চলছে মাধ্যমিক। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। সকলেই একসময় জেনে যাই সেই রহস্য যে, পরীক্ষায় শুধু প্রশ্নপত্র-উত্তরপত্র হয় না– থাকে এক টুকলিপত্রও। সঙ্গে প্রশ্নপত্র ফাঁস। গার্ডদের লাল-চক্ষু। ওই বুক-দুরুদুরু পরীক্ষা পরিস্থিতি অনেকেই কাটিয়ে এসেছেন। সেসবই একলপ্তে ফিরে দেখা।
যাদের বাড়িতে ল্যান্ডফোন নামক যন্ত্রটা ছিল, তারা ‘কেবল ফল্ট’ শব্দটার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। বাড়ির ফোন দেহ রাখলে এক্সচেঞ্জে এত্তেলা দিতে হত, আর তারা দেখে-শুনে নিদান দিত কীরকম গোলমাল হয়েছে। ফোনের তার মাটির তলা দিয়ে আসত– কোনও কারণে কেবল ফল্ট হলে মাটি খুঁড়ে সেই তার মেরামত করতে হত। যেহেতু টেলিফোনের তার ফুটপাতের ওপর দিয়ে রাস্তার সাইড দিয়ে যেত, যানবাহন ব্যাহত হত না এই কাজের সময়ে– বরং পথচলতি লোক নিজের খেয়ালে দাঁড়িয়ে খানিক দেখে নিত, কেমন কাজ হচ্ছে। ছোটখাটো কেবল ফল্টের জন্য অল্প খোঁড়াখুঁড়িতে হয়ে যেত, কিন্তু বড় কেবল ফল্ট হলে চিত্তির– বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে মাটি খুঁড়ে সেই মেরামতির কাজ চলত। তখন এক সুপারভাইজার থাকত যে, গালাগালি দিয়ে মজুরদের মাটি খোঁড়া ত্বরান্বিত করত। আর মিস্ত্রীদের এদিক-সেদিক চলে যাওয়া থেকে আটকাত। মানিকতলা ৩৫ এক্সচেঞ্জে এইরকম এক সুপারভাইজারের সঙ্গে আমার দিব্যি দোস্তি হয়েছিল। ভদ্রলোককে সিগারেটের সাইজের বিড়ি খেতে দেখে লোভ হত আর খিস্তির বিন্যাস দেখে ভক্তি।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় একগোছা প্রশ্নপত্র জোগাড় করেছিল, এবং পরীক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছিল– ‘এটাই এই বছরের প্রশ্নপত্র। ডেড-সিওর’ বলে। মা আর বড়মামু পরীক্ষার আগের দিন পাওয়া এই প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে খুলে দেখার সাহস পাননি, কিন্তু দুঃসাহসীর সংখ্যা মা’দের শহরে কম ছিল না। অনেকেই পরীক্ষার আগের রাতে শুধু সেই প্রশ্নপত্রের উল্লেখিত প্রশ্নগুলোই পড়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল– ওই প্রশ্নপত্র থেকে একটাও প্রশ্ন আসেনি।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
কলেজের পরীক্ষার পর তখন ছুটি চলছে– হাতে অফুরন্ত সময়। এই ভদ্রলোক যেখানে কাজ করতেন, আমি হাজির হয়ে যেতাম। প্রথমে বিরক্ত, তারপরে অবাক এমন এক গুণমুগ্ধ পেয়ে। আমার সঙ্গে দেখা হলে একটা বিড়ি খাওয়াতেন আর তার সঙ্গে নতুন উদ্যমে খিস্তি শুরু করতেন।
একদিন মা আমাকে নিয়ে তাঁর স্কুলে যাচ্ছেন– আমি মা’র পরীক্ষার খাতার বোঝা নিয়ে চলেছি, হঠাৎ দেখি, কেউ সার্কুলার রোডের অন্য ফুটপাত থেকে মা’র ডাকনামে মা’কে চেঁচিয়ে ডাকছে। খানিক বাদেই হন্তদন্ত হয়ে মা’র সামনে এসে দাঁড়ালেন আমাকে বিড়ি সরবরাহকারী ভদ্রলোক, আর মা’কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছিস?’ মা বললেন, ‘ইশকুলে। অনেক খাতা আছে তাই ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছি।’ আমাকে আপাদমস্তক মেপে মা’কে জানালেন, এখন এখানে তিনি পোস্টেড, মা’র সঙ্গে আবার দেখা হবে। মা’কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘একে চেনো কী করে?’ আমার স্বভাব-গম্ভীর মা বললেন, ‘পরিচিত।’
