Robbar

পয়লা এপ্রিলের নির্ভেজাল গুল, হয়ে গেল ‘ফেক নিউজ’

Published by: Robbar Digital
  • Posted:March 31, 2024 9:47 pm
  • Updated:April 1, 2024 8:32 am  

এক সময় মাঝে মাঝেই গুজব উঠত। ছেলেধরা, পাকিস্তানের স্পাই, রক্তচোষা, এমনকী ডিস্কোরোগের গুজব ছড়িয়েছিল জোর, যাতে নাকি বেছে বেছে শরীরের ভাইটাল পার্টস হাপিস হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু প্রেম চোপড়া থাকলেই ধর্মেন্দ্রও থাকবে। ডিস্কোরোগের অ্যান্টিডোট ছিল উপদ্রুত অঞ্চলে চুন লাগানো। প্রেস্টিজে চুনা লাগানো ব্যাপার স্যাপার। কিন্তু এসব ছিল সত্য যুগে। তারপর এল কলিযুগ। সাদা বাংলায় যাকে বলে ‘পোস্ট ট্রুথ এরা’। ডিজিটাল যুগ, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। গুজব ও হুজুগ আর লোকাল থাকল না। প্র্যাঙ্ক মশকরা আর নিরীহ থাকল না। সব ভাইরাল হয়ে উঠল, সব লোডেড।

