Robbar

দাদাদের বদলা নিলে কি ভাইদের সিনিয়র টিমে জায়গা হবে?

Published by: Robbar Digital
  • Posted:February 9, 2024 9:00 pm
  • Updated:February 9, 2024 9:00 pm  

আসলে জুনিয়র থেকে সিনিয়র স্তরে চলে আসার অর্থই হল নদী থেকে সমুদ্রে চলে আসাসিনিয়রদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেক বেশ দয়া-মায়াহীনলুজ বল কেউ ফেলবে না, আর এদিক ওদিক হলেই বোলার মার খেয়ে যাবেঅনূর্ধ্ব-১৯ অবশ্যই একটা লঞ্চপ্যাড, কিন্তু পরের লক্ষ্যটা অনেক উঁচুবাধা অতিক্রম করার জন্য হঠালাইমলাইটের ঝলকানি থেকে বেরিয়ে নিরলস পরিশ্রম এবং স্থিতধীর প্রয়োজনআজকের দিনে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে এই প্রতিযোগিতার বাজারে সেটা ক’জন করে উঠতে পারছেন, সন্দেহ

সৌরাংশু

এই বিশ্বকাপটাকে ধরে মোট পাঁচটা ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলছে ভারতএবং ২০২২ পর্যন্ত মোট ৫ বার চ্যাম্পিয়নও হয়েছেঅনূর্ধ্ব-১৯-কে বলা যেতে পারে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের লঞ্চ প্যাডএই অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকেই উঠে এসেছেন বীরেন্দ্র সহবাগ, হরভজন সিং, যুবরাজ সিং, সুরেশ রায়না, রোহিত শর্মা, ইশান্ত শর্মা, চেতেশ্বর পূজারা, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা, এমনকী, হাল আমলের ঋষভ পন্থ, শ্রেয়স আয়ার, সঞ্জু স্যামসন, ওয়াশিংটন সুন্দর, কুলদীপ যাদব, ঈশান কিষান, শুভমন গিল বা আর্শদীপ সিং

ভারতীয় দল এই বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ জিতে ফাইনাল খেলছেসেমিফাইনালে একটা সময় ২৪৫ তুলতে গিয়ে ৩২ রানেউইকেট হারিয়ে সমস্যায় পড়েছিল ভারতকিন্তু শচীন ধাসের প্রতি-আক্রমণত্মক ব্যাটিং এবং অধিনায়ক উদয় সাহারনে ঠান্ডা মাথায় ম্যাচটা জিতে যায় ভারতযদিও শেষ মুহূর্তে উদয় রান আউট হয়ে গিয়েছিলেনকিন্তু জোরে বোলার রাজ লিম্বানির জোরালো অফড্রাইভে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান এক বল থাকতেই ভারত তুলে নেয়

India U19 vs South Africa U19, 1st Semi-final, U19 World Cup, 2024, Review

ফাইনালে ভারত মুখোমুখি হবে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ারযারা সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে বেশ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর হারিয়েছেতাদের টম স্ট্রাকার আর ক্যালাম ভিডিয়ার বল হাতে বেশ ভালো ফর্মে আছেনবিশেষত স্ট্রাকার তো একার হাতে পাকিস্তানকে ছ’ উইকেট নিয়ে ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

তবে সবথেকে হতাশজনক বোধহয় তার আগের বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটির খেলোয়াড়দের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। ২০১৮-র বিশ্বজয়ীদের মধ্যে অধিনায়ক পৃথ্বী শ’ অভিষেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে কেমন যেন হারিয়ে গেলেনঅনুশাসন এবং টেকনিকের সমস্যায় জেরবার শ’ এখন মাঠের বাইরের সমস্যার মধ্যেও ফেঁসে। ২০১৮-য় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে, শিবমমাভি এবং কমলেশ নাগারকোটি ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিবেগে বল করে সারা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেনসেই দু’জন, ক্রমাগত চোট-আঘাতে আর উঠে আসতেই পারলেন না।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

ভারতেরও অধিনায়ক উদয় সাহারান, সচিন ধাসের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে রঞ্জি ট্রফিতে রান করে ভারতীয় মিডল অর্ডারের দরজায় কড়া নাড়া এবং এবং দু’দুটো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা সরফরাজ খানের ভাই মুসির খান ব্যাট হাতে বেশ ভালো ফর্মেই রয়েছেনআর বল হাতে ডান হাতি ইনস্যুইং বোলার রাজ লিম্বানি, যিনি লোয়ার অর্ডারে ব্যাটটাও মন্দ করেন না।

সব মিলিয়ে একটা রোমহর্ষক ফাইনালের অপেক্ষায় সবাইকিন্তু তারপর? এটাই একটা লাখ টাকার প্রশ্নএই যেন জুনিয়র থেকে সিনিয়র স্তরে উঠে আসা এটা বেশ কিছুদিন ধরে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটারদের সার্বিকভাবে হচ্ছে না। গত বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম করেছিলেন অধিনায়ক যশ ধূল আর অলরাউন্ডার রাজবর্ধন হাঙ্গারগেকর। কিন্তু তারপর সেই দল থেকে রঞ্জি ট্রফি স্তরেই একমাত্র ধূল ছাড়া তেমন পারফরম্যান্স দেখা যাচ্ছে না। হাঙ্গারগেকর আইপিএল-এ সুযোগ পেয়েছেন চেন্নাই সুপারকিংসের হয়ে, কিন্তু তাও দুর্দান্ত কিছু করছেন বলে বলা যাচ্ছে না। ধূলও শুরুতে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে দু’ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু করার পর পরপর দুই মরশুমে তেমন কিছুই করে উঠতে পারেননি দিল্লির হয়ে

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

আরও পড়ুন: ভালোবাসা শত যুদ্ধেও জেতা যায় না, ঘৃণা যায়

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

তার আগের বছরের রানার্স আপ দল থেকে অবশ্য যশস্বী জয়সওয়াল, তিলক বর্মা এবং রবি বিষ্ণোই ভারতীয় দলের হয়ে খেলছেনবিষ্ণোই তো টি-২০ আন্তর্জাতিকেনম্বর বোলার র‍্যাঙ্কিংও পেয়েছিলেন

পৃথ্বী শ’

তবে সবথেকে হতাশজনক বোধহয় তার আগের বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটির খেলোয়াড়দের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। ২০১৮-র বিশ্বজয়ীদের মধ্যে অধিনায়ক পৃথ্বী শ’ অভিষেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে কেমন যেন হারিয়ে গেলেনঅনুশাসন এবং টেকনিকের সমস্যায় জেরবার শ’ এখন মাঠের বাইরের সমস্যার মধ্যেও ফেঁসে। ২০১৮-য় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে, শিবমমাভি এবং কমলেশ নাগারকোটি ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিবেগে বল করে সারা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেনসেই দু’জন, ক্রমাগত চোট-আঘাতে আর উঠে আসতেই পারলেন না। শিভম তবু আইপিএলে দল পেয়েছেন কিন্তু নাগারকোটি তো এবারের নিলামে অবিক্রীত থেকে গেলেনতিন-চারটে ম্যাচ খেলার পরই চোটের কবলে পড়ছেনঠিক যেমন ২০২০-র সম্ভাবনাময় কার্তিক ত্যাগীর হয়েছেঅস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় দলের সঙ্গে গিয়েছিলেন নেট বোলার হিসাবে, সেখানে কে এল রাহুল-সহ বেশ কয়েকজনকে নেটে চোটগ্রস্তও করে দিয়েছিলেন, বাউন্স এবং পেসেকিন্তু চোটের কবলে পড়ে আর বোধহয় এগোনো সম্ভব হবে না।

অবশ্য আর্শদীপ সিং-এর কথা অন্যযদিও ২০১৮-র বিশ্বকাপে যে তিনজন পেস বোলার ভারতের হয়ে নিয়মিত খেলেছিলেন, তাঁরা অর্থানাগারকোটি, মাভি এবং বাংলার ঈশান পোড়েল– তিনজনেই বর্তমানে ভারতীয় দল দূরের কথা, আইপিএল-এও নিজেদের জমি শক্ত করতে পারেননি

একমাত্র শুভমন গিল এবং আইপিএল-এ অভিষেক শর্মার নামটাই করা যেতে পারে

বাংলার কথা যখন উঠল তখন বাংলা থেকে সুযোগ পাওয়া, শ্রীবৎস গোস্বামী, ঈশান পোড়েল এবং গতবারের বাঁহাতি পেস বোলার রবিকুমারের কথা উঠে আসবেশ্রীবৎস কিছুদিন আইপিএলের বিভিন্ন দলে খেলেছেন বটে, তবে ভারতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়া হয়ে ওঠেনিঈশান অবশ্য বাংলার রঞ্জি ফাইনাল খেলার সময় যথেষ্ট ভালো বোলিং করেছিলেনকিন্তু সেও যথেষ্ট নয়। এ বছর তো ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলার কোনও প্রতিনিধিই নেই

তিতাস সাধু

অন্যদিকে গত বছরের মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ টি২০ বিশ্বকাপের বিজয়ী ভারতীয় দলে বাংলা থেকে রিচা ঘোষ, তিতাস সাধু এবং হৃশিতা বসু ছিলেন। রিচা বেশ কিছুদিন ধরে ভারতীয় দলে খেলছেনতিতাস বিশ্বকাপ ফাইনালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করার পর ভারতীয় দলে অভিষেক করে এশিয়ান গেমসেও ভালো বল করেছেন

আসলে জুনিয়র থেকে সিনিয়র স্তরে চলে আসার অর্থই হল নদী থেকে সমুদ্রে চলে আসাসিনিয়রদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেক বেশ দয়া-মায়াহীনলুজ বল কেউ ফেলবে না, আর এদিক ওদিক হলেই বোলার মার খেয়ে যাবেঅনূর্ধ্ব-১৯ অবশ্যই একটা লঞ্চপ্যাড, কিন্তু পরের লক্ষ্যটা অনেক উঁচুবাধা অতিক্রম করার জন্য হঠালাইমলাইটের ঝলকানি থেকে বেরিয়ে নিরলস পরিশ্রম এবং স্থিতধীর প্রয়োজনআজকের দিনে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে এই প্রতিযোগিতার বাজারে সেটা ক’জন করে উঠতে পারছেন, সন্দেহ

একটা অবাক করার মতো পরিস্থিতি হল, আজ যে সমস্ত পেস বোলার ভারতের হয়ে খেলছেন, অর্থাযশপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজ, মুকেশ কুমার, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ বা আরও বেশ কয়েকজন কিন্তু ভারতের হয়ে খেলেননিএকমাত্র আবেশ খান এবং আর্শদীপ ছাড়া। আসলে ১৯ বছর বয়সের পরে শক্তি, গতি এবং স্কিলের অনেকটা আপগ্রেডেশনপ্রয়োজনব্যাটাররা যত সহজে সেটা করে উঠতে পারছেন, জোরে বোলাররা ননএদিকটা মনে হয় বিসিসিআইএর নজর দেওয়া প্রয়োজনতা না হলে, আজ পাঁচের জায়গায় ছ’টা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ পেলেও, সিনিয়র স্তরে অস্ট্রেলিয়াকে ছোঁয়ার কথা চিন্তাও করা যাবে না।