Robbar

দিল্লি-দূষণের আসামি তন্দুরি! নেপথ্যে আমিষে অ্যালার্জি?

Published by: Robbar Digital
  • Posted:December 18, 2025 9:11 pm
  • Updated:December 19, 2025 1:04 am  

প্রশ্নটা হল, দিল্লির সরকারের কি আমিষে অ্যালার্জি? এ তো নতুন তথ্য নয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বারেবারেই এই দেশকে একরকম, একমুখী করে তোলার চেষ্টা চলছে। তা ভাষার দিক দিয়ে হোক বা খাদ্যরুচিতে। ভারতের যে বৈচিত্র, তার মূলে বারবার আঘাত হানার কসরতই কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য। তবে কি দিল্লির দূষণকে আঁকড়ে ধরে আমিষপ্রেমীদের স্বাদের মানচিত্রে কোপ মারাই তন্দুর ব্যানের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়?

রোববার ডিজিটাল ডেস্ক

শীতকাল এবং দূষণ– রাজধানীতে প্রায় সমার্থক। এসব নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা, উত্তর সম্পাদকীয়র কালি খচ্চা হয়েছে নিশ্চয়ই। কোনও পথ কি পাওয়া গিয়েছে? না, কেবলই কুয়াশা। কেবলই ত্রস্ত নীলিমা। মাঝে-সাঝে অবশ্য কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রসঙ্গ ওঠে। দূষণবাবু খানিক জিরিয়ে, আবার বীরবিক্রমে কামব্যাক করেন। তাই বলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায়? সত্যানুসন্ধানে ব্যোমকেশ বক্সী না হলে কী লাভ! ‘দিল্লি পলিউশন কনট্রোল কমিটি’ দূষণের কান মুলে পেট থেকে বের করেছে সারসত্যখানি। জানিয়েছে, যত নষ্টের গোড়া একটি খাবারের নির্মাণ। তা হল– তন্দুর! কাঠগড়ায় কয়লা এবং কাঠ– যা ছাড়া মাংস তেমন উচ্চাঙ্গের হয় না বলেই লোকবিদিত। তন্দুর রান্নার ঐতিহ্যের সঙ্গেও এ বস্তুগুলি জড়িয়ে আছে বটে। তবে ঐতিহ্যকেও এই দূষণ পরিবহে ঝেড়ে ফেলাই যায়, যদি তা প্রকৃতপক্ষে আসামি হয়ে থাকে। কিন্তু আদপে দোষী, নাকি নিষিদ্ধ করার নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ ঘাই মারছে?

দিল্লিতে ইতিমধ্যেই অ্যাকশন শুরু। গ্যাস-ওভেন এমনকী, রান্নাঘরের আধুনিক আইটেম নাম্বার ‘এয়ার ফ্রায়ার’ ব্যবহার করতে উপদেশ দিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু রাস্তার ওপরের ছোট ঠেলা-দোকানের পক্ষে সেসব বাগাড়ম্বর কি রাতপরিরা এনে দেবে? যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা দূষণের নেপথ্যে তন্দুরকে দায়ী করেছেন, তিনিই তো মাস কয়েক আগে বলেছেন, ‘আতসবাজি ছাড়া দীপাবলি ফাঁকা ফাঁকা লাগে।’ আতসবাজির থেকেও পরিবেশের পক্ষে বেশি ক্ষতিকর তন্দুর রান্না?

অরবিন্দ কেজরিওয়াল দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে-পদ্ধতি আওড়েছিলেন, তাতেও ‘ব্যান’ অবধারিত ছিল। সিগনাল লাল হলে গাড়ি বন্ধ করে রাখা, কনস্ট্রাকশন বন্ধ রাখা এবং অবশ্যই আতসবাজির ওপর কোপ পড়েছিল। আদপে কতটা কী হয়েছিল, তার থেকে এখন প্রশ্ন, কোন পদ্ধতিটি ঠিক? তন্দুর নিষিদ্ধকরণ, নাকি কেজরিওয়াল-পদ্ধতি? তবে সকলেই একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটি কার্যকরী হোক না হোক, ‘ইউনিক’ বটে!

এমন আশ্চর্য উপদেশে স্বাভাবিকভাবেই নেটিজেনদের মশকরার শিকার দিল্লি সরকার। কেউ কেউ বলছেন, রাস্তায় জ্যামের জন্য সাইকেল নিষিদ্ধ করা আর দিল্লির দূষণের জন্য তন্দুর নিষিদ্ধ করা– ব্যাপারখানা একই। জরুরি প্রশ্নটা অবশ্য এহেন সোশাল মিডিয়ার লাইক-কমেন্ট-শেয়ার গোছের মশকরায় লুকিয়ে নেই। প্রশ্নটা হল, দিল্লির সরকারের কি আমিষে অ্যালার্জি? এ তো নতুন তথ্য নয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বারেবারেই এই দেশকে একরকম, একমুখী করে তোলার চেষ্টা চলছে। তা ভাষার দিক দিয়ে হোক বা খাদ্যরুচিতে। ভারতের যে বৈচিত্র, তার মূলে বারবার আঘাত হানার কসরতই কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য। তবে কি দিল্লির দূষণকে আঁকড়ে ধরে আমিষপ্রেমীদের স্বাদের মানচিত্রে কোপ মারাই তন্দুর ব্যানের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়?

মাত্র কিছু মাস আগে দিল্লির ‘মিনি কলকাতা’– চিত্তরঞ্জন পার্কে মাছ ব্যবসায়ীদেরও রক্তচক্ষু দেখিয়ে গিয়েছে একদল বিশেষ ধর্মের ঝাণ্ডাধারী। ধ্বজাধারীদের বক্তব্য: সেখানে মাছ বিক্রি করা যাবে না। রাজধানীর বাঙালি পাড়ায় মাছ বিক্রি অবশ্য বন্ধ হয়নি। মাছে-ভাতে দিল্লির বাঙালিরা ভালোই আছেন। তন্দুরিপ্রেমীদের পরিস্থিতি কী হবে, তা অবশ্য সময় বলবে। তবে আতসবাজিপ্রেমীরা এই নিষিদ্ধকরণে খানিক বাজি ফাটাবেন নিশ্চিত!