বিশ্বের ২৯ নম্বরের রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দর সামনে এবার বিশ্বের এক নম্বর ম্যাগনাস কার্লসেন। এখনও জুনিয়র স্তরে প্রতিনিধিত্বকারী প্রজ্ঞানন্দের জন্য কার্লসেন যে কঠিন ঠাঁই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তো অজেয় নন প্রজ্ঞানন্দের কাছে।
অরিঞ্জয় বোস
আগ্রাসন সব বিজয়ীর তূণের শ্রেষ্ঠ শর হবে– এমন কোনও কথা নেই। ভয় দিয়ে জয় করাটাও যুদ্ধ জয়ের উপায় হতে পারে, কিন্তু একমাত্র নয়। এই মহাবিশ্বে মহাকালের মাঝে এমনও কেউ কেউ আছেন, তাঁরা প্রকৃত অর্থে ভিন্নধর্মী। সচেষ্ট না হলে নির্বিশেষের মধ্য থেকে তাঁদের বিশেষ করে পাওয়া ভারি দুষ্কর! প্রতিপক্ষকে দুরমুশ করতে তীব্র ব্যাকুলতার চেয়ে তীক্ষ্ণ অন্তর্ভেদী দৃষ্টির আশ্রয় তাঁরা নেন সচরাচর। ক্রীড়া পরিসরে এই গোত্রের ব্যক্তিত্বদের অন্তর্মুখী নীরবতাই জয়ধ্বনির আবহ নির্মাণ করে। বহুলাংশে সেই জয়ধ্বনি পরিণত হয় জনতার সোল্লাসে।
রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ ঠিক সেই আধারে আধৃত ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। দাবার ফিডে বিশ্বকাপে তাঁর ঐতিহাসিক অভিযাত্রা, ফাইনালে পদার্পণের সঙ্গে ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে জায়গা পাকা করে নেওয়া সেই সাফল্যের সূচক। ব্রহ্মাণ্ডে বিশ্বনাথন আনন্দের পর প্রজ্ঞানন্দ দ্বিতীয় ভারতীয় দাবাড়ু তিনি ক্যান্ডিডেটসে নামার যোগ্যতা অর্জন করলেন। সেই মঞ্চে জিতলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবেন ১৮ বছরের ভারতীয় দাবাড়ু। অথচ এমন বিস্ময়ের সামনে দাঁড়িয়েও কী অনুপম নির্লিপ্তি প্রজ্ঞার শরীরী ভাষায়– তা বলে বোঝানো যাবে না।
আসলে প্রজ্ঞানন্দ এমনই। কথার চেয়ে কাজে বেশি বিশ্বাসী। তাঁর যাবতীয় বিক্রম, পারঙ্গমতা ওই চৌষট্টি খোপের দুনিয়ায়। সেখানেই তাঁর আগ্রাসন কথা বলে। প্রতিপক্ষকে দিশাহারা করে দেয়। নিজের সেই সক্ষমতা প্রজ্ঞানন্দ খুব ভাল করেই জানেন। আর জানেন বলেই ‘প্রজ্ঞা’ ব্যতিক্রম, অনন্য। বিশ্বের তাবড় দাবা-ক্ষত্রীয়কে তাই অনায়াসেই পরাজয়ের গ্লানি নিঃশেষ করতে পারেন আঠারোর তরুণ তুর্কি।
যেমন বাকুতে করছেন, করে চলেছেন। প্রথমে বিশ্বের দুই নম্বর হিকারু নাকামুরাকে হারানোর পর বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে বিশ্বের তিন নম্বর ফাবিয়ানো কারুয়ানা-বধ। প্রজ্ঞা-চমক চলছেই। অতঃপর? বিশ্বের ২৯ নম্বরের সামনে এবার বিশ্বের এক নম্বর ম্যাগনাস কার্লসন। এখনও জুনিয়র স্তরে প্রতিনিধিত্বকারী প্রজ্ঞানন্দের জন্য কার্লসেন যে কঠিন ঠাঁই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তো অজেয় নন প্রজ্ঞানন্দের কাছে। একাধিকবার প্রজ্ঞার দ্যুতির সামনে ম্লান হয়ে গিয়েছে নরওয়েজিয়ানের দক্ষতা। সেই আত্মবিশ্বাসটাই বিশ্ব জয়ে পাথেয় ভারতীয় দাবার ‘বিস্ময় বালক’-এর।
আসলে এ এক পরিবর্তিত সময়। যেখানে দাবায় বোধিচিত্ত নিয়ে কোনও আনন্দের আবির্ভাব ঘটবে না। মহাকাল অপেক্ষমাণ হবে প্রজ্ঞা বিকাশের। কার্লসেন পারবেন কি কাঁটা হতে? নতুন তারার জন্মের সময় যে আসন্ন।
শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’ নাটকে হ্যামলেটের হাতে ‘ড্যাগার’ বা ছুরির প্রতীকী, সংকেতময় ব্যবহার– তা কি কখনও ভোলা যায়? এই ছুরি হ্যামলেটের বুদ্ধিমত্তার, ইন্টেলেক্টের, এবং জীবনযুদ্ধের সংকেত বহন করছে।
আজকের গল্পে যেমন আগাম বলে দেওয়া আছে, সেই জন্মে চিত্রকূটে পর্বতের ৯,০০০ সুবর্ণ হাঁসের দলপতি ছিলেন বোধিসত্ত্ব; কিন্তু মন বলে, কেন বাপু, সেনাপতি সুমুখ কম যান কীসে?
জীবনস্মৃতি আর্কাইভে সৌম্যেন্দু রায়ের জীবন ও সিনেমা-যাপন এবং বাংলা ও বাঙালির চলচ্চিত্রের ইতিহাস নিয়ে ‘সৌম্যেন্দু-সিন্দুক’ শিরোনামে একটি সংগ্রহশালার শুভসূচনা করা হয়েছে আর্কাইভের একটি ঘর জুড়ে।