১৯৯০ সালে যখন বিতর্কিত জমিতে করসেবা হয়েছিল, তখন শুধুমাত্র আক্রান্ত হয়েছিল বিতর্কিত কাঠামোর গম্বুজের অংশটি। ওই অভিজ্ঞতা থেকে করসেবকরা বুঝেছিল একসঙ্গে আঘাত করতে হবে কাঠামোর ভিত ও গম্বুজকে। তবেই দ্রুত ভেঙে পড়বে ওই কাঠামো। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে করসেবার নামে বিতর্কিত জমিতে কী ঘটেছিল, তা দুনিয়া প্রত্যক্ষ করেছে। ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বিতর্কিত জমির পাশে দাঁড়িয়ে লালকৃষ্ণ আদবানি ও মুরলিমোহন যোশীরা অসহায়ভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন ঘটনাপ্রবাহ কীভাবে তাঁদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। দর্শকের মতো দাঁড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও।
উত্তরপ্রদেশ সরকার সুপ্রিম কোর্টে লিখিতভাবে আশ্বাস দিয়েছিল, ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ভজন গান, প্রার্থনা ও মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে করসেবা করবে। কোনও নির্মাণ কাজের পরিকল্পনা তাদের নেই। উত্তরপ্রদেশ সরকারের দেওয়া লিখিত আশ্বাসের ওপরই ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বিতর্কিত জমিতে করসেবা করার অনুমতি মিলেছিল। কিন্তু সে সময় এটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট ছিল যে, করসেবকরা শুধুমাত্র ভজন গাওয়ার জন্য আর মন্ত্রোচ্চারণ করতে অযোধ্যা ছুটে আসেনি। বিতর্কিত কাঠামো কীভাবে ভাঙতে হয়, তার প্রশিক্ষণ নাকি সেপ্টেম্বর মাস থেকেই চলছিল। বিতর্কিত জমির পাশে প্রস্তুত রাখা ছিল কংক্রিট মিক্সার-সহ যাবতীয় নির্মাণ সামগ্রী। অদূরেই রাখা ছিল বড় বড় পাথরের স্তম্ভ। যেগুলি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো করা হয়েছিল। তৎকালীন উত্তরপ্রদেশ সরকার শীর্ষ আদালতকে আরও জানিয়েছিল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা ও বিজেপি সাংসদ স্বামী চিন্ময়ানন্দের লেখা চিঠি তাদের হাতে রয়েছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টে কল্যাণ সিংয়ের সরকার একথা জানায়নি যে, সদ্য অক্টোবরের ৩০ এবং ৩১ তারিখ অযোধ্যার ধর্মসংসদে হিন্দুত্ববাদী নেতারা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, এ বারের করসেবা বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সমাপ্ত হবে না।
আরও পড়ুন: নিহত মিছিল থেকে পরের হত্যাযজ্ঞ শুরুর মাঝের অবসরে ফিলিস্তিনিরা দেশ এঁকে নেন
১৯৯০ সালে যখন বিতর্কিত জমিতে করসেবা হয়েছিল, তখন শুধুমাত্র আক্রান্ত হয়েছিল বিতর্কিত কাঠামোর গম্বুজের অংশটি। ওই অভিজ্ঞতা থেকে করসেবকরা বুঝেছিল একসঙ্গে আঘাত করতে হবে কাঠামোর ভিত ও গম্বুজকে। তবেই দ্রুত ভেঙে পড়বে ওই কাঠামো। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে করসেবার নামে বিতর্কিত জমিতে কী ঘটেছিল, তা দুনিয়া প্রত্যক্ষ করেছে। ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বিতর্কিত জমির পাশে দাঁড়িয়ে লালকৃষ্ণ আদবানি ও মুরলিমোহন যোশীরা অসহায়ভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন ঘটনাপ্রবাহ কীভাবে তাঁদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। দর্শকের মতো দাঁড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও। বলা হয়ে থাকে, স্বামী চিন্ময়ানন্দ যে ভজন ও মন্ত্রপাঠের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা নাকি স্রেফ ‘প্ল্যান বি’। অর্থাৎ করসেবকদের ভিড় না জমলে ব্যাপারটা শুধু ভজন ও পূজনের মধ্য দিয়েই শেষ হত। মুখরক্ষা হত হিন্দুত্ববাদীদের। ইতিহাস অবশ্য অন্য খাতে প্রবাহিত হয়েছে। তবে বাবরি মসজিদ ভাঙা যতোই পরিকল্পিত হোক না কেন, বিজেপি নেতারা তা কখনও স্বীকার করেননি। আদালতে দাঁড়িয়েও তাঁরা নিজেদের বরাবর নির্দোষ দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: তীর্থস্থানের বিপন্নতা না থাকলে মরুতীর্থ হিংলাজের মতো সিনেমা হত না
গত ৩১ বছরে সরযূ নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। গত তিন দশক ধরে অযোধ্যা বলতে তামাম বিশ্ব জানে হিন্দুত্বের রাজনীতির আঁতুড়ঘর। সুপ্রিম কোর্টে রায় হাতে নিয়েই বিতর্কিত জমিতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সু-উচ্চ রামমন্দির। আরও একটি লোকসভা ভোটের মুখে অযোধ্যাকে ঘিরে হিন্দুত্বের রাজনীতির পুনর্জাগরণের প্রতীক্ষা করছে দেশ। ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদঘাটন ঘিরে কী ধরনের সমারোহের আয়োজন হতে চলেছে, তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে চর্চা চলছে। ২২ জানুয়ারির জন্য যখন দেশ অপেক্ষায়, তখন ৬ ডিসেম্বরের স্মৃতি অনেকটাই ফিকে।
৬ ডিসেম্বর বিতর্কিত কাঠামো ভেঙে পড়ার পর করসেবকরা স্লোগান তুলেছিল, ‘ইয়ে তো সির্ফ ঝাঁকি হ্যায়/ আব মথুরা-কাশী বাকি হ্যায়’। ৩১ বছরে অবশ্য ওই ঝাঁকি দর্শন ছাড়া আর কিছু দেখতে হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুত্বের রাজনীতির ধরন ও ইস্যু বদলেছে। রামমন্দির-বাবরি মসজিদের বৃত্ত থেকে তা বেরিয়ে এসে তা এখন অনেক সম্প্রসারিত। মথুরা-কাশী বিতর্ক এখনও আদালতের চৌহদ্দির ভেতরই রয়েছে। বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণ যদি কোনও বৃত্ত সম্পূর্ণ করে, তা হলে সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার মধ্যে দিয়েই মন্দির-মসজিদ নিয়ে হানাহানি চিরতরে বন্ধ হোক। ভিন্ন প্রেক্ষিতে এবার ৬ ডিসেম্বরের বার্তা এটাই হওয়া উচিত।
আমাকে মাঝে মাঝে বম্বে ডাইং-এর ফ্যাক্টরিতে পাঠাতেন মিসেস ওয়াড়িয়া। তোয়ালে, বিছানা চাদর, বালিশের ওয়াড় এমনকী, লুঙ্গিরও ডিজাইন। শিল্পের এই বিচিত্র ব্যবহার ভুলব না। লোকে বলে, ফ্যাশন ধনীদের জন্য। আসলে সমস্ত কিছুই শেষ পর্যন্ত চাপানো হয় দরিদ্র শ্রেণি আর সাধারণ নাগরিকের ঘাড়ে।