‘গীতাঞ্জলি’ আমার প্রাণ কেড়ে নিল! যেন আমারই কথা, আমি অনুবাদ করলাম ফরাসি ভাষায়। ‘গীতাঞ্জলি’ যখন অনুবাদ করেছি, আমার লেখার টেবিল আমাকে ক্রমাগত বলেছে, ‘এ তোমারই নতুন জন্ম অঁদ্রে জিদ। তোমার অনুবাদে তুমি নিজের কথাই বলছ। প্রাণ ঢেলে ঝরনার মতো। তোমার অনুবাদে তোমার মধ্যে একইসঙ্গে জেগে উঠুক নারীপুরুষ। গীতাঞ্জলি হয়ে উঠুক কখনও উভপ্রার্থনার, কখনও উভকামনার গান।’
১৭.
কলকাতার রবীন্দ্রনাথ। লন্ডনের অস্কার ওয়াইল্ড। আর প্যারিসের আমি, অর্থাৎ অঁদ্রে জিদ।
একটু ভেবে দেখুন, যদিও এইভাবে ভাবেননি আপনারা, আমরা কিন্তু সমসময়ের মানুষ। অস্কার ওয়াইল্ড, যাঁর জন্ম ১৮৫৪-তে, মাত্র সাত বছরের বড় রবীন্দ্রনাথের থেকে। আর রবীন্দ্রনাথ, যাঁর জন্ম ১৮৬১-তে, আমার থেকে ন’বছরের বড়। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হতেই পারত। কিন্তু হয়নি। বন্ধুত্ব কেন, অস্কার ওয়াইল্ডের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লন্ডনের ‘স্যাভয়’ হোটেলে একটি সুখসন্ধ্যা ও রাত কাটাচ্ছেন, দুঃস্বপ্নেও ভাবা যায় না। আমার সঙ্গে অবশ্য ওয়াইল্ড বহু সুখশয্যার রাত্রি কাটিয়েছে। কারণ, আমরা দু’জনেই প্রবল সমকামী। তবে আমাদের মধ্যে কার ভূমিকা পুরুষের, কার নারীর, তা আমরাও ভালো বুঝিনি। তাতে সুখ কিছু কম পড়েনি।
প্রশ্ন হল, হঠাৎ রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ টানলাম কেন? টানলাম কারণ, আমার ফরাসি অনুবাদেই তাঁর ‘গীতাঞ্জলি’-র মাধুর্য সব থেকে বেশি ফুটে উঠেছে। এ-কথা আমার নয়। এই কথাটি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকে জানিয়ে ছিলেন তাঁর আর্জেন্টাইন প্রেমিকা, তাঁর থেকে ২৯ বছরের ছোট, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। ভিক্টোরিয়ার মাতৃভাষা স্প্যানিশ। তিনি ‘গীতাঞ্জলি’র স্প্যানিশ অনুবাদও পড়েছিলেন। আর পড়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের করা ইংরেজি অনুবাদ। ভিক্টোরিয়া কিন্তু আমার ফরাসি অনুবাদ পড়েই ‘গীতাঞ্জলি’র মুগ্ধতায় পড়লেন। এবং রবীন্দ্রনাথের প্রেমে। তারপর ১০ বছর ধরে রবীন্দ্রনাথের জন্য তেষ্টায় যন্ত্রণা পেলেন। এবং ১৯২৪-এ, আমার অনুবাদে ‘গীতাঞ্জলি’ পড়ার ১০ বছর পরে, রবীন্দ্রনাথকে পেলেন আজেন্টিনায়, একেবারে নিজের দোরগোড়ায়। বাকিটা তো ইতিহাস। যার খানিকটা রূপকথা। আর অনেকটাই লুকনো তথ্য, যার প্রকাশে সাহস পায়নি বাঙালির অর্বাচীন রবীন্দ্রপুজো।
কিন্তু, আমি অঁদ্রে জিদ, ‘গীতাঞ্জলি’ অনুবাদের ১১ বছর আগে, আমার জীবন থেকে উপাদান নিয়ে লিখেছিলাম এক তীব্র সমকামের উপন্যাস। সমকাম তখনও ছিল পাপ এবং অপরাধ। আমি সমকাম নিয়ে, তাকে সেলিব্রেট করে, লিখলাম সমাজ-সংসার কাঁপানো পাপের তুফান! উপন্যাসের নাম দিলাম ‘দ্য ইম্মর্যালিস্ট’। সমস্ত ইউরোপ কেঁপে উঠল ‘দ্য ইম্মর্যালিস্ট’-এর ধাক্কায়। রবীন্দ্রনাথ বালিশের তলায় লুকিয়ে রেখে রাত জেগে ‘দ্য ইম্মর্যালিস্ট’ পড়েননি, এমন কথা আমাকে বিশ্বাস করতে বলেন? অথচ তিনি যখন শুনলেন, আমি ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করছি ‘গীতাঞ্জলি’, টুঁ শব্দটি করলেন না। হয়তো একথা ভেবেছিলেন, লোকটা ‘ইম্মর্যালিস্ট’-এর মতো উপন্যাস লেখার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছে। কিংবা ভেবেছিলেন, এ কাজ আমার মতো কোনও পোক্ত পাপীর পক্ষেই করা সম্ভব। হয়তো একথাও ভেবেছিলেন, আহা! অঁদ্রের বন্ধু অস্কার ওয়াইল্ড যদি বেঁচে থাকত! দুর্ভাগ্য আমার, ১৯৪৭ সালে সাহিত্যে আমার নোবেল পুরস্কারের কথা রবীন্দ্রনাথ জানতে পারলেন না। কী বলতেন জানলে? ‘ওই পাপীটাও নোবেল পেল?’ না কি, বলতেন, ‘গীতাঞ্জলি অনুবাদের সুফল একদিন যে পাবেই, জানতাম।’ আশ্চর্য হই একটি কথা ভাবলে! যে-মানুষ মনপ্রাণ ঢেলে ১৯১৩ সালে অনুবাদ করলেন ‘গীতাঞ্জলি’, রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক ভাবনার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করলেন ফরাসি ভাষায়, সেই একই মানুষ ১১ বছর আগে, ১৯০২ সালে লিখলেন ‘দ্য ইম্মর্যালিস্ট’? কেমন করে সম্ভব?
সম্ভব, জীবনে ওইভাবে পাপ-পুণ্যকে আলাদা করা যায় না অঁদ্রে, সব মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। নিৎসের ‘দাস স্পোক জারাথ্রুস্ট্রা’ পড়ো, বুঝবে পাপপুণ্যের পারস্পরিকতা, এ কথা যেন অঁদ্রেকে শোনাল তাঁর লেখার টেবিল, তাঁর যৌবনে। আর ওই টেবিলে বসেই একদিন তিনি লিখলেন তাঁর গদ্য-কবিতা ‘ফ্রুটস অফ দ্য আর্থ’। ‘ফ্রুটস অফ দ্য আর্থ’-ই সেই কাব্য যাকে বলা যায় অসামাজিক সমকামের স্তব। এবং এই কবিতাতেই তিনি অস্কার ওয়াইল্ডের সঙ্গে সমকামের আবিষ্কারকে উৎসবে রূপান্তরিত করেছেন। প্রায় রবীন্দ্রনাথের ভাষাতেই বলেছেন ‘ওরে সাবধানী পথিক, বারেক পথ ভুলে মরো ফিরে’, কারণ, সেই ভোলা পথেই “ঝ’রে প’ড়ে আছে কাঁটা-তরুতলে রক্তকুসুমপুঞ্জ–”। পড়েছিলেন কি রবীন্দ্রনাথ ‘ফ্রুটস্ অফ দ্য আর্থ?’ কিংবা নিৎসের ‘দাস স্পোক জারাথ্রুস্ট্রা’, যে গ্রন্থে পাপপুণ্যকে মিশিয়ে দিয়েছেন নিৎসে, শয়তানে-ঈশ্বরে একাকার ভুবনদর্শনে! এবার শোনা যাক, জিদ্ নিজে কী বলতে পারেন:
১৯০২ সালে আমার ‘দ্য ইম্মর্যালিস্ট’ বেরবার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ শুধু কেঁপে উঠল না, আমার অবস্থাও অস্কার ওয়াইল্ডের মতোই হল। আমার বন্ধু ওয়াইল্ড অবশ্য দু’বছর আগে মরে বেঁচেছে। রবীন্দ্রনাথকে তখন তেমন করে ইউরোপ চেনেই না। আমার তো সমস্ত বই ব্যান্ড হল ইউরোপে। আমি হয়ে গেলাম সমাজচ্যুত, অপরাধী! কারণ, সবাই বুঝল, আমিই ‘দ্য ইম্মর্যালিস্ট’ উপন্যাসের সমকামী নায়ক। রবীন্দ্রনাথ যদি পড়ে থাকেন এই উপন্যাস এবং আমার বিশ্বাস, লিটন স্ট্র্যাচির বোন ডরোথির ইংরেজি অনুবাদে আমার ‘দ্য ইম্মর্যালিস্ট’ বেরলে, তিনি পড়েছিলেন। ‘ইম্মর্যালিস্ট’-এর নায়ক কিন্তু হুবহু এই উপন্যাসের লেখক আমার মতো। আমি অঁদ্রে জিদ চেয়েছি নারীকেও, পুরুষকেও। আমি উভকামী। এবং কী জানি কেন, এই উপন্যাসটি লেখার সময় বারবার আমার মনে হয়েছে, আমার লেখার টেবিলটাই যেন আমার জীবন থেকে তুলে আনছে এই উপন্যাসের সততা, এই উপন্যাসের উপাদান, দর্শন, তার গঠন ও চলন। এই উপন্যাসে কোনও বানানো কথা নেই। নেই এমন কিছু, যা আমার বা আমার এবং অস্কার ওয়াইল্ডের জীবনে ঘটেনি। ওয়াইল্ড আর আমি যদি উত্তর আফ্রিকায় বালক ও কিশোরদের সঙ্গে কিছুদিন সমকামের জীবন না যাপন করতাম, লিখতে পারতাম না ‘দ্য ইম্মর্যালিস্ট’। ইংল্যান্ডে, সেই সময়ের ইংল্যান্ডে যা সম্ভব ছিল না, উত্তর আফ্রিকায় তা সম্ভব হল। সমকামের অন্যায়বোধহীন উপভোগে ওয়াইল্ড এবং আমি শেষপর্যন্ত খুঁজে পেয়েছিলাম আমাদের সঠিক ঠিকানা, যৌন-পরিচয়!
আরও এক পাপের উপন্যাস লিখলাম আমি। বলতে গেলে লেখার টেবিলটাই ঘাড় ধরে নিয়ে গেল আমাকে আমার ‘তুতো’-বোনের সঙ্গে যৌন-সম্পর্কের স্মৃতিতে। এবং গল্পটা জোর করে লিখিয়ে নিল। আমি লিখতে চাইছি না। তবু লিখতে হচ্ছে রক্তের মধ্যে। যুগ যুগ ধরে বোধহয় এইভাবেই লেখকদের লেখার টেবিল পাকড়ে ধরে। নিয়ে যায় তাদের ফেলে আসা স্মৃতির নরকে। যন্ত্রণার লেখা লিখিয়ে নেয় তাদের দিয়ে।
‘স্ট্রেট ইজ দ্য গেট’ উপন্যাসে আমি লিখলাম আমার বোনের সঙ্গে কামনার সম্পর্কের সত্যি কথা। বোন যে ভেতর থেকে সাড়া দিতে পারছে না, সেটা আমি বুঝতে পারছি। আবার সে পালাতেও পারছে না সম্পর্কটা থেকে। বারবার ফিরে আসছে যন্ত্রণার কাছে, যতক্ষণ না সে মারা যাচ্ছে। ‘স্ট্রেট ইজ দ্য গেট’ এক নারকীয় প্রেমের, এক বিকৃত উন্মাদনার সত্য কাহিনি। এ-গল্পও নিষিদ্ধ হয়েছিল ইংল্যান্ডে। সারা ইউরোপ জুড়ে রটে গেল অঁদ্রে জিদ্ নিষিদ্ধ লেখক, পাপের পূজারি, বিকৃত রুচির মানুষ। তাঁর সমস্ত লেখার শরীর জুড়ে ছড়িয়ে আছে নরক। কিন্তু আমার লেখার টেবিল যেমন বলে, তেমনই লিখি আমি। না লিখে উপায় নেই।
এবার একটি ভয়ংকর প্রসঙ্গে আসি।
আমার জীবন, আমার লেখা, এবং আমার লেখার টেবিল– এই তিনটি সত্য থেকে, এই তিন অনিবার্য বাস্তব থেকে আমি পালাতে পারিনি। কোনও লেখক কি পারে? বানানো লেখা, যে-লেখার কোনও সম্পর্কই নেই লেখকের জীবনের সঙ্গে, সেই লেখা আর যাই হোক, সাহিত্য নয়। আমি অঁদ্রে জিদ, যত লেখা লিখেছি জীবনে, সব উঠে এসেছে আমার জীবন থেকে যেমন করে আগ্নেয়গিরি থেকে উঠে আসে লাভা, যেমন করে পাহাড়ের পাথর ফাটিয়ে বেরিয়ে আসে নদী, তেমনই আমার জীবনের সমস্ত অন্যায়, পাপ, যন্ত্রণা, বিক্ষত ব্যভিচার থেকে উঠে আসে আমার লেখা। লেখার টেবিলে বসলেই টেবিলটা আমাকে নিয়ে যায় আমার অতীতে। আমার আমাকে বলে, ‘তোর অতীতের পাপ, অপরাধ, নরকই তোর লেখার স্বর্গ। সব রত্ন লুকিয়ে আছে ওখানেই। তোর পক্ষে লেখার উপাদান আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।’
এবার আমি আমার জীবনের কথা কিছু বলি। প্রায় বুড়ো বয়সে আমার যক্ষ্মা হল। যক্ষ্মা রোগটা হল আমার ঘন ঘন আফ্রিকা যাওয়ার ফলে। আফ্রিকায় যৌনতার জন্য যাব, যৌন রোগ বা যক্ষ্মা হবে না, তা কি হয়? যাক যক্ষ্মারোগে ভুগতে ভুগতে ‘তুতো’ বোন ম্যাডলিনকে বললাম, ‘তোমাকেই বিয়ে করব।’ কারণ, বোনের নেশাটা আমার সত্যি বলতে কাটেনি। আমার যক্ষ্মা হয়েছে শুনে বোন বিয়ে করতে রাজি নয়। আমি বললাম, ‘বোনকে বিয়ে করলেই বিয়েটা যথার্থ আধ্যাত্মিক হবে।’ এবং সেটাই আমি চাইছিলাম। বোন বলল, ‘আধ্যাত্মিক বিয়ে বলে কিছু হয় না।’ ততদিনে আমি রবীন্দ্রনাথ পড়েছি গভীরভাবে। গীতাঞ্জলি অনুবাদ করেছি। ‘বিয়ে আধ্যাত্মিক হতেই পারে’, বললাম বোনকে। আমার গায়ে যক্ষ্মার জ্বর সব সময়ে। সুতরাং, শরীরেও উত্তাপেরও অভাব হবে না। বোন বলল, ‘তোমাকে স্বামী ভাবতে পারব না। ভাই ভাবলে যে বিকৃত তাড়নাটা পাই, সেটা না হলে পাপবোধের যন্ত্রণা পাব না। আর না যন্ত্রণা পেলে শরীর জাগবে না।’
এইরকম জটিল মানসিক অবস্থা নিয়ে বোন ম্যাডলিন আমাকে বিয়েও করল। এবং অচিরে তারও যক্ষ্মা হল। এবং মুখ দিয়ে রক্ত উঠতে লাগল। একেই কি বলে আধ্যাত্মিক বিয়ে? এই প্রশ্নটা আমি তুলেছি আমার উপন্যাসে। ‘ইম্মর্যালিস্ট’-এর মার্সেলিনই আমার বোন, যাকে বিয়ে করলাম, সেই কিন্তু আমার উপন্যাসের ম্যাডলিন! এবং এই আধ্যাত্মিক বিয়ের ভাবনাটা, আমার তো মনে হয়, রবীন্দ্রনাথের প্রেমদর্শন এবং প্রেমের কবিতার খুব একটা দূরের নয়।
আমার জীবন ও সাহিত্য নিয়ে এত কথা বলার পর, এবার আসল কথাটায় আসি। ফরাসি ভাষায় রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ অনুবাদের কাজটা যখন আমার কাছে এল, আমি বেশ অবাক হলাম। ততদিনে, অর্থাৎ, ১৯১৩ সাল পর্যন্ত আমি যতটুকু রবীন্দ্রসাহিত্য ও দর্শন পড়েছি, তাঁর সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র মিল খুঁজে পাইনি। শুধু একটি কথা আমার বারবার মনে হয়েছে। তিনি একইসঙ্গে পুরুষ এবং নারী। তাঁর প্রেমের কবিতায় তিনি কখনও নারী, কখনও পুরুষ। এবং এই ভাবটি আমার মধ্যেও আছে। আমি সোহাগ-শয্যায় কখনও হতে পারি পুরুষ, কখনও হতে পারি নারী। আমার লেখাতেও। আমার জীবনদর্শনে। ভুবনদর্শনে। এবং যৌনতায়। আমি নারীপুরুষ একসঙ্গে।
……………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………..
আমি ফরাসি ভাষায় ‘গীতাঞ্জলি’ অনুবাদ করছি, রবীন্দ্রনাথ জানতেন না, তা নয়। এবং আমার বিশ্বজোড়া বেপরোয়া বদনাম, তার খোঁজও তিনি রাখতেন নিশ্চয়। কিন্তু ‘গীতাঞ্জলি’ আমার হাতে পড়েছে জেনেও তিনি কোনও নালিশ, কোনও আপত্তি কখনও করেননি। এবং ‘গীতাঞ্জলি’ অনুবাদ করতে করতে আমি যে গূঢ় সত্যটি ক্রমশ অনুভব করলাম, তা হল ‘গীতাঞ্জলি’র রবীন্দ্রনাথ একইসঙ্গে এক তৃষ্ণার্ত নিঃসঙ্গ প্রার্থী নিবেদিত সমর্পিত পুরুষ ও নারী।
‘গীতাঞ্জলি’ আমার প্রাণ কেড়ে নিল! যেন আমারই কথা, আমি অনুবাদ করলাম ফরাসি ভাষায়। ‘গীতাঞ্জলি’ যখন অনুবাদ করেছি, আমার লেখার টেবিল আমাকে ক্রমাগত বলেছে, ‘এ তোমারই নতুন জন্ম অঁদ্রে জিদ। তোমার অনুবাদে তুমি নিজের কথাই বলছ। প্রাণ ঢেলে ঝরনার মতো। তোমার অনুবাদে তোমার মধ্যে একইসঙ্গে জেগে উঠুক নারীপুরুষ। গীতাঞ্জলি হয়ে উঠুক কখনও উভপ্রার্থনার, কখনও উভকামনার গান।’
…………………….. পড়ুন কাঠখোদাই-এর অন্যান্য পর্ব ……………………
পর্ব ১৬: যে লেখার টেবিল ম্যাকিয়াভেলিকে নিয়ে গেছে শয়তানির অতল গভীরে
পর্ব ১৫: যে অপরাধবোধ লেখার টেবিলে টেনে এনেছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে
পর্ব ১৪: লেখার টেবিল গিলে নিচ্ছে ভার্জিনিয়া উলফের লেখা ও ভাবনা, বাঁচার একমাত্র উপায় আত্মহত্যা
পর্ব ১৩: হ্যামনেট ‘হ্যামলেট’ হয়ে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল, জানে সেই লেখার টেবিল
পর্ব ১২: রবীন্দ্রনাথের লেখার টেবিল চিনতে চায় না তাঁর আঁকার টেবিলকে
পর্ব ১১: আর কোনও কাঠের টেবিলের গায়ে ফুটে উঠেছে কি এমন মৃত্যুর ছবি?
পর্ব ১০: অন্ধ বিনোদবিহারীর জীবনে টেবিলের দান অন্ধকারের নতুন রূপ ও বন্ধুত্ব
পর্ব ৯: বুড়ো টেবিল কিয়ের্কেগার্দকে দিয়েছিল নারীর মন জয়ের চাবিকাঠি
পর্ব ৮: অন্ধকারই হয়ে উঠলো মিল্টনের লেখার টেবিল
পর্ব ৭: কুন্দেরার টেবিলে বসে কুন্দেরাকে চিঠি
পর্ব ৬: মানব-মানবীর যৌন সম্পর্কের দাগ লেগে রয়েছে কুন্দেরার লেখার টেবিলে
পর্ব ৫: বিয়ের ও আত্মহত্যার চিঠি– রবীন্দ্রনাথকে যা দান করেছিল লেখার টেবিল
পর্ব ৪: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের টেবিল আর তারাপদ রায়ের খাট, দুই-ই ছিল থইথই বইভরা
পর্ব ৩: টেবিলের গায়ে খোদাই-করা এক মৃত্যুহীন প্রেমের কবিতা
পর্ব ২: লেখার টেবিল ভয় দেখিয়েছিল টি এস এলিয়টকে
পর্ব ১: একটি দুর্গ ও অনেক দিনের পুরনো নির্জন এক টেবিল