বাড়ির পুরুষেরা কী চোখে দেখতেন কর্মরতাদের? কেউ নিজের উৎসাহে সচ্ছলভাবে থাকার জন্য কাজে পাঠাতেন বাড়ির মেয়েদের। কেউ বা মনে মনে আপত্তি পুষে রাখতেন, একার রোজগারে সংসার টানতে না পারার গ্লানি কুরে কুরে খেত, পুরুষের আত্মমর্যাদায় ঘা দিত। ১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পুনশ্চ’ ছবিতে সেই টানাপোড়েন দেখিয়েছেন মৃণাল সেন।
আজকের আসামে যখন ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে উচ্ছেদের বুলডোজার চলেছে নির্বিচারে– তখন যদি ভূপেন যদি জন্মশতবর্ষে ফিরে এসে আবার গেয়ে ওঠেন, ‘মানুষ মানুষেরই জন্যে’ তবে কি তাঁকেও স্ট্যান স্বামী বা উমর খালিদের মতো দেশদ্রোহিতার অভিযোগে জেলে যেতে হবে?
বাংলা উপন্যাসে দেবেশদার ‘বৃত্তান্ত’র মতোই আমার মনে হয় আফসারদার ‘কিস্সা’ একটি অভিনব সংযোজন। আরবিতে ‘কিস্বহ’ মানে গল্প-কাহিনি। উর্দু উচ্চারণে সেটি হয়েছে ‘কিস্সা’। বাংলা প্রয়োগে সেটাই দাঁড়িয়েছে ‘কেচ্ছা’য়। আফসারদা মূল অর্থেই শব্দটা প্রয়োগ করেছিলেন।
প্রথম যুগের চাকুরিরতারা চিরাচরিত সাংসারিক নিয়ম নীতিকে প্রশ্ন করেছিলেন, ছক ভেঙেছিলেন, একটু হলেও বাড়তি গুরুত্ব আদায় করেছিলেন ঘরে বাইরে। উত্তরকন্যাদের চৌকাঠ পেরনো মসৃণ হয়েছিল তাঁদের মা, দিদিমা, ঠাকুমাদের জন্য।
‘আগলে রাখা’, ‘স্নেহ করা’, ‘ভাই-বোনের মতো’, এই শব্দবন্ধগুলো বারবার উঠে এসেছে সে যুগের চাকুরিরতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায়। সমানে-সমানে নিছক বন্ধুত্ব বোধহয় ভাবতে বা বলতে অস্বস্তি হত অনেক মেয়েরই। পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে নারী-পুরুষ সম্পর্ককে ফেলতে পারলে স্বস্তি পেতেন তাঁরা।
উত্তমকুমারের আবির্ভাবকালের মতোই মৃণাল সেনও এই প্রথম ছবিতেই সুপার ফ্লপ। সে বছর উত্তমকুমারের আরও ১১টা ছবি মুক্তি পায়। তাদের মধ্যে ছিল সুপারহিট ‘সবার উপরে’।
মণিকুন্তলা সেন হোটেলের ক্যাবারেগার্লদের কথাও বলেছেন, ‘এদেরই উপার্জনে হয়তো পিতৃ-পরিবার বা স্বামীর সংসার বাঁচে। কিন্তু এসবের মধ্যে এখন আর কেউ অন্যায় বা অসামাজিক কিছু দেখে না। বরং আমোদ-প্রমোদের অনিবার্য অঙ্গ হিসাবেই এগুলো স্বীকৃত।’
নিজের মা তীর্থমণির নাম অনুসারে বাড়িটির নাম রাখেন 'তীর্থ নিবাস'। এই তীর্থ নিবাসে সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আনাগোনা ছিল। হঠাৎ হঠাৎ বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাস তাঁর ‘শান্তিসেনা’ নিয়ে চলে আসতেন দুপুররাত্রে ঝিলটুলিতে, সকলের খাওয়ার রান্না একহাতে করতেন মৃণাল সেনের মা সরযূবালা সেন।
সিনেমা, সাহিত্য, স্মৃতিকথা থেকে বোঝা যায়, দেশভাগের পরে বহু বাঙালি মেয়ের, বিশেষত উদ্বাস্তু মেয়ের রোজগারের সুযোগ মেলে টাইপ-শর্টহ্যান্ডের কাজে।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved