‘ক্ল্যাপস্টিক’ প্রভাত রায়ের চলমান সিনেজীবনের রঙিন পাথরকুচি। প্রকাশিত হয়েছে দীপ প্রকাশন থেকে। বহু অভিনেতা, মানুষের সংস্পর্শ, এই বইয়ের আধার। রইল, অপর্ণা সেনের সঙ্গে প্রভাত রায়ের কাজ করা, সম্পর্কের টুকরোটাকরা।
এমন কিছু মহিলা থাকেন, যাঁরা হয়তো ডানাকাটা পরি নন। যাঁদের হয়তো কাটা কাটা নাক চোখ-মুখ নেই। যাঁদের ফিগার হয়তো ইংরেজির আট নয়। যাঁরা হয়তো মিস ওয়ার্ল্ড বা ইউনিভার্স হওয়ার প্রতিযোগিতায় যোগ দেন না। কিন্তু তাঁদের চালচলন, কথাবার্তা, তাঁদের হাসি, তাঁদের বাচনভঙ্গি, তাঁদের ব্যক্তিত্ব আপনাকে মুগ্ধ করবে। এরকম একজন মহিলার নাম, অপর্ণা সেন। আর তাই অপর্ণা অনন্যা।
আমি তখন বম্বে থেকে কলকাতায় এসে কখনও হয়তো স্টুডিওতে শুটিং করছি ‘প্রতিদান’, ‘প্রতিকার’ অথবা ‘প্রতীক’-এর। তখন মাঝেমধ্যে অপর্ণা সেনকে দেখতাম এবং ভাবতাম, এই মহিলার সঙ্গে কাজ করতেই হবে। কিন্তু দেখা হলেই শুধু ‘নমস্কার’, ‘কেমন আছেন’, ব্যস, এর বেশি কোনও দিন কথা হয়নি। উনি বলেননি, আমিও বলতে পারিনি।
এমন সময় হঠাৎ একদিন সাংবাদিক বন্ধু স্বপন ঘোষ বলল, একজন প্রযোজক, নাম শঙ্কর গোপ, আমাকে দিয়ে একটা ছবি করাতে চান, কিন্তু নায়িকা হবেন অপর্ণা সেন। বললাম, সর্বনাশ, আমার সঙ্গে তো আলাপই নেই। খোঁজখবর নিয়ে স্বপন জানতে পারল দুই-একদিন পরে অপর্ণা সেনকে পাওয়া যাবে সল্টলেকের রূপায়ণ ল্যাবে।
গেলাম আমরা। স্বপন আলাপ করিয়ে দিল। বলল, আপনাকে নিয়ে ছবি করতে চায়। অপর্ণা সেন এক বালতি ঠান্ডা জল ঢেলে দিলেন আমার উপর। বললেন, ‘আপনি তো মারদাঙ্গার ছবি করেন। আপনার হিরো তো মাথায় ফেট্টি বেঁধে মারামারি করে। কী যেন নাম ছবিটার?’ বললাম, ‘প্রতিকার। দেখেছেন আপনি?’ ঠোঁট টিপে হেসে বললেন, ‘মারামারির ছবি দেখতে পারি না। মাথা ধরে যায়। তাই আপনার ছবি কী করে করব? আমি তো মারামারি করতে পারি না।’
খোঁচাটা বেশ ভালই ছিল। সামলে নিয়ে বললাম, আপনাকে নিয়ে ছবি করলে, মারামারির ছবি নয়, আপনি যেমন ছবি করতে ভালোবাসেন, সেই ধরনের ছবিই করব।
‘পারবেন?’ আবার আলতো খোঁচা। বললাম, আমি শক্তি সামন্তের কাছে দশ বছর কাজ করেছি। উনি ‘হাওড়া ব্রিজ’, ‘অ্যান ইভনিং ইন প্যারিস’, ‘কাশ্মীর কি কলি’ যেমন করেছেন, তেমনই আবার ‘আরাধনা’, ‘কটি পতঙ্গ’, ‘অনুরাগ’, ‘আনন্দ আশ্রম’-ও করেছেন। আর একটা কথা, মারামারির ছবি করা কিন্তু খুব শক্ত। টেকনিক্যাল কাজটা ভাল জানতে হয়। অবিশ্বাস্য, অবাস্তব ব্যাপারকে মানুষের বিশ্বাসযোগ্য করে হাততালি পাওয়া এবং ছবি হিট করানো খুব একটা সহজ নয়। সত্যজিৎ রায়ও ‘শোলে’ দেখে এইরকমই কিছু বলেছিলেন। কথাগুলো হয়তো অপর্ণার ভাল লেগেছিল। বোধহয় আমার আত্মবিশ্বাস দেখে উনি রাজি হলেন আমার সঙ্গে কাজ করতে। বললেন, ‘গল্প কিছু ভেবেছেন?’ বললাম, ভাবনায় আছে একটা গল্প, এখনও স্ক্রিপ্ট হয়নি। সেটা আপনাকে শোনাতে পারি। যদি একটু সময় দেন?
তিন-চারদিন পরে একটা দিনে ওঁর বাড়িতে যেতে বললেন। গেলাম ওর নিউ আলিপুরের ফ্ল্যাটে। তখন উনি ওখানেই থাকতেন। আভিজাত্যে সাজানো সুন্দর ফ্ল্যাট। ট্রলিতে চা-বিস্কুট এল। না, নার্ভাস হইনি।
‘লাঠি’-র গল্পটা তখন ভাবা ছিল। শিক্ষকের চরিত্রকে শিক্ষিকা করে, ‘কল্যাণী’ নাম দিয়ে শোনালাম ওঁকে। বললেন, ‘মন্দ নয়। কিন্তু চার ছেলেমেয়ের মায়ের চরিত্র; ওটা ঠিক ভাবতে পারছি না। এক ছেলে বা এক মেয়ে হলে ঠিক ছিল।’
এর পরেই দুম করে বললেন, ‘বই-টই পড়ার অভ্যেস আছে?’ বললাম, পড়ি, কিন্তু এই মুহূর্তে তেমন কোনও গল্প মনে পড়ছে না। উনি একটু ভেবে বললেন, “ক’দিন আগে একটা পুজোসংখ্যায়, পুজোসংখ্যার নামটা মনে পড়ছে না, একটা গল্প পড়লাম। ‘শ্বেতপাথরের থালা’। বাণীদির, মানে বাণী বসুর লেখা। পড়ে দেখতে পারেন।” অভিনেতা নির্মলকুমারের সঙ্গে পরের দিন হঠাৎ রাস্তায় দেখা। জিজ্ঞেস করায় বললেন, ‘আরে আমার কাছে আছে ওই সংখ্যাটা। বাড়িতে এসো, দিয়ে দেব।’ কী অদ্ভুত যোগাযোগ। পেয়ে গেলাম ‘শ্বেতপাথরের থালা’। পড়লাম, ভীষণ ভাল লাগল। ফোন করলাম অপর্ণা সেনকে। বললেন, ‘তাহলে স্ক্রিপ্ট করে ফেলুন। চার-পাঁচ মাসের মধ্যে হয়ে যাবে তো?’ বললাম, আমার দিন পনেরো সময় লাগবে। উনি আওয়াজ করে হাসেননি, তাহলে ফোনে শুনতে পেতাম। কিন্তু হেসেছিলেন ঠিকই, বললেন, ‘তাড়াহুড়ো না করে ভেবেচিন্তে লিখুন। গল্পটা খুব ইন্টারেস্টিং।’
আমার জিদ চেপে গেল। তখন হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে দশটা ছবি করা হয়ে গিয়েছে। ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’, ‘অনুসন্ধান’ এবং নিজের ছবিগুলোর স্ক্রিপ্ট লিখেছি। তাই পুরো আত্মবিশ্বাস নিয়ে, রাত-দিন কাজ করে পনেরো দিনে স্ক্রিপ্ট শেষ করলাম। ফোন করলাম অপর্ণা সেনকে। অবাক হয়ে বললেন, ‘সত্যি? তাহলে আসুন পরশুদিন।’ গেলাম। বললেন, ‘কী খাবেন? চা, না কফি?’ বললাম, কিচ্ছু না। স্ক্রিপ্ট শুনুন আগে। তারপর খাওয়া যাবে। নিয়ে গেলেন ভেতরের একটা ঘরে। মেঝেতে কার্পেটে বসা হল। শুরু করলাম পড়া। বেশ মন দিয়ে শুনছিলেন। এক সময় যখন স্ক্রিপ্টের ওই জায়গায় পৌঁছলাম যেখানে বন্দনার স্বামীর মরদেহ সাদা চাদরে ঢাকা অবস্থায় হাসপাতালের ট্রলিতে শোয়ানো আছে, এবং বন্দনা তার পুরো পরিবারের সঙ্গে স্লো মোশনে দৌড়ে আসছে, এসে স্বামীর গায়ের চাদরটা টানল, সাদা চাদরটা বন্দনার গায়ে জড়িয়ে গেল, (কাট টু) বন্দনা বিধবার সাদা শাড়ি পরে রান্নাঘরের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
অপর্ণা বললেন, ‘ব্যস, আর পড়তে হবে না। আমি ছবি করব আপনার সঙ্গে। আর একটা কথা, আমার ওই আপনি-আজ্ঞে-অপর্ণাদেবী- এসব শুনতে ভাল লাগে না। ছবি করতে গেলে আমাদের দু’জনকেই দু’জনের কাছে সহজ হতে হবে। বন্ধু হতে হবে। তাই আজ থেকে তুমি আমাকে ‘রিনা’ বলবে, আমিও তোমায় প্রভাত বলব। ঠিক আছে?’
মুহূর্তে আমিও সহজ হয়ে গেলাম। বললাম, রিনা আমারও একটা শর্ত আছে। আমি মনে করি, তুমি অভিনেত্রী নিশ্চয়ই ভাল, কিন্তু তার চেয়ে ভাল তুমি পরিচালক। তাই শুটিংয়ের সময় তোমার যদি কোনও শট ঠিক না লাগে, তোমার যদি কোনও সাজেশন থাকে, তুমি আমাকে সেটা সকলের সামনে না বলে, আলাদাভাবে বলবে। নাহলে সবাই ভাববে আমি নয়, ছবিটা তুমি পরিচালনা করছ। আর আমারও যদি তোমার অভিনয় নিয়ে কিছু বলার থাকে, তাহলে সকলের সামনে নয়, আমিও তোমাকে আলাদাভাবে বলব। হেসে রিনা বলল, ‘খুব ভাল। মনে হচ্ছে তোমার সঙ্গে কাজ করে ‘ভালোই লাগবে।’ তারপর চা-কফি নয়। জমিয়ে লাঞ্চ খেয়ে বাড়ি ফিরলাম। সব শুনে শঙ্কর গোপ তো মহাখুশি।
এরপর সারা ছবিতে, না রিনা আমাকে কিছু বলেছে, না আমি ওকে! বেশ সুন্দর বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল। সত্যি এত মনপ্রাণ দিয়ে রিনা ‘শ্বেতপাথরের থালা’-য় অভিনয় করেছিল, বন্দনার চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলেছিল, যে কখনও কিছু বলার প্রয়োজনই হয়নি। শুধু শুটিংয়ের সময় ক্যামেরা জোন বোঝাবার জন্যে আমি মুভমেন্টটা দেখিয়ে দিতাম। রিনা আর একটা কাজ করত, শুটিং প্যাক আপের পর পরের দিন শুটিংয়ে ও বিধবা হলে খুব ভাল করে চুলে শ্যাম্পু করে আসত। যাতে শুকনো-শুকনো রুক্ষ লাগে। আমি অবশ্য স্ক্রিপ্টের সঙ্গে কবে কী শুটিং হবে তার একটা চার্ট ওকে বানিয়ে দিয়েছিলাম।
আর একটা ব্যাপারে রিনা আমাকে খুব সাহায্য করত। শুটিংয়ের সেট সাজাবার ব্যাপারে। কোথায় সুদেষ্ণা রায় কিংবা বিবিদির বাড়িতে পুরনো দিনের ড্রেসিং টেবিল বা প্রপারটি আছে, সেগুলো আনিয়ে দিত। এমনকী, একদিন আমার বাড়িতে এসে দেখেছিল সাইড টেবিলে সাজানোর জন্য ছোট ছোট পেতলের মূর্তি আছে, সেগুলো আমার স্ত্রী জয়শ্রীকে ফোন করে চেয়ে পাঠাল।
মাঝেমাঝে ঋতুপর্ণ ঘোষ আসত। ওর সঙ্গে, তাকে দিয়েও এটা ওটা আনাত। যার ফলে ‘শ্বেতপাথরের থালা’-র সেটগুলোর লুক খুব ন্যাচারাল হয়েছিল। এমনকী, ছবিতে ওর নিজের শাড়ি পছন্দ করার জন্য আমাকে সঙ্গে করে দোকানে নিয়ে যেত। মোট কথা, ‘শ্বেতপাথরের থালা’ ছবিটা যাতে একটা ভাল ছবি হয় তার জন্য রিনা খুবই সাহায্য করেছে আমাকে।
এবার একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনার কথা বলি। ছবিতে অপর্ণার লিপে রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও আর একটা গান রাখার ইচ্ছে ছিল আমার। আর ডি বর্মনের সুরে লতা মঙ্গেশকর গেয়েছিলেন, ‘যে প্রদীপ জ্বালছ তুমি হয়তো নিভে যাবে।’ রিনা গানটা শুনে বলল, ‘আমার মুখে গানটা ঠিক ভাল লাগবে না। তুমি এটা অন্য কারও লিপে দাও।’
আমি বললাম, না, গানটা তোমার মুখেই থাকবে। আমি এমনভাবে পিকচারাইজ করব, দেখো, তোমার ঠিক ভাল লাগবে।
রিনা বলল, ‘যদি গানটা আমার মুখে ভালো না লাগে তাহলে কিন্তু গানটা তুমি ফেলে দেবে।’ আমি বললাম, ঠিক আছে তাই হবে। গানটা আমি, নিজে পিচারাইজ করেছিলাম ব্যারাকপুরের মঙ্গল পান্ডে ঘাটে। গঙ্গার ধারে। ট্রলি, ক্রেন ইত্যাদি ব্যবহার করে নানা অঙ্গেল থেকে নানাভারে গানটা শুট করেছিলাম। গানটার মধ্যে রিনা ছাড়াও ছিল দীপঙ্কর (টিটো), ইন্দ্রাণী হালদার, রাহুল বর্মন। শুটিং হরে যাওয়ার পর রিনা বলল, ‘মনে হয় গানটা জমবে না।’ বললাম, গানটা এডিট করে তোমাকে দেখাব। তখন বোলো।
এডিট করার পর এনটি ওয়ান স্টুডিওর রেকর্ডিং থিয়েটারে প্রোজেকশন রাখলাম। রিনা, টিটো, স্বপন ঘোষ সবাই এল। প্রোজেকশন শেষ হওয়ার পর টিটো, স্বপন খুব প্রশংসা করল। কিন্তু রিনা কিছু, না বলে চলে গেল। আমরা হতাশ হয়ে ভাবলাম তাহলে গানটা ছবি থেকে বাদ দিতে হবে। কারণ শর্ত এটাই ছিল।
সন্ধেবেলা আমার ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজল। দরজা খুলে দেখি, রিনার তখনকার সেক্রেটারি (সম্ভবত নাম ছিল বাদল) দাঁড়িয়ে। আমাকে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে দিয়ে বলল, ‘অপর্ণা সেন এটা আপনাকে পাঠিয়েছেন। ওঁর গানটা খুব ভাল লেগেছে।’ ব্যাগের ভিতর দেখি এক বোতল জনি ওয়াকার, ব্ল্যাক লেবেল হুইস্কি। মনটা খুশিতে ভরে গেল।
এরকম আরও অনেক ঘটনা আছে, যা দেখে আমার মনে হয়েছিল রিনা সত্যিই অনেকের থেকে আলাদা।
একদিন রাত্রে ইন্ডিয়া ল্যাবের ছাদে শুটিং হচ্ছে। ইন্দ্রাণী হালদারের নাচ-গান। রিনা দোলনায় বসে। সব্যসাচীও আছে। সেদিন কী কারণে যেন রাত্রে আমার ডিনার করা হয়নি। মাধব কিষণ ডান্স ডিরেক্টর ছিল। সে জানতে পারে আমার খাওয়া হয়নি। বাকি সবার তখন খাওয়া হয়ে গেছে। মাধব কথায় কথায় রিনাকে সে কথা বলে। রাত তখন প্রায় ১১টা। শুটিংয়ের খাবারও সব শেষ। শুটিং চলছে। রাত ১২টা নাগাদ, প্রোডাকশন ম্যানেজার পালবাবু আমাকে একটা খাবারের প্যাকেট এনে দিল। বলল, ‘রিনাদি আপনার জন্যে আনিয়েছেন। এখানে কিছু পেলাম না তাই ধর্মতলার পার্ক হোটেল থেকে নিয়ে এলাম।’ প্যাকেট খুলে দেখি চিকেন কাটলেট, স্যান্ডউইচ।
রিনার দিকে তাকালাম। কাছে ডেকে বলল, ‘খালি পেটে কাজ করা যায় না, খেয়ে নাও।’ বললাম, সত্যি রিনা, তোমার জবাব নেই।
রিনা বলল, ‘নাকি?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ কি’। এই কথা দুটো, ‘নাকি’ এবং ‘হ্যাঁ কি’ পুরো ছবিতে সব্যসাচী এবং রিনার সংলাপে অনেকবার ব্যবহার করা হয়েছিল। একটা কথা স্বীকার করতেই হবে, ‘শ্বেতপাথরের থালা’ ছবিটা হয়তো আমার করাই হত না যদি অপর্ণা সেন ছবিটা করতে রাজি না হত।
‘শ্বেতপাথরের থালা’ মিনার-বিজলি-ছবিঘরে ১৬ সপ্তাহ করে চলেছিল তিনটে করে শো। গোল্ডেন জুবিলি হয়েছিল। তার সঙ্গে শ্রেষ্ঠ পারিবারিক ছবি হিসাবে ১৯৯৩ সালে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল অপর্ণারও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। পরে শুনেছিলাম, মাত্র দুটো ভোটে জিতে সে বছর মীনাক্ষী শেষাদ্রি ‘দামিনী’ ছবির জন্যে পুরস্কৃত হন।
আর একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি। আমার ‘লাঠি’ ছবিটা কিন্তু ‘শ্বেতপাথরের থালা’-র চেয়েও বড় হিট করেছিল। ২৫ সপ্তাহ চলেছিল, এবং ‘লাঠি’-ও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল, অথচ লোকে আমাকে আজও চেনে ‘শ্বেতপাথরের থালা’-র পরিচালক হিসাবে। আজও বহু মানুষ বলেন ছবির গল্পটি সময়ের থেকে অনেকটা এগিয়ে ছিল।
সেটাও কি অপর্ণা সেনের প্রতি মানুষের আকর্ষণের জন্য? অপর্ণাকে নিয়ে আবার ছবি করার কথা অনেকবার ভেবেছি। নানা গল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কখনওই আমরা দু’জনে সেই গল্পে একমত হতে পারিনি। এমনকী, একবার ‘শ্বেতপাথরের থালা’-র সিকুয়েল করার কথাও ভেবেছিলাম। বাণীদিকে লিখতে বলেছিলাম, কিন্তু উনি সেভাবে ইন্টারেস্ট দেখাননি।
……………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………..
তা ছাড়া রিনা নিজের পরিচালনা নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অভিনয়ের চেয়ে সেদিকে ওর আগ্রহ বেশি থাকার জন্য আমিও আর ইন্টারেস্টেড হইনি। এখনও মাঝেমধ্যে আমাদের দু’জনের দেখা হয় ফেস্টিভ্যাল বা কোনও অনুষ্ঠানে। গল্প হয়। ছবি করার কথাও হয়। ব্যস, ওই পর্যন্তই।
কিন্তু এখনও মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, আবার অপর্ণাকে নিয়ে একটা ছবি করি।
ছবিঋণ: ‘ক্ল্যাপস্টিক’ গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত
ক্ল্যাপস্টিক
প্রভাত রায়
দীপ প্রকাশন
৩৫০ টাকা
পাকিস্তানী বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের কথা বলতে বলতে তাঁর অশ্রুসজল চোখ দেখে শুধু সেই সময় নির্বাক হয়েছিলাম তা’ নয়, আজও তাঁর সেই চোখ দেখতে পাই, শুনতে পাই মানুষের প্রতি মানুষের বর্বরোচিত অত্যাচারের সেই গল্প বলতে বলতে তাঁর রুদ্ধ কণ্ঠস্বর।