আমার মনে হয়েছিল গণেশ পাইন কিংবা বিকাশ ভট্টাচার্যের পরের জেনারেশনে যারা এসেছে ছবি আঁকতে, আদিত্য তাদের মধ্যে একজন গুণী শিল্পী। সেই প্রথম আলাপে আমি অবশ্য আদিত্যকে খানিক আশ্চর্যই করে দিয়েছিলাম। বলতে শুরু করেছিলাম, কোথায়, কবে, ওর কোন এগজিবিশনে, কোন ছবি, কোন দেওয়ালে রাখা ছিল। পরে আমাদের বন্ধুত্বটা জমে ওঠে।
১২.
২০০১ সাল। আমার বন্ধু অভিজিৎ গুপ্ত আলাপ করিয়ে দিয়েছিল শিল্পী-বন্ধু আদিত্য বসাকের সঙ্গে। ওঁরা গভর্মেন্ট আর্ট কলেজের বন্ধু। কিন্তু, আদিত্য বসাককে আমি আগেই চিনতাম। চিনতাম মানে, মুখোমুখি আলাপ হয়েছিল, তা নয়। কিন্তু ওর কাজ দেখেছিলাম নানা সময়। সেই প্রথম সাক্ষাতের বছর ৮-১০ আগে থেকেই। এবং আমার মনে হয়েছিল গণেশ পাইন কিংবা বিকাশ ভট্টাচার্যের পরের জেনারেশনে যারা এসেছে ছবি আঁকতে, আদিত্য তাদের মধ্যে একজন গুণী শিল্পী। সেই প্রথম আলাপে আমি অবশ্য আদিত্যকে খানিক আশ্চর্যই করে দিয়েছিলাম। বলতে শুরু করেছিলাম, কোথায়, কবে, ওর কোন এগজিবিশনে, কোন ছবি, কোন দেওয়ালে রাখা ছিল। পরে আমাদের বন্ধুত্বটা জমে ওঠে।
আদিত্য, আমি, অভিজিৎ, অভীক মুখোপাধ্যায় এবং আরও ক’জন মিলে একবার ঠিক করলাম ভিডিও আর্ট করব। ভিডিও আর্ট ছয়ের দশকের জনপ্রিয় হল। নানা ফর্মে ভিডিওকে ব্যবহার করে যেখানে তৈরি করা হয় আর্ট। খানিকটা পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র আন্দোলনের রেশও হয়তো তাতে থাকে। অভীক মুখোপাধ্যায় ও আমি ছিলাম বায়াস্কোপের লোক, আর বাকিরা শিল্পী। আমাদের প্রত্যেকটা কাজই ছিল দু’চার মিনিটের থেকে একটু বেশি– নন-ফিকশন বা ফিকশন ছবি। প্রতিটা ভিডিও আর্টে সকলেই কোনও না কোনওভাবে জড়িয়ে ছিলাম। দেশে-বিদেশে, ‘বিদেশ’ বলতে ইউরোপ ও আমেরিকায় অনেকবারই দেখানো হয়েছে সেই কাজ। আমাদের ৪-৫ জনকে যখন সবাই একসঙ্গে দেখতে শুরু করল, তখন আমরা যৌথ সাক্ষাৎকারও দিতাম।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আদিত্য, আমি, অভিজিৎ, অভীক মুখোপাধ্যায় এবং আরও ক’জন মিলে একবার ঠিক করলাম ভিডিও আর্ট করব। ভিডিও আর্ট ছয়ের দশকের জনপ্রিয় হল। নানা ফর্মে ভিডিওকে ব্যবহার করে যেখানে তৈরি করা হয় আর্ট। খানিকটা পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র আন্দোলনের রেশও হয়তো তাতে থাকে। অভীক মুখোপাধ্যায় ও আমি ছিলাম বায়াস্কোপের লোক, আর বাকিরা শিল্পী।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
এই মিডিয়ামটা আমার ভালো লেগে গিয়েছিল প্রথম এক-দুটো ভিডিও আর্ট করার পরই। ভাবলাম, নতুন কিছু একটা করা যাক। যেটা ভেবেচিন্তে খাড়া করেছিলাম মনে মনে, তাতে বাচ্চাদের মতো ড্রয়িংয়ের দরকার পড়েছিল। তখন আমি আদিত্যকে বললাম। বাচ্চাদের ড্রয়িংগুলো হল বাড়ি-ঘর ইত্যাদি, করে দিয়েছিল আদিত্যই। আর চরিত্রগুলো করেছিলাম মাটির পুতুল দিয়ে। ড্রয়িংগুলোকেই আমরা নেপথ্যের ‘স্পেস’ হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম। আদিত্যর বাড়ির ছবি, দলিল ইত্যাদি নিয়ে গ্রুপ শো হয়েছিল। সেই এগজিবিশনে আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হলেন জয়শ্রী চক্রবর্তী, ছত্রপতি দত্ত, চন্দ্র ভট্টাচার্যরা।
আদিত্য আমার কাছে অবশ্যই ইন্টারেস্টিং ওর বাড়ির জন্য। ১৯ বৃন্দাবন বসাক স্ট্রিট। আদিত্য উঠে এসেছে আদ্যোপান্ত ব্যবসায়ী পরিবার থেকে। শোভারাম বসাকের (১৬৯০-১৭৭৩) ৭ম কি ৮ম প্রজন্ম আদিত্য– সেকালের কলকাতার অন্যতম নামকরা বড়লোক ছিলেন এই শোভারাম বসাক। উত্তরাধিকার সূত্রে আদিত্য ওই বাড়িরই ছেলে। এত পুরনো বাড়ি, বুঝতেই পারছেন তাতে বহু গল্পের পরত রয়েছে। ১৮৩৯ নাগাদ সেই বাড়িতে একটা মন্দির গড়ে তোলা হয়। ব্যক্তিগত মন্দির আর কী। তা নিয়ে কাগজে বহু লেখালিখিও হয়েছিল। পরে যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে মন্দির জীর্ণ হয়, ভেঙে পড়ে ১৯৫০ নাগাদ। প্রায় বছর ২৫-২৬ সেই মন্দিরের ঠাকুর থাকে বাড়ির মধ্যেই। তারপর ১৯৭৫-’৭৬ সালে আবারও মন্দির গড়া হয় নতুন করে, বানিয়েছিলেন সুনীল পাল। তিনি ছিলেন গভর্মেন্ট আর্ট কলেজের ডিপার্টমেন্ট অফ স্কাল্পচারের বড় সাহেব। ১৯১০ নাগাদ সেই পুরনো বাড়িটা নতুন করে বানানো হয়। সেই নবরূপায়ণের দায়িত্বে ছিল মার্টিন অ্যান্ড বার্ন কোম্পানি।
আমি চাই আদিত্য যেন নিজের ছবিকে এতটা না বদলে ফেলে, যাতে আমার ভালো লাগাটা আর না থাকে। ওর ছবি আজও ভালোবাসি, চাই পরেও ভালোবাসতে।
…ফ্রেমকাহিনি-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ১১। প্রায় নির্বাক গণেশ পাইন আড্ডা মারতেন বসন্ত কেবিনে
পর্ব ১০। আজাদ হিন্দ হোটেল আর সুব্রত মিত্রর বাড়ির মধ্যে মিল কোথায়?
পর্ব ৯। শান্তিনিকেতনের রাস্তায় রিকশা চালাতেন শর্বরী রায়চৌধুরী
পর্ব ৮। পুরনো বইয়ের খোঁজে গোয়েন্দা হয়ে উঠেছিলেন ইন্দ্রনাথ মজুমদার
পর্ব ৭। কলকাতার জন্মদিনে উত্তম-সুচিত্রার ছবি আঁকতে দেখেছি মকবুলকে
পর্ব ৬। বিয়ের দিন রঞ্জা আর স্যমন্তককে দেখে মনে হচ্ছিল উনিশ শতকের পেইন্টিং করা পোর্ট্রেট
পর্ব ৫। আলো ক্রমে আসিতেছে ও আমার ছবি তোলার শুরু
পর্ব ৪। মুম্বইয়ের অলৌকিক ভোর ও সাদাটে শার্ট পরা হুমা কুরেশির বন্ধুত্ব
পর্ব ৩। রণেন আয়ন দত্তর বাড়ি থেকে রাত দুটোয় ছবি নিয়ে বেপাত্তা হয়েছিলেন বসন্ত চৌধুরী
পর্ব ২। ইশকুল পার হইনি, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত একটা ছোট্ট রামের পেগ তুলে দিয়েছিল হাতে
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved