
রিয়া-রাখির বিবাহ প্রসঙ্গে একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে এইসব ঘটনার উত্থাপন করছি এ কারণেই, সত্যই কি সমাজ তা হলে বদলাতে শুরু করল? ২০১৮-র সুপ্রিম রায়ের পরে সমকামী-ক্যুইয়ার মানুষদের ওপরে পারিবারিক-সামাজিক হিংসার ঘটনার অভূতপূর্ব বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এই তো সেদিন, চাকদহতে একজন রূপান্তরকামী মানুষকে তার বাড়ির লোকেরা চেইন দিয়ে দিনের পর দিন বেঁধে রেখেছিল। এই শহরে আরেক প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে তার বাড়ির লোক তার ট্রান্সম্যান সঙ্গীর চোখের সামনে থেকে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে ঠেসে তুলেছিল। গোটা সমাজ দাঁড়িয়ে দেখেছে, মেয়েটি দৌড়ে নর্দমায় পড়ে যাচ্ছে, সেইখান থেকে টেনে তুলে ঘাড় ধরে নিয়ে যাচ্ছে, সমাজ চুপ, দিনের আলোয়। বাপ-মা যখন মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই তার ভালোর জন্যই এমন কাজ করছে, এই ছিল নীরব জনতার সরব রায়।
গত কয়েক দিনে বাতাসেরও আগে যেন খবর ছুটে এল, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। না, বাঘ বা বন্যা-দুর্যোগ সংবাদ নয়। খবরের কাগজ, টিভি-নিউজ, রিল– সর্বত্র দু’টি মানুষের মিষ্টি এক ছবির বন্যা। রামেশ্বরপুর গাববেড়িয়া গ্রামে বিয়ে করেছে রিয়া সরদার এবং রাখি নস্কর। দু’জনেই নাচের জগতের। প্রথম আলাপ মুঠোফোনে। ক্রমে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, প্রেম। ছোটবেলাতেই বাবা-মা হারানো রিয়া মাসি-মেসোর কাছে বড় হয়েছে। কিন্তু তাঁরা এই সম্পর্ক মানেননি। রাখির পরিবারে যদিও চিত্র ভিন্ন। সংবাদে প্রকাশ, ঘর ছেড়ে আসা রিয়া তাঁদের বাড়িতেই ওঠেন। রাখির বাবা-মা তাদের সম্পর্কের আপত্তি-বাধা হয়ে ওঠেননি। বরং রিয়া-রাখিকে বর্জন না করে, তাঁরা সাদরে গ্রহণ করেছেন। পরিবার এবং স্থানীয় ক্লাব উদ্যোগ নিয়ে গ্রামের মন্দিরেই তাদের আরেকবার বিয়ে দেন। আরেকবার কেন? কারণ এর আগে বিহারের এক মন্দিরে তারা নিজেরাই মালাবদল করে নিয়েছিল।

কাট টু ২০১১ সাল। আমরা একটু পিছিয়ে যাই, ফিরে দেখি। স্বপ্না-সুচেতা, নন্দীগ্রাম আর বেওয়ারিশ লাশ। কিছু কি মনে পড়ছে, পাঠক? ওঁরাও ভালোবেসেছিল, সমাজের রক্তচক্ষুকে রেয়াত না করে, কিন্তু রেহাই পায়নি ওদের প্রেম। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে স্বপ্না টিউশন পড়াত, বয়সে কিছু ছোট সুচেতা ছিল তার ছাত্রী। তাদের ‘অস্বাভাবিক’ সম্পর্কের কথা আঁচ করে ওদের উপযুক্ত সবক শেখানোর জন্য ডাকা হয়েছিল একাধিক সালিশি সভা। গ্রামের দুই মেয়ের এই ‘অস্বাভাবিক’, ‘নোংরা মেলামেশায়’ সমাজের গা গুলিয়ে উঠেছিল। মুরুব্বিরা ভেবেছিলেন এই ‘ব্যাধি’র একমাত্র দাওয়াই বিবাহ, যত দ্রুত সম্ভব দু’জনকেই পাত্রস্থ করতে হবে। এবং তারা কেউ কারও সঙ্গে আর দেখা করতে পারবে না। সুচেতার বিয়ে হয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। কিন্তু সে বিয়ে কি ভুলিয়ে দিতে পেরেছিল স্বপ্নার প্রতি সুচেতার প্রেম? কয়েক মাসের মধ্যেই গ্রামের এক প্রান্তে, মেলার মাঠের ধারে দু’জনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল ওরা। ঘটনার কি এখানেই শেষ? না। মৃত্যুর আগে স্বপ্না লিখে গিয়েছিল হৃদয় নিংড়ে নেওয়া এক আশ্চর্য লেখা, নাম দিয়েছিল ‘আমার জীবনী’। ‘এই দুনিয়ার মানুষ আমাদের ভালোবাসা কোন দিন মানতে চায় না।… আমরা একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না, তাই আমাদের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের ভগবান কোন দিন ক্ষমা করবে না।… তোমরা সবাই ভালো থাকো, সুখে থাকো।… ভাই, দুজন যদি একসাথে মরি দুজনকে এক জায়গায় রাখিস, সেটা যে খানে হোক… আর যদি বেঁচে থাকি, অনেক দূর চলে যাবো, অনেক দূর, আর ফিরব না।’

এই সেই পথ দেখানো গণ-আন্দোলনের নন্দীগ্রাম, যেইখানে মাটি খুঁড়ে দুর্বোধ্য মৃতদেহর পরিচয় বুঝে নিতে ডিএনএ পরীক্ষাও হয়েছিল। সেই নন্দীগ্রামেই, মর্গের ঠান্ডা ঘরে দু’টি মানুষের জ্যান্ত মৃতদেহ অপেক্ষায় ছিল, পরিবার-বন্ধু-স্বজনের। না, ওদের নিতে কেউ আসেনি। ওরা যে দৃষ্টান্ত। সমাজের কঠিন, একবগগা নিয়ম-শৃঙ্খলার বাইরে যদি পা বাড়িয়েছ, শাস্তি পেতে হবে। দেখানো হবে, তুমি যদি বেচাল হয়েছ, তোমারও এই হাল হবে। ওরা দু’জনে এক জায়গাতেই ছিল, তবে বেওয়ারিশ হয়ে। আরও অগুনতি লাশের সঙ্গে বেওয়ারিশ হয়েই পুড়ে ছাই হয়েছিল। স্বপ্না-সুচেতার কাহিনি নিয়ে যখন ‘…এবং বেওয়ারিশ’ (…and the unclaimed) তৈরি করছি, আমাদের হাতে ছিল পুলিশের তোলা ওদের প্রাণহীন দেহের ছবি। গামছা দিয়ে একে অপরকে বেঁধে নিয়েছিল। আলাদা হয়ে যাওয়ার ভয়ে! পরে আর এক ছবি নজরে এসেছিল, স্বপ্না ভাইয়ের প্যান্ট পরেছিল। কিন্তু বেওয়ারিশ করে দেওয়ার আগে তাকে পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মেয়েদের সালোয়ার। সমাজের এই নিষ্ঠুর বিচার কখনও ভুলব না। সেই ২০১১ থেকে আজ ২০২৫, জীবন গিয়েছে চলে কত কত বছরের পার। আজ সুন্দরবনের গ্রামে রিয়া-রাখি টোপর-মুকুট পরে বিয়ে করে, সমাজ-পরিবারের আয়োজনে। স্বপ্না-সুচেতার সঙ্গে যদি রিয়া-রাখির দেখা হত, ওদের কি তা বিশ্বাস হত?

কাট টু ২০২৩ সালের মার্চ মাস। স্থান ওড়িশার বিখ্যাত র্যাভেন শ বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে পড়ুয়া ছিলেন বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজ সংস্কারক। আমাদের ছবি ‘গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি’-র প্রদর্শনী বন্ধ করে দিতে হল। সমকামী বিবাহ, ভারতের মতো দেশে তার সম্ভাবনা, এবং বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনাধর্মী একটি তথ্যচিত্র, এবং হ্যাঁ, গুরুগম্ভীর ছবি নয়, হাসি-ঠাট্টার মোড়কে বিষয়টি দর্শকের কাছে পরিবেশন করা হয়েছিল। সেই ছবি দেখানো গেল না গেরুয়া ছাত্রবাহিনী, ABVP-র ঝান্ডাধারী ‘হরি ওম’ দলের তাণ্ডব আর হুমকিতে। আমন্ত্রিত আমাকে আয়োজক ছাত্ররা কলেজে যেতে বারণ করল, হামলা হতে পারে এই আশঙ্কায়। কী বলেছিল তারা? অনেকানেক আপত্তির সঙ্গে বলেছিল, বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি যে একটি জাল ব্যাপার, ছবিটা সেটাই প্রমাণ করতে চাইছে, আবার একই সঙ্গে সমকামী বিবাহ আইন স্বীকৃত করার জন্য ভারত সরকারকে কুশলী চাপ দিচ্ছে! নারী-পুরুষের একছাদের তলায় একত্রবাস সমর্থন করছে। এই সিনেমা যুব সমাজের মন দূষিত করে, পারিবারিক মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য থেকে তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়ার একটি চেষ্টা। এবং এতগুলো কথা বলা হল ছবিটা বিলকুল না দেখে! সেই ২০২৩-এরই জুলাই মাসে এই কলকাতা শহরের স্কটিশ চার্চ কলেজে দুই ছাত্রর আপত্তিতে ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায়। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন, দুই জন ‘অতি-বাম’ ছাত্র ই-মেইলে আপত্তি জানায় এবং কলেজের পরিচালকবৃন্দ ছবি দেখাতে দেয় না, ছবি ঘিরে আলোচনা সভাও বন্ধ হয়ে যায়। যদিও পরে প্রায় সব বাম ছাত্রসংগঠন, সেই ছাত্রদ্বয়েরও, তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি দেয় এবং কলেজের বাইরে এক প্রতিবাদ সভায় ছবিটি দেখানো হয়। ছবির পর্দায় সমকামী বিবাহ নিয়ে নেহায়েৎ আলোচনাও যে দেশের জনতা সহ্য করতে পারে না, তারা বাস্তবের জমিতে দাঁড়িয়ে সাত-পাক, মালা বদল, উৎসব করে দু’টি সমকামী মানুষের বিয়ে দেয়! প্রসঙ্গত, ‘…এবং বেওয়ারিশ’ ২০১৪ সালে এবং ‘গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি’ ২০১৯ সালে, দু’টি ছবিই সেন্সর বোর্ড থেকে ‘A’ সার্টিফিকেট পায়। মনে রাখতে হবে, ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মহামান্য সর্বোচ্চ আদালত কিন্তু বাতিল করে দেয়। এই রায়ের ফলে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সম্মতিক্রমে সমকামী সম্পর্ক আর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না। কিন্তু দু’জন মানুষ, বোর্ডের সইক্ষমতায় বসে, তাদের ব্যক্তিগত বিচারসভায় ছবিটির ভাগ্য নির্ধারণ করে ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ ছাপ্পা লাগিয়ে দেয়!
