Robbar

পুরুষের দেওয়া অস্ত্র বাতিল করে আজকের দুর্গার অস্ত্র আত্মবিশ্বাস

Published by: Robbar Digital
  • Posted:October 4, 2023 8:26 pm
  • Updated:September 20, 2025 6:10 pm  

‘মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু’– একথা প্রচলিত। কিন্তু একজন নারীকে একমাত্র নারী-ই বোঝে। পুরুষ কখনও তাকে বুঝতে পারেনি, বুঝতে চায়নি। মা দুর্গাকে বলা হয় নারীশক্তির প্রতীক। দেবীর শক্তির বিভিন্ন রূপ যুগ যুগ ধরে নারীর মধ্যে সঞ্চারিত। আজকের দুর্গারা কেউ সিংহবাহিনী নয় ঠিকই, কিন্তু অসুরবিনাশিনী তারা সর্বক্ষেত্রে।

রিংকা চক্রবর্তী

যিনি দুর্গতিনাশ করেন, তিনিই দুর্গা। মহিষাসুরকে নিধন করার জন্য দরকার হয়েছিল একজন নারীর। দেবতারা যখন অসুরদের ভয়ে তটস্থ, স্বর্গের রাজ্যপাট হারাতে বসেছেন, সে-সময় দুর্গার সৃষ্টি। তাঁর সৃষ্টি বিষ্ণুর দ্বারা, যিনি একজন পুরুষ। দুর্গার দশটি হাত দশটি অস্ত্রধারণের জন্য। এই দশটি অস্ত্র তাঁকে দেন দেবতারা। অদ্ভুতভাবে সেই দেবতাদের মধ্যে কিন্তু কোনও নারী ছিল না। অর্থাৎ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিয়মে যেভাবে বাড়ির মাথা একজন ‘পুরুষ’ বলে মান‌্যতা পেয়েছে, তার দেখানো পথেই আলোকিত হবে নারীর জীবন, তেমনই শাস্ত্রেও সেই নিয়মের ব‌্যত‌্যয় ঘটেনি।

 

‘মহানগর’ (১৯৬৩) সিনেমার পোস্টার। শিল্পী: সত্যজিৎ রায়

কিন্তু আত্মসম্মান এবং আত্মবিশ্বাস নারীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র, চলার পথের শক্তি।পরনির্ভরশীলতার শিকল ভাঙাই নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন। নারী একদিকে দয়া, সহিষ্ণুতা, ভালবাসা, ক্ষমা ইত্যাদি ভাবের প্রতিমূর্তি, অন্যদিকে নারী পারে সবরকম অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। মা দুর্গা ও অসুরের যুদ্ধ যেন সেই ভাবেরই প্রতিভূ। নারীর অসীম ক্ষমতা সে ক্ষমা করতে পারে। সহমর্মিতা বোধ তার প্রবল। মনখারাপে কান্না তার দুর্বলতা নয়। বরং তার মনের শক্তি যে, সে তার অনুভূতি সহজভাবে প্রকাশ করতে পারে। যেটা পুরুষ পারে না। কারণ তাকে ছোট থেকে শেখানো হয়, পুরুষ ‘মেয়েদের মতো’ কাঁদে না। ঠিক যেমন ভাবে নারীকে বানানো হয়েছে ‘ওয়ান উওম‌্যান আর্মি’। যে দক্ষতার সঙ্গে ঘর-বাহির সামলাবে। অতিমানবী তো সে হতে চায়নি! পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এই তকমা তাকে দিয়েছে। ‘সুপার উওম‌্যান’ নামক সামাজিক ঢঙের আড়ালে সুকৌশলে সংসারের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। অধিকাংশ পুরুষ চায় না, নারী আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মনির্ভরশীল হোক। নারী তার অনুগত হবে, সংসার সামলাবে, সন্তানপালনের প্রধান দায়িত্ব তো তারই! এটাই নারীর প্রকৃত পরিচয়।

‘মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু’– একথা প্রচলিত। কিন্তু একজন নারীকে একমাত্র নারী-ই বোঝে। পুরুষ কখনও তাকে বুঝতে পারেনি, বুঝতে চায়নি। মা দুর্গাকে বলা হয় নারীশক্তির প্রতীক। দেবীর শক্তির বিভিন্ন রূপ যুগ যুগ ধরে নারীর মধ্যে সঞ্চারিত। আজকের দুর্গারা কেউ সিংহবাহিনী নয় ঠিকই, কিন্তু অসুরবিনাশিনী তারা সর্বক্ষেত্রে। আজকের দুর্গারা নিজের দক্ষতা, কর্মক্ষমতায় নিজেকে প্রমাণ করেছে। নারী কখনও বীরাঙ্গনা, কখনও বা স্নেহময়ী। আবার নিজের মর্যাদা পাওয়ার জন্য লড়াই করতেও জানে। নিজের অস্তিত্ব বুঝিয়ে দিতে পিছপা হয় না। পুরুষতন্ত্রর বিরুদ্ধে একা লড়ার সাহস রাখে। নারীর এহেন রূপ যেন দেবী দুর্গার নবরূপের সমান।