যে কোনও মানুষের কাছে, তাঁর ‘হিরো’ যদি তাঁর খুব কাছের হয়, সেটার চেয়ে বুক ফোলানোর মতো জিনিস আর কী-ই বা হতে পারে! মোহনবাগানে আসার পর আমার সঙ্গে সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হল। দূরের শৈলেন মান্না হয়ে উঠলেন কাছের মান্নাদা। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম তাঁকে, ওর’ম সৌম্যদর্শন, একেবারে মহানায়কের মতো চলন!
ছোটবেলা থেকেই আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই একজন বা একাধিক মহানায়ক ছিল। যাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হতাম আমরা। দেখতাম, তাঁদের জীবনের গতিপথ– কী বলছেন, কী করছেন। তাঁকে ঘিরে থাকা সমস্ত খবর থাকত হাতের মুঠোয়। সমস্ত মহানায়কেরই সফলতা ও ব্যর্থতা থাকে। তাঁর সেই সফলতায় আমরা উচ্ছ্বসিত হতাম, বাঁধভাঙা আনন্দ হত। আর ব্যর্থতার বিমর্ষ, মাথা নিচু। আমার জীবনের সেই মহানায়কদের মধ্যে অন্যতম নক্ষত্র শৈলেন মান্না।
শৈলেন মান্নার সঙ্গে আমার আলাপ আমি মোহনবাগানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অনেক আগে থেকে। সেই হাওড়া থেকেই। যে কোনও মানুষের কাছে, তাঁর ‘হিরো’ যদি তাঁর খুব কাছের হয়, সেটার চেয়ে বুক ফোলানোর মতো জিনিস আর কী-ই বা হতে পারে! মোহনবাগানে আসার পর আমার সঙ্গে সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হল। দূরের শৈলেন মান্না হয়ে উঠলেন কাছের মান্নাদা। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম তাঁকে, ওর’ম সৌম্যদর্শন, একেবারে মহানায়কের মতো চলন!
মনে পড়ে, একদিন আমি আর মান্নাদা বসে গল্প করছিলাম। খুব সম্ভবত চুনীদাও ছিলেন। আমার কাঁধে হাত দিয়ে মান্নাদা বললেন, ‘টুটু, তুই মোহনবাগানের গর্ব।’ ভাবতে পারেন! দ্য গ্রেট শৈলেন মান্না আমাকে বলছেন এই কথা। জীবনে অনেক বড় বড় লোকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, ছবি তোলা হয়েছে, কিন্তু যেদিন চুনীদা ‘মোহনবাগান রত্ন’ পেল, খুব সম্ভবত ২০০৫, সেদিন একটা ছবি উঠেছিল আমাদের– আমি, চুনীদা ও মান্নাদা। আমাদের পিছনে সবুজ-মেরুন ব্যাকগ্রাউন্ড। ওটা আমার অসম্ভব প্রিয় একটা ছবি।
মান্নাদা অজাতশত্রু। কোনও দিন কাউকে অসম্মান করেননি। বরাবর অভিভাবকের মতো পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্লাবের। আমারও পাশে দাঁড়িয়েছেন। একবার এক অনুষ্ঠানে, অঞ্জনের ঘরে আমি, অঞ্জন, মান্নাদা আর মান্না দে। দু’জন মান্নাকে একসঙ্গে পেয়ে আমরা ভারি খুশি। আড্ডা জমে উঠেছে। তার মাঝেই আমি মান্না দে-কে বললাম, ‘আপনি সবার মান্নাদা, কিন্তু আমাদের মান্নাদা একজনই– শৈলেন মান্না।’ মান্না দে হেসে বললেন, ‘আমারও মান্নাদা শৈলেন মান্না।’ ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল সকলের হাসি!
আজ মান্নাদার শতবর্ষ উদ্যাপন শুরু। মান্নাদা নিশ্চয়ই মোহনবাগানের খেলা ওপর থেকে ফলো করছেন। রবিবারের ডার্বি নিয়ে কারও না কারও সঙ্গে তর্কযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন নিশ্চয়ই।