গান-শেল ফ্যাক্টরিতে এখন আর বিশ্বকর্মা পুজো হয়? জানি না। গোটা বিশ্বেই মদ, অস্ত্র আর ধর্মের ভাণ্ডার পাশাপাশি। অস্ত্রেরও ছিরি তেমনি, কেমিক্যাল। ভাইরাল। তাছাড়া আরও কত রকম। পড়াতে গিয়ে দেখি ছেলেমেয়ের দল সারা রাত জেগে জৃম্ভণাস্ত্রে কুপোকাত। জৃম্ভণ মানে হাই তোলে। মহাভারতে এই অস্ত্রের কথা আছে। তুমি হাই তুললে আর ধনুক বল্লম বাগিয়ে ধরতে পারবে? সেই সুযোগে তোমার মুন্ডু কাটা যাবে। পৃথিবীর তাবড় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা বিশ্বকর্মার ধার ধারে না। শুধু আমাদের দেশ ধারে অস্ত্র আর বিমান কেনে।
৫.
ঘোড়া দেখলেই সবার পায়ে বেমালুম বাত। কোনও কিছু লিখতে গেলে এই তেজি প্রাণীর চলাফেরা মনে আসে। সোজা গট গট করে কিছু যে বলে যাব, এমন কনফিডেন্স কস্মিনকালেও ছিল না। আড়ে আড়ে কোনাকুনি চলতে গিয়েও লজ্জায় মাথা কাটা যায়। তাই আড়াই চালে ভাবি। বাধা টপকে আদার ব্যাপারীও মোক্ষম ঘরটিতে গিয়ে বসতে পারে চোখের পলকে। কাটাকুটি– সে পরের কথা। তবে নিওলিথ স্তব্ধতায় না হোক মহীনের পোষা জীবটির আপন মনে ঘাস খাওয়ার দৃশ্য নিউটাউনেও দেখা যায়, সূর্যাস্তে, সন্ধ্যায়। স্যুররিয়াল। বিষাদ মন্থর। দিনশেষের লালচে আলোয় পিঠের ভাবনা-ক্ষতগুলো চিক চিক করে। কারও হাসি পায়, কারও চোখে জল আসে।
………………………….
ফাঁকা আকাশের মাথার অনেক ওপর দিয়ে, একটা বিন্দুর মতো কাটা ঘুড়ি, খুব আস্তে, চলে যাচ্ছে। কোথায় যে যাচ্ছে, কে জানে। অনেকখানি সুতো নিয়ে গেল তাহলে। ওই অত উঁচু দিয়ে যখন উড়ছে, কম করে ৫০০ সুতো লেগে আছে। হাত-গোড়ায় যদি কাটে তাহলে কিছু না হোক, ১০০০ মাঞ্জা ভোগে! আজকাল কাগজে লেখে ‘চাইনিজ মাঞ্জা’! লুদ্দি, টানা মাঞ্জা, ছাড়া মাঞ্জা– এসবের দিন গিয়েছে। চেন, বর্ধমান,কর্ড এরকম এলো-সুতো পাওয়া যায় কি না, জানি না। তবে ‘মোদি’ বলে একরকম সুতো পাওয়া যেত, ছাড়া মাঞ্জায় যেত ভালো। তার বাজার যাওয়ার নয়। সুতো কল সব বোম্বে থেকে গুজরাটেই।
ঘুড়িটাকে অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম। উড়তা ঘুড়ি আর কাটা ঘুড়ি কীসে চেনে লোকে? ওড়ার ভঙ্গি দেখলেই বোঝা যায়। টান থাকে না। হাওয়া যে দিকে নেবে, যেমন নেবে, তেমনি যাবে। নিচের আকাশে উড়লে গাছে বলো, বাড়ির ছাদে বলো, মাঠে বলো ঢেউ তুলে তুলে লটকে পড়বেই। আর পেছন পেছন ছুটে আসবে ছেলের দল, আধ-দামড়া লুঙ্গি পরাগুলোও ছুটবে– ছাদে ছাদে লগি নিয়ে– ধর, ধর। ওই যে সুতো তোদের বাড়ির ওপর দিয়ে যাচ্ছে। বেওয়ারিশ ঘুড়ি ধরার যে কী আনন্দ! আকাশের দিকে তাকিয়ে ন্যাংটো সুতোর মতো বাচ্চাগুলো গোটা একটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। এ হল আকাশের দেবতার আশীর্বাদ। কটাক্ষ ওদের বাপ-মা জানে। আর ওই বিন্দুবৎ যে ঘুড়িটাকে দেখে মনে লাটাই ঘুরতে লাগল উলটো-সোজা, সে চলেছে ওপর দিকে। এরা বোধহয় নিচে নামে না। আকাশেই রোদ-জল-ঝড়-মেঘে মিশে যায়। ধারালো মাঞ্জাটার কী হয়? গাবের আটা, সাবুর আটা, শিরীষ আটা, পচা ডিম, কাটা টিউব, কাটা বালব, হামানদিস্তায় গুঁড়ো করা কাচ রং, বাঁশের খুঁটি, টিপনি, কড়া রোদ, মেঘ আর লাটাইয়ের পাক খুলে, কাটা সুতোটা লজ্জায় হারিয়ে যায় আকাশে। বাকিটা চোরচোট্টাদের হাপ্তা বাঁচিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছে। বিশ্বকর্মা পুজোর সন্ধেবেলাটার মতো বিষাদ আর হয় না।
কিন্তু বিশ্বকর্মা-র অত সেন্টিমেন্টাল হলে চলে না। আজকাল আর তেমন ঘুড়িই বা ওড়ে কই কলকাতার আকাশে। রামদুলাল সরকার স্ট্রিট বাসস্টপের উল্টোদিকে কবেকার ঘুড়ির দোকান, ১০ বছরে বার-দু’য়েক ভূমিকা বদল করে এখন মুরগির মাংস বেচে! এই মুরগি নামক প্রাণীটির কোনও তুলনা নেই। ‘মুরগি করা’ থেকে ‘কড়াই-মুর্গ’– যা-ই বলো না, পৃথিবীর সবচেয়ে সফল এবং সহনশীল খাদ্য হিসেবে রামপাখি এমনকী, ফোড়নেও আজকাল ব্যবহৃত হয়। ঘুড়ি ওড়ে, মানে আকাশে ওড়ে। কিন্তু মুরগি উড়তে পারে না। হয়তো এভাবেই উদাসীন সেই দোকানি মানুষটি আমাদের সমাজে তাঁর প্রতিবাদ জানিয়ে রাখলেন। এইসব আমরা খেয়াল করি না। ‘স্থানীয় সংবাদ’ সিনেমায় এ-রকম কথা বলা আছে। চাদ্দিকে যা ঘটছে সে সব একেকটা ‘কোড’, পড়া দরকার। এই যেমন বিশ্বকর্মা ঠাকুরের কথাই ধরি। নিত্যিনতুন ঠাকুরের কোনও কমতি নেই যদিও, তবু বিশ্বকর্মা কিন্তু বেশ অনেক দিন ধরেই ঠিক ১৭ সেপ্টেম্বর ভাদ্র শেষে এই বাংলায় চলে আসেন। আসেন শুধু নয়, আসতেন, আসছেন এবং আসছে বছরও আসবেন। কিন্তু মুশকিল হল একই জায়গায় কিন্তু আসাটা ঘটছে না। গত ৫০ বছরে বিশ্বকর্মা-র আসন নানা জায়গায় পাতা হয়েছে।
এ অবশ্য নতুন কথা কিছু নয়, হিন্দুধর্মে তেত্রিশ কোটি ঠাকুরে বিশ্বাস। কোনও অসুবিধে কোনও কালেই ছিল কি না। কিন্তু এই দেবতাদের বিশেষ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে দেখাটা খুবই আশ্চর্যের বিষয়। মাঝি-মাল্লা, চাষ-বাস, শিকার, মাছ ধরা, মধু-সংগ্রহ– এই রকম কাজের সঙ্গে গ্রামের মানুষের নানা অঞ্চলে নানা দেবতার যোগ। বেশিরভাগ সময়েই এইসব ঠাকুরের গল্প জায়গায় জায়গায় তৈরি হয়। তাঁদের আঞ্চলিক ব্যাপারস্যাপার পুরাণ-হাদিশ মেনে চলে না। কিন্তু বিশ্বকর্মার কারবার এক্কেবারেই আলাদা! কে কবে প্রথম এই বাংলায় বিশ্বকর্মা দেবতাটির বিশেষ রকম পুজো চালু করলেন, তা নিয়ে গবেষণা করলে আশ্চর্য রকম তথ্য পাওয়া যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। ইনি কিন্তু বৈদিক দেবতা। বিভিন্ন পুরাণেও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কীসের দেবতা এই বিশ্বকর্মা?
হংসনারায়ণ চক্রবর্তী মশাই তাঁর ‘হিন্দুদের দেব দেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ’-এর প্রথম খণ্ডে সবিস্তার লিখেছেন। বৈদিক ত্বষ্টা– বিশ্বকর্মা-প্রজাপতি-র কথা পড়লে বোঝা যায়, এই দেবতার অন্তত তিনটে চেহারা আছে। আর সেসব মিলেমিশে আছে। বৈদিক বিশ্বকর্মা সূর্যের সঙ্গে, কখনওবা প্রজাপতির সঙ্গে অভিন্ন। ওই জন্যই বাংলার বাইরে বিশ্বকর্মার যে ছবি দেখা যায় সে-গুলো ব্রহ্মার মতো সাদা দাড়িওয়ালা। আমাদের এদিকে অবশ্য বুড়ো বিশ্বকর্মা কোনও দিন দেখা দেননি। কার্ত্তিকের মুখের ছাঁচ দিয়েই কাজ চলে যায়। ময়ূর পালটে হাতি। এই হাতি কিন্তু ইন্দ্রেরও বাহন। মেঘের সাদৃশ্যে তৈরি। বিশ্বকর্মার সঙ্গেও মেঘের যোগ আছে। ইনি শেষ বর্ষণের দেবতা হিসেবেও উল্লেখ পেয়েছেন।
ওদিকে আবার পুরাণে দেখা যাচ্ছে, তিনি দেবশিল্পী। বিভিন্ন রকম কারুশিল্প সরস্বতী স্বয়ং ইদানীং বেহাত করে নিলেও তাতে বরাবর বিশ্বকর্মার অধিকার। অনেকে তাই মনে করেন, হাতির দাঁত যেহেতু এককালে খুবই শিল্পকাজে ব্যবহার হত এবং বড় বড় জিনিস– যেমন কাঠ, পাথর টেনে নিতেও হাতির শক্তি ষষ্টিচরণের পূর্বপুরুষগণ অতটা অবহেলা করেননি, সে কারণেও হয়তো এই দেবতার বাহন হাতি।
আসলে এই দেবতার প্রধান পৌরাণিক পরিচয়ের একটি হল স্থপতি। যত যা বিখ্যাত ইমারত, প্রাসাদ– শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা, স্বর্গের অমরাবতী, অলকাপুরী থেকে আরম্ভ করে কুবেরের সোনার লঙ্কা এমনকী, যমের বাড়ি পর্যন্ত তাঁরই হাতযশ। এই রিয়েল এস্টেটের দিকটা অনেক দিন অবহেলা করার ফলেই বোধ করি বাড়িঘর চারদিকে হেলে পড়ছে! মেট্রো-রেল এর সুরঙ্গ ডেবে যাচ্ছে, আর ব্রিজে ফাটল ধরছে। এছাড়া পুরাণে মহাকাব্যে, রামায়ণ-মহাভারতে ইনি অস্ত্রও বানিয়েছেন প্রচুর। দধিচীর হাড় দিয়ে বজ্র, মহামায়ার হাতের সব ভয়ানক মারণবাণ, পরশু ইত্যাদি দান করে চণ্ডীপাঠে তিনি নিত্যই হাজির।
আমাদের চিতপুর গান-শেল ফ্যাক্টারিতে বিশ্বকর্মা পুজো দেখতে যেতাম। তার একটা কারণ ছিল, বন্দুক নিজের চোখে দেখতে পাওয়ার উত্তেজনা। দাদার হাতে ঘুড়ি আমার লাটাই ছাতে ফেলে চলে যেতাম গান-শেল ফ্যাক্টরি। সে আজ আর যাওয়ার দরকার নেই, কোমরের কাছে যে কোনও দিন সুড়সুড় করবে। যে যেখানে পারছে চেম্বার বের করে ঘুরিয়ে দিচ্ছে!
আর একটা ব্যাপার মনে পড়ল। পুরাণে বিশ্বকর্মার একটা বড় কাজ হল বিমান নির্মাণ। পুষ্পক-সহ নানা দেবতার এমনকী, মহাদেবেরও উড়ুক্কু রথ দেবশিল্পী বানিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে আকাশে ওড়ার ব্যাপারটাও খানিক খেয়াল করার মতো। বাংলায় বিশ্বকর্মার চার হাতের দুটোতে ঘুড়ি-লাটাই জুড়ে দেওয়ার ইতিহাস বোধহয় এইখানেই লুকিয়ে থাকতে পারে। আকাশে কিছু তো একটা উড়ুক। সাধারণের চাটার্ড বিমান হল ঘুড়ি।
গান-শেল ফ্যাক্টরিতে এখন আর বিশ্বকর্মা পুজো হয়? জানি না। গোটা বিশ্বেই মদ, অস্ত্র আর ধর্মের ভাণ্ডার পাশাপাশি। অস্ত্রেরও ছিরি তেমনি, কেমিক্যাল। ভাইরাল। তাছাড়া আরও কত রকম। পড়াতে গিয়ে দেখি ছেলেমেয়ের দল সারা রাত জেগে জৃম্ভণাস্ত্রে কুপোকাত। জৃম্ভণ মানে হাই তোলে। মহাভারতে এই অস্ত্রের কথা আছে। তুমি হাই তুললে আর ধনুক বল্লম বাগিয়ে ধরতে পারবে? সেই সুযোগে তোমার মুন্ডু কাটা যাবে। পৃথিবীর তাবড় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা বিশ্বকর্মার ধার ধারে না। শুধু আমাদের দেশ ধারে অস্ত্র আর বিমান কেনে।
আজ থেকে বছর ৪০ আগে বিশ্বকর্মা পুজোটা সবচেয়ে বড় করে হত কারখানাগুলোতেই। কিছু হত গাড়ির গ্যারেজে। যেখানে শ্রমিক খাটে। যেখানে মেশিন ঘোরে জিনিস তৈরি হয়। বরানগর অঞ্চলে বিআই কোম্পানিতে খুব সুন্দর দুর্গাপুজো হত। আর হত বিশ্বকর্মা। জুটমিল, পেপার মিল, ডানলপ ফ্যাক্টরি গঙ্গার এপার-ওপার মিলিয়ে কাঁসর-ঘণ্টা কম কিছু বাজেনি।
মনে হয় আটের দশকটার মাঝামাঝি একদিন সাইকেল সারাইয়ের গুমটি থেকে রিকশা চালকদের কেউ ঝোঁকের মাথায় তাঁর রথটির ঘুরন্ত চেন আর মধ্যাংশের মেশিনটিকে পুজো করার কথা ভেবে থাকবেন। তিনি তাঁর গাড়ি ও সহকর্মীদের রোজগারের মাধ্যমটির এক দেবতা খুঁজে পেলেন। যিনি কলটিকে ঘোরাবেন যত্ন করে। এই ছোট্ট ঘটনাটি বিশ্বকর্মাকে করে দিল যানবাহনের দেবতা। নির্মাতা থেকে নির্মিতে সরে গেল তাঁর আসন। উৎপাদন যেখানে রইল না, সেখানে পণ্যের দেবতা হয়ে ওঠা ছাড়া উপায় কী? হিন্দ মোটরের ঠাকুর এখন ম্রিয়মাণ হলুদ আম্বাসাডর ট্যাক্সিতে হেড লাইটে বাঁধা– একদিনের কলাগাছ!
সবার একটা ঠাকুর চাই, কেশশিল্পী-দের ঠাকুর ছিল না, স্বর্গের মেক আপ আর্টিস্ট-এর নাম জানা নেই, হাতের ছুরি, কাঁচি, ক্লিপার, ট্রিমার, সবই মেশিন। বিশ্বকর্মা বসে পড়লেন। বাস চালক, কন্ডাকটর ভাইরা বাসের ‘পেটের মাল মশলা’ দেখে মেকানিকটিকেই মেনে নিতে বাধ্য হলেন একদিন। তারপর এলো অটো-র যুগ। এখন অটোর ঠাকুর বিশ্বকর্মা!
কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর একদিন এইসব বাড়ির ছেলেরাই হয়তো রিকশা চালাতে শুরু করেন। স্মৃতিতে থাকা দেবতাটি আর গ্যারেজের আহ্বান হয়তো এই দেবতাটিকে যানবাহনের ঠাকুর করে দিল। শ্রমের উৎপাদনের পুজো থেকে উৎপাদিত পণ্যের মঙ্গল চিন্তায় সরে আসা হিন্দু বাঙালি মনটাকে খুঁজে দেখি। উৎকট এক যন্ত্র পূজক গাইছে, ‘নম যন্ত্র নম যন্ত্র নম যন্ত্র নম যন্ত্র!’ সে যন্ত্র কে কোথায় কীভাবে বানাল, জানার দরকার নেই। ‘মেড ইন চায়না’-ও হতে পারে।
এবার একটা অত্যাশ্চর্য ঘটনা বলি। ইএম বাইপাসের দক্ষিণ প্রান্তে সবচেয়ে বড় হাসপাতাল, মানে বেসরকারি হাসপাতালটিতে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন প্রায় হাজার খানেক মানুষ প্রসাদ পেলেন। কেন? বিশ্বকর্মা তো কোনও ভাবেই চিকিৎসাবিদ্যা রপ্ত করে উঠতে পারেননি। ওই লাইনে চরক, সুশ্রুত, অশ্বিনী কুমার– এমন অনেকেই আছেন। গণেশের মাথা প্লাস্টিক সার্জারি করে কে জুড়েছিলেন, পুরাণ ভেদে তা নিয়ে যথানিয়মে মতভেদও আছে। তবু কেন হাসপাতালে বিশ্বকর্মা? মেশিন। হাসপাতালগুলো চলে মেশিনের ভরসায়। রোবোটিক সার্জারির অত্যাধুনিক মেশিন শুধু নয়, বা ওই জাতীয় আরও। মূলত টাকা গোনার মেশিন বা অসহায় মানুষকে ঘানির ভেতর ফেলে ঘোরানোর মেশিন। এমন মনহীন অথচ মানুষের মতো দেখতে এতগুলো কঠিন চোয়াল, নিঃশব্দ মেশিনের সঙ্গে একমাত্র বিএসএফ দপ্তরে বাঙালি হলে দেখা মিলতে পারে। এই যন্ত্র বরণে তাই হাসপাতালে হো হো রবে বিশ্বকর্মা নেচে উঠবেন– এ-ও স্বাভাবিক। মেশিন চিন, জাপান, জার্মানি অথবা কোরিয়ার। কেয়ার গিভার বিশুদ্ধ ভারতীয়।
বিশ্বকর্মা পুজোর আগে পরে কিছুদিন বিপুল বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে অটো স্ট্যান্ডে দেখছিলাম আবাহন থেকে বিসর্জন। আশপাশে যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে, রোজগারের উপায়গুলো কমতে কমতে প্রায়ই শূন্যে গিয়ে ঠেকবে। উকিল আর ডাক্তারদের ঠাকুর আছে না নেই? মোটর বাইক? জোমাটো, ব্লিঙ্ক ইট, জিনি-র দেবতা দরকার খুব তাড়াতাড়ি। এনইপি যেদিকে চলেছে, তাতে উচ্চশিক্ষায় সরস্বতীর জায়গা যে-কোনওদিন বিশ্বকর্মা নেবেন।
মনে পড়ল, ফুলবাগান-মহাত্মা গান্ধী রোড রুটে এক নাবালক চালকের কথা। সব রুটেই একটা রাস্তা থাকে যেটা অটোর নিজের। উঠোনের ওপর দিয়েও হতে পারে। এখন তার বাঁ-দিক দিয়ে মোটরবাইক ঢুকছে। তা সেদিন গাড়ির চাকা মাটি ছুঁতে পাচ্ছিল না। এইরকম অবস্থায় সবার উচিত রাক্ষস-খোক্কসের মতো প্রাণ গাড়ির হ্যান্ডেলে ভরে রেখে চুপচাপ বসে থাকা। এক বুড়ি মহিলা, মানুষ থেকে গিয়ে, ছোকরা ড্রাইভারকে বেজায় উত্যক্ত করছিলেন। আর থাকতে না পেরে বেচারা বলল– ‘হোনা থা পাইলট, কেয়া করে, আগেয়া অটো কা হান্ডেল হাত মে, উড়ানা তো পরেগা হি!’
এই রকম পুষ্পকের স্বপ্নেই হয়তো ডিজে বাজছে ডুব ডুব ডুব ডুব। আকাশের ভেতর দিকে ডুবতে ডুবতে কাটা ঘুড়ি কিছু আর শুনতে পায় না। ওর ছুটি হয়ে গিয়েছে।
… এক, দুই, আড়াই-এর অন্যান্য পর্ব …
৪. কথা শেষ হতে পারে, ‘শেষ কথা’ বলে কিছু হয় না
৩. দেখা হলে বলে দিও, আজও বেঁচে আছি
২. ফুলের রং শেষ পর্যন্ত মিশে যায় নন্দিনীর বুকের রক্তের ইমেজে
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved