Robbar

বিধবা বিবাহের লিফলেট, ১০ খণ্ডের দুষ্প্রাপ্য ‘শিশু ভারতী’ পত্রিকা একরাতের বৃষ্টিতেই শেষ!

Published by: Robbar Digital
  • Posted:September 23, 2025 4:28 pm
  • Updated:September 23, 2025 4:37 pm  

আমফানের সময় একটু সতর্ক হয়েছিলাম, কিন্তু কিছুই করার ছিল না। এবারে তো আগাম কোনও সতর্কতা ছিল না। কীই বা করতাম, কতটা সতর্ক হতাম? ছোট গুমটি, কত বই-ই বা ওপরে রাখব তুলে? আমার নিজের তো বটেই, গোটা কলেজ পাড়ার পুরনো-নতুন পাবলিকেশনের কত যে বই নষ্ট হল, তার ইয়ত্তা নেই! পুরনো বই একবার নষ্ট হলে তার কোনও ক্ষতিপূরণ হয় না। সরকারও সেই ক্ষতিপূরণ করতে পারেন না। ধরুন, সরকারের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হল। তাতে কি পুরনো দুষ্প্রাপ্য বইগুলো ফিরে আসবে? সে চিরকালের মতো নষ্ট হয়ে গেল।

প্রচ্ছদের ছবি দীপঙ্কর দত্ত

তুহিন সাহা

কলেজ স্ট্রিটে জল জমা নতুন কোনও ঘটনা নয়। বহুকাল ধরেই হয়ে আসছে। ব্যাঙের হিসিতেও নাকি জল জমে বইপাড়ায়– এইরকম একটা কথা শোনা যেত এককালে অহরহ। যখন জল জমে, খবর পাই নিকাশি ব্যবস্থা ঠিকঠাক নেই, ‘ড্রেনেজ শর্ট’ রয়েছে। তাই জল ওপরে উঠে আসছে। আমরা একজোট হয়ে ৫ নং বোরো অফিসেও কথা বলেছি। কাজ কতদূর কী হয়েছে, জানি না। শুনি যে, প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে দিন। ক্রেতা তো বই কিনে প্লাস্টিক রাস্তায় ফেলে ব্যাগে বই ঢুকিয়ে নিচ্ছে– এরকম নয়! আর আমরা তো ফুটপাথে পুরনো বই বিক্রি করি। আমরা বন্ধ করলাম, কিন্তু বড় বড় পাবলিশার বন্ধ করবেন তো? কলেজ স্ট্রিটের রাস্তায় ডাস্টবিন আছে কি? এত ব্যস্ত ঝলমলে সারাক্ষণ লোকবহুল রাস্তায় ডাস্টবিন চোখে পড়ে না কেন?

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে পুরনো বইয়ের ফুটপাথ জলমগ্ন

আমফানের সময় একটু সতর্ক হয়েছিলাম, কিন্তু কিছুই করার ছিল না। এবারে তো আগাম কোনও সতর্কতা ছিল না। কী-ই বা করতাম, কতটা সতর্ক হতাম? ছোট গুমটি, কত বই-ই বা ওপরে রাখব তুলে? আমার নিজের তো বটেই, গোটা কলেজ পাড়ার পুরনো-নতুন পাবলিকেশনের কত যে বই নষ্ট হল, তার ইয়ত্তা নেই!

পুরনো বই একবার নষ্ট হলে তার কোনও ক্ষতিপূরণ হয় না। সরকারও সেই ক্ষতিপূরণ করতে পারেন না। ধরুন, সরকারের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হল। তাতে কি পুরনো দুষ্প্রাপ্য বইগুলো ফিরে আসবে? সে চিরকালের মতো নষ্ট হয়ে গেল। বইয়ের ইতিহাস ও বইমালিকের ব্যক্তিগত ইতিহাস, দুটোই হারিয়ে গেল।

নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে এখন। এক ভদ্রলোক, প্রায় ৪০ বছর ধরে পিএম বাগচীর একটা বই নিজের কাছে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। মাত্র ক’দিন আগেই, মনে হয়ে তাঁর, তিনি আর পারছেন না। বয়সও হয়েছে। এবার সেই বইটি কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে দিয়ে দেওয়া উচিত। অন্য কারও হাতে গেলে বইটার আয়ু হয়তো বাড়বে। সেই মতো ওই বই নিয়ে এসেছিলাম আমি। ভেবেছিলাম ঠিকঠাক মূল্যে বেচব। কিন্তু এখন তা জলে ফুলে এমন নরম হয়েছে যে, ছুঁলেই শেষ! উদ্ধারের কোনও উপায় নেই।

শিশু-ভারতী বাংলা বই পিডিএফ ডাউনলোড| Shishu-Bharati Bengali Book PDF Download

একইভাবে ৬ পিস বঙ্গবাণী পত্রিকা ছিল। উপর-নীচ করে রাখা। চারখানাই পচে গিয়েছে। একটা হালকা ভিজে। পুরনো বঙ্গবাণী। কত ছবি, কত বিজ্ঞাপন, কত লেখা– আমার কাছে যাঁরা পত্রিকা কেনেন নিয়মিত, তাঁদেরই কাউকে দেখাতাম। এখন আর কোনও উপায় নেই। একই ভাবে ৮০-৯০ বছরের পুরনো যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত সম্পাদিত ‘শিশু ভারতী’ পত্রিকার ১০টা খণ্ড! সবক’টাই জলে! এ যন্ত্রণার কোনও ক্ষতিপূরণ নেই।

বঙ্গবাণী পত্রিকা

যদিও সবথেকে কষ্ট হচ্ছে কোনও বইয়ের জন্য নয়। একটা লিফলেটের জন্য।
হ্যাঁ, মামুলি নয় সেই লিফলেট। অনেকে অনেক দাম দিয়ে আমার থেকে কিনতে চেয়েছেন অনেকবার, আমিই রাজি হইনি। এখন ভাবছি, কেন হইনি– রাজি হলে কারও কাছে অন্তত তা অক্ষত থাকত!

বিধবা বিবাহ চালু হওয়ার সময়কার লিফলেট সেটা। লিফলেট বিলি করেই প্রচার করা হত সমাজে। কে, কত অনুদান দিচ্ছেন– লেখা ছিল সেসব তথ্যও। আজ সকাল থেকে দোকান খুলে ভেজা বইয়ের মধ্যে সেই লিফলেট কোনওভাবেই আর পেলাম না। হয়তো পাবও না আর কোনও দিন…

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)