
কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে ‘কোষ্ঠ’ পাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন। কোষ্ঠ হল বৃহৎ কুম্ভ টাইপের আধার। অর্থশাস্ত্রের ২/১৫/১৪ রচনায় কোষ্ঠের দু’টি ভাগ দেখা যায়– মৃৎকোষ্ঠ ও কাষ্ঠকোষ্ঠ। মৃৎকোষ্ঠে ঘৃত, তেল ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাখা হত। তিনি লবণ রাখার পাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন ‘পৃথিবী’। এটি আসলে মাটির তৈরি ঘট। কৌটিল্য ভাণ্ডকেও দু’টি ভাগে ভাগ করেছেন ২/১৭/৭ নং রচনায়– ‘বিদলময়’ অর্থাৎ বাঁশের তৈরি ঝুড়ি জাতীয় পাত্র এবং ‘মৃত্তিকাময়’ অর্থাৎ পোড়ামাটির তৈরি।
১৩.
হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো কিংবা বাংলার পাণ্ডুরাজার ঢিবি অথবা মঙ্গলকোট ইত্যাদি প্রত্নস্থান উৎখননের ফলে নানা আকৃতির পোড়ামাটির বাসনকোসন পূর্ণ অথবা ভগ্নাংশ-রূপে পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময়পর্বের পাত্রগুলি নানা বর্ণের; লাল-কালো, গৈরিক, চিত্রিত ধূসর কিংবা মসৃণ চিক্কন কৃষ্ণ কৌলাল ইত্যাদি। ‘কৌলাল’ শব্দটি এসেছে কুলাল বা কুম্ভকার থেকে।
পুরাতত্ত্ববিদগণ পোড়ামাটির তৈজসপত্রাদিকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। যেমন– স্টোরেজ জার, ভেসেল, ডিশ ও বোল এবং কয়েকটি বিচিত্র ধরনের পাত্র– ডিশ অন স্ট্যান্ড, বহুছিদ্র যুক্ত পাত্র, নলযুক্ত কিম্বা নবযুক্ত পোড়ামাটির তৈজস ইত্যাদি। এগুলি গৃহস্থকর্ম ব্যতিরেকে ধর্মীয়, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও উৎসব ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হত।

বিশেষ ধরনের পোড়ামাটির তৈজসগুলির নাম কী ছিল বা প্রাচীন ব্যবহারবিধি সম্পর্কে প্রত্নতত্ত্বে কোনও হদিশ না পেলেও প্রাচীন ব্রাহ্মণ্য সাহিত্য তথা বৈদিক সাহিত্য, সূত্রজাতীয় গ্রন্থাবলি-সহ আদি যুগের বৌদ্ধ ও জৈনসাহিত্য থেকে বিস্ময়কর তথ্যাদি পাওয়া যায়। অংশত মিলিয়ে নেওয়া যায় একালে ব্যবহৃত সেই ধরনের পাত্রের বিবর্তিত রূপের সঙ্গে।
বৈদিক সাহিত্যে, বিশেষ করে তৈত্তিরীয় সংহিতায় ঘর-গেরস্থালিতে ব্যবহৃত বাসনকোসন বা তৈজসপত্রাদিকে ‘পরিণাহ্য’ বলা হয়েছে। মনুসংহিতার নবম অধ্যায়ের একাদশ শ্লোকেও অনুরূপ কথা লেখা হয়েছে–
অর্থস্য সংগ্রহে চৈনাং ব্যয়ে চৈব নিয়োজয়েৎ।
শৌচে ধর্মেহন্ন পক্ত্যাঞ্চ পরিণাহ্যস্যবেক্ষণে।।

‘পরিণ্যাহ’-র অন্তর্গত পোড়ামাটির পাত্রগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান ছিল। এককালে যা রন্ধনপাত্র ছিল, পরবর্তী সময়ে সেটি খাদ্য পরিবেশন বা খাদ্যপাত্র হিসাবে ব্যবহার হত। উদাহরণ হিসেবে থালার নাম করা যায়। থালা বৃত্তাকার খাদ্যপাত্র হিসাবে আজও ব্যবহৃত হয়। ‘থালা’ শব্দটি এসেছে ‘স্থালী’ থেকে। যজুর্বেদে ‘স্থালী’ শব্দটির প্রথম প্রয়োগ দেখা যায়। পতঞ্জলিও বড় ডিশ বলতে ‘স্থালী’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এটিকে একসময় রন্ধনপাত্র বলা হত। সুতরাং তার রূপ ছিল আলাদা।
‘উখা’ বা ‘উখ্য’ ছিল বৈদিক যুগের ফ্রাইং প্যান। ঋকবেদের ১/১৬২/১৩ ঋকে উখার কথা আছে। এটি যখন যজ্ঞকর্মে ব্যবহৃত হত, তখন এর গায়ে হুক লাগিয়ে যজ্ঞস্থলে ঝোলানো হত। হুকের নাম ছিল ‘অঙ্ক’। উখার নানারকম মাপ ছিল।
‘পচন’ বা ‘পাচন’ নামে রন্ধনপাত্রের কথা আছে ঋকবেদের ১/১৬২/৬ ঋকে। ‘শতপথব্রাহ্মণ’ গ্রন্থেও পাচনপাত্রের উল্লেখ আছে। পাচনপাত্রে নানা ধরনের খাবার রান্না করা হত। রান্নার পদের নাম অনুসারে পাচনপাত্রের আলাদা আলাদা নাম ছিল। পতঞ্জলি মাংস রান্না করার পাচনপাত্রের নাম লিখেছেন ‘মাংসপাচন’।
বৌদ্ধসাহিত্য ঘটিকারসূত্র লিখেছে, ‘কুম্ভি’ নামে কুকিং-পটের কথা।

প্রাচীন সাহিত্যে আরেকটি জনপ্রিয় পাত্র ছিল ‘কুণ্ড’। মূলত বোল টাইপের পোড়ামাটির পাত্র। প্রথম দিকে কুম্ভের মতো জলসংগ্রহ করা হত। পরে মাপের পরিবর্তন হয়। সংস্কৃত ভাষায় ‘কুণ্ড-পায়িন’ শব্দটি উল্লিখিত হয়েছে। বোঝা যায়, ক্রমশ এটি ছোট জলপান-পাত্রে পরিণত হয়েছিল। কুয়ো থেকে ‘উদাচন’ বা বালতি দিয়ে পানীয় জল সংগ্রহ করে একসময় কুণ্ডের মধ্যে রাখাও হত। কুণ্ড পরে ধাতুরও তৈরি হয়েছিল।
কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাঁর ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থে ‘মৃৎকুণ্ডিকা’ নামে পাত্রের উল্লেখ করেছেন।
সঘৃত পায়স মৃৎকুণ্ডিকা ভরিয়া
তিন পাত্রে ঘনাবর্ত দুগ্ধ রাখেত ধরিয়া।।
…
দুই পার্শ্বে ধরিলা সব মৃৎকুণ্ডিকা ভরি।।
[মধ্যলীলা, তৃতীয় পরিচ্ছেদ]
মৃৎকুণ্ডিকাকে একালে মালসা বলে। মালসা অর্ধবৃত্তাকার বোল টাইপের পাত্র। মালসা বাংলার কুম্ভকারগণ আজও তৈরি করে থাকেন। এটি দু’ ধরনের– ভোগের মালসা ও শ্রাদ্ধের মালসা। গঠনগত তফাৎ কিছু নেই তবে ভোগের মালসায় স্লিপ দেওয়া থাকে। (রঙ মাটির গোলা) মালসার আরেক ধরনের ব্যবহার দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলের বয়স্ক মানুষেরা শীতকালে আগুন পোহান মালসায় ঘুঁটে বা কাঠের আঙার করে। বৈষ্ণব সংস্কৃতিতে ভোগের মালসায় চিঁড়ে-মুড়কির ভোগ দেওয়া হয় আরাধ্য দেবতাকে। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন,
‘কোথা যাও মনোহর মালসা ভোগ ফেলে’

‘মালসা’ শব্দটির অর্থ মালাসা অর্থাৎ মালার মতো গোলাকার পাত্র। ‘মালসা’ শব্দটি এসেছে প্রাচীন বোল টাইপের পাত্র ‘মল্লক’ বা ‘মল্লগ’ থেকে। বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্যে উল্লিখিত মল্লক পাত্রে খাবার সংগ্রহ করে রাখা হত।
কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে ‘কোষ্ঠ’ পাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন। কোষ্ঠ হল বৃহৎ কুম্ভ টাইপের আধার। অর্থশাস্ত্রের ২/১৫/১৪ রচনায় কোষ্ঠের দু’টি ভাগ দেখা যায়– মৃৎকোষ্ঠ ও কাষ্ঠকোষ্ঠ। মৃৎকোষ্ঠে ঘৃত, তেল ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাখা হত। তিনি লবণ রাখার পাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন ‘পৃথিবী’। এটি আসলে মাটির তৈরি ঘট। কৌটিল্য ভাণ্ডকেও দু’টি ভাগে ভাগ করেছেন ২/১৭/৭ নং রচনায়– ‘বিদলময়’ অর্থাৎ বাঁশের তৈরি ঝুড়ি জাতীয় পাত্র এবং ‘মৃত্তিকাময়’ অর্থাৎ পোড়ামাটির তৈরি।
আধুনিক ডিশ গোলাকার অগভীর প্লেট। হরপ্পা সভ্যতায় এর থেকে আকারে বড় প্লেটে মানুষ খাওয়াদাওয়া করতেন বলে পুরাতাত্ত্বিকরা অনুমান করেছেন। ডিশ সেকালে থালার মতো ব্যবহৃত হত। ডিশ দু’ ধরনের ছিল। সাধারণ বা প্লেন ডিশ ও ডিশ অন স্ট্যান্ড বা সস্তম্ভ থালি। পুরাতাত্ত্বিকদের মতে এই দু’ ধরনের ডিশে হরপ্পার বাসিন্দারা দৈনন্দিন খাদ্যগ্রহণ করতেন। তখন বোল বা বাটি জাতীয় পাত্রের আবির্ভাব হয়নি বলেই অনেকে অনুমান করেন। ঐতিহাসিক বি বি লালের মতে, চিত্রিত ধূসর অর্থাৎ পিজিডবলু সংস্কৃতি থেকে (মহাভারতীয় যুগ) খাদ্যগ্রহণে ডিশ, বোল ইত্যাদির ব্যবহার শুরু হয়েছিল।

ডিশ অন স্ট্যান্ড হরপ্পা সভ্যতার পোড়ামাটির তৈজসপত্রাদির অন্যতম সম্পদ। বাংলা-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্র থেকে ডিশ অন স্ট্যান্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। তাম্রাশ্মীয় সংস্কৃতির অন্যতম পোড়ামাটির তৈজসপত্র। এটি স্থালী বা থালির পূর্বরূপ। শুধু খাদ্যগ্রহণের জন্য নয়, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও ধর্মীয় ক্ষেত্রেও পাত্রটির প্রয়োগ করা হত। লাল স্লিপ যুক্ত চিত্রিত পোড়ামাটির ডিশ অন স্ট্যান্ডও পাওয়া গেছে একাধিক। এটি মূলত চাকে গড়া হত। অনেক সময় ডিশের মাঝে একটি ছিদ্রও দেখা যায়। গবেষকদের মতে এই ধরনের ডিশ অন স্ট্যান্ড ধর্মীয় উৎসবে পানপাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হত। সাহিত্য থেকে অবশ্য ডিশ অন স্ট্যান্ডের কোনও নাম পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে ডিশ অন স্ট্যান্ড লুপ্ত হলেও, ল্যাম্প অন স্ট্যান্ড– যা বাংলায় ‘গাছা’ নামে পরিচিত, এই পোড়ামাটির দ্রব্যটি দেবপূজায় ব্যবহৃত হয়। হিন্দুবাড়িতে এর ধাতব রূপ হল ‘পিলসুজ’ বা ‘দেরকো’। ‘পিলসুজ’ ফারসি শব্দ। কিন্তু ‘দেরকো’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত দীপবৃক্ষ থেকে। রামায়ণ ও মহাভারতে একাধিক স্থানে দীপবৃক্ষের প্রসঙ্গ এসেছে। মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বের ৫৯ পর্বে রৈবতক পর্বতে মহোৎসব উপলক্ষে লেখা হয়েছে– ‘গুহা ও নির্ঝরপ্রদেশসমুদয়ে অসংখ্য দীপবৃক্ষ [আলোকস্তম্ভ– প্রদীপযুক্ত স্তম্ভ] নিহিত থাকাতে দিবসের ন্যায় শোভা হইয়াছে।’

বর্তমানে মাটির পরিবর্তে ধাতুর তৈরি নানা প্রকারের ডিশ দেবপূজায় ব্যবহৃত হয়। যেমন ‘রেকাবি’– ফারসি ‘রিকিবি’ থেকে এসেছে। এটি মূলত তামা বা কাঁসার ডিশ। কাঠের তৈরি বারকোসও দেবপূজায় ব্যবহৃত হয়। এটি ফারসি শব্দ। তামার তৈরি গোলাকার ডিশ বা থালার নাম ‘পরাত’। এটি পোর্তুগিজরা বাংলায় আমদানি করেছিলেন।
তাম্রাশ্মীয় যুগের অন্যতম মৃৎপাত্র ছিল কেটলির মতো নলযুক্ত ঘটি বা জার। ইংরাজিতে বলা হয়েছে স্পাউটেড চ্যানেল পট। বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত জার বা ভেসেল টাইপের পাত্রে হ্যান্ডেল বা নল যুক্ত আছে। এই পাত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, নলের মুখটি বিভিন্ন প্রাণীর মোটিফ-যুক্ত। কোনওটি কুমীর, কোনওটি আবার পূর্ণাঙ্গ নারীমূর্তি, কোনওটি অঞ্জলিবদ্ধ হস্তযুগল সমন্বিত সুন্দরী নারীর মুখমণ্ডল বিশিষ্ট।

এই ধরনের পাত্রের উল্লেখ প্রাচীন সাহিত্য থেকে মেলে। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে রচিত ‘অঙ্গবিজ্যা’ গ্রন্থে বিভিন্ন নলযুক্ত জারের তালিকায় ‘সিরিকমসগ’ নামের জারের কথা আছে। ‘কমস’ পাত্রটি বৈদিক সাহিত্যে দেখা যায়। এটি ধাতুর তৈরি হত। ‘সিরি’ শব্দের অর্থ হল লক্ষ্মী বা ‘শ্রী’ নামের দেবী।
এমন নারীমুখ-যুক্ত জলকুম্ভের উল্লেখ আছে অথর্ববেদে। যেমন, পূর্ণকুম্ভ নারী। ‘ললিতবিস্তার’ গ্রন্থে আরেক ধরনের জলপাত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়, তার নাম ‘পূর্ণঘটকন্যা’। এমন পাত্র বর্তমানে দেখা যায়– মনসার মূর্তি আঁকা নানা ধরনের ঘট কিংবা ধাতুর তৈরি পঞ্চপ্রদীপ কিংবা মেদিনীপুরের দেওয়ালি পুতুলে।
‘শ্রৌতসূত্র’ গ্রন্থে নলযুক্ত পাত্রের প্রথম পরিচিতি পাওয়া যায়। তার নাম ছিল ‘প্রণালী’। প্রণালী পাত্রের মধ্যে সোমরস পূর্ণ করে যজ্ঞে দান করা হত। বৈদিক সাহিত্যে ‘গল্লল’ নামে পোড়ামাটির পাত্রের কথা আছে। এটি নলযুক্ত। রন্ধনের সময় তেল বা ঘি এই পাত্র থেকে ঢালা হত। কমণ্ডলু মূলত লাউয়ের খোল দিয়ে বেশি বানানো হলেও মাটির তৈরি হত। নলযুক্ত ও নলবিহীন দু’ প্রকারের জলপাত্র হিসেবেই কমণ্ডলু দেখা যায়। চতুর্ষষ্ঠী বাস্তুযাগ উপলক্ষে সেকালে মানুষ নতুন পুকুর কাটাতেন। সেই পুকুরের পুজো করার পর, জলের কামনায় নলযুক্ত ঘটিকায় প্রথম জল ঢালা হত পুষ্করিণী গর্ভে। পাত্রটির নাম ছিল ‘বর্ধনী’।

ভৃঙ্গার গাড়ু বদনা নলযুক্ত জলপাত্র। মহাভারতে ভৃঙ্গার শব্দটির উল্লেখ দেখা যায়। মূলত স্ফিতোদর কলসির মতো গলাসহ ঢাকনি ও নলযুক্ত পাত্র। এটি শুধু মাটির তৈরি হতো না, মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি হতো। মহাভারতে এর আরেকটি নাম উল্লিখিত হয়েছে ভদ্রকুম্ভ। সোনার তৈরি ভৃঙ্গার রাজ্যাভিষেকের সময় লাগতো।
‘ভৃঙ্গার’ একালের গাড়ুর মতো দেখতে ছিল। ‘গাড়ু’ শব্দটির মূলে আছে ‘গড্ডিয়া’ বা ‘গাড়’। দেশি বা দ্রাবিড় শব্দ। ‘গড্ডিয়া’ বা ‘গাড়’ শব্দের অর্থ হল গর্ত। যেমন একালের গড়ে পুকুর। প্রাগার্য বা তাম্রাশ্মীয় স্পাউটেড পটারির প্রকৃত নাম বোধহয় ‘গড্ডিয়া’। গাড়ুর মতো আরেকটি নলযুক্ত পাত্রের দৃষ্টান্ত হল বদনা। বদনার পূর্বরূপ বর্ধনী। অভিধানকারদের মতে ‘বর্ধনী’ থেকেই ‘বদনা’ শব্দটি এসেছে।

বাংলায় পাল-সেন আমলে নলযুক্ত মদ্যপাত্রের নাম জানা যায় চর্যাগীতি থেকে। বিরুবাপাদ রচিত তিন নম্বর চর্যাগীতিতে শুণ্ডিণী বা শুঁড়িবাড়ির ছবি আঁকা হয়েছে। গ্রাহকরা নিশানাযুক্ত সেই শুঁড়িবাড়ি বা দোকানে এসে মদ পান করতেন। সরু নল যুক্ত মদ্যপাত্র ‘ঘড়লী’ থেকে মদ পরিবেশন করা হত মদ্যপায়ীদের। কবি লিখেছেন–
এক সে ঘড়লী সরুই নাল।
ভণন্তি বিরুআ থির করি চাল।।
ঘড়লি শব্দটি যদি ‘ঘটি’ থেকে এসে থাকে, তবে নলযুক্ত ঘটি অর্থাৎ ভৃঙ্গার বা গাড়ু তাতে সন্দেহ নেই।
………………..পড়ুন ঠাকুরদার ঝুলির অন্যান্য পর্ব………………..
পর্ব ১২: লোকখেলার মধ্যে মিশে রয়েছে হাজার বছরের ফেলে আসা জীবনের স্মৃতি
পর্ব ১১: অঘ্রানের নবান্ন মূলত নববর্ষেরই উৎসব ছিল
পর্ব ১০: বারবণিতাদের আরাধনার মধ্যে দিয়েই শুরু হয়েছিল কাটোয়ার কার্তিক লড়াই
পর্ব ৯: শিশুঘাতক থেকে কেন শিশুরক্ষক দেবতা হয়ে উঠলেন কার্তিক?
পর্ব ৮: তেনাদের পুজো, তেনাদের মেলা-মোচ্ছব
পর্ব ৭: প্রেত মানেই ভূত বা অতীত, কিন্তু সকল প্রেতই ভূত নয়!
পর্ব ৬: কেবল কালী নন, লৌকিক লক্ষ্মী ঠাকরুনও দাঁড়ান স্বামী নারায়ণের বুকে পা রেখেই
পর্ব ৫: মহিষাসুরমর্দিনী নন, কৃষিপ্রধান বাংলায় আদিপূজিতা ছিলেন শস্যদেবী নবপত্রিকা
পর্ব ৪: পুকুরের দেবতা পুকুরের ভূত
পর্ব ৩: পুকুরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে লোককথা আর লোকবিশ্বাস
পর্ব ২: পৌরাণিক হিন্দু ও বৌদ্ধ সাহিত্যে দেবতা অথবা মানুষের বন্ধু হিসেবেই স্থান পেয়েছে কুকুর
পর্ব ১: সেকালের ডাকাতির গপ্প
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved