প্রথমে বিদেশি ভাষায় প্রকাশের দরুন, রুশ ভাষায় মূল পাঠের অভাবে গোড়ার দিকে স্থানীয় পত্র-পত্রিকার প্রকাশিত হয় ইংরেজি ফরাসি ও জার্মান ভাষা থেকে রুশ ভাষায় অনূদিত পাঠের কিছু বিচ্ছিন্ন অংশ। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয় দেশবাসীদের। এককালে শুনেছি তুর্গ্যেনেভের বেশ কিছু উপন্যাস নাকি প্রথমে ফরাসি দেশে ফরাসি ভাষার প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে মূল রুশ পাণ্ডুলিপির অভাবে সঙ্গে সঙ্গে একই ভাবে রুশ ভাষায় রুশ দেশে অনুবাদের অনুবাদ হয়ে প্রকাশিত হত। কিন্তু তুর্গ্যেনেভ্ তো বিদেশে থাকতেন! ইয়েল্ৎসিন তাঁর নিজের দেশে থাকা সত্ত্বেও এটা কীভাবে সম্ভব হল বোঝা ভার।
৫৬.
বহুমুখী বহুরূপী
মস্কো, ২ জুলাই, ১৯৯৩
ছয় বছর ক্রেমলিনের প্রধান হিসাবে বিশ্ব রাজনীতির যিনি একজন তারকা ছিলেন, দেড় বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের ফলে তাঁর পদত্যাগের পর আজকের রাশিয়ায় তাঁর ভাগ্য ও কার্যকলাপ নিয়ে বিশেষ কেউ মাথা ঘামায় না। তাঁর পেরেস্ত্রৈকা ও গ্লাস্নস্ত-এর মতো তিনি নিজেও আজ অতীত।
পেনশনভোগী রাষ্ট্রপ্রধান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থা– ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে তার প্রধান হয়ে বসলেন। এখানে তিনি অবতীর্ণ হলেন চিন্তাশীল, বিদগ্ধ জনের ভূমিকায়। এরই সঙ্গে চলতে লাগল স্মৃতিকথা লেখা, দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকার কলামনিস্টও হলেন।
গত বছর মার্চ মাসে ব্রিটেনের একটি চলচ্চিত্র সংস্থা তাঁকে নিয়ে চার সিরিজের একটি ছবি তোলার জন্য তাঁর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এটি ছিল দলিলচিত্র। চলচ্চিত্র জগতে তিনি এলেন জার্মান চলচ্চিত্র পরিচালকের একটি ছবিতে নামতে রাজি হয়ে– সেও সেই গত বছর, জুন মাসে। ছবির নাম– বহু দূরে, কত কাছে। গত ১৮ মে কান চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পেয়েছে। গভীর ভাবনাচিন্তামূলক একটি রূপকথা।
ছবিটিতে আছে গর্বাচ্যোভের নেপথ্য ভাষণ এবং আড়াই মিনিটের উপস্থিতি। পরিচালকের কথায়: প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর এই ভূমিকায় অবিশ্বাস্য রকমের ভাবগভীরতার পরিচয় দিয়েছেন। দৃশ্যটি চারবার তোলা হয়– প্রতি বারই তার উন্নতি ঘটে। কুড়ি মিনিটের স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ের দৃশ্যকে কেটে আড়াই মিনিটে নিয়ে আসা খুবই কষ্টকর হয় পরিচালকের পক্ষে।
পরিচালকের মন্তব্য: অভিনেতা ও রাজনীতিবিদের পেশার মধ্যে অনেক মিল আছে। রাজনৈতিক নেতাদের অনেকে তাঁদের কর্মজীবনের মধ্য দিয়ে দক্ষ অভিনেতায় পরিণত হয়। খুবই সত্য কথা– বিশেষত যখন মনে পড়ে সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান ও কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক চের্নোন্কোর মৃত্যুর পর গর্বাচ্যোভ্ যখন সেই পদে অধিষ্ঠিত হন, তখন জনসাধারণের উদ্দেশ যে-ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন কুড়ি মিনিটের সেই ভাষণে জড়তা ছিল লক্ষণীয়, অন্তত কুড়ি বার তাঁকে ঠেকে যেতে হয়।
কিন্তু অভিনেতার সহজাত প্রতিভা হয়তো তাঁর ছিল। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি হয়ে ওঠেন দক্ষ অভিনেতা, সুবক্তা।
হলিউডের অভিনেতা রেগন চলচ্চিত্রের পর্দা থেকে বেরিয়ে এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, গর্বাচ্যোভ্কে ক্রেমলিন থেকে বেরিয়ে নামতে হল শুটিংয়ে। এখানেই দু’জনের তফাত।
স্মৃতিকথার বেসাতি: গর্বচ্যোভ্ পাচ্ছেন পাঁচ লক্ষ ডলার
২৪ অক্টোবর ১৯৯৩
এদেশের অনেক খবর ইদানীং গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই পাচ্ছে। এটাও পাবে কি না জানি না। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্পার কলিন্স পাবলিশার্স আগস্ট অভ্যুত্থান সম্পর্কে মিখাইল গর্বাচ্যোভের লেখা বই ছাপছে। তিন ফর্মার বই। চুয়াত্তর পৃষ্ঠা। স্বত্বাধিকার বাবদ প্রকাশকরা দিচ্ছেন পাঁচ লক্ষ ডলার। কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট এম. শিন্কার তো ডগমগ। বললেন, এটা আমাদের চাঞ্চল্যকর সাফল্য। অভ্যুত্থানের পর নিউ ইয়র্কের সমস্ত ডাকাবুকো প্রকাশক সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে বই ছাপতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু গর্বাচ্যোভের স্মৃতিকথা, তাঁর নিজের জবানিতেই সেই পালাবদলের কথা সব মিলিয়ে একটা বেস্ট সেলারের মালমশলা পাচ্ছে হার্পার কলিন্স। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে তাদের কাছে ওয়াশিংটনের সোভিয়েত দূতাবাস থেকে ফোন আসে বলা হয়, পশ্চিমের ধনাঢ্য প্রকাশক রুপার্ট মার্ডোককে অবিলম্বে মস্কো যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পাদনের জন্য। গত জুলাই মাসে খোদ মালিক মস্কো এসেছিলেন। তখনই বগলদাবা করে নিয়ে গিয়েছিলেন রাইসা গর্বাচ্যোভের ‘আমি আশা করি’ বইটির পাণ্ডুলিপি। আমেরিকায় বইটির এখন দারুণ কাটতি। মালিক মার্ডো এবার কাজে ব্যস্ত থাকায় নিজের হাতে পাণ্ডুলিপি নিতে আসতে পারেননি। সোভিয়েত প্রেসিডেন্টের স্মৃতিকথা প্রকাশিত হওয়ার পর আনাচেকানাচে ঘুরছে নানা প্রশ্ন। আগস্ট অভ্যুত্থানের কোন্ রহস্যের ওপর আলোকপাত করবেন গর্বাচ্যোভ্?
অনেকেরই ধারণা, যা জানতে চাই সেটা ছাড়া আর সবকিছুই বলার প্রয়াস থাকবে ওই বইতে। দেশের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক পুনর্গঠনের চেষ্টা করতে গিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার ইতিহাসের এক চরম সংকটজনক মোড়ে এসে পড়েছে। তবু বেশ কিছু সোভিয়েত জননেতা আগস্ট অভ্যুত্থানের ওপর তাদের ভাষণ, মতামত লেখার সময় পেয়ে যাচ্ছেন। স্মৃতিকথা লেখার ধুম পড়ে গেছে। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী শেভার্দ্নাদ্জের স্মৃতিকথার নাম– ‘স্বাধীনতাই ভবিষ্যতের মালিক।’ উপসংহারে জুড়ে দিয়েছেন অভ্যুত্থান নিয়ে একটি পরিচ্ছেদ। ক্রিমিয়াতে ছুটি কাটাতে গিয়ে বরিস ইয়েল্ৎসিনও আগস্টের ঘটনা নিয়ে স্মৃতিকথা লিখে ফেলেছেন। ডাকসাইটে নিউজউইক পত্রিকা আগামী কয়েক সপ্তাহে তার কয়েকটি পরিচ্ছেদ ছাপবে। বিশেষ স্বত্বাধিকার কিনে নিয়েছে তারা। রক্ষণশীল কমিউনিস্ট নেতা ইগর লিগাচভ্ও লিখছেন: খুঁজছেন মার্কিন প্রকাশক।
কিন্তু ইয়েল্ৎসিন?
মস্কো, ২৬ এপ্রিল, ১৯৯২
কিন্তু ইয়েল্ৎসিনও বই লিখছেন। লিখছেন আগস্টে কমিউনিস্টদের সেই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কাহিনি, যার সুযোগে ইনি একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হতে পেরেছেন, যার ফলে গর্বাচ্যোভকে তাঁর ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে।
কিন্তু মুশকিল এই যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গর্বাচ্যোভের মতো অবসরভোগী তিনি নন, সময়ের বড় অভাব তাঁর। গর্বাচ্যোভের একের পর এক স্মৃতিকথা, কলাম ইত্যাদি লিখে চলেছেন, এমনকী আরও অনেক পরে ১৯৯৮ সালেও দেখা যাচ্ছে ৩০০ পৃষ্ঠার একটা বই লিখেছেন। ‘অতীত ও ভবিষ্যতের ভাবনাচিন্তা’ নাম দিয়ে, যেখানে অক্টোবর বিপ্লব, লেনিন, স্তালিন এবং সমাজতন্ত্রের প্রসঙ্গও আছে। কিন্তু গর্বাচ্যোভের সবগুলি লেখাই কেমন যেন নৈর্ব্যক্তিক, নিরাবেগ ও নীরস হয়ে যায়। তাতে অবশ্য তাঁর অর্থ বা খ্যাতির ঝুলিতে কোনও টান পড়ছে না।
সে যাই হোক, ব্রিটিশ প্রকাশন সংস্থা Ten Chapman থেকে আগস্ট চক্রান্তের ওপর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের লেখা একটা বই প্রকাশিত হওয়ার পথে। কিন্তু একের পর এক নানা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় বইয়ের পাণ্ডুলিপি জমা দিতে তিনি দেরি করে ফেলছেন। বড় কড়া ধাঁচের client বলে উক্ত প্রকাশন সংস্থার খ্যাতি আছে। গ্রন্থকার যদি চুক্তি লঙ্ঘন করেন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে পাণ্ডুলিপি জমা দিতে না পারেন তাহলে চুক্তি একেবারেই বাতিল হয়ে যায়।
কিন্তু সব কিছু দেখে-শুনে মনে হয় এবারে প্রকাশ ভবন ব্যতিক্রম ঘটাতে প্রস্তুত। মিস্টার Chapman-এর কথায়, ‘আমাদের আশা ছিল জানুয়ারির মধ্যে পাণ্ডুলিপি পাওয়া যাবে, কিন্তু রাশিয়ার ঘটনাপ্রবাহের জন্য মিস্টার ইয়েল্ৎসিন বিশেষ ব্যস্ত থাকায় তা সম্ভব হয়নি। গোড়ায় ঠিক ছিল শুধু আগস্ট চক্রান্তের ওপরেই লেখা হবে, কিন্তু পরিস্থিতি এত দ্রুত পালটাতে থাকে যে আমরা আরও কিছু উপকরণ যোগ করতে অনুরোধ জানাই। প্রথম অর্ধাংশ তিনি শেষ করেছেন, কিন্তু আমরা আগের মতোই বাকি অংশের অপেক্ষায় আছি। গোটা পাণ্ডুলিপি কবে পাব সে সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।’
ইয়েলৎসিনের গ্রেট ব্রিটেনস্থ সাহিত্য প্রতিনিধি Andrew Nuremburg তাঁর লন্ডন অফিসে ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট তাঁর কাছে লিখিত এক পত্রে জানিয়েছেন, আগে তাঁর ধারণা ছিল সপ্তাহে সাত ঘণ্টা মতো ডিকটেশন দেবার সময় তিনি বার করতে পারবেন। কিন্তু সময় অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। বই আর রাশিয়ার মধ্যে তিনি কাকে বেছে নেবেন?
১৯৯০ সালে অবশ্য তাঁর একটি আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়ে গেছে ইংরেজি ভাষায়। সেটির প্রকাশক ছিল লন্ডনের অন্য এক প্রকাশ ভবন– Jonathon Cape। এই লেখা বাবদ কত দক্ষিণা তিনি পেয়েছিলেন জানা যায়নি, তবে দক্ষিণার অর্থ নাকি তিনি জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করেছিলেন। নতুন বইয়ের জন্য ইয়েল্ৎসিন কত দক্ষিণা পাচ্ছেন প্রশ্ন করতে তাঁর লন্ডনস্থ প্রতিনিধি An-drew Nuremburg মুখ খোলেননি, তবে তিনি স্বীকার করেছেন, ‘মোটা দক্ষিণাই পাবেন।’
প্রথমে বিদেশি ভাষায় প্রকাশের দরুন, রুশ ভাষায় মূল পাঠের অভাবে গোড়ার দিকে স্থানীয় পত্র-পত্রিকার প্রকাশিত হয় ইংরেজি ফরাসি ও জার্মান ভাষা থেকে রুশ ভাষায় অনূদিত পাঠের কিছু বিচ্ছিন্ন অংশ। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয় দেশবাসীদের। এককালে শুনেছি তুর্গ্যেনেভের বেশ কিছু উপন্যাস নাকি প্রথমে ফরাসি দেশে ফরাসি ভাষার প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে মূল রুশ পাণ্ডুলিপির অভাবে সঙ্গে সঙ্গে একই ভাবে রুশ ভাষায় রুশ দেশে অনুবাদের অনুবাদ হয়ে প্রকাশিত হত। কিন্তু তুর্গ্যেনেভ্ তো বিদেশে থাকতেন! ইয়েল্ৎসিন তাঁর নিজের দেশে থাকা সত্ত্বেও এটা কীভাবে সম্ভব হল বোঝা ভার।
এই স্মৃতিকথায় নিজেকে তিনি প্রায়শই উল্লেখ করেন ‘প্রেসিডেন্ট’ বলে, সচরাচর প্রথম পুরুষে। রাশিয়ার রাষ্ট্র-নায়কদের মধ্যে শুনেছি একমাত্র স্তালিনই অনেক সময় নিজেকে প্রথম পুরুষে উল্লেখ করতেন। অবশ্য সেক্ষেত্রে নিজেকে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান বলে উল্লেখ কখনও করতেন না। তিনি তো আবার প্রেসিডেন্টও ছিলেন না।
তবে লেওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ সম্পর্কে এমন চুটকিও প্রচলিত ছিল যে তাকে পার্টি মহলে এত বেশি ‘প্রিয় লেওনিদ ইলিচ’ বলে সম্বোধন করা হত যে তার ফলে তিনি নাকি নিজেকে ‘প্রিয় লেওনিদ ইলিচ’ বলেই প্রথম পুরুষে উল্লেখ করতেন।
লেখকের স্বভাবসিদ্ধ রচনাশৈলী সম্পর্কে প্রতিনিধির মন্তব্য– তিনি লেখেন প্রাঞ্জল ভাষায়, অনেকটা বক্তৃতার ঢঙে। তাই নাকি? আমরা তো জানতাম নেতাদের এসমস্ত লেখা আসলে ‘ভূতুড়ে লেখকরাই’ লিখে থাকেন। তবে সব ভাল তার শেষ ভাল যার। দেশের ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে দ্রুত মোড়বদল করছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বইয়ে আরও নতুন নতুন অংশ যোগ করতে গেলে বইয়ের প্রতি সুবিচার তিনি করতে পারবেন কি?
আরও একটি খবর: ভিয়েতনামের বইয়ের দোকানগুলিতে বরিস ইয়েল্ৎসিনের সেই আত্মজীবনী বিক্রি হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে ভিয়েতনামি ভাষান্তরে এটিই প্রথম প্রকাশিত বই।
ভিয়েতনাম সংবাদ এজেন্সি প্রকাশিত এই বইয়ের ভূমিকায় প্রকাশের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উক্ত এজেন্সির কথায়, যে-ব্যক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি ও সোভিয়েত দেশের বিলোপসাধন করেছেন, সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে তাঁর কাছে থেকে কী অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে পারে একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ?
বইটি প্রকাশিত হয়েছে বিশেষত পার্টি সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জন্য। সম্পাদকমণ্ডলীর মতে ‘সুবিধাবাদী ও বাকসর্বস্ব যেসমস্ত লোক পার্টির পক্ষে বিপ্লবজনক হয়ে দাঁড়ায় কীসের ভিত্তিতে তাদের আবির্ভাব ঘটে, তা বোঝার জন্য ইয়েলৎসিনের স্মৃতিকথার প্রয়োজন আছে।’
মস্কো, ১৮ এপ্রিল, ১৯৯৪
প্রেসিডেন্ট পদে আসীন কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের স্মৃতিকথা প্রকাশের ঘটনা পৃথিবীতে একান্ত বিরল।
সোভিয়েত আমলে বর্তমান কেন, প্রাক্তন কোনও জননেতা বা রাষ্ট্রনেতার স্মৃতিকথা লেখা বা প্রকাশের তেমন কোনও রেওয়াজ ছিল না– এমনকী তাঁদের মৃত্যুর পর প্রকাশেরও নয়। ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে পরবর্তীকালে থ্রুশ্শ্যোভের তিরোধানের পর বিদেশে তাঁর বিতর্কিত স্মৃতিকথার প্রকাশ, যার প্রামাণিকতা সম্পর্কে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে। ব্রেজনেভের জীবদ্দশায় (১৯৯৪) তিনটি ছোট ছোট খণ্ডে ট্রিলজি আকারে প্রকাশিত হয়েছিল সোভিয়েত আমলের বিশেষ একটি পর্বে পিতৃভূমির মহাযুদ্ধ এবং তার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে পার্টিকর্মী হিসেবে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কাহিনি। পরে তা চলচ্চিত্রেও রূপায়িত হয়েছিল। পরন্তু সেই ট্রিলজির জন্য ১৯৮০ সালের ৩১ মার্চ সাহিত্যে লেনিন পুরস্কারের অধিকারী হয়ে তিনি রাতারাতি একজন লেখকও বনে গিয়েছিলেন। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে সচরাচর যা হয়ে থাকে – অভিজ্ঞতা তাঁর নিজের হলেও লেখা কতটা নিজের বা আদৌ নিজের কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
অনেক রুশিরই বিশ্বাস, যে-মানুষটাকে চব্বিশ ঘণ্টাই ওষুধ দিয়ে চাঙ্গা করে রাখা হত, তাঁর পক্ষে এই সিদ্ধি বাস্তবিকই চমকপ্রদ। অবশ্য পরবর্তীকালে দেশের আর একজন কর্ণধারও ওই একই অবস্থায় অনুরূপ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। সেই আমলে ব্রেজনেভ সম্পর্কে প্রচলিত একটি চুটকির উল্লেখ বোধহয় এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। চুটকিটা এইরকম: ব্রেজ্নেভ তাঁর অফিসে বসে আছেন, এমন সময় অফিস ঘরের দরজায় টোকা পড়ল। ব্রেজ্নেভ সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জ্যাকেটের পকেট হাতড়াতে লাগলেন। শেষকালে একটুকরো কাগজ বের করে এনে পড়লেন– কে ওখানে? ইয়েলৎসিনও তাঁর স্মৃতিকথা লেখার সময়, এর চেয়ে খুব-একটা ভাল অবস্থায় ছিলেন না।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর থেকে সে-দেশের প্রাক্তন ও বর্তমান রাষ্ট্রনেতা ও জননেতা, গুপ্তচর বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, এককালের মার্কসীয় তাত্ত্বিক ও পার্টি নেতাদের মধ্যে স্মৃতিকথা লেখা ধুম পড়ে যায়। বিশেষত ১৯৯১ সালের আগস্টের ঘটনার পর। এক্ষেত্রেও পথপ্রদর্শক ছিলেন গর্বাচ্যোভ– তবে এটা ঠিক, রাষ্ট্রের কর্ণধার থাকাকালে তিনি তা লেখেননি। বাকি আর যাঁরা লিখেছিলেন তাঁদের ক্ষেত্রে তা-ই বলতে হয়।
এই পর্বে এর একমাত্র ব্যতিক্রম বরিস ইয়েল্ৎসিন, যেমন সোভিয়েত পর্বে ছিলেন লেওনিদ ব্রেজনেভ। গর্বাচ্যোভের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একই সময়ে স্মৃতিকথা লিখতে শুরু করেছিলেন রাশিয়ার অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েল্ৎসিনও। কিন্তু ঘটনার দ্রুত পটপরিবর্তন এবং নিজের কর্মব্যস্ততার দরুন এবং সময়মতো অনুলেখকদের জন্য মুখে মুখে ধারাবিবরণী দিয়ে নতুন নতুন অধ্যায় যোগ করার ফুরসত তিনি পাননি।
গর্বাচ্যোভ যা বুঝেও বুঝতে চাননি (২০ আগস্ট, ২০০১)
১৯৯১ সালের সেই ক্যু কিন্তু গর্বাচ্যোভের দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাবের আরও-একটি জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত। সেই সময় যেটা অনুমান করা যাচ্ছিল কিন্তু এখন, আজ সেই ঘটনার দু’-দশক পরে পরোক্ষ সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে এটাই সমর্থিত হচ্ছে যে, ক্যু ছিল গর্বাচ্যোভেরই সাজানো, কিন্তু বেগতিক দেখে গর্বাচ্যোভ শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান, যার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন আরও ত্বরান্বিত হয়, ইয়েল্ৎসিন পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হন।
১৯৯১ সালের ১৯ আগস্ট ‘জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় কমিটি’ নামে সংগঠিত যে কমিটি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল তারই জনৈক সদস্য ভাসিলি স্তারোদুব্ৎসভ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে গর্বাচ্যোভের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনে তাকে ‘কাপুরুষ ও বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়েছেন। স্তারোদুব্ৎসভ দাবি করেন তৎকালীন সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান জানতেন দেশের ভাঙন রোধ করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব, তাই তিনি ক্যু-এর নেতাদের এগিয়ে যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ক্যু যখন সংঘটিত হয় সেই সময় গর্বাচ্যোভ্ ছুটি কাটানোর নাম করে ইচ্ছে করেই ক্রিমিয়ার ‘ফরোস’-এ চলে গিয়েছিলেন– ক্যু-এর সাফল্য সম্বন্ধে কিছুটা অনিশ্চিত থাকায় নিজের গা বাঁচানোর উদ্দেশ্যই এইভাবে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। স্তারোদুব্ৎসভের সাক্ষ্য অনুযায়ী, ক্যু-এর ঠিক প্রাক্কালে তৎকালীন কেজিবি প্রধান ক্রচ্কোভের সঙ্গে গর্বাচ্যোভের টেলিফোনে কথাও হয়েছিল। গর্বাচ্যোভ্ এ সবই অস্বীকার করেন। কিন্তু দেশের মানুষ আজও তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেই জানেন। রাশিয়ার রাজনীতির জগতে আজ বহুকাল তাঁর কোনও স্থানই নেই।
ইয়েল্ৎসিন যা ঠিকই বুঝেছিলেন:
রাশিয়ায় যখন গর্বাচ্যোভের উদ্যোগে ও পশ্চিমের উৎসাহে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে সেই সময় পশ্চিম, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু যেই মুহূর্তে তারা বুঝতে পারল দেশের পরিবর্তনের ব্যাপারে গর্বাচ্যোভের মনোভাব কতকটা রোমান্টিক, অবাস্তব ধরনের অমনি তারা তাঁকে ছেড়ে দিয়ে ইয়েল্ৎসিনকে তাদের যোগ্য পাত্র বলে ধরে নিন।
স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৫৮ সালে গর্বাচ্যোভই ইয়েল্ৎসিনকে মস্কো-সোভিয়েতের প্রধান এবং পলিটব্যুরোর ভোটাধিকারহীন সদস্য নির্বাচন করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য তিনি খামখেয়ালি ও পার্টিবিরোধী এমন সব কার্যকলাপ শুরু করে দিলেও যে ১৯৮৭ সালে গর্বাচ্যোভ তাঁকে বরখাস্ত করলেন। ইয়েল্ৎসিন অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বহু মানুষের, বিশেষত মহিলাদের সহানুভূতি আদায় করে নিলেন।
ততদিনে পেরেস্ত্রৈকার দু’বছর হতে চলল, অথচ গর্বাচ্যোভ কাজের কাজ কিছুই না করে শুধু ভাষণদান করে যাচ্ছেন। অবান্তর কথাবার্তা বলে চলেছেন জেনে লোকে তাঁর উপর বীতশ্রদ্ধও হয়ে পড়েছে। ইয়েল্ৎসিন এই সময় ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে কমিউনিস্ট পার্টির দিন ফুরিয়ে এসেছে।
…পড়ুন রুশকথা-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৫৫। মার্কিন দেশে ব্যাঙ্ক ডাকাতি করতে এসেছিল একজন গর্বাচ্যোভের মুখোশ পরে, অন্যজন মাইকেল জ্যাকসনের
পর্ব ৫৪। হাজার হাজার কৌতূহলী জনতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম সেই মহাদৃশ্য
পর্ব ৫৩। নাম বদলের গোলকধাঁধায় অসঙ্গতি বেড়েছে, ঐতিহ্যকে রক্ষা করা যায়নি
পর্ব ৫২। মস্কোর আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের মিছিলে ভারতের পতাকা থাকবে না-ই বা কেন?