রিয়া-রাখির বিবাহ প্রসঙ্গে একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে এইসব ঘটনার উত্থাপন করছি এ কারণেই, সত্যই কি সমাজ তা হলে বদলাতে শুরু করল? ২০১৮-র সুপ্রিম রায়ের পরে সমকামী-ক্যুইয়ার মানুষদের ওপরে পারিবারিক-সামাজিক হিংসার ঘটনার অভূতপূর্ব বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এই তো সেদিন, চাকদহতে একজন রূপান্তরকামী মানুষকে তার বাড়ির লোকেরা চেইন দিয়ে দিনের পর দিন বেঁধে রেখেছিল। এই শহরে আরেক প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে তার বাড়ির লোক তার ট্রান্সম্যান সঙ্গীর চোখের সামনে থেকে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে ঠেসে তুলেছিল। গোটা সমাজ দাঁড়িয়ে দেখেছে, মেয়েটি দৌড়ে নর্দমায় পড়ে যাচ্ছে, সেইখান থেকে টেনে তুলে ঘাড় ধরে নিয়ে যাচ্ছে, সমাজ চুপ, দিনের আলোয়। বাপ-মা যখন মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই তার ভালোর জন্যই এমন কাজ করছে, এই ছিল নীরব জনতার সরব রায়। সে নির্মম দৃশ্য আছে আমাদের ‘পড়শি নীলের আরশিনগর’ ছবিতে। উত্তরবঙ্গের এক এলাকায় গাছে বেঁধে নির্মম মার মারা হয়েছিল দু’টি মেয়েকে। ২০২৩-এর এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ইশকুলগুলিতেই সমকামী-রূপান্তরকামী পড়ুয়ারা সব থেকে বেশি হেনস্থা হয়! এমত অগুনতি ঘটনা, তথ্য যখন চারিপাশে, তার মাঝে রিয়া-রাখির সংবাদ আমাদের প্রকৃতই চমকে দেয়। কিছু ঠাওর করে উঠতে পারি না। গল্প-কথা মনে হয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ‘চতুরঙ্গ’-তে যেমন বলেছিলেন, ‘গল্পই লোকের বিশ্বাস কাড়িবার জন্য সাবধান হইয়া চলে। সত্যের সে দায় নাই বলিয়া সত্য অদ্ভুত হইতে ভয় করে না।’
সারা পৃথিবীতে মোটের ওপর ধরা যায় ১৯৬টি দেশ, মাত্র ৩৮টি দেশে সমকামী বিবাহ এখন অবধি আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে। সর্বশেষ সংযোজন আমাদের এই এশিয়ারই দেশ থাইল্যান্ড। তাহলে কি ভারতও আস্তে-ধীরে সেই পথেরই পথিক হতে চলেছে? আইন কিন্তু তেমন ভরসা দিচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টে ২০২৩ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে বলেছিল আদালত আইন তৈরি করতে পারে না, ব্যাখ্যা করতে পারে মাত্র। সুতরাং এমত বিবাহ তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে না। ২০২৫-এর জানুয়ারিতে সমকামী বিবাহ নিয়ে পুনর্বিবেচনার একগুচ্ছ আর্জি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ, সমকামী বিবাহ আজও এই দেশে বেআইনি।
বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমি ব্যক্তি মানুষটির যে মতামতই থাক না কেন, গত কয়েক দিনের সত্য আমাকে তাজ্জব করেছে। এই লেখা যখন লিখছি, ইন্সটাগ্রামে দেখছি গোবলয়ের কোনও স্থানে দু’টি সদ্য যুব মানুষ বিয়ে করেছে। পরিবার রীতিমতো উদযাপন করছে, আত্মীয়-পরিজন-বন্ধুরা আসছে। বিয়ে ঘিরে বাড়ি উৎসবমুখর, হলদি, মেহেন্দি, সাতপাক, যা যা আচার-অনুষ্ঠান হওয়ার সবই হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে সেই আনন্দ-ছবি প্রকাশ পাচ্ছে। তাহলে কি আইনের ভয় রাঙানো পাঁচিল টপকে যাচ্ছে মানুষ? তার আগলে রাখা দেওয়ালে দেওয়ালে রংধনু রং আঁকা হয়ে যাচ্ছে?