কয়েক দিন বাদে দেখি মা তাঁর প্রাণের বন্ধু আর সহপাঠী তিনমাসের ছোট ভাই বড়মামুকে ফোন করে অভিযোগ জানাচ্ছেন, ‘‘এই ‘ডেড-সিওর’কে নিয়ে তো ভারি ঝামেলা হল!” মা তারপরে জানালেন যে, ইশকুলের সামনে ফোনের কাজ হচ্ছিল; কাজের ফাঁকে ডেড-সিওর মা’র সঙ্গে দেখা করতে ইশকুলে গিয়ে দারোয়ানকে মায়ের ‘বয়ফ্রেন্ড’ পরিচয় দিয়ে ডেকে আনতে বলেছেন। মায়ের এইরকম দুঃসাহসী বেপরোয়া বয়ফ্রেন্ডকে দেখার জন্য পুরো স্টাফরুম ছুটে এসেছিল, কিন্তু দর্শন পেয়ে মায়ের রুচির ওপরে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। বড়মামুর হাসির শব্দ ফোনেই ভেসে এল।
সন্ধেবেলায় বড়মামু এসে হাজির আমাদের বাড়িতে। মায়ের বয়ফ্রেন্ড, তা-ও এইরকম বিদঘুটে সাহেবি নাম– আনন্দ পাব, না দুঃখ– সেটা ঠিক করতে বড়দের আলোচনার সময় ঘরের এক কোণে সেঁটে গেলাম। জানতে পারলাম যে, এই সুপারভাইজার লোকটির পিতৃদত্ত নাম ‘রাখাল’। ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় একগোছা প্রশ্নপত্র জোগাড় করেছিল এবং পরীক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছিল– ‘এটাই এই বছরের প্রশ্নপত্র। ডেড-সিওর’ বলে। মা আর বড়মামু পরীক্ষার আগের দিন পাওয়া এই প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে খুলে দেখার সাহস পাননি, কিন্তু দুঃসাহসীর সংখ্যা মা’দের শহরে কম ছিল না। অনেকেই পরীক্ষার আগের রাতে শুধু সেই প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত প্রশ্নগুলোই পড়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল– ওই প্রশ্নপত্র থেকে একটাও প্রশ্ন আসেনি! এই পরীক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে রাখালকে মেরে পা ভেঙে দিয়েছিল। সেই ভাঙা-পা নিয়ে পরের পরীক্ষা দিতে গিয়ে ডেড-সিওর (ততক্ষণে তার পিতৃদত্ত নাম বদলে গিয়েছে ছাত্রদের কাছে) প্লাস্টার থেকে চোথা বের করতে গিয়ে একই পরীক্ষায় দুইবার ধরা ধরা পড়ে এক্সপেলড হয়। এই মহান ঘটনা ঘটেছিল ১৯৪৭ সালে আমাদের স্বাধীনতার প্রাক্বালে– এই ঘটনা দিয়েই লেখা শুরু করলাম।
টোকাটুকি নিয়ে গল্প আর অভিজ্ঞতার শেষ নেই। উচ্চ-মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা চলছে। দীপ বেশ লিখছিল, হঠাৎ পাশের রো-তে একজনকে টুকতে দেখে লোভ হল। কাগজটা চেয়ে সেই বন্ধু দীপের হাতে চোথা ধরিয়ে দিল। সরল মনে দীপ চোথা খুলতে যেতে ফৎ-ফৎ করে চোথা খুলতে শুরু করল– দীপ ততক্ষণে এই চোথার ওপরে কন্ট্রোল হারিয়েছে। ইতিমধ্যে ইনভিজিলেটর বুঝতে পেরেছেন, এখানে কিছু একটা হচ্ছে– তিনি এসে হাজির; তাঁর বিস্ফোরিত চোখের সামনে চোথা দুই ফিট লম্বা এক স্ক্রল হয়ে উঠল। বিস্ময় কাটলে এই শিল্পকলার প্রভূত প্রশংসা করলেন দীপের দিকে তাকিয়ে– দীপ খুবই লজ্জা পাচ্ছিল কারণ এই চোথার কৃতিত্ব দীপের নয় বলে, তাই মাথা নিচু করে বসে থাকল। অচিরেই ইনভিজিলেটর লক্ষ করলেন চোথার লেখা যতটা ভালো, দীপের হাতের লেখা ততটাই খারাপ। উনি তখন দীপের ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদির প্রশংসা করে ওকে নিয়ে প্রিন্সিপালের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। তারপরে গার্জেন-কল, গার্জেন সাজিয়ে আরেকজনকে দিয়ে ম্যানেজ করা– সেসব আলাদা গল্প। কিন্তু মূল বিষয় হল– দীপের চোথার প্রকার-নিরীক্ষণে ব্যর্থতা।
সব ইনভিজিলেটর এইরকম নির্দয় হন না। ম্যানেজমেন্ট ক্লাসে যাঁকে দেখে বেশ ভয় লাগত, পরবর্তী কালে প্রার্থনা করতাম তিনিই যেন হলে থাকেন। পরীক্ষার সময় উনি মিটিমিটি হাসি হেসে ক্লাসে বলতেন– ‘‘আমি দু’বার বাইরে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়াব পাঁচ মিনিটের জন্য। যা আদানপ্রদান করার আছে, করে নেবে। আওয়াজ যেন বাইরে না শোনা যায়।’’ সঞ্জয় একটা নীল-পাউচ নিয়ে পরীক্ষায় বসত, আর ওই পাউচে প্রত্যেকটা প্রশ্নের চোথা সাজানো থাকত চ্যাপ্টার হিসেবে। যতই পড়া করে থাকুক, এই পাউচ ছাড়া সঞ্জয় কনফিডেন্স পেত না। একদিন পরীক্ষার হলে স্যর সঞ্জয়ের এই পাউচটা খেয়াল করেন আর পাউচটা নিয়ে ভেতরের কাগজগুলো খুলে দেখতে শুরু করেন। সঞ্জয় এতে খুব বিরক্ত হয়ে জানায় যে, স্যর এটা নিয়ে নিতে পারেন; সব সাজানো ছিল, এখন ঘেঁটে গিয়েছে। স্যর অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে নিজের আসনে বসে সবক’টা চোথা চ্যাপ্টার অনুযায়ী সাজিয়ে সঞ্জয়কে ফেরত দেন। পরে শুনেছিলাম, সঞ্জয়কে আলাদাভাবে বলেছিলেন পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর চোথাগুলো তাঁকে দিয়ে দিতে– স্যরের ক্লাস-নোটের পয়েন্ট বানাতে সুবিধে হবে।
আমাদের ক্লাসে সোমেন বলে একটা ছেলে ছিল। তার নিজের প্রতি assessment একদম ঠিকঠাক ছিল। জানত হায়ার সেকেন্ডারিতে ‘P’ ডিভিশনের বেশি পাবে না– আশাও করেনি। আমাদের সিট পড়েছিল হিন্দু স্কুলে। দেড় ঘণ্টা পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে যেত, আর যাওয়ার আগে সমস্ত টয়লেট ঘুরে টোকার জন্য সেখানে রাখা সমস্ত বই নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিত পুরনো বইয়ের দোকানে। পরীক্ষার দুই ঘণ্টা হলে ছাত্রদের টয়লেটে যাওয়া বেড়ে যায় টোকার জন্যে– তারা গিয়ে দেখত একটাও বই নেই! টিচাররা এটা করছে ভেবে ছাত্ররা কিছু বলতে পারত না। অবশেষে পঞ্চম পরীক্ষার দিন এই কেস করতে গিয়ে ও ধরা পড়েছিল। তার মধ্যে প্রায় হাজার টাকা রোজগার হয়ে গিয়েছে ওর। সেই সোমেন এখন মুম্বই-এর একটা অ্যাড কোম্পানির বড় কর্তা।
কয়েক বছর আগে কলেজে পড়াতে শুরু করে নতুন করে ছাত্র হয়েছি। অনেক কিছু জানছি আর শিখছি, যা ‘সিলেবাসে নেই’। ক্লাসের ছেলেদের যাতে বুঝতে সুবিধে হয়, এক জটিল বিষয়ের ওপরে বিস্তর খেটে একটা নোট বানিয়ে ছাত্রদের বিলি করেছিলাম পরীক্ষার আগে। পরীক্ষার খাতা হাতে আসতে চমকে গেলাম– অনুশোচনা আর আত্মধিক্কারে মন ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল। এইসব সোনার টুকরো ছেলেমেয়েকে আমি অবমূল্যায়ন করেছিলাম! যে জটিল বিষয়কে সরলীকরণ করে নোটস বানিয়েছিলাম, সেই বিষয়ে আমার নোটস থেকে না লিখে গড়গড় করে পাতার পর পাতা লিখে গিয়েছে। আনন্দে চোখে জল এসে গিয়েছিল, কিন্তু খানিক বাদেই চোখের জল শুকিয়ে গেল যখন দেখলাম দু’জন বাদে ক্লাসের সবার খাতার উত্তর হুবহু এক! গুগল করে দেখলাম প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের উত্তর সেখান থেকেই নেওয়া। চোথা আর প্রযুক্তির মেলবন্ধনকে সেলাম জানিয়ে নিজেকে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছিল! বেকার আমি এতো খেটে এই নোটস বানিয়েছিলাম, সবই তো ‘ব্যাদে আছে’!
ঢাকায় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম, প্রশস্ত ক্লাসরুম, বিশাল জানালা আর পরিকাঠামো দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। মুগ্ধতা আরও বেড়েছিল যখন পরীক্ষার ইনভিজিলেশনের সময় ইউসুফ আমাকে বলল, ‘দাদা, শুরুতে আপনি ঘর থেকে গার্ড দেন, আমি জানালা থেকে গার্ড দিই বরং। পরে বদলে নেব।’ আমাকে বিস্ময়াবিষ্ট দেখে ইউসুফ বুঝিয়েছিল যে, ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসের বিশাল সাইজের সুযোগ নিয়ে পরীক্ষার সময় যথেচ্ছচার শুরু করেছিল। টোকাটুকি অনেকটা বন্ধ করা গিয়েছে জানালা থেকে গার্ড দিয়ে। একজন স্টেজে বসে নজর রাখে, আরেকজন জানালা থেকে।
টোকাটুকি নিয়ে লেখা কোথায় শেষ করা যায় ভাবছি, কলেজের বন্ধু বর্ণালীর থেকে একটা মেসেজ আর ইশকুলের গ্রুপ থেকে একটা ভিডিও ঢুকল ফোনে। ভিডিওটায় দেখলাম এক প্রতিবেশী রাজ্যের বোর্ড পরীক্ষার্থীকে তল্লাশি করে তার দেহের বিভিন্ন জায়গা থেকে চোথা উদ্ধার করা হচ্ছে– মায় জাঙিয়া থেকেও টেনে চোথা বের করা হল– ক্যামেরাতে বারবার ছেলেটার চেহারা আর অভিব্যক্তি ধরা পড়ছিল। এইসব দেখে খানিক ব্যোম মেরে বসে থেকে একবার ঈশ্বরকে প্রণাম করে নিলাম। ভাগ্যিস আমাদের সময়ে নেট-দুনিয়া ছিল না, থাকলে সন্তানকে পরীক্ষার আগে নীতিকথা মনে করিয়ে দেওয়ার সময় সন্তান ‘excuse me please’ অনেক বাপ-মায়ের পরীক্ষার ভিডিও-ক্লিপ খুঁজে বের করে দেখাত, বাবা-মা’রা সন্ন্যাস অবধি নিতে পারত না– কারণ সেখানেও লুকোনোর জায়গা নেই। আর জাঙিয়া থেকে চোথা বের করার সময় হঠাৎ মনে পড়ল, বাবরের সাম্রাজ্য বিস্তারের উত্তরে লিখেছিল ‘যুদ্ধে হারিলে বাবর ভাঙিয়া পড়িতেন না’। তার খাতা দেখে এক সতীর্থ টুকেছিল ‘যুদ্ধে হারিলে বাবর জাঙিয়া পড়িতেন না’। আর বর্ণালী জানাল, ইনভিজিলেটর হিসেবে একজনকে ধরতে খানিক বাদে সে আরেক সেট চোথা বের করল। আবার ধরতে ছাত্রী জবাব দিয়েছিল, ‘কিচ্ছু করতে পারবেন না ম্যাডাম। আমি অমুক কলেজের জিএস। ওই কলেজের জিএসরা পাশ করে না– সেটাই ট্র্যাডিশন।’
পুনশ্চ: স্বাধীনতার বছরের ঘটনা দিয়ে গল্প শুরু, তাই সংবিধান দিয়ে শেষ করি। আমাদের সংবিধান দশটা দেশের সংবিধান থেকে ‘ধার’ করে লেখা। এমনকী, ১৯৭৬ সালে যে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটা যুক্ত হয়েছিল, সেটা নাকি ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া এক দেশের সংবিধান থেকে ‘ধার’ নেওয়া। নকল করাটা টোকাটুকি, ধার নেওয়াটা নয়। তাই কি? জানি না!
অশোক ঘোষ মনে করতেন, ট্রাম আন্দোলন কলকাতার হকারদের একটি রাজনৈতিক চেতনা জুগিয়েছিল। এই আন্দোলন ছিল ছাত্র, শিক্ষক, কেরানি, হকার, আর উদ্বাস্তুদের লড়াই। আর ট্রাম-ডিপো মানেই হকার। এইসব দোকানেই আন্দোলনকারীদের আড্ডা বসত। দেশ-বিদেশের নানা ধরনের কথা আলোচনা হত। সকালে হয়তো কোনও এক চায়ের দোকানে জটলা পাকিয়ে খবরের কাগজ পড়া হত।