পর্ব ৫১। পত্র-পত্রিকায় ঘোষণা করা হল কাস্ত্রো আসছেন, তবে ইনি মেক্সিকোর সোপ অপেরা স্টার
পর্ব ৫০। খোলা হাওয়ায় মানুষের আর কোনও কিছু নিয়েই চিন্তা নেই, অন্ন চিন্তা ছাড়া
পর্ব ৪৯। সোভিয়েত-মুক্ত রাশিয়াকে কে রক্ষা করবে?
পর্ব ৪৮। বর্ষশেষে মানুষ পেল দারিদ্র, এখন লোকে ধার-দেনা করে চা-কফি খাওয়া শুরু করেছে
পর্ব ৪৭। মুক্ত দিনে ব্যালের দেশ রাশিয়ায় ‘আধুনিক ব্যালে’ শেখাতে আসছে ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রুপ
পর্ব ৪৬। অক্টোবর বিপ্লবের উচ্ছ্বাস কোনও দেশে কমলে, অন্য দেশে বাড়তে থাকে
পর্ব ৪৫। ‘অক্টোবর বিপ্লব দিবস’ আর পালিত হবে না, পালিত হবে বড়দিন– চোখের সামনে বদলে যাচ্ছিল সোভিয়েত
পর্ব ৪৪। রাজনীতিতে অদূরদর্শিতার ফল যে কত সুদূরপ্রসারী, তার প্রমাণ আফগানিস্তান
পর্ব ৪৩। জানলা দিয়ে পূর্ব জার্মানি দেখতে দেখতে গর্বাচ্যোভ বলেছিলেন, তাহলে এখানেই শেষ!
পর্ব ৪২। পেরেস্ত্রৈকা শুরু হলে বুঝেছিলাম ‘প্রগতি’ ‘রাদুগা’– এসব কিছুই থাকবে না
পর্ব ৪১। কল্পনা যোশীর তুলনায় ইলা মিত্রকে অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি বলে মনে হয়েছে
পর্ব ৪০। বেসরকারিকরণের শুরু দিকে রাস্তাঘাটে ছিনতাই বেড়ে গেছিল, কারণ সব লেনদেন নগদে হত
পর্ব ৩৯। হাওয়া বদলের আঁচ অনেকেই আগে টের পেয়েছিল, বদলে ফেলেছিল জীবনযাত্রা
পর্ব ৩৮। শুধু বিদেশে থাকার জন্য উচ্চশিক্ষা লাভ করেও ছোটখাটো কাজ করে কাটিয়ে দিয়েছেন বহু ভারতীয়
পর্ব ৩৭। একটা বিদেশি সাবানের বিনিময়েও নাকি মস্কোয় নারীসঙ্গ উপভোগ করা যায়– এমনটা প্রচার করেছে ভারতীয়রা
পর্ব ৩৬। মস্কোর ঠান্ডায় লঙ্কা গাছ দেখে পি.সি. সরকার বলেছিলেন, ‘এর চেয়ে বড় ম্যাজিক হয় নাকি?’
পর্ব ৩৫। রুশদের কাছে ভারত ছিল রবীন্দ্রনাথের দেশ, হিমালয়ের দেশ
পর্ব ৩৪। সোভিয়েত শিক্ষায় নতুন মানুষ গড়ে তোলার ব্যাপারে একটা খামতি থেকে গিয়েছিল
পর্ব ৩৩। দিব্যি ছিলাম হাসপাতালে
পর্ব ৩২। মস্কোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সাধারণ ডাক্তাররা অধিকাংশই মহিলা ছিলেন
পর্ব ৩১। আমার স্ত্রী ও দুই কন্যা নিজভূমে পরবাসী হয়ে গিয়েছিল শুধু আমার জন্য
পর্ব ৩০। শান্তিদা কান্ত রায়ের প্রিয় কাজ ছিল মস্কোয় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কমিউনিজম পড়ানো
পর্ব ২৯। পেরেস্ত্রৈকার শুরু থেকেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন গোপেনদা
পর্ব ২৮। দেশে ফেরার সময় সুরার ছবি সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাননি গোপেনদা
পর্ব ২৭। বিপ্লবের ভাঙা হাট ও একজন ভগ্নহৃদয় বিপ্লবী
পর্ব ২৬। ননী ভৌমিকের মস্কোর জীবনযাত্রা যেন দস্তইয়েভস্কির কোনও উপন্যাস
পর্ব ২৫। ননীদা বলেছিলেন, ডাল চচ্চড়ি না খেলে ‘ধুলোমাটি’র মতো উপন্যাস লেখা যায় না
পর্ব ২৪। মস্কোয় শেষের বছর দশেক ননীদা ছিলেন একেবারে নিঃসঙ্গ
পর্ব ২৩। শেষমেশ মস্কো রওনা দিলাম একটি মাত্র সুটকেস সম্বল করে
পর্ব ২২। ‘প্রগতি’-তে বইপুথি নির্বাচনের ব্যাপারে আমার সঙ্গে প্রায়ই খিটিমিটি বেধে যেত
পর্ব ২১। সোভিয়েতে অনুবাদকরা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করত, সে দেশের কম মানুষই তা পারত
পর্ব ২০। প্রগতি-র বাংলা বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ননীদাই শেষ কথা ছিলেন
পর্ব ১৯। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নাকি খুব ভালো রুশভাষা জানতেন, প্রমথনাথ বিশী সাক্ষী
পর্ব ১৮। লেডি রাণু মুখার্জিকে বাড়ি গিয়ে রুশ ভাষা শেখানোর দায়িত্ব পড়েছিল আমার ওপর
পর্ব ১৭। একদিন হঠাৎ সুভাষদা আমাদের বাড়ি এসে উপস্থিত ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে নিয়ে
পর্ব ১৬। মুখের সেই পরিচিত হাসিটা না থাকলে কীসের সুভাষ মুখোপাধ্যায়!
পর্ব ১৫। রুশ ভাষা থেকেই সকলে অনুবাদ করতেন, এটা মিথ
পর্ব ১৪। মস্কোয় ননীদাকে দেখে মনে হয়েছিল কোনও বিদেশি, ভারতীয় নয়
পর্ব ১৩। যিনি কিংবদন্তি লেখক হতে পারতেন, তিনি হয়ে গেলেন কিংবদন্তি অনুবাদক
পর্ব ১২। ‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’র অধঃপতনের বীজ কি গঠনপ্রকৃতির মধ্যেই নিহিত ছিল?
পর্ব ১১। সমর সেনকে দিয়ে কি রুশ কাব্যসংকলন অনুবাদ করানো যেত না?
পর্ব ১০। সমর সেনের মহুয়ার দেশ থেকে সোভিয়েত দেশে যাত্রা
পর্ব ৯। মস্কোয় অনুবাদচর্চার যখন রমরমা, ঠিক তখনই ঘটে গেল আকস্মিক অঘটন
পর্ব ৮: একজন কথা রেখেছিলেন, কিন্তু অনেকেই রাখেননি
পর্ব ৭: লেনিনকে তাঁর নিজের দেশের অনেকে ‘জার্মান চর’ বলেও অভিহিত করত
পর্ব ৬: যে-পতাকা বিজয়গর্বে রাইখস্টাগের মাথায় উড়েছিল, তা আজ ক্রেমলিনের মাথা থেকে নামানো হবে
পর্ব ৫: কোনটা বিপ্লব, কোনটা অভ্যুত্থান– দেশের মানুষ আজও তা স্থির করতে পারছে না
পর্ব ৪: আমার সাদা-কালোর স্বপ্নের মধ্যে ছিল সোভিয়েত দেশ
পর্ব ৩: ক্রেমলিনে যে বছর লেনিনের মূর্তি স্থাপিত হয়, সে বছরই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সূচনাকাল
পর্ব ২: যে দেশে সূর্য অস্ত যায় না– আজও যায় না
পর্ব ১: এক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে রাশিয়ার খণ্ডচিত্র ও অতীতে উঁকিঝুঁকি
আইচআইভি নিয়ে ঔদাসীন্য যখন ভারতের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন ড. নির্মলা সেলাপ্পানের গবেষণা প্রমাণ করল এদেশের মানুষের রক্তেও এই মারণ ভাইরাস উপস্থিত। শুরু হল ভারতের বুকে এইচআইভি গবেষণার প্রথম ধাপ।