কবিতাগুচ্ছের আগে, অসুস্থ অবস্থায় রচিত হয়েছে এক আলোকিত নিসর্গের ছবি। ভোরের আলোর গানে পূর্ণ করে দেওয়া এক আশ্চর্য সকালের চিত্রিত প্রতিমা। সে ঘটনা অনেকটা এইরকম, গভীর অচেতন থেকে জেগে উঠে আশপাশের সবাইকে অবাক করে তিনি হাতে তুলে নিলেন রং-তুলি। আশপাশের সকলে ইতস্তত দ্বিধান্বিত হয়ে উঠলেও তাঁকে নিরস্ত করা যায়নি।
সংশোধনের অছিলায় কবিতার ফেলে দেওয়া শব্দেরা এখানে জেগে উঠেছে কীসব আশ্চর্য চেহারা নিয়ে। তথাকথিত মার্কা দেওয়া সুন্দরের সঙ্গে এদের কোনও যোগ নেই।
ধৈর্যের একেবারে চূড়ান্ত সীমায় এসে কবির মনে হয়েছে, ‘ছবিগুলি বুবা লুকিয়ে রেখেছে এই সন্দেহ বরাবর আমার মনে আছে। সে আমার মৃত্যুর অপেক্ষা করবে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। তারও বছর তিনেক বাদে কিশোরীমোহনের প্রবল পরিশ্রমে ১৯৪০-এর পুজোর মুখে সেই ছবির অ্যালবাম ‘চিত্রলিপি’ প্রকাশ পেয়েছে।
ক্যাটালগে মুদ্রিত ২৬২টা রবীন্দ্রছবির নাম দেখতে গিয়ে প্রায় চমকে উঠতে হয়! এমন শিরোনাম রবি ঠাকুরের কলম থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভবের শামিল!
১০০ বছর আগে রবিঠাকুরের ৫০০টা ছবির দাম একলক্ষ টাকা হলে প্রতি ছবির মূল্য গড়ে দাঁড়ায় দুশো টাকা। আর আজ ‘বিশ্ববাজারে’ রবীন্দ্রনাথের ছবি হয়ে উঠেছে আকাশছোঁয়া।
কেমন সে ছবি, যা সংগ্রহ করার জন্যে ব্যাকুল হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ? যার জন্য আজ থেকে প্রায় ১১০ বছর আগে খরচ করেছেন ১৫০০ টাকা?
আধুনিক আর্টের প্রায় সবক’টি রাস্তায় ছবি ঠাকুরের পায়ের চিহ্ন সুস্পষ্ট ছাপ রেখে গিয়েছে।
সাহিত্যের মধ্যে অকারণ ছবি এনে চোখ ভোলানো ছেলেমানুষি পছন্দ করতেন না রবিঠাকুর।
‘মহুয়া’র প্রচ্ছদের নেপথ্যে নন্দলালের আঁকা সহজ পাঠের ছবি রবীন্দ্রনাথকে নিশ্চয়ই প্রাণিত করেছিল। সহজ পাঠের আগে আমরা দেখেছি, ১৯২২ সালের শেষে আন্দ্রে কারপেলেস প্যারিস থেকে এনেছিলেন একগুচ্ছ কাঠখোদাই। এমনকী, বিশের দশকে রবীন্দ্রনাথ যে কয়েকবার বিদেশ সফরে গিয়েছেন, সেখানে জার্মানিতে ও ফ্রান্সে তাঁর রীতিমত চেনাজানা ঘটেছিল কাঠখোদাই মাধ্যমটির সঙ্গে।
রবি ঠাকুরের ফুলের ছবির দিকে এক নজর তাকালে বোঝা যায় ইম্প্রেশনিস্ট শৈলীর তুলির আঁচড়ে আঁকা হয়েছে সেসব ছবি। ঘন অন্ধকারে পটে আলোকিত ফুলের উজ্জ্বল উপস্থিতি।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved