এই মাসের মাঝের দিকে শিয়ালদা ডিভিশনের লোকাল ট্রেনগুলোতে মহিলা বগির সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে প্রবল বিক্ষোভ দেখান পুরুষ যাত্রীরা। তাঁদের দাবি, এতে তাঁদের জায়গা অকুলান হবে। এরপরেই সম্পূর্ণ মহিলাদের জন্য মাতৃভূমি স্পেশালের তিনটে বগি খুলে দেওয়া হয় পুরুষদের জন্য। মাতৃভূমি স্পেশাল নিয়ে পুরুষদের ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে মাতৃভূমি স্পেশাল নিয়ে নানারকম নারীবিরোধী কু-মন্তব্যরই প্রতিফলন। এবার সেই পুরুষরা নিজেদের ‘জয়ী’ ভাববেন।
আম্বেদকর বলেছিলেন, ‘A Caste is An Enclosed Class’. ভারতীয় সমাজ যদি একটি বহুতল আবাসন হয় যেখানে প্রতিটি তলা একেকটি কাস্ট, যে-বহুতলের একটি তলা থেকে অন্য তলায় পৌঁছনোর সব রাস্তা বন্ধ তবে একটি ভারতীয় ট্রেন হল চলন্ত ভারতীয় শ্রেণিব্যবস্থার রূপ। একটি বগি এক একটি শ্রেণি। এসি প্রথম শ্রেণি, এসি দ্বিতীয়, এসি তৃতীয়, এসি ইকোনমি, স্লিপার, জেনারেল, দিব্যাঙ্গ আর লেডিস যা প্রায় মানুষ উচ্চারণে বলেন ‘লেডিজ’।
পরপর সাজানো ডাব্বা জোড়া লেগে হয় রেলগাড়ি। এই সমাজের মতো। প্রথম শ্রেণিতে যাতায়াত করেন নেতা, মন্ত্রী কিংবা বিমানে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার সুবিধে নেই বলে অনিচ্ছুক বড়লোক। এসি দ্বিতীয় শ্রেণির মধ্যে কেমন জানি একটু নিশ্চিন্ত নিশ্চিন্ত ভাব। আর্থিক নিশ্চয়তার হাত ধরে যে নিশ্চয়তা আসে। পুরো গ্রামের মধ্যে থাকা সেই দালান বাড়ির মতো। যে বাড়ি নাক উঁচিয়ে, ভেংচি কেটে তলানিতে থাকা বাড়িগুলোর রোজকার অভাব, অনটন অনিশ্চয়তাকে মাড়িয়ে নিশ্চিন্তে উঁচু হয়ে থাকে।
তারপর এসি তৃতীয় শ্রেণি। যে শ্রেণি একটু থিতু হতে চাইছে বা পেরেছে। আপওয়ার্ড মবিলিটি-র হাত ধরে নতুন সাদা বেডশিটে শুয়ে ভাবছে আর একটু নিশ্চয়তা হলে ভালো হয়।
এই শ্রেণি হয়তো দ্বিতীয় শ্রেণির নিশ্চয়তা বা ট্রেনের মধ্যেই সম্পূর্ণ অন্য এক জগতে বাস করা প্রথম শ্রেণির কু বা কেবিনের অভেদ্য ক্লাস সুপরিওরিটির নিশ্চয়তা নেই তবে এই শ্রেণি স্বপ্ন দেখে সেই নিশ্চয়তার, সেই অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের। যে অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বর জন্য আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক মানুষকে ঝড় থেকে নোটবন্দি কিছুই ছুঁতে পারে না। রেলের তৃতীয় শ্রেণির বগি সমাজের সেই শ্রেণির প্রতিফলন যারা সদ্য শ্রেণির সিঁড়িতে উপরে উঠেছে, নিশ্চয়তা আছে কিন্তু ঝড়, জল, নোটবন্দিতে সম্পূর্ণ ইমিউন নয়।
………………………………
লেডিস কামরা যেন নারীদের পৃথিবীর মাইক্রোজম। নানারকম গল্পে মশগুল নারীদের নিজেদের আস্তানা। ছুটতে ছুটতে ট্রেন ধরতে গিয়ে ব্লাউজের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা ব্রেসিয়ারের ফিতে ঠিক করার অতি সচেতনতা নেই, নেই আঁচল ঠিক করার দায়। মাসিক থেকে স্বামীর সঙ্গে সুখভোগ– সবের গল্পে গমগম লেডিস কামরা বা লেডিজ বগি।
………………………………
গরম ঠান্ডায় উদাসীন সম্পূর্ণ বাতানুকূল বগির পরে এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকে স্লিপার বগি। ‘স্লিপার’ নাম রেখেছিল কেন কী জানি! যদি স্লিপ বা ঘুম থেকে স্লিপার এসে থাকে তবে এর থেকে মিসনোমার আর হয় না। ব্যাগ সিটের তলায় রেখে শিকল হাতে নিয়ে বসে থাকেন অতিরিক্ত সাবধানী যাত্রী। সারাক্ষণ কেউ নামছে, কেউ উঠছে আর তারস্বরে চা-এএএ, চা -এএএ… চলছেই। আর তারই সঙ্গে গোটা বগি জুড়ে বাড়ি থেকে আনা নানা রকম খাবারের গন্ধ। পাশাপাশি বসে গল্প যেন পড়ার রকের মতো কিংবা বিয়েবাড়ি। বয়স অনুযায়ী বন্ধু খুঁজে আলাপ। স্লিপার শ্রেণি সেই টিকে থাকা বাঙালি শহরতলি কিংবা গ্রামের সেইসব পাড়াগুলো যাতে বিভাজন আছে, কিন্তু সবার যাত্রা এক– শ্রেণিগত অবস্থানও এক বা খানিকটা একরকম।
স্লিপারের গা ঘেঁষে থাকে জেনারেল বা সাধারণ শ্রেণি– আমজনতা শ্রেণি। সমাজের সাধারণ শ্রেণির মতোই ট্রেনের এই সাধারণ শ্রেণির অবস্থান। আমজনতা– যার দায় নেই কর্তৃপক্ষের। টয়লেটের গন্ধ, গুটখার পিক, বাড়ি থেকে আনা খাবার, ঠাসাঠাসি করে বসে বা দাঁড়িয়ে একজনের ঘামে সিক্ত আরেকজন। তার মধ্যেই তারস্বরে চেঁচিয়ে ফোন– কে এই জেনারেলে যায় মরতে, হঠাৎ প্ল্যান তাই– যেন আমি এই শ্রেণির নই, আমি ময়ূর বোঝানোর চেষ্টা!
জেনারেল বা সাধারণ বগির শেষে লেখা থাকে ‘ডিসেবিলিটি’ আর বর্তমানে শাসক দলের হাত ধরে সব জায়গায় কলকে পাওয়া ভাষা হিন্দিতে লেখা ‘দিব্যাঙ্গ’।
কিছু বছর আগেও লেখা থাকত ‘বিকলাঙ্গ’। ২০১৮ সাল থেকে সেটি পরিবর্তিত করে করা হয় ‘দিব্যাঙ্গ’। কিন্তু নামে আর কী বা যায় আসে! দিব্যি টিকে আছে সেই মানসিকতা। এখনও হকার থেকে সাধারণ যাত্রী সবার মুখে এক কথা– হ্যান্ডিক্যাপ কামরা বা বিকলাঙ্গ কামরা!
জেনারেল ও বিকলাঙ্গ বগির শেষে একদম শেষ প্রান্তে সাধারণত থাকে লেডিস বগি। আর যেন প্রান্তের প্রান্তিক ডাব্বায় লিঙ্গ, যৌনতার ভিত্তিতে প্রান্তিক মানুষের স্থান– মহিলা কম্পার্টমেন্ট। বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকা ‘মহিলা’। এটা এক্সপ্রেস ট্রেনের জগৎ। ট্রেনের প্রান্তে থাকা এই কামরা হল প্রান্তিক নারীদের জিয়নকাঠি। লেডিস কামরা যেন নারীদের পৃথিবীর মাইক্রোজম। নানারকম গল্পে মশগুল নারীদের নিজেদের আস্তানা। ছুটতে ছুটতে ট্রেন ধরতে গিয়ে ব্লাউজের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা ব্রেসিয়ারের ফিতে ঠিক করার অতি সচেতনতা নেই, নেই আঁচল ঠিক করার দায়। মাসিক থেকে স্বামীর সঙ্গে সুখভোগ– সবের গল্পে গমগম লেডিস কামরা বা লেডিজ বগি।
উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের চলাচল করে যে এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো সেই ট্রেনগুলোর মহিলা বগি ভর্তি থাকে অতি ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ীদের ভিড়ে। সেইসব মহিলা যাঁদের জীবনযুদ্ধ প্রতিদিন তাঁদের হারিয়ে দিতে চায় কিন্তু তারা টিকে থাকে কোনওভাবে। দিনহাটার সবজি এঁরা নিয়ে যান শিয়ালদায়, আবার শিয়ালদা থেকে সবজি নিয়ে কোচবিহার। মাঝে কোথাও নিজেদের জন্য রান্না। প্লাস্টিকের প্যাকেটে সেই খাবার ভরে ট্রেনেই খাওয়া, ট্রেনেই ঘুম। উত্তরবঙ্গে লোকাল ট্রেন নগণ্য। এক্সপ্রেস ট্রেনের গার্ড থেকে পুলিশ সবার সঙ্গে কোনওরকমে বোঝাপড়া করে, ঝগড়া করে কিংবা দু’চারটাকা চা-পানির ব্যবস্থা করে এই সবজিওয়ালা দিদিগুলো ছোটে। বাড়িতে অসুস্থ পরিবার কিংবা পড়াশোনার টাকা জোগানোর দায়। পুলিশ আসতে দেখলেই বস্তা সরিয়ে রাখা ট্রেনের টয়লেটে কিংবা সিটের নীচে। মহিলা বগি মহিলাদের রোজকার জীবন সংগ্রামের রোজনামচা।
উত্তরবঙ্গের থেকে বেশ আলাদা দক্ষিণবঙ্গের ট্রেন ব্যবস্থা। লোকাল ট্রেনগুলো দক্ষিণের যাতায়াত ব্যবস্থার ফুসফুস। শুধুমাত্র শিয়ালদা ডিভিশনের উপর নির্ভর করে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। এই ১৮ লাখের মধ্যেই প্রায় ২৫% মহিলা যাত্রী। মহিলা যাত্রীদের কথা মনে করে চালানো শুরু হয় ‘মাতৃভূমি লোকাল’ ট্রেনকে যে ট্রেনকে সাধারণ মানুষ বলে ‘লেডিস স্পেশাল’। সেই মাতৃভূমি ট্রেনের তিনটে কামরা এবার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল জনসাধারণের জন্য অর্থাৎ লিঙ্গনিরপেক্ষ ভাবে সকল মানুষই যাত্রা করতে পারবেন সেই কামরায়।
এই মাসের মাঝের দিকে শিয়ালদা ডিভিশনের লোকাল ট্রেনগুলোতে মহিলা বগির সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে প্রবল বিক্ষোভ দেখান পুরুষ যাত্রীরা। তাঁদের দাবি, এতে তাঁদের জায়গা অকুলান হবে। এরপরেই সম্পূর্ণ মহিলাদের জন্য মাতৃভূমি স্পেশালের তিনটে বগি খুলে দেওয়া হয় পুরুষদের জন্য। মাতৃভূমি স্পেশাল নিয়ে পুরুষদের ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে মাতৃভূমি স্পেশাল নিয়ে নানারকম নারীবিরোধী কু-মন্তব্যরই প্রতিফলন। এবার সেই পুরুষরা নিজেদের ‘জয়ী’ ভাববেন।
সম্পূর্ণ নারীদের জন্য ট্রেন! সারাজীবন ব্রাত্য করে রাখা নারীর জন্য সম্পূর্ণ একটা ট্রেন– এই ঈর্ষায় জ্বলছিল পুরুষ যাত্রীরা। আর সেই পিতৃতান্ত্রিক ঈর্ষার দহনে দগ্ধ নারী খুঁজে পেয়েছিল নিজেদের জায়গা মাতৃভূমি স্পেশালে। অনাকাঙ্খিত ঘষা, ঘাড়ের উপর অস্বস্তিকর হাত, পিছনে বিরক্তিকর ছোঁয়া, লোলুপ ‘মেল গেজ’ বা পুরুষের লোভী নজর বাঁচিয়ে নারীরা নিজেদের কাজের জায়গায় ছুটছিলেন মাতৃভূমি লোকালের ভরসায়। সেই স্পেশালের তিনটে বগি পুরুষদের অর্থাৎ রেল কর্তৃপক্ষের ভাষায় সাধারণের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসলে আরও একবার নারীদের স্থান দখল করে নেওয়া। নারীদের স্বাচ্ছন্দ্যে হানাদারি। শুধুই স্বাচ্ছন্দ্য নয়, লেডিস স্পেশাল নারীদের স্বাধীনতায় হানা দেওয়া।
দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষযাত্রীর সামনে দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে যাবে লেডিস স্পেশাল– এ আর কাঁহাতক সহ্য হয় পৌরুষের? ‘পুরুষ’ তো আর সেকেন্ড হতে শিখেনি, শেখে না। তাকে প্রথম হতেই হবে, যে করেই হোক। তাই নিজেদের জন্য বগি বাড়ানোর দাবি করা সেই বীরপুরুষরা সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি দিতেও ছাড়ে না! জিততে তো তাকে হবেই– বারবার হেরেও জীবন জিতে নেওয়ার মন্ত্র পুরুষ আর শিখতে পারল কই! পুরুষ চেনে না রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্র তাকে পারত অন্য ট্রেনে কামরা বাড়াতে। পুরুষের মহিলাদের জায়গাটাই চাই– তাই বেদখল মহিলাদের হাত থেকে তিনটে কামরা।
লোকাল ট্রেনে এমনিতেই সংরক্ষিত আসনকে মানে না আমজনতা। ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তে মহিলা কামরায় দৌড়ে উঠে পড়ে পুরুষ সহযাত্রী। লেডিস কামরার সামনে তারা অপেক্ষা করে। ট্রেন ছেড়ে দিলে তারা ঝাঁপিয়ে উঠে পড়ে। সেই সময় তো আর লড়াই করা যায় না। বলা যায় না যে নেমে পড়ুন। কেন উঠেছেন জিজ্ঞেস করলে সবারই মুখে এক কথা– লেডিস কামরা তুলনামূলক ফাঁকা থাকে। আরাম করে যাওয়া যায়। প্রশ্ন হল, জায়গার যদি এতই সংকুলান, তাহলে কেন জোট বেঁধে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানায় না পুরুষেরা। কেন ছিনিয়ে নিতে হবে মেয়েদের বরাদ্দ থেকেই?
কেন জায়গা থাকতেও লেডিস কামরাতেই উঠতে হবে, এর পক্ষে যে যুক্তি দেয় এই পুরুষ সহযাত্রীরা, তা বেশ মজার ও প্রত্যাশিতও বটে। তারা বলে, মেয়েরা তো সমানাধিকারের জন্য লড়ছে, তাহলে কেন সংরক্ষিত আসন থাকবে তাদের জন্য? কেন সংরক্ষণ প্রয়োজন– এর উত্তর বহুবার দেওয়া হয়েছে, তবুও সেটা কানে তোলেনি কেউ। সংরক্ষণ প্রয়োজন কারণ সমানাধিকার এখনও মেলেনি। সংরক্ষণ প্রয়োজন কারণ লড়াইয়ের মাঠ থেকে, অধিকারের প্রশ্ন থেকে আমরা বাতিল প্রথম থেকেই। সংরক্ষণ প্রয়োজন কারণ আমাদের অস্তিত্বকেই প্রথমে প্রমাণ করতে হয়, তাই। সংরক্ষণ প্রয়োজন কারণ আমরাও যে রোজগেরে, আমরাও যে শ্রমের দুনিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক, সেটা আগে জানানো দরকার। আমাদের পথে-ঘাটে বেরনোর অধিকার, নিত্যযাত্রার অধিকার আগে প্রতিষ্ঠা করতে হয়, প্রতিষ্ঠা করতে হয় যে, ট্রেনে-বাসে আমরা চড়ব ও সিটেও বসব। গণপরিবহণে আমাদেরও অধিকার আছে, গণপরিবহণের আসন আমাদের জন্যও বরাদ্দ।
ট্রেনের বা বাসের আসন আমাদের থেকে কেড়ে নেওয়া হল, কিন্তু আমাদের রোজগারের, শ্রমিক হওয়ার আদর্শে আমরা এক পা-ও পিছইনি। তাই আবারও ফিরিয়ে আনব গণপরিবহণে আমাদের জন্য বরাদ্দ আসন, লেডিস স্পেশাল, মহিলা কামরা, মহিলা আসন।
‘চঞ্চল, চক্ষুময় অফিসে’ মেয়েরা কীভাবে, কতটা মানিয়ে নিলেন? রোজকার বোঝাপড়া, সংগ্রামের ধরন তাঁদের কেমন ছিল? আর তাঁরা যখন বাসে, ট্রামে ভিড় ঠেলে অফিস বা কলেজে যেতেন, সেই অভিজ্ঞতাই বা কেমন ছিল তাঁদের? যেসব পরিবারের মেয়েরা চাকরিতে যোগ দিলেন, সেই পরিবারের দিন যাপনের ছন্দ কী সামান্য হলেও পাল্টায়নি?