বিসর্জন এক অবধারিত মুহূর্ত। প্রতিমা নদীতে নামানো হয়, ভেঙে যায়, জলে মিশে যায়। কিন্তু এই ক্ষয়ের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে নতুন সৃষ্টির ইঙ্গিত। প্রতিমার মাটি নদীর কাদায় মিশে যায়, সেই মাটি দিয়েই গড়া হয় পরের বছরের প্রতিমা। বিকাশ ভট্টাচার্যের ক্যানভাসে এই দ্বৈততা প্রবল।
শ্রীদেবীর দীর্ঘ কাজের পরিধিতে হয়তো একটি ছবিও নেই, যেখানে তিনি শুধুই ‘সুন্দর’টি সেজে, কিছু নাচগান, খানিক কান্নাকাটি, আর ফুলে ফুলে ধাক্কা খাওয়া প্রেম করে অডিয়েন্সকে গুডবাই করে দিয়েছেন। উল্টে শ্রীদেবী এমন সব চরিত্র বেছে নিয়েছেন, যে চরিত্রগুলি এই বলিউডি ভাবমূর্তি নির্ভর বাজারে কোনও হিরোইন নেবেন না।
মৈত্রেয়ী দেবীর বিপদটা হয়ে গেল ওই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই। যেখানে রবীন্দ্রনাথের কোনও যোগাযোগ বা অনুষঙ্গ থাকবে, স্বাভাবিকভাবেই অরণ্যের দীর্ঘতম শালবৃক্ষের মতো তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে উঠবেন।
তিনি কি সুকৌশলে ‘দেবী’ হয়েই প্রদর্শিত হতে চেয়েছিলেন? এই ভাবনা মাথায় এলেই মালা সেনের বইয়ের ধারালো ফুলনের কথা কানে ভাসে, ‘আঠারো বছর বয়সেও আমাকে দেখতে বাচ্চাদের মতোই লাগত। ফলে আমি জানতাম পুলিশ আমার দিকে তাকিয়েও দেখবে না। অবশ্যই এর সুবিধা আমি নিয়েছি।’
তাঁর গ্ল্যামারাস ব্যক্তিত্ব, ভারী গলার স্বর, অত্যাশ্চর্য মেকআপ, বুফোঁ চুল, স্লিভলেস ব্লাউজ ছিল অতুলনীয়। এমনকী, ‘সূচিত্রা’র সঙ্গেও তুলনা চলে না– বলা যায়, সুচিত্রা সেন ছিলেন বাঙালি ভদ্রলোকের ফ্যান্টাসি, আদর্শিক নারী; কিন্তু সুপ্রিয়া দেবী ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে, আগুনের শিখার মতো।
নিজেকে জাহির করতে হয়েছে তাঁকে দেশ-বিদেশের প্রদর্শনীতে, প্রমাণ দিতে হয়েছে দ্রুত গণন ক্ষমতার। কিন্তু উচ্চতর গণিতের ওপর ভর করে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পেয়ে তিনি এগোতে পারেননি। ভারতের তৎকালীন গণিতজ্ঞদের ধারাবাহিক গবেষণার পথের থেকে শকুন্তলার অভিজ্ঞতা অনেকটাই আলাদা।
বাংলার বহু ‘দেবী’-র মতো অরুন্ধতীও তাঁর শিল্প এবং সৃষ্টির মাধ্যমে সংস্কৃতির ইতিহাসে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। ফলে, সেইসব নারীদের গুণ এবং দক্ষতার মাপকাঠি এই ধরাধামেই উপস্থিত; তাঁরা দেবদত্তা নন। বরং, অনেক ক্ষেত্রেই সমাজের নিয়ম ভাঙার মানবিক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তাঁদের মাথা উঁচু করে বাঁচার পথ খুঁজতে হয়। তাই, পদবির ইতিহাসে খানিক আলগা সম্মান প্রদান করে এই দেবী সম্ভাষণ, অর্জিত স্বাতন্ত্র্য থেকে সরিয়ে নারীকে এক আরোপিত সামাজিক লিঙ্গ ভূমিকার দিকেই ঠেলে দেয়।
সংগীতকে অন্নপূর্ণা দেবী ভক্তির সাধনা মনে করতেন– বিনিময়মূল্য ধার্য হলে, ওঁর ‘সরস্বতীর’ মানে লাগত। কলকাতায় দাদার নির্মাণ করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন, বম্বের এনসিপিএ-তেও পড়িয়েছেন কিছুকাল– হাতে গোনা শিষ্যকেই জায়গা দিয়েছেন ঘরে। যাঁদের সে জায়গা দিয়েছেন, তাঁদের কাছে পারিশ্রমিক নেননি।
সুনয়নী দেবী, সুখলতা রাও, সীতা দেবী, শান্তা দেবীর মতো অনেকে কলমের সঙ্গে তুলিও তুলে নিচ্ছেন হাতে– যেন এভাবেই তাঁরা খুঁজতে চাইছিলেন আত্মপ্রকাশের ভাষা। শুধু নিজেদের নয়, সমকালীন সব মেয়েদের– যাতে তারা চিনে নিতে পারে নিজেদের বিকল্প পৃথিবীটাকে। হাসিরাশিও ছিলেন এঁদের মতোই প্রতিভাশালী, কিন্তু এ ব্যতীত তাঁর ছিল ভাগ্যের সঙ্গে অসম লড়াইয়ে হার না মানার মতো এক আত্মপ্রত্যয়ী নির্দ্বিধ মন।
সরলার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক অবস্থান ঠাকুরবাড়ির পরিচিত নারীত্বের খোপের অনেকটা বাইরে দিয়ে চলেছে। পরিবারনির্দিষ্ট গণ্ডির ভিতরে নিজের রাজনৈতিক বোধকে বেঁধে রাখেননি বলেই নয়। পরিবারে প্রথম একা একা চাকরি নিয়ে মহীশূরে পড়াতে চলে গেছেন। রাজনৈতিক কার্যকলাপে নেপথ্যচারিণী ‘অনুপ্রেরণা’ হিসেবে নয়, সরাসরি নেত্রী হিসেবে লোকসমক্ষে এসে দাঁড়িয়েছেন বারবার।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved