Robbar

অসম্ভবের ছন্দ আমাদের শিখিয়েছিলেন শচীন

Published by: Robbar Digital
  • Posted:April 24, 2024 7:05 pm
  • Updated:April 24, 2024 7:05 pm  

ক্রিকেটের এই সীমারেখাকে ছাপিয়ে মানুষ শচীনের ব্যাপ্তি আরও বিশাল। তাই শুধু ক্রিকেট কিংবদন্তি হিসেবে তাঁর ৫১তম জন্মদিনের উদযাপন কাম্য নয়। শচীনের জন্মদিন আসলে এক অনমনীয় সত্তার উদযাপন, যা আমাদের শিখিয়েছে ‘ইমপসিবল ইজ নাথিং’। তাই শচীনের সঙ্গে কারও তুলনা চলে না। এমনকী, ডনেরও নয়।

প্রচ্ছদের ছবি: সনাতন দিন্দা

বোরিয়া মজুমদার

একজন ব্যাটারের একশো শতরানের বিশালত্বকে আপনি কীভাবে মাপবেন? এমন দুর্লভ প্রাপ্তির কি আদৌ কোনও ব্যাখ্যা চলে? কীভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব সেই অতিমানবিক ক্রিকেটারের, যিনি তুলনারহিত?

শচীন তেণ্ডুলকর, সেই ক্রিকেট-জ্যোতিষ্ক, যাঁর তুলনা চলে না।

শুধু উদযাপন চলে তাঁর এবং তাঁর সৃষ্ট ক্রিকেটকীর্তির। কিন্তু রক্তমাংসের এই পৃথিবী সহজে ক্ষান্ত হয় না। শচীন নামক বিরল প্রতিভার তল খুঁজে পেতে ডুবুরি সাজে। বিচারসভায় বসে তাদের কল্পনাপ্রবণ মন অভিনব কিছু কীর্তির সঙ্গে তুলনা টেনে বুঝতে চায় সেই ক্রিকেটীয় মহাবিস্ময়কে। দুর্ভাগ্য, শচীনের শ্রেষ্ঠত্বকে ব্যাখ্যা করার করার জন্য, তাঁর কীর্তির উচ্চতাকে পরিমাণের জন্য যথাযোগ্য তুলনা পাওয়া ভার। নিকটতম তুলনা যা কিছু মেলে, সেটাও ক্রিকেটের পরিসর থেকে নয়, অ্যাথলেটিক্স থেকে। শচীনের ২০০ টেস্ট, শতকের শতরানের তুলনার খুব কাছাকাছি আসতে পারেন ’৬৮-র বব বিম্যান, তাঁর লং জাম্প বিশ্বরেকর্ডের হাত ধরে। চার দশক অটুট ছিল সেই রেকর্ড। কিংবা ১০০ মিটারে উইসেন বোল্টের কীর্তি। এগুলোকে একটা কথায় ব্যাখ্যা করা যায়– ‘অবিশ্বাস্য’। এমন অবিস্মরণীয় রেকর্ডের কথা বলতে গেলে মনে পড়বে ১৯২৭-এ বেব রুথের হোম রানের নজির, মিউনিখে মার্ক স্পিৎজের সাত সোনার কৃতিত্ব, বেজিংয়ে মাইকেল ফেল্পস, মন্ট্রিয়লে নাদিয়া কোমানেসির ‘পারফেক্ট টেন’। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীনের ১০০ শতরান, এসব কৃতিত্বের শীর্ষে থাকবে চিরকাল, অবিসংবাদিতভাবে।

Cricket's Sachin Tendulkar Announces Retirement | WAMU

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

শচীনের ২০০ টেস্ট, শতকের শতরানের তুলনার খুব কাছাকাছি আসতে পারেন ’৬৮-র বব বিম্যান, তাঁর লং জাম্প বিশ্বরেকর্ডের হাত ধরে। চার দশক অটুট ছিল সেই রেকর্ড। কিংবা ১০০ মিটারে উইসেন বোল্টের কীর্তি। এগুলোকে একটা কথায় ব্যাখ্যা করা যায়– ‘অবিশ্বাস্য’। এমন অবিস্মরণীয় রেকর্ডের কথা বলতে গেলে মনে পড়বে ১৯২৭-এ বেব রুথের হোম রানের নজির, মিউনিখে মার্ক স্পিৎজের সাত সোনার কৃতিত্ব, বেজিংয়ে মাইকেল ফেল্পস, মন্ট্রিয়লে নাদিয়া কোমানেসির ‘পারফেক্ট টেন’। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীনের ১০০ শতরান, এসব কৃতিত্বের শীর্ষে থাকবে চিরকাল, অবিসংবাদিতভাবে।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

‘শতকের শতক’ অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এক শ্রেষ্ঠত্বের সূচক। ক্রিকেটবিশ্ব এর আগে জ্যাক হবসের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০০ সেঞ্চুরি দেখেছে, তা উদযাপন করেছে। বিশ্বের সেরা টেস্ট ওপেনার কে? হবস না সুনীল গাভাসকর– তা নিয়ে তর্কের শেষ নেই। হয়তো তুলনায় নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বীতে তুলনায় বেশ কিছুটা এগিয়ে থাকবেন হবস। তবে দিনের শেষে একটা কথা সকলেই মানবেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আর টেস্ট ক্রিকেট এক বস্তু নয়। আর সেই ফরম্যাটে শচীনের নামের পাশে ৫১টি শতরান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে টানা ২৪ বছর খেলা, একশোটি সেঞ্চুরি করার মধ্যে দিয়ে শচীন তাঁর সমসাময়িক তো বটেই পূর্বসূরি ও উত্তর-প্রজন্মকে ছাপিয়ে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছেন, যেখানে কোনও প্লেয়ারের পক্ষে পৌঁছনো সম্ভব ছিল না, ভবিষ্যতেও সম্ভব হবে না।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

পড়ুন সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়ের লেখাবিরাট ‘রাগিয়া’ প্রমাণ করলেন তিনি পাল্টাননি

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

Tendulkar: On this day in 1990: Sachin Tendulkar scored his first international century | Cricket News - Times of India

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

আরও পড়ুন: বিরাট ‘রাগিয়া’ প্রমাণ করলেন তিনি পাল্টাননি

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

শচীন নিছক ক্রিকেট খেলেননি। দু’দশক ধরে তাঁকে খেলতে হয়েছে ক্রিকেট-প্যাশন নামক এক অনন্ত চাপের বিরুদ্ধেও। এই দু’দশকে চোটের ছোবল সামলাতে হয়েছে ‘মাস্টার ব্লাস্টার’কে। কখনও পায়ে, কখনও কনুই, কখনও গোড়ালি কিংবা হিপ-ইনজুরি। সেইসব প্রতিকূলতা জয় করেই শচীন নিজেকে মেলে ধরেছেন, কোটি কোটি ভারতবাসীর আশার প্রদীপ হয়ে বিরাজ করেছেন। বিশ্বের অন্য কোনও স্পোর্টিং-গ্রেটকে এই অনন্ত চাপকে সঙ্গী করে লড়তে হয়নি। উইলমা রুডলফ হয়তো পোলিও-কে হারিয়ে অলিম্পিক সোনা জিতেছেন। ডন ব্র্যাডম্যানের কীর্তিও হয়তো অমর হয়ে রয়েছে ক্রিকেট ইতিহাসে। কিন্তু তাঁদের কাউকে শচীনের মতো এত প্রত্যাশার ঝড় সামলাতে হয়নি। এক ‘বিস্ময় বালক’ থেকে ‘ভারতীয় ক্রিকেটের ঈশ্বর’ হয়ে ওঠাটা তাই রূপকথাধর্মী হলেও বাস্তবে তা ভীষণ বন্ধুর এক যাত্রাপথ।

It's not a straight drive.. It is "The Straight Drive" | Sachin tendulkar, Cricket, World cricket

ক্রিকেটের এই সীমারেখাকে ছাপিয়ে মানুষ শচীনের ব্যাপ্তি আরও বিশাল। তাই শুধু ক্রিকেট কিংবদন্তি হিসেবে তাঁর ৫১তম জন্মদিনের উদযাপন কাম্য নয়। শচীনের জন্মদিন আসলে এক অনমনীয় সত্তার উদযাপন, যা আমাদের শিখিয়েছে ‘ইমপসিবল ইজ নাথিং’। তাই শচীনের সঙ্গে কারও তুলনা চলে না। এমনকী, ডনেরও নয়। শচীন সেই অসম্ভবের পর্যায়ভুক্ত যেখানে বিরাজ করেন দিয়েগো মারাদোনা, ধ্যানচাঁদ, মাইকেল শুমাখার, মাইকেল জর্ডনের মতো ব্যক্তিত্ব।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

পড়ুন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় লেখাআম্পায়ার সেই নিঃস্ব প্রজাতি যারা ক্রিকেটকে শুধু দিল, পেল না কিছুই

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

 

Sachin Tendulkar: 10 photos of him we love | Photo Gallery

ক্রিকেটকে শুধু নিছক খেলা হিসেবে কখনও দেখেননি শচীন। ক্রিকেটের প্রতি সেই অনুরাগের প্রতিদানে তিনিও পেয়েছেন অনন্ত ভালোবাসা। অবসরের এতদিন পরেও কীভাবে জনতার নয়নের মণি হয়ে, এক উত্তাল-গর্জন হয়ে বেঁচে থাকা যায়? উত্তরটা আজও অজানা। হয়তো জানা নেই শচীনেরও…

‘হ্যাপি বার্থ ডে, লেজেন্ড’!