সেই কোন ১৯৮৭ সালে মধ্যপ্রদেশের দুই পুলিশ কনস্টেবল উর্মিলা শ্রীবাস্তব আর লীলা নামদেও মন্দিরে গিয়ে গান্ধর্বমতে মালা বদল করে বিয়ে করেছিল। পরবর্তীতে তাদের অনেক হেনস্থা, অপমান সইতে হয়েছে, চাকরি গিয়েছে। আর তারও বহু বহু দশক পূর্বে, ১৯০১ সালে, পৃথিবীর প্রথম নথিভুক্ত দুই মেয়ের বিয়ে, স্পেনে। মার্ফেলা গ্রাসিয়া ইবিয়াস আর এলিসা সাঞ্চেজ লোইগা। এলিসা যদিও পুরুষের বেশ ধারণ করে চার্চে উপস্থিত হন, তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু সমাজ এমন উচ্ছন্নে যাওয়া ‘পুরুষ ছাড়া বিয়ে’ মেনে নেবে কীভাবে? কাগজে কাগজে খবর ছয়লাপ হয়, ছিছিক্কার পড়ে যায়, চাকরি থেকে বহিষ্কার করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বেরিয়ে যায়। জানা যায়, তারা কোনওক্রমে একটি জাহাজে সমুদ্র পেরিয়ে আর্জেন্টিনায় পাড়ি দেয়, এবং ওখানেই থেকে যায়। আর আমাদের এই ২০২৫-এর রিয়া-রাখিকে শহর কলকাতা আমন্ত্রণ জানায়, নদী-জল পার করিয়ে তাদের নিয়ে আসে, তাদের গল্প-কথাসম আখ্যান শুনতে চায়। শাসক দল মঞ্চে উঠিয়ে সংবর্ধনা দেয়, আবারও মালা বদল করায়। দলের তরুণ সাংসদ শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। বলেন, ‘…সুন্দরবনের মাটিতে অনন্য ইতিহাস রচিত হয়েছে। রিয়া ও রাখি এই দুই সাহসী তরুণীকে শুভেচ্ছা। চেনা ছকের বাইরে গিয়ে ভালোবাসার সত্যিকারের অর্থকে সামনে এনেছেন রিয়া ও রাখি। তাঁরা প্রমাণ করেছেন ভালোবাসা কখনও কোনও বন্ধনে, সীমারেখায় আটকে থাকে না। ভালোবাসা কোনও বাধা মানে না– না ধর্মে, না লিঙ্গে, না জাতিতে।’ মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই কথা বলার অভিঘাত নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু আমার মনে পড়ে যায় ‘গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি’ ছবি না দেখানো নিয়ে যখন শোরগোল, সেই সময়ে বাংলার এক প্রথম সারির দৈনিক, যারা তাদের পুরাতন কাগজ নতুন চেহারায় ফিরিয়ে আনতে চাইছে, শহর ভরিয়ে দেয় হোর্ডিংয়ে। তাতে দুই সদ্য তরুণীর হাসিমুখ, হাতের কাগজে লেখা ‘গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি’-র স্ক্রিনিংয়ে আসছিস তো?’

আজ কি তবে সারা দেশ এমন ‘বিচিত্র’ বিয়ে দেখতেই ছুটছে? রিয়া-রাখির বিবাহ নিয়ে শোরগোলে ক্যুইয়ার সম্প্রদায়ের মানুষ এক চমকদৃশ্য হয়ে থেকে যাচ্ছে না তো?
ফিরেঃ নাহ! রাতারাতি সমাজের অতটা বদলও হয়নি, আশঙ্কা হয়তো সত্যই। লেখা শেষ করে জানলাম, রিয়া-রাখির বিয়ে মোটেও রাখির গ্রামে হয়নি, তাদের এক বন্ধু সাংবাদিক তার নিজের গ্রামে তাদের নিয়ে আসে, বিবাহ অনুষ্ঠান সেখানেই সম্পন্ন হয়। কেন নিয়ে আসতে হল? পরিস্থিতি কি তাহলে অনুকূল ছিল না? পাঠক, এই ধোঁয়াছবি দেখতে দেখতে অপেক্ষা করুন। সুন্দরবনেও বাঘ-বন্যার সঙ্গে লেসবিয়ানও দেখা গেছে, ওরা আবার বিয়েও করেছে– ভেজাল ন্যারেটিভের এই স্পেকট্যাকল– সিনেমা-সম চমক দৃশ্যের পর্দা সরিয়ে, আমরা আরেকটু ধৈর্য পরীক্ষা দিই, না কি?
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved