ভিনি বাবু আপনিই বলুন তো, যদি আপনি জিততেন, হত এ জিনিস? হত ব্যালন-জয়ী আর আপনাকে কেন্দ্র করে এমন শুম্ভ-নিশুম্ভের লড়াই? দেশ-বিদেশের মহাতারকা ফুটবলাররা তেড়ে আসত আমাদের দিকে? করত এমন বাপ-বাপান্ত? বলত নাকি ‘গ্রেটেস্ট রবারি’? আরে, আপনাকে পুরস্কার দিয়ে দিলে তো ল্যাটা চুকেই যেত! একদিন নাচানাচি চলত, গালা ডিনার বসত, পরদিন সবাই ভুলে মেরে দিত।
রাত-বিরেতে মোবাইলে ‘টুং’ করে আওয়াজ মোটে ভালো লাগে না। হয় কোনও মেসেজ, নইলে মেল, নয়তো নির্ঘাৎ হোয়াটসঅ্যাপ। সেদিন রাতেও আওয়াজখানা শুনে মেজাজ তাই খিঁচড়ে গিয়েছিল। তা, অভ্যাসবশত খুলে দেখি, যা ভেবেছি, তাই। ইমেল। খটোমটো ভাষা দেখে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একমাত্র ব্যালন ডি’অর লেখাটা ছাড়া। কিন্তু গুগল ট্রান্সলেটর নামের অন্ধের যষ্টির শরণাপন্ন হওয়ামাত্র চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল! ও হরি, এ কী দেখছি! এ যে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে পাঠানো ব্যালন ডি’অর আধিকারিকদের ইমেল! দস্যু মোহনের কায়দায় ‘কী করিয়া যেন’ এ অধমের ইনবক্সে এসে হাজির হয়েছে! যাক গে, যা পেলাম, ফ্রেঞ্চ টু বাংলা করে যা এল, প্লেটে তুলে দিলাম। শুধু একটু রসিয়ে-কষিয়ে।
শ্রী শ্রী ভিসুভিয়াস…
রামোঃ, মাফ করবেন,
শ্রী শ্রী ভিনিসিয়াস জুনিয়র মহাশয়,
ভিনি বাবু, না মশাই আপনার এলেম আছে বটে! শুনলুম, ব্যালন না পেয়ে আপনার মন-মেজাজ বড় খারাপ। আপনার ক্লাব প্রেসিডেন্ট পেরেজ সায়েব তো আবার রেগে কাঁই! খেপে গিয়ে দলবল নিয়ে অনুষ্ঠানে এলেনই না। গেল আমাদের পঞ্চাশটা প্লেট জলে! রিয়াল মাদ্রিদের জ্ঞাতি-গুষ্টির জন্য ধরে রাখা ছিল যে।
সে গিয়েছে যাক। কিন্তু বদলে কী দিলেন বলুন তো, অ্যাঁ! এ যে পুরো প্যারিসিয়ান আতরের খোশবু! বিশ্বাস করুন ভিনি বাবু, আপনাকে সামনে পেলে পেল্লায় পেন্নাম ঠুকতুম, তুড়ুক লাফও মারতুম নির্ঘাৎ! আবারও বলছি, আপনি কী করে বসেছেন, নিজেও জানেন না। সোম-রাতে দেখলুম, পুরস্কার না পেয়ে প্রবল চটে ভাববাচ্যে আমাদের তেড়ে গাল পেড়েছেন। কী সব লিখেছেন যে, অ্যাদ্দিন যা করে এসেছেন, প্রয়োজনে দশগুণ করবেন! আপনার ‘ব্যান্ডপার্টি’ দ্রুত তরজমা করে দিয়ে বলেছে, স্পেনের বর্ণবিদ্বেষের প্রতি বারবার বিদ্রোহ করেন বলে আপনাকে ঘ্যাঁচ করে পুরস্কার থেকে কেটে দেওয়া হল! কিন্তু আপনি হলেন ফুটবলের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’। ও সব পুরস্কার-ফুরস্কারকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন। দরকারে দশগুণ! ওফ্, তোফা, তোফা! অ্যাদ্দিন ‘ক্লাউড নাইন’ কথাটা বইপত্তরে পড়েছি, বুঝলেন? সোম-রাত্তিরে একেবারে তাতে চড়ে বসেছিলুম! এতটা যে হবে, আমরাও ভাবিনি।
………………………………………………..
রড্রি গত বছর ম্যাঞ্চেস্টার সিটিরই সেরা প্লেয়ার ছিল না! ফিল ফোডেন ছিল। ইউরোয় সেরা প্লেয়ার ছিল বটে। কিন্তু সে তাজ স্পেনেরই ড্যানি ওলমো-লামিন ইয়ামাল-নিকো উইলিয়ামসের মধ্যে কাউকে অনায়াসে দিয়ে দেওয়া যেত। অথচ দেখুন, রড্রি ছোঁড়ার সব আছে। ইপিএল আছে। সমস্ত আছে, শুধু একটু ‘গ্রে শেড’-সহ। পুরোটাই ‘গ্রে ম্যাটার’-এর ভানুমতির খেল, বুঝলেন কত্তা, হেঁ হেঁ।
………………………………………………..
দেখুন দেখি, এখনও বুঝলেন না? মার্কেটিং মশায়, মার্কেটিং। হাতে ব্র্যান্ড থাকলে ব্র্যান্ডকে নিয়ে মার্কেটিং। না হলে বিতর্ককে ব্র্যান্ড বানিয়ে মার্কেটিং! আমরা দ্বিতীয়টা করেছি। দুঃখ পেলেও এটা তো মানবেন যে, আপনারা কেউ মেসি-রোনাল্ডো নন। যদ্দিন ওঁরা দোর্দণ্ডপ্রতাপে বিচরণ করেছেন, ভাবনাই ছিল না। একবার রোনাল্ডো, একবার মেসি, মার দিয়া কেল্লা! শেষ দিকেও কষ্টেসৃষ্টে চালিয়ে নেওয়া গিয়েছে, উষ্টুম কাপ ধুষ্টুমভাবে জিতেছেন দেখিয়ে। কিন্তু এবার আর প্রাইজ দেওয়া গেল না। তা, করব কী আমরা? খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে তো! দিলুম একখানা সিনেমা নামিয়ে! একেবারে হিচকক ফ্লেভারের থ্রিলার বানিয়ে! প্রথমে হাওয়া তুলে দিলুম যে আপনি ছাড়া কেউ নেই। আপনাকে ছাড়া ব্যালন দেওয়ার লোক নেই। সব আলোকবর্ষ পিছনে। আপনারই দেশের রোনাল্ডো নাজারিও-কে আমন্ত্রণ জানিয়ে দিলুম। বলে বেড়ালুম, রোনাল্ডোর হাত দিয়ে ব্যালন মঞ্চে অভিষেক হবে আপনার। ‘আর নাইন’ শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার তুলে দেবেন আপনার হাতে। ব্যস, এবার চারদিকে যখন সব ‘সেট’, ব্রাজিল থেকে যখন লোকজন আসব-আসব করছে, আপনার ক্লাবের কেষ্ট-বিষ্টুরা কে কী পরবে আলোচনা করছে, সোজা অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স!
পাকড়াও করলুম এক সুদর্শন নায়ককে। যে সাত চড়ে রা কাড়ে না, আপনার মতো হেঁক্কোড় তোলে না, সোশাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খোলে না। রাম নামের সে সুবোধ বালকের ভালো নাম– রড্রি! আর আপনি? আপনাকে? স্যাট করে নায়ক থেকে খলনায়ক বানিয়ে ছেড়ে দিলুম। হিরো থেকে স্ট্রেট ভিলেন! সোজা তিন আইনের ফর্দ ছাপিয়ে! ব্যালন জিততে গেলে হ্যানা করতে হবে, ত্যানা করতে হবে, উত্তমকুমারের মতো দেখতে হতে হবে, ঋত্বিক রোশনের মতো নাচতে হবে, ঘাড়ে করে গন্ধমাদন বইতে হবে (সব আদতে গাঁজাখুরি জানেন তো, ও সমস্ত আইন আমরাই মানি না, শুধু প্রয়োজনে কাতুকুতু দিয়ে লোক হাসাতে কাজে লাগে)। তবে মিথ্যে বলব না, ‘জিগরি দোস্ত’ উয়েফা শেষ দিকটায় বড্ড সাহায্য করেছে! নইলে একা এত বড় যাত্রাপালা টানা সম্ভব ছিল না।
আচ্ছা ঠিক আছে, ভিনি বাবু আপনিই বলুন তো, যদি আপনি জিততেন, হত এ জিনিস? হত ব্যালন-জয়ী আর আপনাকে কেন্দ্র করে এমন শুম্ভ-নিশুম্ভের লড়াই? দেশ-বিদেশের মহাতারকা ফুটবলাররা তেড়ে আসত আমাদের দিকে? করত এমন বাপ-বাপান্ত? বলত নাকি ‘গ্রেটেস্ট রবারি’? আরে, আপনাকে পুরস্কার দিয়ে দিলে তো ল্যাটা চুকেই যেত! একদিন নাচানাচি চলত, গালা ডিনার বসত, পরদিন সবাই ভুলে মেরে দিত। অবশ্যম্ভাবী কখনও যে আগ্রহ প্রসব করে না। আপনার বদলে কার্ভাহালকে দিলে চলত না। রিয়ালেরই প্লেয়ার, বিতর্কটা জমত না ঠিক। লটারো মার্টিনেজকে দিলেও চলত না। ও ব্যাটাচ্ছেলে অনেক কিছু জিতেছে, কোপা ফাইনালে গোল করেছে, ডিজার্ভিং ক্যান্ডিডেট। শোরগোল পড়ত না। দিতে হত এমন কাউকে, যে ডিজার্ভিং হয়েও ডিজার্ভিং নয়।
…………………………………………………
আরও পড়ুন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়-এর লেখা: নশো মাস্ট গো অন!
…………………………………………………
ঠিক জানতুম, মিডিয়া খুঁচিয়ে বের করবে যে, রড্রি গত বছর ম্যাঞ্চেস্টার সিটিরই সেরা প্লেয়ার ছিল না! ফিল ফোডেন ছিল। ইউরোয় সেরা প্লেয়ার ছিল বটে। কিন্তু সে তাজ স্পেনেরই ড্যানি ওলমো-লামিন ইয়ামাল-নিকো উইলিয়ামসের মধ্যে কাউকে অনায়াসে দিয়ে দেওয়া যেত। অথচ দেখুন, রড্রি ছোঁড়ার সব আছে। ইপিএল আছে। সমস্ত আছে, শুধু একটু ‘গ্রে শেড’-সহ। পুরোটাই ‘গ্রে ম্যাটার’-এর ভানুমতির খেল, বুঝলেন কত্তা, হেঁ হেঁ।
তাই বলছি ভিনি বাবু, মেলা রাগ করবেন না। বড়ি বড়ি অ্যাওয়ার্ডও মে অ্যায়সি ছোটি ছোটি বাঁতে হোতি রহতি হ্যায়! মাথা ঠান্ডা করুন। দু’দিনের মধ্যে একটা পার্সেল যাবে বাড়িতে, গেটে একটু বলে রাখবেন। কিন্তু খবরদার, আর কাউকে বলবেন না। আরে, পাঠিয়েছি আপনাকে আপনার প্রাপ্য বেলুন ডি’অর! কপি-পেস্ট করে একখানা আলাদা রাখা ছিল। ওহ্, সরি, সরি, ব্যালন ডি’অর। অবশ্যি একই হল। যাহা বাহান্ন, তাহাই তিপ্পান্ন। যাহা বেলুন, তাহাই ব্যালন! দাম এক, দর এক।
প্রতি পিস ১০ টাকা!
ধন্যবাদান্তে,
ব্যালন ডি’অর সার্কাস কমিটি,
প্যারিস, ফ্রান্স
……………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………..
মধ্যরাতে পাশের দেশ আক্রমণের পর যুদ্ধ-পরিস্থিতি তুঙ্গে। আজ যারা তিরিশ-বত্রিশের যুবা, শেষ কার্গিল যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে তারা বঞ্চিত। তাই যুদ্ধ ছাড়া গতি নেই এমন এক রব উঠেছে চারদিকে। ঠিক যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে বলা হয়েছিল ‘A war to end all wars’, কুড়ি বছরেই তার পরিণাম কী হয়েছিল আমরা জানি।
তিনি সিটি কলেজে সরস্বতী পূজা করার দাবিতে আন্দোলনরত হিন্দু ছাত্রদের প্রকাশ্যে সমর্থন করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। আজকের দিনে এসব কথা ওই ভাষায় বললে হয়তো তাঁকে হিন্দুত্ববাদী বলে দাগিয়ে দিতে বিলম্ব হত না।