নীতীশ কুমার। না, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নন। ইনি ফলবিক্রেতা। বয়স পনেরো-ষোলো। নাকের নিচে গোঁফের রেখা ফোটেনি ভালো করে। মুখে একগাল হাসি লেগে সর্বক্ষণ। হলুদ টি-শার্ট গায়ে ছেলেটা ঠায় দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সামনে রাখা ফলের সারি। কাটা-ফল প্লেটে সাজানো। ক্রিকেট অনুরাগীর ভিড় জমছে ইডেন গার্ডেন্স টিকিট কাউন্টারের গা ঘেঁষে। টিকিট হাতে ইডেনের দিকে পা বাড়ানোর আগে কেউ কেউ কিনে খাচ্ছে নীতীশের থেকে ‘কাটা-ফল’। তার ফাঁকেই আড্ডা জমে। উঠে আসে নানা কথা। সেই সব রইল রোববার.ইন-এর পাঠকদের জন্য। সাক্ষাৎকার নিলেন সুমন্ত চট্টোপাধ্যায় ও রোদ্দুর মিত্র।
প্রচ্ছদের ফোটোগ্রাফ: শঙ্খ বিশ্বাস
কত করে প্লেট?
সব ৫০ (টাকা) করে দাদা। আপেল পাবেন, তরমুজ, পেপে, কলা আছে, আনারস… (বলতে বলতেই হাতে ফলভর্তি প্লেট চলে আসে)
ফ্রেশ তো?
একদম দাদা। খেয়েই দেখুন। টাটকা আছে।
সে তো বুঝলাম। তা কখন থেকে বিক্রি চলছে?
সকাল ১১টা থেকে বিক্রি চালু। আজ খেলা আছে। ৫.৩০-৬টা পর্যন্ত তো বিক্রি হবে।
তারপর?
তারপর বাড়ি ফিরে যাব বাবার সঙ্গে। (পাশেই আইপিএলের বিভিন্ন দলের জার্সি বিক্রি করে চলেছেন নীতীশের বাবা)।
বাড়ি কোথায়?
বাবা কলকাতায় থাকে, জানবাজারে। আমি এসেছি একমাস হল। আমাদের ফলের ব্যবসা আছে।
ও, তাহলে তুমি কলকাতায় থাক না?
না, দাদা। আমরা বিহারে থাকি। পাটনায়। ওখানে মা আছে, দাদা-বোন আছে। একমাস হল কলকাতায় এসেছি। আসলে আইপিএল চলছে তো। এই সময় বিক্রিটা বেশি হয় একটু। বাবাকে হেল্প করতে তাই চলে এসেছি।
ইডেনে গিয়েছ কখনও খেলা দেখতে?
না, কখনও যাইনি। এই তো এখান থেকেই দেখেছি (পিছন ফিরে হাতের ইশারায় ইডেন দেখিয়ে)।
ইচ্ছা করে না খেলা দেখতে?
করে তো। কিন্তু উপায় কী! অনেক দাম টিকিটের। এই তো সামনেই দেখুন না, কত দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছে– ২০০০ টাকা, ৫০০০ টাকা। আমরা গরিব। এত দাম দিয়ে টিকিট কিনতে পারব না!
তোমার পছন্দের ক্রিকেটার কে?
বিরাট কোহলি। তবে আমার ক্রিকেটের বেশি ফুটবল বেশি ভালো লাগে। ওখানে (পাটনা) স্কুলে অনেক বন্ধু আছে। ওদের সঙ্গে ফুটবল খেলি।
এখানেও তো মাঠ আছে, খেলোনি কখনও?
(মাথা নিচু করে) না, বাবার সঙ্গে থাকি। খেলা হয় না। ওখানে (পাটনা) গিয়ে খেলব।
কোন ক্লাসে পড়ো?
ক্লাস নাইন। এখন স্কুল বন্ধ আছে। তাই এসেছি কলকাতায়। আইপিএল শেষ হলেই ফিরে যাব। সামনের বছর আসব আবার।
আইপিএল দেখো?
হ্যাঁ, দেখি তো। মোবাইলে দেখি। সব ম্যাচ দেখি। এখান থেকে ফেরার সময় খেলা দেখতে দেখতে যাই মোবাইলে।
আজ কে জিতবে মনে হয়?
কেকেআর। মুম্বই এবার ভালো খেলছে না। কলকাতাকে পারবে না আজ হারাতে। যদিও এই ফলাফলের সঙ্গে ফল বিক্রির যোগাযোগ নেই। আমরা বাইরে, ওরা ভিতরে।
এবারের আইপিএল কে জিতবে মনে হয়?
কেকেআর। ওরা টপে আছে। ভালো খেলছে।
(কথার ফাঁকে হাত চলতে থাকে নীতীশের। ফলের পসরার সামনে ভিড় বাড়তে থাকে। দমকা হাওয়ায় কথা এলোমেলো হয়ে যায়। তবু রেশ থেকে যায়। বিক্রিবাটার হিসেব চুকে গেলে একদিন নীতীশের স্বপ্নপূরণ হোক। ইডেনের বাইরে ফল বিক্রি নয়, গ্যালারিতে বসে তার ম্যাচ দেখার ইচ্ছা ফলুক। ততদিন বেঁচে থাক তার স্বপ্নগুলো, পাঠকের মনে মনে।)
সহায়তা: শুভদীপ রায়, সম্বিত বসু, শঙ্খ বিশ্বাস
চিত্রগ্রাহক: অমিত মৌলিক
কখনও ইশারায়, চিরকুটে অন্য বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে, কখনও পুলিশি নির্যাতনের আহত কমরেডকে নজরদারি এড়িয়ে গার্ডদের ফাঁকি দিয়ে কোনও কমরেডের মন ভালো করতে রুটিতে কিছুটা চিনি মাখিয়ে চমকে দেওয়ার মাধ্যমে, তো কখনও একসঙ্গে বসে সুখ দুঃখ বৃষ্টি বজ্রপাত ভাগ করে এই নিরন্তর অপেক্ষা কাটানোর মাধ্যমে, প্রতিদিন নানাভাবে সংগঠিত হতে থাকে প্রতিরোধ, প্রতিবাদ।
১৯৩৭ সালে পিল কমিশন প্যালেস্তাইনে ধর্মের ভিত্তিতে ভূখণ্ড ভাগের প্রস্তাব দেয়। এটাও ভারতের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে গান্ধীজির পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব ছিল। কারণ এদেশেও তখন ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ অর্থাৎ ‘টু নেশন’ তত্ত্ব ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে।