কলের চেহারা রাজকীয় থামের মতো হওয়ার কারণ স্থাপত্য বিদ্যায় বলা হয়– থাম স্থাপত্যের অবলম্বন। সেই অবলম্বনের কথাই আবার ফিরে এল জলের কলে। সঙ্গে সিংহের যুক্ত হওয়ার মানে হল রাজকীয় বদান্যতা। হাইকোর্টের সামনেও সেই সুচিন্তিত থামে রাজ বদান্যতার বৈভবের অলংকার আর সঙ্গে ইংরেজের রাজ্য পাটের বছরের গৌরবের হিসেব। এখানে শুধু লোহার বদলে এল পাথরের খোদাইয়ের নকশা।
৮.
ধীরে ধীরে বোঝা গেল নগরসজ্জার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজ মূর্তি বসায় নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেই। কোনও কিছুকেই বাদ দিয়ে নয়। স্থাপত্যের স্তম্ভ থেকে শুরু করে জল ফোয়ারার মুখও।
জল ফোয়ারা বসানোর সিদ্ধান্ত যখন নিচ্ছেন ইংরেজ বাহাদুর, সেই সময়েও নিজেদের ভাবমূর্তি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন তাঁরা। সুদূর ব্রিটেন থেকে নকশা এনে জল ফোয়ারা লাগানো হল হাই কোর্টের সামনের অভিজাত এলাকায়। আজও রেলিং বন্দি সেই জল ফোয়ারা। কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ?
………………..
ব্রিটিশের ভাবনায় এদেশের ক্লান্ত পথচারী পথিকের জল পানের জন্য তালাওগুলি ছাড়া কোনও গন্তব্য নেই। তাও সেই তালাওয়ের জল পরিষ্কার থাকার বদলে অধিকাংশ সময়েই মানুষ, গবাদি পশুর স্নানে সেই জল দূষিত হয়েই থাকে। আর সেই জল পান করেও মাঝে মধ্যেই কলকাতার ছোট ছোট জনপদ লোকমৃত্যুতে উজাড় হয়ে যায়। সুতরাং, এই সমস্যার একটা বিহিত হওয়া দরকার।
………………..
এই জিজ্ঞাসার উত্তর একটাই। ব্রিটিশের ভাবনায় এদেশের ক্লান্ত পথচারী পথিকের জল পানের জন্য তালাওগুলি ছাড়া কোনও গন্তব্য নেই। তাও সেই তালাওয়ের জল পরিষ্কার থাকার বদলে অধিকাংশ সময়েই মানুষ, গবাদি পশুর স্নানে সেই জল দূষিত হয়েই থাকে। আর সেই জল পান করেও মাঝে মধ্যেই কলকাতার ছোট ছোট জনপদ লোকমৃত্যুতে উজাড় হয়ে যায়। সুতরাং, এই সমস্যার একটা বিহিত হওয়া দরকার।
শুরু হল পান করার যোগ্য জলের কল বা ফোয়ারা লাগানোর ব্যবস্থা। শহরের অধিকাংশ জায়গায় বসতে লাগল ঢালাই লোহার কল আর হাইকোর্টের কাছে সাহেব পাড়ায় বসানো হল সেই কলেরই রাজ সংস্করণ। রিলিফ ভাস্কর্যের নকশায় জ্বলজ্বল করছে এক অভিনব জল ফোয়ারা। মুরগিহাটা থেকে শুরু করে যেখানে যত ভিস্তির দল ছিল এবার তারাও শুরু করল এই অভিনব কল থেকে জল নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসত। নগরের লোহা ঢালাইয়ের কলের চেহারা হল একেবারে বাড়ির থামের মতো। আর সেই থামের মুখে সিংহের গম্ভীর উপস্থিতি। নগরের নকশাকারদের সুচিন্তিত ভাবনা কাজ করেছে এই নির্মাণের পিছনে।
কলের চেহারা রাজকীয় থামের মতো হওয়ার কারণ স্থাপত্য বিদ্যায় বলা হয়– থাম স্থাপত্যের অবলম্বন। সেই অবলম্বনের কথাই আবার ফিরে এল জলের কলে। সঙ্গে সিংহের যুক্ত হওয়ার মানে হল রাজকীয় বদান্যতা। হাইকোর্টের সামনেও সেই সুচিন্তিত থামে রাজ বদান্যতার বৈভবের অলংকার আর সঙ্গে ইংরেজের রাজ্য পাটের বছরের গৌরবের হিসেব। এখানে শুধু লোহার বদলে এল পাথরের খোদাইয়ের নকশা। এইভাবেই নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার কাজে সতর্ক ইংরেজ নিজের স্থায়ী আসন পাতার বন্দোবস্ত করছিল একটা সময় ধরে। আজও সেই সময়ের স্বাক্ষর জেগে রয়েছে এমন জল ফোয়ারার রিলিফ ভাস্কর্যে।
জাতি হিসেবে বাঙালি নির্বাক ছিল না কখনও, তার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির দিকচিহ্নগুলিকে আবারও নতুন করে ফিরে দেখা সম্ভব হবে, বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। পৃথিবীর তাবৎ সংস্কৃতি গবেষণার চিন্তন-ভূগোলে বাংলা ভাষা এবং বাঙালি সাংস্কৃতিক নতুনতর মাত্রা যোগ করবে– এ দাবি অহেতুক নয়।