প্লেনের দরজায় এসে দাঁড়ালেন ৫ ফুটের মানুষটি। মাথায় সাদা-কালো হিজাব। কাঁধ পর্যন্ত ঝোলানো। পরনে আর্মি ক্যামোফ্লেজ। সকালের রোদে চিকচিক করছে তাঁর কোমরে ঝোলানো সোনার বাঁটের পিস্তল। এই প্রতিবেদক মন্ত্রমুগ্ধ! চোখের সামনে একজন হিরোকে দেখতে পাচ্ছি। আমাদের সময়ের। সাধারণ মানুষের, উদ্বাস্তু মানুষের, স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা মানুষের কথা যিনি বলেন মুক্তকণ্ঠে। মার্কিন মদতপুষ্ট সাম্রাজ্যবাদী ইজরায়েল নামক একটি যুদ্ধবাজ দেশের অন্যতম শত্রু। তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশের ইন্টেলিজেন্স বিভাগ।
২৮ মার্চ, ১৯৯০, সকাল ৬টা
কলকাতা বিমান বন্দরের টারমাকে থিকথিকে ভিড়। কলকাতা-সহ সারা ভারত, এমনকী, বিদেশের সংবাদপত্রগুলিও হাজির। একজন দেশনায়ক কলকাতার মাটিতে পা দেবেন। তিনি সাধারণত মাটিতে থাকেন না। থাকেন আকাশেই। গোপনে। প্রাণ সংশয়ে। যে কোনও সময়ে গুপ্ত মিসাইল ছুটে আসবে এই ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির দেশনায়ককে ফেয়ারওয়েল দিতে। তিনি এমন একটা দেশের প্রেসিডেন্ট, যে দেশটা গত ৪২ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বিদেশি সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে, যে দেশ এখনও, অর্থাৎ ৭৫ বছর পরেও লড়ে যাচ্ছে নিজের ভূমির অধিকারের জন্য, স্বাধিকারের প্রশ্নে। যে দেশে দু’দিন আগেই ইজরায়েলি সাম্রাজ্যবাদীরা হাসপাতালে মিসাইল ফেলে ২৯ জন শিশুকে হত্যা করে।
সকাল ৮টা
ছোট্ট একটা এরোপ্লেন এসে দাঁড়াল রানওয়েতে। ছুট ছুট। এসপিজি-র ব্যর্থ ব্যারিকেড ভেঙে ছুটে গেল চিত্রসাংবাদিকদের ক্ষুধার্ত ক্যামেরার লেন্স। এই প্রতিবেদকও তাদের মধ্যে একজন। পারলে আমরা সেই ছোট্ট প্লেনের ভিতরেই উঠে পড়ি আর কী! হা হতোস্মি! নিজের দেশের এসপিজি-কে চুক্কি দিতে পারলেও ব্ল্যাক স্যুট পরা ১২ জন, যাঁরা নেমে এলেন প্লেন থেকে, তাঁদের দিকে তাকাতেই আমরা থমকে গেলাম। ওঁরা প্রত্যেকে ৬ ফুটের ওপর লম্বা। আগুনের ভাটার মতো তাঁদের চোখ ক্লকওয়াইজ, অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ ঘুরেই যাছে ১৮০ ডিগ্রিতে। হলস্টারে ৯ এমএম পিস্তল। তাঁরা প্যালেস্তিনীয়, যাঁরা মাতৃগর্ভ থেকেই বুলেটের শব্দ শুনে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন।
অ্যাটেনশন! তৈরি হয়ে গেল প্যালেস্তিনীয় মানববন্ধন। দু’দিকে ৬ জন ৬ জন করে। একটা ছোট সুরক্ষাবলয়। তাঁদের নেতৃত্বে এক মহিলা। লম্বায় প্রায় ৬ ফুটের ওপর।
সকাল ৮টা ১০
প্লেনের দরজায় এসে দাঁড়ালেন ৫ ফুটের মানুষটি। মাথায় সাদা-কালো হিজাব। কাঁধ পর্যন্ত ঝোলানো। পরনে আর্মি ক্যামোফ্লেজ। সকালের রোদে চিকচিক করছে তাঁর কোমরে ঝোলানো সোনার বাঁটের পিস্তল। এই প্রতিবেদক মন্ত্রমুগ্ধ! চোখের সামনে একজন হিরোকে দেখতে পাচ্ছি। আমাদের সময়ের। সাধারণ মানুষের, উদ্বাস্তু মানুষের, স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা মানুষের কথা যিনি বলেন মুক্তকণ্ঠে। মার্কিন মদতপুষ্ট সাম্রাজ্যবাদী ইজরায়েল নামক একটি যুদ্ধবাজ দেশের অন্যতম শত্রু। তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশের ইন্টেলিজেন্স বিভাগ। তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন, কী ভাবছেন, তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ কী– ইত্যাদি অনবরত রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে কখনও স্যাটেলাইটে, কখনও মাটিতে, কখনও বা কানে কানে।
মানুষটির মুখে কিন্তু শিশুর হাসি। বিপ্লবীদের মুখে শিশুর হাসিই থাকে। রোম্যান্টিক ছাড়া কেউ বিপ্লবী হতে পারে না! মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখেও যাঁরা বিচলিত হন না। স্বপ্ন হারান না। মানুষটি ইয়াসের আরাফত। প্যালেস্তাইন ন্যাশনাল অথরিটির প্রেসিডেন্ট এবং প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সর্বাধিনায়ক। কিন্তু তাঁকে পালিয়ে বেড়াতে হয় এক দেশ থেকে অন্য দেশে। সেই তাঁকে দেখতে পাচ্ছি ঠিক ২০ ফুট দূর থেকে? সার্থক জনম আমার!
এই মানুষটার সঙ্গে আমাকে থাকতে হবে এয়ারপোর্ট টু এয়ারপোর্ট। নিজেকে কেমন জানি প্যালেস্তিনীয় সিকিউরিটি গার্ড বলে মনে হচ্ছিল। ওই মাপের একজন বিতর্কিত দেশনায়কের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো তো চাট্টিখানি কথা নয়! এখানে একটা ‘কিন্তু’ আছে। তাঁর কনভয়ের শেষ গাড়িতে এই প্রতিবেদক। কিছু ঘটে গেলে হয়তো পৌঁছতেই পারব না তাঁর কাছে। তবে সাক্ষী হয়ে থাকব। আমার তৎকালীন সম্পাদক যে আমায় এটুকু সুযোগ দিয়েছিলেন, তার জন্য আমি কৃতার্থ তাঁর কাছে।
আরব ভূমিতে হঠাৎ করে কেন ইজরায়েল নামক একটি দেশ গজিয়ে উঠল, তা সবারই জানা। তবু কিছু কথা না বললেই নয়। ১৯৪৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রেডি ট্রুম্যান ইহুদিদের জন্য একটা দেশ প্রস্তাব করে বসলেন। বিশ্বযুদ্ধের বিজিত দেশগুলি তাতে সমর্থন জানাল। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল, কেননা জার্মানিতে যেভাবে হিটলারের হাতে ইহুদি নিধন হয়েছিল, প্রায় ৩০ লক্ষ, তাতে বিশ্বমানবতা স্তব্ধ হয়ে গেছিল। দেশহীন ইহুদিদের যে একটা দেশের দরকার, তা সব দেশ মেনে নিয়েছিল। কিন্তু দেশটা কোথায় হবে? ইতিহাস নয়, প্রাচীন গ্রন্থ ঘেঁটে দেখা গেল ‘গড’ তাঁর নিজস্ব মানবজাতি ‘ইজরায়েলি’দের একটা জায়গা উপহার দিয়েছেন, যা সিনাই পর্বতের কাছে। ব্যস, এই সামান্য এবং অনর্থক ধারণাকে ঘিরেই ঠিক করা হল আরব ভূমিতেই বসবাস করবে ইহুদিরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কোনও পণ্ডিতকে বলতে শোনা যায়নি, সিনাই পর্বতের পাদদেশে ইহুদি নামক একটি প্রাচীন জাতি বাস করত।
ফ্রেডি ট্রুম্যান, যিনি ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছেন অ্যাটম বোমার কারণে, সেই ট্রুম্যান দিলেন মোক্ষম চাল। প্যালেস্তাইন কেটেই হবে নতুন দেশ ইজরায়েল। ১৯৪৮ সালেই আমেরিকায় নির্বাচন সামনেই। ইহুদিদের একটা বিশাল সংখ্যার জনগণ মার্কিন নিবাসী। তারা ব্যবসায়ী। হাতে প্রচুর ডলার! তাদের ব্যাঙ্ক ও ভোটব্যাঙ্ক ট্রুম্যানের দরকার। সে কারণেই প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর প্রধান উপদেষ্টা ক্লার্ক ক্লিফোর্ড পশ্চিম এশিয়ার ছোট্ট একটি দেশ, প্যালেস্তাইনকে ভাগ করে ইজরায়েল নামক একটি দেশ বানিয়ে দিলেন। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ গায়ের জোরে আরব ভূমিতে নয়া সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটল। একদিকে নব সাম্রাজ্যবাদের প্রতীক ইজরায়েল, অন্যদিকে জর্ডন, মিশর, লেবানন, সিরিয়া ও অন্যান্য আরব দেশ। এইভাবে আমেরিকা পশ্চিম এশিয়ায় একটা চিরস্থায়ী সংঘাতের ব্যবস্থা করে দিল। এই ক্ষত ৭৫ বছর ধরে এখনও রক্ত ঝরাচ্ছে মরুভূমিতে। আরও হয়তো ঝরাবে।
দুপুরে ১টা
ইয়াসের আরাফতের গাড়ি থেকে ৩০টা গাড়ির পিছনে আমি। ফলো করছি দেশহীন এক দেশনায়ককে। একটু পরেই রাজভবন। ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। বাইরে থেকেই নজর রাখছি, খবরের জন্য।
ইয়াসের আরাফত আজন্ম স্বাধীনতাকামী। জন্ম মিশরের কায়রোতে। কিন্তু মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনি। ১৯৫০ সাল থেকেই ইয়াসের আরাফত গড়ে তোলেন তাঁর গোপন আরব গেরিলা বাহিনী। চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালায় ইজরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে– ক্ল্যানডেস্টাইন মিশন। রামাল্লা থেকে তেল আভিভ। সেসময় আরাফতের প্যালেস্তাইনে থাকা সম্ভব ছিল না। ইজরায়েলের গুপ্ত ঘাতক বাহিনী মোসাদের হাতে তাঁর প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা ছিল। তিনি সেসময় অন্যান্য আরব রাষ্ট্র, যেমন লিবিয়া, ইরাক, লেবানন, সিরিয়া ও তিউনিশিয়া থেকে অপারেশন চালাতেন। ক্রমশ ইজরায়েলের কাছে তিনি ভয়ের কারণ হয়ে উঠতে থাকেন। অন্যদিকে প্যালেস্তাইনের মানুষের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন তাদের সংগ্রামের আইকন হিসাবে। ১৯৫৮ সালে এসে তিনি বুঝলেন একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা খুব জরুরি। তাই ওই সালেই প্রতিষ্ঠিত হল আরাফতের সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল, ‘ফাতহ’। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ কথাটা বারবার মনে করিয়ে দেওয়া উচিত বলে এই প্রতিবেদকের মনে হয়েছে। ইয়াসের আরাফত ধর্মযোদ্ধা নন। তিনি প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতা সংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা। যে দেশকে ভৌগোলিক মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার জন্য বিশ্বের পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন দেশগুলি একজোট হয়েছে। তাদের সামনে ইট, পাথর নিয়ে আত্মরক্ষায় দাঁড়িয়ে প্যালেস্তাইনের নির্ভীক যোদ্ধারা।
প্যালেস্তিনীয়দের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছিল আরাফত, তাঁর দল ‘ফাতহ’। কিন্তু জর্ডনের রাজা ক্রমশ মার্কিনপন্থী হয়ে যাচ্ছিল বলে বিরোধ বাঁধে আরাফতের সঙ্গে। ফলে জর্ডনের সঙ্গে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ফাতহ। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেন লেবাননে। ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হল ‘প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’ বা ‘পিএলও’। এখানে একটা কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন, আরাফতের নেতৃত্বাধীন পিএলও ইজরায়েলের কোনও যাত্রীবোঝাই বিমানকে অপহরণ করেনি। কিন্তু ইজরায়েলি বিমান অপহরণ হয়েছে, তবে তা পিপলস ফ্রন্টের নেতৃত্বে, যার সঙ্গে পিএলও-র কোনও সম্পর্ক নেই। আমেরিকা ও ইউরোপের কাছে তিনি আখ্যা পান ‘সন্ত্রাসবাদী’। মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে সবসময়েই সন্ত্রাসবাদী। কিন্তু সারা বিশ্বের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষ তাঁকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ বলেই জানবে। পণ্ডিত নেহেরু থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ী পর্যন্ত ভারতও পূর্ণ সমর্থন করে এসেছে প্যালেস্তাইনকে। একসময়, আমাদের পাসপোর্টে দু’টি দেশ ছিল নিষিদ্ধ। না, চিন বা পাকিস্তান নয়। দেশ দু’টি হল সাউথ আফ্রিকা, বর্ণবিদ্বেষী বলে ও ইজরায়েল, আরব ভূমিতে দখলদারির জন্য। আজকের প্রধানমন্ত্রী সেই বিদেশনীতিকে পদদলিত করে ইজরায়েলকে সমর্থন করে বসলেন। এই পদক্ষেপ নিন্দনীয়।
ক্রমাগত আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য তিউনিশিয়ায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ‘পিএলও’-র সদর দপ্তর। অন্যদিকে ইজরায়েল পররাষ্ট্র রীতিনীতি অগ্রাহ্য করে তিউনিশ-এ বোমারু বিমান পাঠায় আরাফতকে হত্যার উদ্দেশ্যে। সেই বোমা হামলায় নিহত হয় ৭৩ জন পিএলও মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু কী আশ্চর্য! এই হামলার মিনিট তিনেক আগেই আরাফত শিবির ছেড়ে বাইরে বেরিয়েছিলেন সান্ধ্যভ্রমণে। এখানেই শেষ নয়, রামাল্লায় তাঁর বাসভবনে ‘মোসাদ’ এজেন্টরা বহুবার তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে। সফল হয়নি একবারও।
দুপুর ৪টে
রাজভবন থেকে কনভয় বেরল। আমি পিছু পিছু। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দেখা হল সহকর্মীদের সঙ্গে। তাঁদের মুখ থেকে শোনা গেল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর গালে নাকি আরাফত চুমু খেয়েছেন। এটাই ফিলিস্তিনি কায়দা! আজ পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক নেতা, আরেকজন নেতাকে চুম্বন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, তা কি ইতিহাসে আছে? আরাফত সেই বিপ্লবী, স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি ভালোবেসে, চুমু খেয়ে অন্য দেশের মন জয় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দেশই মিসাইলে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। শেষদিকে অসলো চুক্তির পরে তিনি বুঝেছিলেন শুধুমাত্র রক্তক্ষয় করে প্যালেস্তাইনে স্বাধীনতা আনা যাবে না। তিনি চেয়েছিলেন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে। পেয়েছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার আইজাক রবিন ও শিমন পেরেজের সঙ্গে। কিন্তু শান্তিপ্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। সাম্রাজ্যবাদ থেমে থাকে না। তার রাক্ষসের ক্ষুধা বাড়তেই থাকে। ধ্বংস করে গাজা, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, গোলানহাইট।
রাত ১০টা
আরাফতের কনভয় নেতাজি ইন্ডোর থেকে রাজভবনে ফিরে গেল। আমাদের বাইরে রেখে। গাড়িতেই ঘুমিয়ে নেওয়া হল খানিকটা।
আরও পড়ুন: বলশালী রাষ্ট্র বনাম ভিটেমাটি খোয়ানোদের দল
রাত ২টো
কনভয় বেরিয়েছে। আবার এয়ারপোর্ট। ঘুম চোখে আবার ছুট ছুট। এবার বিদায় দেওয়ার পালা। সকালে যত ভিড় ছিল, এখন ততটা নেই। জনা কয়েক আমাদের মতো খবরের ফলোয়ার আর নিরাপত্তা কর্মী। রানওয়ের যেখানে আমাদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে দেখতে পাচ্ছি নীল রঙের একটা ছোট্ট বিমান অপেক্ষায় আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি বিমানের গায়ে ইংরেজিতে লেখা ‘রিপাবলিক অফ ইরাক’। প্যালেস্তাইন কম্যান্ডোরা ক্ষিপ্র গতিতে ঘিরে ফেলল রানওয়ে। বুলেট প্রুফ কালো গাড়ি থেকে নেমে এলেন ‘পিএলও’ এবং প্যালেস্তাইন ন্যাশনাল অথরিটির প্রেসিডেন্ট ইয়াসের আরাফত। সেই মিষ্টি হাসি। আমাদের কাজ আমরা করলাম। ছবি তোলা হল। নানা ভঙ্গিতে। আরাফত উপস্থিত সবার গালে চুমু খেলেন। আমারও। কিন্তু কোথায় যাচ্ছেন তিনি? খুব সংগত প্রশ্ন। উত্তর দিলেন সেই মহিলা কম্যান্ডো। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বললেন, জানি না কোথায় যাচ্ছি। আর জানলেও বলা যাবে না। দুঃখিত!
পুনশ্চ: ২০০৪ সালে ফ্রান্সের হাসপাতালে যখন ইয়াসের আরাফত মারা যান, তখন বহু বিতর্ক উঠেছিল তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে। সেই সময় তাঁর স্ত্রী সোহা আরাফত অভিযোগ করেছিলেন বিষ প্রয়োগে তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। খবরের কাগজে সোহার ছবি দেখে চমকে উঠেছিলাম। এই তো সেই মহিলা প্যালেস্তিনীয় কম্যান্ডো!
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved