নর্মদার জলের পটভূমিতে বেজেছে ভিভ্যালডির অপেরা সংগীত। তার ঢেউ দীর্ঘশ্বাসে মথিত করে হৃদয়কে। দৈত্যের হাতে বন্দি রাজকন্যার কান্নার মতো তার হাহাকার। এক মহৎ চলচ্চিত্র দেখতে বসে বুঝি চলচ্ছবি, সংগীতের আলোড়ন ও কথার ঈষৎ স্পর্শ দিয়ে মাটির কাছে কীভাবে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।
কোথায় বন্ধুর ঘর? ঈশ্বর যতখানি ভাবতে পারেন, তার চেয়েও সবুজ ওই পথ, যে-পথে ছড়িয়ে আছে ভালোবাসা– ‘বন্ধুত্বের নীল ডানার মতোই ব্যাপ্ত’, সেই পথে আছে তার সন্ধান। নিঃসঙ্গতার ফুল যেখানে, তার ঠিক দু’ পা আগে সে হাত বাড়াচ্ছে আমাদের দিকে। যুদ্ধধ্বস্ত সেই পৃথিবীর হাত কি আমরা ধরতে পারব, ততখানি ভালোবাসার সাহস কি হবে আমাদের?
‘পক্ষীরাজের ডিম’ কিন্তু প্রেমের ছবিও বটে। কৈশোরের প্রেম, আহা! আমরা তো ভুলতেই বসেছিলাম। কতদিন পর বাংলা ছবি তার প্রেমের গানে বয়ঃসন্ধি দেখল।
ছবি দেখা, বোঝার ক্ষেত্রে আমরা এখনও ক্লিসে বস্তাপচা বাংলা সিরিয়াল মার্কা চলচ্চিত্রায়নকেই সেরা মনে করে, বাকি দুনিয়াকে, বিশ্ব চলচ্চিত্রকে নস্যাৎ করে দিই। ফিল্ম মেকিং-এর ভাষা, ফিল্ম দেখার মাধ্যম যে আগাগোড়া পালটে গেছে– এটা মেনে নিতে অসুবিধে হয়।
দেখতে দেখতে, চকিতে মনে হয় ‘দ্যি গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’ নামটা কি আদতে বিদ্রুপ নয়? ভাঙাচোরা এই বাংলায় যেসব সার্কাস হয়ে চলেছে নিয়ত, তারই অবয়ব কি দেখছি না পর্দায়? একটু অন্যভাবে?
বর্তমানে ভারতের অধিকাংশ সিঙ্গল স্ক্রিন হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে, নয়তো অস্তিত্ব সংকটে। সাধারণ জনগণের জন্য তৈরি হয়েছিল এই হলগুলো, বর্তমানে তাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে উচ্চমূল্যের মাল্টিপ্লেক্স সংস্কৃতি। একে তো টিকিটের উচ্চ দাম, তার ওপর পপকর্ন-জলের বিল, আর অতিরিক্ত যাতায়াত খরচ– সব মিলিয়ে চলচ্চিত্র দেখা যেন এখন অভিজাত শ্রেণির বিনোদনে রূপান্তরিত।
পানাহির সিনেমার প্রতিটি ফ্রেম বুঝিয়ে দিয়েছে ইরানের সরকার, নীতি-নির্ধারক মন্ত্রালয় এমনকী পুলিশও শিল্পের ভাষা ও শক্তিকে কী পরিমাণ ভয় করতেন। অনিশ্চয়তায় ভুগতেন সরকারি আধিকারিক ও প্রতিষ্ঠান, তাই ‘ফ্রিডম অফ স্পিচ’ ব্যাপারটা এদের অভিধানে ছিল না। তাই কুড়ি বছরের জন্য সিনেমা-নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা।
‘ইট ওয়াস জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট ’ পাঁচজন লোকের কথা বলবে, যে পাঁচজন রাজনৈতিক বন্দি একসময় একটি লোককে খুঁজে পায়, যাকে দেখে তাদের মনে হয় এই সেই লোক, যে জেলখানায় তাদের ওপর অত্যাচার করেছিল। তারা লোকটিকে অপহরণ করে এবং ঠিক করে তাকে একটি নির্জন মরুপ্রান্তরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করবে। তাহলে পানাহির এই ছবি কি একটি রিভেঞ্জ ড্রামা?
জেসি আইসেনবার্গের ‘আ রিয়াল পেইন’ আমাদের শিখিয়ে দিয়ে যায় যে আমাদের প্রত্যেকের বাড়ির দরজার বাইরে একটা নুড়ি পড়ে আছে। যখনই কষ্ট পাব আমাদের ভাবতে হবে আমাদের পূর্বসূরিরা এর থেকেও বেশি ব্যথা নিয়ে পৃথিবীতে টিকেছিলেন। জীবনের রণে ভঙ্গ দিয়ে আমাদের সরে গেলে চলবে না।
সাধারণত কোনও পরিচালকের সিনেমা অস্কার পেলে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে তাঁর পরের সিনেমা দেখার জন্য। এবং প্রোডাকশন কোম্পানি সেই মতো প্রচার চালায়, যাতে আরও বেশি মানুষ সিনেমা দেখেন এবং কোম্পানির মুনাফা হয়। বং জুন হো-র এই সিনেমা কোথাও সেভাবে প্রচার করা হল না বিশ্বজুড়ে।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved