আজব ঘর বাপু। এই সকলে ‘হাঁস ছিল সজারু’, আবার পরের মুহূর্তে ‘রামগরুড়ের ছানা’। কখন কে সিরিয়াস, কখন ইয়ার্কির ছল, আগে থেকে বোঝা মুশকিল! তারই মাঝে সরোজদার গাম্ভীর্য, সম্বিতদার চিন্তার রেলা, পালকিদির আন্দোলনময় মন ও সুমন্তর স্টেডি ব্যাটিংয়ে রোববার.ইন গড়গড়িয়ে চলল। বিষয় নিয়ে আমরা কি খুব রক্ষণশীল? খুব নাকউঁচু? বলব, একেবারেই না।
দেখতে না দেখতে দুই! এই তো সেদিন ঘরে তুমুল হইহল্লা! কী থাকবে না থাকবে, ডিজাইন কী হবে, সাইট কে বানাবে, আর কবেই বা লঞ্চ হবে। এতকাল ধরে, এতদিন ধরে যে পত্রিকা বেরল, তা এখন ডিজিটালে মুখ দেখাবে। পাতার পাশাপাশি, এখন হাওয়ায় হাওয়ায়– ফোনে, ল্যাপটপে, মোবাইলে!
আহা, এটুকু বললে তো পুরো বলাটাই হয় না। কারণ লোকে ভেবে বসবেন, ‘রোববার’ পত্রিকাই তার মানে রোববার.ইন হয়ে গেল। আজ্ঞে না। পত্রিকার কোনও লেখাই এখানে ঠাঁই পায় না। টিম তো আলাদা বটেই। কাজের ধরনেরও বিস্তর ফারাক। তবু রোববারের স্বাদ তো আছেই। কীরকম স্বাদ? তা দিনের শেষে বাংলা ও বাঙালির।
স্টুডিওর ছোট ঘরে, সরোজদার পিঠোপিঠি গিয়ে বসেছিল সম্বিতদা। পাশেই পালকিদি। অর্ঘ্য, গ্রাফিক্সের দায়িত্ব নিয়ে তখন ছাদের ঘরেই। ওদের কনটেন্ট নিয়ে নানা মগজমারির পাশাপাশি গ্রাফিক্স নিয়েও তুল্যমূল্য আলাপ-আলোচনা। লিকার চা, মুড়ি, ছাদে মিলেমিশে নানা কথার মাঝে কী কপি, কী লেখা, কী সাক্ষাৎকার, কী আধুনিক শয়তানি করা চলে, তার ছক। এরই মাঝে, শান্তশিষ্ট রক্তমাংসের বাংলাভাষা হানা দিল স্টুডিওর ঘরে। যার নাম সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়। চমৎকার বাংলা লেখে। বানান নিয়েও দুশ্চিন্তা করে। সাহিত্যবোধ জবরদস্ত। কিন্তু ময়দানে স্পেস পাচ্ছে না ডানা মেলার। সারাজীবন ডেস্কে বসে অন্যের কপি সাবিং করে কেটে যাবে! অতএব অফিশিয়ালি সুমন্তকে হাইজ্যাক করে রোববার.ইন। এতদিন কাজের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা হতে যায়, এমন ডিপার্টমেন্ট ধুলো ঝেড়ে দাঁড়াল। ওদিকে অর্ঘ্যর পাশাপাশি সোমোশ্রী গ্রাফিক্সে। একের পর এক মেট্রো মিস করে, শেষ পর্যন্ত পছন্দসই করে তুলে তবেই বেশি রাত করে বাড়ি গিয়েছে। দেবাঞ্জন, গোটা অফিসের দেবা, তার নেপথ্যে থেকে ক্রমাগত রোববার.ইন-এর জন্য যে কাজ করে চলেছে, সে খুব কম জনই জানে। টেকনিক্যাল সাপোর্ট থেকে শুরু করে, রোববার-এর আর্কাইভ তৈরি!
আজব ঘর বাপু। এই সকলে ‘হাঁস ছিল সজারু’, আবার পরের মুহূর্তে ‘রামগরুড়ের ছানা’। কখন কে সিরিয়াস, কখন ইয়ার্কির ছল, আগে থেকে বোঝা মুশকিল! তারই মাঝে সরোজদার গাম্ভীর্য, সম্বিতদার চিন্তার রেলা, পালকিদির আন্দোলনময় মন ও সুমন্তর স্টেডি ব্যাটিংয়ে রোববার.ইন গড়গড়িয়ে চলল। বিষয় নিয়ে আমরা কি খুব রক্ষণশীল? খুব নাকউঁচু? বলব, একেবারেই না। বরং, এমন বহু হালকাপুলকা বিষয় নিয়েই আমরা তেড়ে লিখেছি ও লিখিয়েছি। পাঠকেরাও সানন্দে পড়েছেন। ডিজিটাল রগড়ে আমরা আছি বটে, রগরগে ব্যাপারখানায় শুধু নেই। আমরা একটু সেনসেটিভ ছিলাম, আছি ও থাকতে চাই।
এসবেরই মাঝেই পড়ে গিয়েছি আমি। যে রোববার.ইন-কে ভালোবাসে। যে জেগেছে বাকিদের সঙ্গে সারারাত। সেদিনের বিরিয়ানির স্বাদ, এখনও মুখে লেগে আছে যেন। বিরিয়ানির জন্য নয়, রোববার.ইন-এর জন্মমুহূর্ত দেখতে পেয়েছি বলে। তাই বারবার খুঁতখুঁত করেছি। এটা বদলাও, ওটা বদলাও, এটা হয়নি, ওটা ওভাবে না। সব মত যে মিলেছে, তা নয়। দু’জনের মত যদি একেবারে মিলেমিশে যেত, আপনারা বলুন, দ্বিতীয় লোকটির কী দরকার তবে? মতের অমিল, ঝগড়া, তারপর দ্বিরালাপ, তারপর হয়তো আরও বেটার কিছু? সেটাই তো চাই। আমি ও আমরা। সম্বিতদা বা পালকিদির সঙ্গে দীর্ঘরাত গালগপ্প হয়েছে, তার ৭০ শতাংশই বোধহয় রোববার.ইন-এর আশু ভবিষ্যৎ-চিন্তায়। ওদের কাজের সময়ের বাইরে, আমার নিজের ফুরফুরে ছুটি কাটানোর সময়েও কেন আমরা একজোট হয়ে বকবক করে গিয়েছি রোববার.ইন নিয়ে? সেসব হয়তো এখনও সাকার হয়নি। হবে একদিন।
আসলে জেগে, ঘুমিয়ে একটা যৌথ স্বপ্ন আমরা দেখছিলাম। দারুণ একটা পত্রিকা করার। কাউকে টক্কর দেওয়ার মতো করে না। নিজের মতো করে। পাঠকের কথা আগেভাগেই ভেবে নয়, পাঠকের কাছে ভালো লেখা পৌঁছে দিয়ে দেখা, পাঠক কী করছেন, পড়ছেন? সেটাই আমাদের পথ। পাঠক তৈরি করার। একরকম, চিরকেলে বিষয়ের পাহাড়ে উঠে আমরা রোববার.ইন পতাকা ওড়াতে চাইনি।
টিমে দেখতে দেখতে এসেছে দীপঙ্কর ভৌমিক। শিল্পী। শুধু ছবি আঁকে যখন তখন নয়। যখন চা খায়, তখনও শিল্পী। আর সদ্য হানা দিয়েছে গৌরবকেতন লাহিড়ী। অল্প পরিচয়। চমৎকার সাক্ষাৎকার নিয়েছে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু। আসা যেমন আছে, তেমন আছে যাওয়াও। সরোজদার। রোববার.ইন-এর ছোট্ট ঘরে এখন ঢুকলে খানিক খালিই লাগে।
এত কিছুর পরও, রোববার.ইন আমাদের না। আমি, সম্বিতদা, পালকিদি, সুমন্ত, দীপঙ্করদা, গৌরবদার নয়। রোববার.ইন আপনাদের। এই মুহূর্তে, এই যে, আপনাকে বলছি, আপনারই।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved