Robbar

বাংলা ক্রিকেটের অন্তর্জলী যাত্রার শুরু আছে, শেষ নেই

Published by: Robbar Digital
  • Posted:February 17, 2024 4:42 pm
  • Updated:February 20, 2024 9:04 pm  

বাংলা ক্রিকেট নাকি এখন দুর্নীতির আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে। পুরোটা না হলেও আংশিক সত‌্য তো বটেই। না হলে কোনও সিএবি কর্তা বাংলা টিমে ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের ক্লাবে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারকে বিনা পয়সায় খেলিয়ে দেন কখনও? দ্বিতীয় ডিভিশনের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে ক্রিকেট কম, টাকা বেশি। কিছু সংখ‌্যক ক্লাব আছে, যার কর্তারা আজও মন-প্রাণ দিয়ে সর্বস্ব উজাড় করে ভাল টিম গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাকিরা? ময়দানে কানাঘুষো শোনা যায়, অধিকাংশ কর্তাই একটা অঘোষিত নিয়ম চালু করে দিয়েছেন, ‘টাকা দাও, টিমে জায়গা পাও।’

আলাপন সাহা

বছর চারেক আগের ঘটনা। রনজি ফাইনাল কভার করতে রাজকোট ছুটছি, কোভিড-পূর্ব সময়ে। তা, এয়ারপোর্টে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ। বছর ৭৫ ছুঁইছুঁই। পেশায় সাংবাদিক আর গন্তব‌্য রাজকোট শুনে কৌতূহলবশত জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বাংলার রনজি ফাইনাল কভার করতে যাচ্ছেন না কি?’ উত্তরে ‘হ‌্যাঁ’ বলায়, অশীতিপর এবার বললেন যে, কাজের সূত্রে তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে বাইরে-বাইরে। কিন্তু তারপরেও বাংলা ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা বা উত্তেজনা কোনওটাই সামান‌্যটুকুও কমেনি। ’৮৯ সালের বাংলার সেই ঐতিহাসিক রনজি জয় ইডেনে বসে দেখেছেন। ওয়াংখেড়ের ফাইনালেও ছিলেন। বহু বছর পর বাংলা টিম আবার রনজি ফাইনালে। নাহ্, এবার নানা কাজের ব্যস্ততায় আর মাঠে যাওয়ার উপায় নেই ভদ্রলোকের। কিন্তু নিজেকে শান্ত রাখতেও পারছিলেন না কিছুতে। এয়ারপোর্টে তাঁর অবিরাম অস্থিরতা এখনও চোখে ভাসে।

সেই একইরকম উত্তেজনা ছিল আমাদের মধ‌্যেও। বাবা-জ‌েঠুদের  মুখে এতকাল সম্বরণ বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়, অরুণ লালদের রনজি জয়ের কথা শুনে এসেছি। তাহলে কি রাজকোটের মাটিতে বঙ্গ-ক্রিকেটের নতুন রূপকথা সৃষ্টির সাক্ষী থাকব আমরা? মাঠে বসে দেখব, বাংলা ক্রিকেটের পুনর্জন্ম?

Win toss, bowl first' - Bengal's 1990 Ranji Trophy heroes tell Manoj Tiwary's men - Sportstar
সোনালি অতীত: বাংলার শেষ রনজি ট্রফি জয়ী টিম

ফ্লাইটে কলকাতা থেকে প্রায় জনা পনেরো সাংবাদিক যাচ্ছিলাম রাজকোট। কাকভোরের ফ্লাইট-যাত্রার দস্তুর হল হুড়মুড়িয়ে উঠে নিজের সিট দখল করে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া। কিন্তু সেদিন আমরা কেউই দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি।  টেনশন আর উত্তেজনার চোরাস্রোত ছিল সবার মধ‌্যে। কী টিম খেলানো উচিত? চেতেশ্বর পুজারার জন‌্য কী গেমপ্ল‌্যান তৈরি করা দরকার? টস জিতলে আগে ব‌্যাটিং না পরে– আড়াই ঘণ্টার বিমানযাত্রা জুড়ে যে আলোচনা চলেছিল, শুনলে যে কারও মনে হবে, বাংলা টিমের কোচিং স্টাফ বুঝি আমরাই! আসলে আমরা যারা এই রাজ‌্যে ক্রিকেট সাংবাদিকতা করি, তাদের কাছে বাংলা টিম শুধু একটা টিম নয়। একটা পরিবার। একটা আবেগ। যে পরিবারের সুখে আমরা হাসি। দুঃখে কাঁদি। টিম ভালো খেললে, এমনভাবে আমরা কলার উঁচিয়ে ঘুরে বেড়াই যেন প্লেয়াররা নন, আমরাই খেলেছি!

অনেক রাজ‌্যে ম‌্যাচ-কভার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশ্বাস করুন, নিজ রাজ‌্য নিয়ে এমন আবেগ বাংলা ছাড়া অন‌্য কোথাও দেখিনি। ২০১৯ সালের রনজি ফাইনালে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ‌্যাসোসিয়েশনের প্রেসবক্সের সিংহভাগটাই ছিল বাংলার সাংবাদিকদের দখলে। না, সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ফাইনাল আমরা জিততে পারিনি সেবার। কিন্তু শেষপর্যন্ত লড়াই করেছিল টিমটা। মনে হয়েছিল, ঠিক আছে। এবার না হয়, না-ই বা হল। কিন্তু বছর কয়েকের মধ‌্যেই স্বপ্নটা নিশ্চিত বাস্তবের মাটি ছুঁয়ে ফেলবে। হায় রে, তখন কী আর জানতাম সে আশা গুড়ে বালি!

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

আরও পড়ুন: একটা লোক কেমন অনন্ত বিশ্বাস আর ভালোবাসায় পরিচর্যা করে চলেছেন বঙ্গ ক্রিকেটের

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

কোভিড-পর্ব শেষে খেলাধুলো যখন আবার শুরু হল, আবার যখন শুরু হল রনজি, আবার ফাইনালে উঠল বাংলা! এই তো, গত বছরই। প্রতিপক্ষ সেই সৌরাষ্ট্র। স্থান এবার মনোজ তিওয়ারিদের নিজেদের ঘরের মাঠ– ইডেন গার্ডেন্স! মনে পড়ে,  দু’দিন আগে থেকেই উৎসবের চেহারা নিয়েছিল ইডেন। উন্মাদনার দিক থেকে রাজকোটের ফাইনালকে কয়েকশো গোল দেওয়া ততক্ষণে সম্পন্ন। আবহ এমন তৈরি হয়েছিল যে মনে হচ্ছিল, এবার রনজি আসছেই! চতুর্দিকে বলাবলি চলছিল, ঘরের মাঠে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এত ভালো রনজি জেতার সুযোগ বাংলা আর পাবে না। চেনা-পরিচিত অনেকের কাছ থেকেই ফোন-টোন পাচ্ছিলাম, কীভাবে মাঠে ঢোকা যাবে? খেলা দেখতে টিকিট লাগবে কি না। ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্ট কভারের সূত্রে তখন দিল্লিতে থাকলেও, বুঝতে পারছিলাম ফাইনাল ঘিরে বাংলার আবেগের সেনসেক্সটা ঠিক কোথায় গিয়েছে? টেস্ট ম‌্যাচের দিন সকালে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সমানতালে আরও একটা ম‌্যাচ চলছিল আমাদের, অর্থাৎ, বঙ্গ-সাংবাদিকদের মোবাইলে। সবার চোখ ছিল ‘হটস্টারে’, রনজি ফাইনালে। কিন্তু প্রথম দিনের শুরুর কালান্তক এক ঘণ্টাই শেষ করে দিল সব। পাঁচ-পাঁচটা উইকেট চলে গেল বাংলার। অতঃপর আরও একটা স্বপ্নের অপমৃত‌্যু।

Bengal falter in Ranji Trophy final again | Cricket News - Times of India
ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলা টিমের ব্যর্থতার চেনা দৃশ্য

কে জানত, বঙ্গ ক্রিকেটের অধঃপতনের বীজটার রোপন হয়েছিল সেদিনের ইডেন থেকে? যা বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে এবারের রনজিতে। গতবার রানার্স হওয়া দলের রনজি জয়ের স্বপ্ন এবার গ্রুপ পর্বেই শেষ। ‘নিয়মরক্ষা’র শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে বিহারের বিরুদ্ধে খেলছেন মনোজ তিওয়ারিরা। বাস্তবে যা খেলা নয়,  ‘ছেলেখেলা’! রোগীর মৃত‌্যু আগেই হয়েছে। ডেথ সার্টিফিকেটও লেখার কাজটাও শেষ। বাকি শুধু অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, যা শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে, ইডেনে বিহার ম‌্যাচে। ভাবলেও অবাক লাগে, যে টিম গত কয়েক বছর ধরে দুর্ধর্ষ ক্রিকেট খেলে এসেছে, তাদের কাছে এখন নকআউটের স্বপ্নটা দুঃস্বপ্নের মতো। টিম ঘরের মাঠে মুম্বইয়ের কাছে ইনিংসে হারে। কেরলে গিয়ে কুৎসিতভাবে আত্মসমর্পণ করে আসে।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

ঋদ্ধিমান সাহাকে একবার অধিনায়ক করার জন‌্য প্রচণ্ড চেষ্টা করেছিলেন সিএবির এক কর্তা। ঋদ্ধি একটা সময় তাঁর ক্লাবে খেলতেন। ওই কর্তার সঙ্গে ঋদ্ধির যথেষ্ট সখ‌্যতাও ছিল। একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল, ওই কর্তার কাছ থেকে অধিনায়কত্বের প্রস্তাব পাওয়ার পর ঋদ্ধি আর তা ফেরাতে পারবেন না। ঋদ্ধি শুধু একটা কথাই বলছিলেন, টিম নিয়ে  কোনও কম্প্রোমাইজ তিনি করবেন না। যাঁরা যোগ‌্য তাঁরাই শুধু সুযোগ পাবেন। মাসখানেক পর ঋদ্ধি আবিষ্কার করেন, তাঁকে কিছু না জানিয়ে অধিনায়ক করে দেওয়া হয়েছে অন‌্য একজনকে!

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

কেন কে জানে, বাংলার এ-হেন শনির দশা দেখতে-দেখতে এবার মুম্বই ম‌্যাচে ইডেন গ‌্যালারিতে ৭৫ বছরের সেই এয়ারপোর্টে আলাপ হওয়া ভদ্রলোককে খুঁজছিলাম। মনে হচ্ছিল, সাধের বাংলাকে দেখতে তিনি হয়তো এসেছেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাইনি। হয়তো আর জীবিত নেই। কিংবা আছেন। আর জীবিত থাকলে না এসে ভালোই করেছেন। এলে দেখতেনও বা কী? মুম্বই নিজেদের সেরা ১১ জন ক্রিকেটারকে ছাড়াও বঙ্গ-ক্রিকেটকে একরাশ লজ্জা উপহার দিয়ে যাচ্ছে? বাংলা টিম আর এখন পাতে দেওয়ার মতো ১১ জন ক্রিকেটারও খুঁজে পাচ্ছে না? টিম ম‌্যানেজমেন্ট অজুহাত তৈরি করেই চলেছে? কাটা-রেকর্ডের মতো বাজিয়ে যাচ্ছে, অভিমন‌্যু ঈশ্বরণ, আকাশ দীপ, মুকেশ কুমার, শাহবাজ আহমেদের মতো চারজন সেরা ক্রিকেটারকে ছাড়া খেলতে হয়েছে প্রায় গোটা মরশুম? মুশকিল হল, কে বোঝাবে এদের যে, মুকেশ-আকাশরা ভারতীয় দলের টেস্ট ডিউটিতে রয়েছেন। যা আদতে বাংলা ক্রিকেটের কাছে অতি গর্বের। কিন্তু তা না করে মরা-কান্না জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। মুম্বই টিম যদি তাদের সেরা এগারোজনকে ছাড়া গ্রুপ শীর্ষে থাকতে পারে, তাহলে বাংলা কেন চারজনকে ছাড়া নকআউটে যেতে পারবে না? কারণটা খুব সহজ। মুম্বই ক্রিকেট কর্তারা ক্রিকেট নিয়ে কোনও আপসের রাস্তায় হাঁটেন না। না হলে রোহন গাভাসকর কিংবা অর্জুন তেণ্ডুলকরদের নিজ রাজ‌্য ছেড়ে অন‌্যত্র গিয়ে রনজি খেলতে হয় না! আর আমাদের? অপমানে ঋদ্ধিমান সাহা, সুদীপ চট্টোপাধ‌্যায়ের মতো ক্রিকেটারকে রাজ‌্য ছাড়তে হয়। বেশি দূর পিছোতে হবে না। দিন দুয়েক আগেই সিএবিতে বসে প্রাক্তন এক নির্বাচক বিলাপ করছিলেন। বলছিলেন যে, নির্বাচক থাকার সময়ও দেখতেন দল নির্বাচনের সময় আপসের রাস্তায় হেঁটে করে কীভাবে দলে ‘অযোগ‌্য’  ক্রিকেটারকে ঢুকিয়ে নেওয়া হত। তিনি প্রতিবাদ করতেন। লাভ হত না। একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন।  ঋদ্ধিমানকে একবার অধিনায়ক করার জন‌্য প্রচণ্ড চেষ্টা করেছিলেন সিএবির এক কর্তা। ঋদ্ধি একটা সময় তাঁর ক্লাবে খেলতেন। ওই কর্তার সঙ্গে ঋদ্ধির যথেষ্ট সখ‌্যতাও ছিল। একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল, ওই কর্তার কাছ থেকে অধিনায়কত্বের প্রস্তাব পাওয়ার পর ঋদ্ধি আর তা ফেরাতে পারবেন না। ঋদ্ধি শুধু একটা কথাই বলছিলেন, টিম নিয়ে  কোনও কম্প্রোমাইজ তিনি করবেন না। যাঁরা যোগ‌্য তাঁরাই শুধু সুযোগ পাবেন। মাসখানেক পর ঋদ্ধি আবিষ্কার করেন, তাঁকে কিছু না জানিয়ে অধিনায়ক করে দেওয়া হয়েছে অন‌্য একজনকে!

webdunia
ঋদ্ধিমান সাহা

কেউ কেউ আজ বলেন, বাংলা ক্রিকেট নাকি এখন দুর্নীতির আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে। পুরোটা না হলেও আংশিক সত‌্য তো বটেই। না হলে কোনও সিএবি কর্তা বাংলা টিমে ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের ক্লাবে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারকে বিনা পয়সায় খেলিয়ে দেন কখনও? দ্বিতীয় ডিভিশনের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে ক্রিকেট কম, টাকা বেশি। কিছু সংখ‌্যক ক্লাব আছে, যার কর্তারা আজও মন-প্রাণ দিয়ে সর্বস্ব উজাড় করে ভাল টিম গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাকিরা? ময়দানে কানাঘুষো শোনা যায়, অধিকাংশ কর্তাই একটা অঘোষিত নিয়ম চালু করে দিয়েছেন, ‘টাকা দাও, টিমে জায়গা পাও।’  যে ক্রিকেটের সিস্টেমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এত ঘুণপোকার বাস, সেখানে ভালো কিছুর আশা করা বাতুলতা ছাড়া আর কিছু নয়। মাঝে এক ফুটবল সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ভদ্রলোক বলছিলেন, বঙ্গ-ক্রিকেটের এত করুণ দশার পরও প্রতিবাদ হয় না কেন? সবার মধ‌্যে থেকে প্রতিবাদী-সত্তা কেন হারিয়ে যাচ্ছে? আসলে ফুটবল কর্তাদের মধ‌্যে সবসময় একটা ভীতি কাজ করে। তাঁরা জানেন, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গেল খারাপ খেললে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়বে। ক্রিকেটে সে-সব কোথায়! আর সেটা ক্রিকেট কর্তারা জানেন বলেই আপস করতে দু’বার ভাবেন না! বাংলা ক্রিকেটে আগেও এ-জিনিস ঘটেছে। কিন্তু তখন প্রথম এগারো নিয়ে কোনও আপস হত না। আর এখন? এগারোর মধ‌্যে দু’জন একেবারে ঠিকঠাক। বাকি পুরোটাই অপরিস্রুত জল। কতটা অবক্ষয় হলে এ জিনিস ঘটতে পারে, বলতে পারেন?

অগত‌্যা, আশায় মরে চাষার মতো অবস্থা হয়েছে আমাদের, সাংবাদিকদের। ম‌্যাচের মাঝে সাংবাদিক-সত্তার মৃত‌্যু ঘটিয়ে আদ‌্যোপান্ত সমর্থক হয়ে গ‌্যালারি থেকে আমরা এখনও গলা ফাটাই টিমের জন‌্য। ভিন-রাজ‌্যের কোনও সাংবাদিক সোশ‌্যাল মিডিয়ায় বাংলা ক্রিকেট নিয়ে কু-মন্তব‌্য করলে, তার প্রতিবাদে সর্বাত্মকভাবে আজও ঝাঁপিয়ে পড়ি আমরা। প্রত‌্যেকটা মরশুমের পর নতুন মরশুমের জন‌্য প্রহর গুনতে শুরু করে দিই। ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি প্রকাশের পর অতি আগ্রহে খুঁজতে থাকি, কবে-কবে ঘরের মাঠে খেলবে বাংলা। কেউ কেউ আবার ছুটির দিনও প্রেমিকাকে মিথ‌্যে বলে ছুটে যায় ইডেনে। স্রেফ বাংলার টানে। বাংলাকে ভালোবেসে। কিন্তু পরিবর্তে কী পায় তাঁরা? যন্ত্রণা, একরাশ যন্ত্রণা।

ঠিকই আছে। পাওয়া উচিতও। দিন যায়। মাস যায়। বছর যায়। মানুষ বদলায়। জীবন বদলায়। বদলায় না শুধু বাংলা ক্রিকেট। আর বদলাই না আমরা। বাংলা ক্রিকেট কভার করা সাংবাদিকরা। বারবার আমরা ফিরে আসি। শেষে ফিরে যাই অবহেলায় পোড়া কাঠের মতো। যা প্রাপ‌্য আমাদের, আলবাত প্রাপ‌্য।

সহস্র বারেও শিক্ষা না হলে নিয়তি আর খণ্ডাবে কে?