দেব রায়

‘চিঠি খুলে করেছো ভুল
জানোই তো আজ এপ্রিল ফুল।’
সে এক সময় ছিল। সাদা-কালো সিনেমা, সাদামাটা জীবন। রেডিও আর খবরের কাগজ ছিল তর্কাতীতভাবে বিশ্বাস্য। অন্তত, লোকে তাই মনে করত। সে যুগে চল ছিল লোককে বোকা বানিয়ে মজা পাওয়া। যে বোকা বনত, সেও মজা পেত খানিক। প্রাচীনকাল থেকেই এ বন্দোবস্ত চলে আসছে। বসন্ত এলে, মন উড়ুউড়ু হলে তখন কার্নিভালের দিকে সবাই ধাওয়া করে। সমাজের শাসন সংস্কার একটু ঢিলে হয়, আর সেই ফাঁকে মদন, রতি, ভিনাস, কিউপিড ওভারটাইম খাটেন। তার সঙ্গে চলে বোকা বানানোর খেলা। হাসি-ঠাট্টা মশকরা হচ্ছে ক্ষমতা, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির নিয়মের ফাঁস থেকে মুক্তির স্বাদ। সেইজন্য ক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠান হাসি-ঠাট্টা, মশকরা পছন্দ করে না। কারণ হাসি এলেই প্রচলিত তন্ত্রকে অগ্রাহ্য করার সাহস আসবে। বসন্ত সমাগমে ওইটুকু বিচ্যুতি সমাজ মেনে নেয়, লাইসেন্স দেয়, যাতে বড় কোনও দুর্বিপাকে না পড়তে হয়।
তাই বিয়ের বাসরে জামাই ঠকানো আর পয়লা এপ্রিল বন্ধুদের ঠকানো।
সে জামাইকে আদর করে কেষ্টনগরের মাটির মিষ্টি আর নুনে পোড়া সরবত খাওয়ানো হোক, বা সেভিং ক্রিমের খোপে টুথপেস্ট রেখেই হোক। সেই সব দিনে কখনও কখনও খবরের কাগজ বা রেডিও স্টেশন এই রকম হোক্স বা মজার ছলে গুল দিত। তাই নিয়ে রগড় হত বিস্তর। খবর কাগজে হয়তো ছাপা হল– আজ কাগজ এক সুগন্ধি কালি দিয়ে ছাপা হয়েছে। সেই শুনে যারা নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ নিতে গেল, নাকে কালি লেগে নাকাল হল। কালিটার ওটাই বিশেষত্ব, গায়ে লাগালে রং লেগে যাবে। ‘অরসন ওয়েলস’, ‘সিটিজেন কেন’ ও নানা বিখ্যাত ছায়াছবির জন্য যাঁর নাম পৃথিবী বিখ্যাত, তিনি রেডিও-তে এক কাণ্ড করেছিলেন। এইচ. জি. ওয়েলসের ‘দ্য ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ রেডিও-তে করতে গিয়ে এমন ঘোষণা করেছিলেন যে, কেউ কেউ ভেবেছিল সত্যিসত্যি মঙ্গল গ্রহের জীব পৃথিবীকে আক্রমণ করেছে।
Redditors share the best April Fools' Day pranks - Upworthy
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ছাপার অক্ষরের আর সেই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, ঘরে ঘরে ছাপাখানা। ফোটোশপ, এয়ারব্রাশের কল্যাণে ছবিরও সেই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। নিত্যনতুন সফটওয়্যারের সাহায্যে ভিডিও ক্লিপিংসের ইচ্ছেমতো অদলবদল করা যায়। তাই এখন নিত্য ‘এপ্রিল ফুল’ চলে। আর মাথা চুলকে ফ্যাক্ট চেকিং সাইটে গিয়ে নিজে চোখে দেখা, কানে শোনা তথ্য যে আসলে কারও বানানো মিথ্যা জেনে বোমকে যেতে হয়।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
তখন মাঝে মাঝেই গুজব উঠত। ছেলেধরা, পাকিস্তানের স্পাই, রক্তচোষা, এমনকী ডিস্কোরোগের গুজব ছড়িয়েছিল জোর, যাতে নাকি বেছে বেছে শরীরের ভাইটাল পার্টস হাপিস হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু প্রেম চোপড়া থাকলেই ধর্মেন্দ্রও থাকবে। ডিস্কোরোগের অ্যান্টিডোট ছিল উপদ্রুত অঞ্চলে চুন লাগানো। প্রেস্টিজে চুনা লাগানো ব্যাপার স্যাপার। কিন্তু এসব ছিল সত্য যুগে। তারপর এল কলিযুগ। সাদা বাংলায় যাকে বলে ‘পোস্ট ট্রুথ এরা’। ডিজিটাল যুগ, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। গুজব ও হুজুগ আর লোকাল থাকল না। প্র্যাঙ্ক, মশকরা আর নিরীহ থাকল না। সব ভাইরাল হয়ে উঠল, সব লোডেড। কাঁড়ি কাঁড়ি এ. পি. জে আবদুল কালামের কোটেশন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষের কবিতা কোথা থেকে গজিয়ে উঠে বাজারে শিরদাঁড়ার খোঁজ শুরু করল। কোলাইটিস থেকে ক্যানসার– কীসের টোটকা নেই এই মহাবিশ্ববিদ্যালয়ে? নারকেল জলে ফুটিয়ে নিলে ক্যানসারের মহৌষধ, দায়িত্ব নিয়ে বলে দেবে। ফুটন্ত জল গলায় ঢাললে করোনা হবে না নিদান দেবে, তাতে রোগী গরম জল খেয়েই অক্কা পাবে কি না তার কথা বলা থাকবে না। আর আছে বিভিন্ন রকম আইটি সেল। তারা দক্ষিণের ছবি ক্লিপিংস দিয়ে বলবে, হাম লোগ খঁতরে মে হ্যায়। সামলাও ঠ্যালা।
যা ছিল এককালে, অনামা পোস্টকার্ডে দেবতার মহিমা প্রচার করে চেন সিস্টেমে আরও পঁচিশ জনকে অনুরূপ পোস্টকার্ড পাঠানোর নির্দেশ তথা হুমকি, সেটাই অন্য রূপে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা দিল, বিগ্রহের ছবি শেয়ার করলেই চমৎকার ঘটবে।
april fool's day: April Fool's Day 2024: Top WhatsApp, Facebook, Instagram messages to share - The Economic Times
ছাপার অক্ষরের আর সেই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, ঘরে ঘরে ছাপাখানা। ফোটোশপ, এয়ারব্রাশের কল্যাণে ছবিরও সেই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। নিত্যনতুন সফটওয়্যারের সাহায্যে ভিডিও ক্লিপিংসের ইচ্ছেমতো অদলবদল করা যায়। তাই এখন নিত্য ‘এপ্রিল ফুল’ চলে। আর মাথা চুলকে ফ্যাক্ট চেকিং সাইটে গিয়ে নিজে চোখে দেখা কানে শোনা তথ্য যে আসলে কারও বানানো মিথ্যা জেনে ব্যোমকে যেতে হয়।
রবি ঠাকুরের ‘বিদুষক’ গল্পে কাঞ্চীর রাজার নিরীহ গ্রামবাসীকে ‘সবক’ শেখানো দেখে বিদুষক বিদায় চেয়েছিল। বলেছিল, আমি মারতেও পারি নে, কাটতেও পারি নে । বিধাতার প্রসাদে আমি হাসতে পারি। মহারাজের সভায় থাকলে আমি হাসতে ভুলে যাব।
আমাদেরও সেই দশা এল বলে। ‘উত্তর-সত্য’ যুগে রামগড়ুরত্ব থেকে মুক্তির উপায় দেখছি না।