনবসতি কত দূরে– এমন খুঁটিনাটি অনেক তথ্য পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট অথরিটির কাছে। এই পুরো বিষয়টি অটোমেশন পদ্ধতিতে হয়। কাজেই সময় থাকতে আগুন নেভানোর প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট দফতর শুরু করলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব নয়।

Uttarakhand fires: Battle to douse deadly blaze in Indian state - BBC News

উত্তরাখণ্ড রাজ্যের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সামনে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এমন অবস্থায় পাহাড়ে বৃষ্টি নামলে তবেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের বন দফতরের হাতে আগুন নেভানোর আরও অনেক কায়দা আছে ও অনেক আধুনিক পদ্ধতি আছে। প্রশ্ন হল, সেইসব পদ্ধতি প্রয়োগ হচ্ছে না কেন? স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা আঙুল তুলছেন এক গভীর চক্রান্তের দিকে।

সরকারি সূত্র জানা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক দাবানলে ১১০৭ হেক্টর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একসঙ্গে এত বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় বৃষ্টি নামলেই ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ব্যাপক ধোঁয়ায় বাতাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়। বনজ প্রাণীর ভারসাম্যও নষ্ট হয়, বিপন্ন হয় তাঁরা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ৯১০টি জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগই মনুষ্যসৃষ্ট। এর ফলে বন দফতরের ১১৪৫ হেক্টর জমি নষ্ট হয়েছে। রাজ্যের তরফে বুধবার আদালতে জানানো হয়, দাবানল মোকাবিলা করতে কেন্দ্রের কাছে প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত মাত্র তিন কোটি ১৫ লক্ষ টাকাই বরাদ্দ করেছে। ঠিক এইখানে এসে ঝোলা থেকে বেড়ালটি বের হল।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

আরও পড়ুন: আমের পাচারে নয়, প্রচারে থাকুন

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

Uttarakhand forest fire: CM directs officials to contain wildfire, boating halts in Nainital. 10 points | Mint

উত্তরাখণ্ডের একটা বড় রেভিনিউ আসে অরণ্য সম্পদ থেকে। কাজেই অরণ্য সম্পদ যত নষ্ট হবে উত্তরাখণ্ড বহুজাতিক কোম্পানির ওপর আরও বেশি নির্ভর হয়ে পড়বে। হিমালয়ের জঙ্গলে রয়েছে বহু ঔষধি সম্পন্ন গাছ। আর সেই ভিতকে দুর্বল করে দেওয়াটাই বহুজাতিক কোম্পানির লক্ষ্য। জীবিত অবস্থায় সুন্দরলাল বহুগুণা বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যে সে-কথা তুলে ধরেছিলেন। সন্দেহের বিষয় হল, অগ্নিকাণ্ডের পরিস্থিতির মধ্যেও দমকলকর্মীদের ভোটের কাজে পাঠানো হয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। যদিও বনবিভাগের কর্মীদের নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে নিয়োগ করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল উত্তরাখণ্ড সরকারকে।

আরও বড় বিপদ সামনে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি জঙ্গলের আগুন মনে হলেও তা জুড়ে আছে আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গে। গাড়োয়াল হিমালয় বিপন্ন হওয়া মানে পুরো দেশ বিপন্ন হওয়া। সব সময় মনে রাখতে হবে, এই দেশ হিমালয়ের দান। কাজেই উত্তরাখণ্ডের দাবানল নিয়ন্ত্রণ সঠিক পথে হোক, পুরো দেশ জুড়ে সেই আওয়াজ ওঠা দরকার নিজেদের বাঁচার স্বার্থে।